Skip to main content

Full text of "Geeta Tattwa - 3rd ed. গীতাতত্ত্ব - ৩য় সং"

See other formats




্বন্থত সংরক্ষিত 


ছই টাকা 


প্লকাশক--ন্বামী আত্মবোধানন্দ 
_ উদ্বোধন কার্য্যালয় 
১, উদ্বোধন লেন, বাগবাজার 


0০%)7187% £) 270 127০847071, 
72774177776 56227, 73461%7. 


১৩৫৩ 


প্রিন্টার প্ীনগেন্সনাথ হা 
বোস প্রেস 

৩০ নং, ব্রজনাথ মিত্র তে 
কলিকাত। 


নিবেদন 


স্বামী সারদানন্দ এ মরধাম ত্যাগ করিয়া গিয়াছেন। 
কিন্তু তিনি যে ভাব-সম্পদে আমাদের উত্তরাধিকারী 
করিয়া গেলেন এই গ্রন্থ তাহারই নিদর্শন। যুগাবতার 
রামকৃষ্ণের . আগমনের সহিত যে নব ভাব-সমন্থয় উদিষ্ঠ 
হয়, ্্ীমন্তগবদগীতার ব্যাখ্যাচ্ছলে, তাহার বন্ৃতাবজীর 
মধ্য দিয়া, স্বামী সারদানন্দ এ ভাবেরই বিশিষ্ট রূ্ 
প্রদান করিয়াছেন। দার্শনিকতার মধ্য দিয়া গীতায় সমন্বয় 
আছে, কিন্তু সমগ্র মহাভারতে প্যত মত তত পথ” 
রূপ সমম্বয-সাধনার প্রত্যক্ষ সাধক-মৃত্তি না৷ থাকায়, 
বাস্তব জীবনে উহার প্রয়োগের প্রকৃষ্ট অনুভূতির 
অভাবে, মহা-সমন্থয় গ্রন্থ প্রীন্রীগীতাও বিভিন্ন 
আচাধ্যের লেখনী-পরতন্ত্ব হইয়া একদেশির্তা জু 
হইয়াছেন। এই ভাব-ছম্থ সমাধানের জন্যই গীতা-ভাব- 
ঘন-মূর্ত-বিগ্রহ শ্রীভগবানের পুনরাগমন এবং ঠাহারই 
শিষ্বু তাহার 'অপূর্র্ব দেবজীবনের মধ্য দিয়া গীতাতত্ব 
ব্যাখ্যা করিয়! মনের সকল সংকীর্ণত। ও দূর্বলত! পরিহার- 
পূর্বক সকল মানবকে বীর্য ও বলসম্পন্প করিবার চেষ্টা 
করিয়াছেন। আশা করি জনসাধারণ এই গ্রন্থ পাঠ 
করিয়া চিত্তপ্রসাদ লাভ করিবেন। 


(২) 
স্বামী সারদানন্দ এই বক্তৃতাগুলি, ১৩০৯ ৮ হইতে 
আরম্ভ করিয়া, কলিকাতা বিবেকানন্দ সমিতি ও রামকৃষ্ণ 
মিশন সভা এবং বালি ও কোল্নগর হরিসভায় প্রদান 
করেন। উহ প্রবন্ধাকারে উদ্বোধনে নিবদ্ধ ছিল, অধুনা 
রস্থাকারে প্রকাশিত হইল। 


চনা্টমী 
প্রকাশক 


১৩৩৫ 


সূচী-পত্র 


বিষয় স্থান 
পরিচয়. বিবেকানন্দ সমিতি... ১ 
ক্রানযোগ (প্রথম প্রস্তাব) এ ... ২৪ 
এ (দ্বিতীয় প্রস্তাব) এ ১০8৭ 
্মযোগ (প্রথম প্রস্তাব) এ ১৭১, 
এ (দ্বিতীয় প্রস্তাব) এ ১০ ১০২, 
*১০ 
স্কান ও ভক্তির সমন্বয়... বালি হরিসভা .... ১১৯ 
বদাস্তু ও ভক্তি .... ৮১৩৮ 
1ধনা ও সিদ্ধি .... কোন্নগর হরিসভা ..... ১৬৯ 
ব্দ-কথা .... রামকু্ণমিশন সভা .... ১৮৬ 
্টি-রহস্য 2 এ ১৯৬ 
ধন-নিষ্ঠা টা এ ..৫ | 
র্সের দ্বিবিধ রূপ .... এ বি 
্-্রহস্তয এ .. ২৩০ 
পসংহার (রামকৃষ্ণমিশন সভায় 
প্রদত্ত উল্লিখিত বক্তৃতা পাচটির) এ ... ২৪৩ 
ীপ্তপুরুষ ও অবতার- 


কুলের জীবনান্ুভব ... ৮ ২৫২ 





* স্বামী সারদানন্দ 


গশীভাতস্ত 


প্রথম অধ্যায় 
পরিচয় 


(২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৩০৯ সালে কঙ্লিকাতা 
বিবেকানন্দ সমিতিতে প্রদত্ত 
বন্তৃতার সারাংশ ) 


শীতার প্রথম ও দ্বিতীয় অধ্যায়ে য! আছে, আন 
সেই বিষয়ে বল্ব। আমরা সকলেই জানি, আমাদের 
দেশে গীতার কত আদর, কারণ, হিনুধর্্ের সার কথা 
গীতায় আছে। গ্বীতামাহাত্্যে এই বিষয়ে একটি স্রমার 
প্লোক আছে__ 

দর্ব্বোপনিষদে! গাবো দোষ গোপালননানঃ , 

পার্ঘো বংস সুধীর্ভোা ছুষ্ধ গীতামৃতং মহত |” 

উপনিষ্‌ সকল যেন গাভীন্বরূপা। প্রীকুষ্চ তার 
দুধ ছুইছেন, অর্জন সেই গাভীর বাছুরের মত হয়েছেন। 
বাছুর যেমন গাভীর কাছে না৷ গেলে গাতী দুধ দেয় না, 
সেই রকম অর্জনের প্রশ্ণেই শ্রীকৃষ্ণের শান্ত্রোপদেশ 
এবং গীতারূপ দুধের উৎপত্তি। এই দুধ পান কর্‌বে 

১ 


*গীতাতব 

হয়ে থাকে এবং গীতার অপর নাম গীতোপনিষং। 
গীতামাহাত্ে গীতাপাঠের বিশেষ ফল লিখিত আছে। 
একটি শ্লোকার্ধ বল্ছি__- 

“গীতাধ্যায়সমাযুক্তো মূতো মানুষতাং ব্রজেৎ ।” 

“যে নিয়ত গীতা পাঠ করে, সে পর জন্মে মনুযৃত্ 
প্রাপ্ত হয়॥ অন্ত কোন হীনযোনিতে তার জন্ম হয় 
.না। এটি বড় সহজ কথা নয়। মমুস্যত্ব লাভ করা 
বড়ই কঠিন। যার মনুষাত্ব আছে, তার-জ্ঞান বল, 
ভক্তি বল, অপর কোন বিষয় বল, লাভ কর্তে কতক্ষণ 
লাগে? শঙ্করাচা্য বলেছেন 

“ছুলভং ্রয়মেবৈতৎ দেবামুগ্রহহেতুকম। 
মনুয্যত্ং মুমুক্ষুত্ং মহাপুরুষসংশ্রয়ঃ ॥” 

জগতে এই তিনটি জিনিষ এক সঙ্গে পাও! 

দেবতার্ উন্ুগ্রহ না থাকলে হয় না। যথা, ১৮. 

"মনুষ্যত্ব, ২য়-মুমৃক্ষুত্ষ অর্থাং যুক্ত হবার ই... 
. শরীরের নখ, মনের সুখ না চেয়ে একটা উচ্চ উদ্দেশ 
স্থির ভাবে জীবনে রাখা । স্থির, অবিচলিত একটা 
উদ্দেশ্য থাকুলে ক্রমে তা ভগবানের দিকে নিশ্চিত 
নিয়ে যাবে। মাধারণ লোকে আত্মনুখ নিয়েই ব্যস্ত। 
একটা বিশেষ উদেশ্য জীবনে রেখে চলে কে? ওয়-_ 
মহাপুরুষসশ্রয়। যে পুরুষ আপন জীবন স্থুমহত 

৪ 


০ লাপাজ 


পরিচয় 


উদ্দেশ্যে গঠন করেছেন, "এমন পুরুষের সঙ্গলাভ করা 
এবং তাঁর মুখ হতে মানবজীবনের উদ্দেক্টা শোনা। 
তা এত ছুলভ কেন? ধর্মকথা, সকথা, তোমরাও 
বল্ছ, আমিও বল্ছি। কিন্তু তার দ্বারা কোন কাজ 
হয় নাকেন1! আমাদের কথার জোর নেই। ৪ 
আমরা মরা সংসারের স্ুধের ও জন্য নত লালারিত, অথ মুখে 
ত্যাগের কথা বলি। আমাদের কথায় কাজ হবেই বা, 
কেন?-যে পুরুষ আপনার জীবন মহৎ উদ্দোশ্তে গঠন 
করেছেন, মন মুখ এক করেছেন, তাঁর প্রতি কথায় 
যেন ভিতরের একটা দোর খুলে দেয়, মোহের আবরণ 
কাটিয়ে দেয়। মহাপুরুষদের কথায় বিশেষ শক্তি নিহিত 
থাকে । পরমহংসদেবের কথায় কত শক্তি! ক্রাইষ্ট বা 
বৃদ্ধদেবের সহত্র সহম্র বৎসরের পুরাতন কর্থী' পড়, 
এখনও সেই কথার কত শক্তি! কিন্তু তুমি.আ'॥ সেই 
কথা বল্লেও কারও প্রাণে ঘা লাগ্বে না। আবার 
যেই তুমি একটা মহৎ উদ্দোস্টে জীবন গঠন কর্‌বে, 
অমনি তোমারও কথার শক্তি বাড়বে। তখন একটা 
কথা বল্লে লোকের প্রাণে লাগবে । যে জিনিষেরই 
শক্তি বাড়াবার চেষ্টা কর্‌বে, সেইটেরই শক্তি বাড়বে। 
মনের শক্তি বাড়াবার চেষ্টা কর, মানসিক শক্তি 
৫ 


শবীতাতত্ব 

বাড়বে; সেইরূপ বাক্যের শক্তি বাড়াবার চেষ্টা কর, 
কোন বিষয় বিশেষরূপে বল্বার ক্ষমতা বাড়বে। 
বেদান্ত বলেন, এই মনই জগতের স্থৃঘ্টি করেছেন। 
মনের অদ্ভুত শক্তি। ইউরোপের জড়বাদীরাও এ কথা 
স্বীকার করেন। ইতিহাস পাঠেও মনের অদ্ভুত ক্ষমতার 
পূরিচয়ু পাওয়া যায়। ফরাসী দেশের রাণী মেরী 
এটইনেট অপূর্ব রূপসী ছিলেন। তাকে ও তার 
স্বামীকে পারি নগরের লোকেরা একদিন খেপে উঠে 
জেলে *পুরে দিলে। পরদিন প্রাণ দণ্ড কর্বে স্থির 
কর্লে। প্রাতঃকালে দেখা গেল, রাণীর মাথার সমস্ত 
চুল সাদা'হয়ে গেছে। একরাত্রের দারুণ ভাবনায় তিনি 
একেবারে বুড়ী হয়ে গেছেন। মনের এতদূর ক্ষমতা! 
মন যদি তীব্র ভাবে একট! জিনিষ চায়, তা হলে তা 
নিশ্চয়ই পাবে। আমরা! সম্পূর্ণ মনের সহিত কোন 
জিনিষ "চাইতে পারি না, তাই তা পাই না। আস "দর 
মন, পরমহংসদেব যেমন বলতেন, সর্ষের পুটুলির মত। 
সর্ষের পুঁটুলি খুলে গিয়ে দানাগুলি যদি একবার 
ছড়িয়ে পড়ে, তা হলে সেই সকলগুলিকে ' আবার 
একত্র করা অসম্ভব। ঘরের আস্বাবের কোণে, দেয়ালের 
ফাটালে এমন গিয়ে পড়বে যে, হাজার চেষ্টা 
করলেও আর সকল দানাগুলি পাওয়া যাবে না। মনও 

ঙ 


সেইরূপ একবার কতক রূপে. কতক রম, কতক ধন 
মান ইত্যাদি সাংসারিক বিষয়ে ছড়িয়ে গড়ুলে-আর 
তাকে সপ্ূর্ণরূপে একত্র কর! অসম্ভব ভাই পরম-. 
হংসদেব ছেলেদের এত ভালবাস্তেন। : কারথ, তাদের 
মন এক জায়গায় আছে। সত্যের বীজ এ সর মনে 
দিলে শীঘ্ত শীষ অঙ্কুরিত হবে। রঃ 

গীতার প্রত্যেক অধ্যায়কে এক একটি যোগ নাম- 
দেওয়া হয়েছে। যোগ অর্থ এক করে দেওয়া- 
: ভগবানের দিকে নিয়ে যাওয়া । যথা, ১ম অধ্যায়কে 
বিষাদযোগ বলে। বিষাদযোগ কেন বলা হল? কারণ, 
অর্জনের বিষাদই তাকে ভগবানে নিয়ে যাবার 
উপায় হল। তাই বিষাদযোগ। এইরূপ সাংখ্যযোগ, 
কর্মযোগ, সন্ন্যাসযোগ ইত্যাদি । 

আমরা বল্‌তে পারি, গীতা কেবল অর্জনের জন্যে 
বলা হয়েছিল। তাতে আমাদের কি“হ'? আমরা 
ত আর যুদ্ধে যাচ্ছি না, অথবা মহাবীর অর্জুনের জীবনের 
সঙ্গে আমাদের ম্যায় ক্ষুপ্র লোকের জীবনের কোন" 
অংশে সাদৃশ্তও নেই । অতএব মহ অধিকারীর উদ্দেশে 
উপরিষ্ট শাস্ত্র আমাদের উপকারে কিরূপে লাগবে? 
উত্তরে বলা যেতে পারে, অর্জন আমাদের চাঁইতে 
শতগুণে বড় হলেও মানুষ ছিলেন। আমরাও মানুষ । 

৭ 


*গীতাতব 


তার জীবনে যেমন মোহ কখন কখন হয়েছিল, আমা- 
দেরও তেমনি মোহ প্রতিপদে হয়, আমাদেরও তার 
মত সত্যের জন্যে নানা বিদ্বুবাধার বিপক্ষে দাড়াতে 
হয়। আমাদেরও তার মত ভেতরে বাইরে জীবন- 
সংগ্রাম চলেছে। তাই আমরাও গীতা পড়লে শিক্ষা 
পাই, শান্তি পাই, জীবন-মমস্তার এক অপূর্ব সমাধান 
: পাই। দেখা গিয়েছে, কত পাগী তাগীর গীতা পাঠ করে 
বন্ুতাপের অশ্রু পড়ছে এবং উচ্চ দিকে জীবনপ্রবাই 
চালিত হয়েছে। 

আর এক কথা। গীতা কি মহাভারতাঙ্গে প্রকষিপ্ 
হয়েছে? কোন কোন ইউরোপীয় পঞ্ডিত বলছেন, গীতা 
পরক্ষিপ্ত। আমাদের দেশেও অনেক লোক ভাই শুন্ছে। 
তারা বলেন, ভারতবর্ষের পুরাকালের কোন ইতিহাস 
নে্। কখন ছিলও না। অতএব কুককষেতর যুদ্ধের পূর্বে 
যে, এপ একটা প্রকাণ্ড দর্শন সংগ্রহ বাস্তবিক 
উপদিষ্ট হয়েছিল, এ কথা একেবারে যুক্তিবিরুদ্ধ। একটা 
বিষয় বিশ্বা করবার আগে "তা সম্ভব বা অসম্ভব, 
বুধতে ত হবে? তার উত্তর এই যে, আগে ভারত- 
বর্ষের মত পুরাতন তাদের দেশ হোক, তখন দেখা 
যাবে, তাদেরও কত ইডিহাস থাকে। ভারত কত 
দিনের। কত বিপ্লব হয়ে গেছে। কতবার সব ভেঙ্গে 

৮ 


পরিচয় * 


গেছে, আবার কতবার সব গড়েছে। ইউরোপ তার 
কি জান্বে? ইউরোপ ত সে দিনের । এখনও দেখ.তে 
পাওয়া যায়, কত যুগ পূর্বে ভারত হতে সময়ে সময়ে 
'্যে তত্ব প্রকাশ হয়েছিল, ইউরোপে এখন সেই সব 
প্রকাশ হচ্ছে! এতেই বোঝা যায়, ভারতবর্ষ এক 
সময়ে কত উচ্চে উঠেছিল । এই ভারতের ন্যায় উদারতা 
কোথায় ছিল? আমাদের নীতিশান্ত্র বলেন, সত্য চণ্ডালের ' 
নিকটেও শিক্ষা করবে, কারণ, জ্ঞানই ভগবান, অতএব . 
পবিত্র। যেখানেই জ্ঞান, সেখানেই খধিত্ব। সেখান 
থেকেই সেই জ্ঞান নেবে । গীতাও বলেন--" 
“জ্ঞানাগ্নিঃ সর্ববকর্্মাণি ভন্মসাৎ কুরুতে তথা।” 
'জ্ঞান সমুদয় কর্্মকে ভন্মীভূত করে ।” 

একবার সেই জ্ঞান এলে আর কিছুই কু থাকে না। 
পরমহংসদেব বল্‌্তেন, একবার যে মিছরি গেছে, তার 
কাছে কি আর চিটেগুড়ের আদর আছে 1 

তার পর ধর্ম ও দর্শন ভারতের প্রাণন্বরূপ। 
আমাদের দেশের লোকের অস্থিতে মজ্জাতে, প্রতি 
কার্য্যেতে এই প্রাণপ্রতিঘাত এখনও পাওয়া য়ায়। 
তখন যুদ্ধোষ্ঠোগের পূর্ব এরূপ শাস্ত্র যে উপদিষ্ট হতে 
পারে না, এ বিষয়ের বিশেষ প্রমাণ যতক্ষণ না পাব, 
ততক্ষণ কেন আমাদের বহু পুরাতন জাতীয় বিশ্বাস 

৭ 


*গীতাতৰ 

পরিত্যাগ করে তোমার কথা নেব? আবার গীতাবক্তা 
স্বয়ং ঈশ্বরাবতার শ্রীকৃষ্ণ! তোমার আমার মত সাধারণ 
পুরুষের পক্ষে যে কাজ সম্ভবে না, তা তার ন্যায় 
মহাপুরুষ নিশ্চিত সম্ভবে! এও বুঝতে হবে এবং 
মহাভারতের অন্যান্য অংশের ভাষার সঙ্গে গীতার, ভাষার 
এমন কিছু বিষমূতাও দেখতে পাই না, যাতে ০ 
কথা নিতে পারি। ধারা সাধুসঙ্গ করেছেন, তা 
বুঝতে পারবেন, সংসারে আমরা যাকে মহা মহা বিপদ্‌ 
বলি, সাধু তারই ভিতর অবিচলিত থেকে মহা তত্বকথা 
সকল বলেন। এ আমাদের প্রত্যক্ষ। পরমহংসদেব 
ভয়ানক রোগে ভুগ্ছেন। ছমাস থেকে আহারাদি 
প্রায় বন্ধ। কিন্তু সমীপস্থ লোকের ভেতর মহা৷ আনন্দের 
ব্যাপার চলেছে। অতি গৃ়সাধন, জগতের কুটপ্রশ্ন 
সমূহের মীঘাইসা এবং নিরবচ্ছিন্ন আনন্দদানে সকলকে 
মাতিয়ে রেখেছেত্ব। রোগ, ছুঃখ বা কষ্টের নাঃ 
মাত্রও নেই। অঞ্জুন স্বয়ং ভগবানের কাছে রয়েছেন। 
জানের কথ! রোঝাতে তার কতক্ষণই বা লেগেছিল ? 
অতএব ইহা প্রক্ষিপ্ত নয়। যদি বল, ওসব ছাড়া 
গীতার একটি আধ্যাত্মিক অর্থ আছে, সেটি হচ্ছে এই, 
--সংসারক্ষেতরে ইন্দ্রিয় সঙ্গে লড়াই, খাবার সংগ্রহের 
লড়াই, এইরূপ কতই না সংগ্রাম মাগুষকে দিন রাত 
রর রর 





পরিচয় 


করতে হচ্ছে, বিরাম নেই) শাস্তি নেই। এই সংগ্রামে 
জয়ী হয়ে মানব কিরূপে জীবনের সার উদ্দেশ্ট লাভ 
কর্বে, এই বিষয়ের বিশেষ সমাধান করাই গীতার 
-ভাব। বেশ কথা, এরূপ বিশ্বাস করতে চাও, আপত্তি 
নেই। 

পুর্ব্বে বলেছি, গীতাকে উপনিষদ্‌ মধ্যে স্থান দেওয়া 
হয়। অনেকে স্নান করে প্রতিদিন অস্ততঃ এক 
অধ্যায়ও গ্বীতা পড়েন! তারা গীতার প্রত্যেক ক্লোককে , 
ম্ত্র্বরূপ পবিত্র মনে করেন। যেমন মন্ত্রের খাষি, 
দেবতা, ছন্দাদি আছে, এরও সেই রকম আছে। গীতার 
. খধি বেদব্যাস,। কারণ, তিনিই মন্ত্র দর্শন 'করেছেন। 
(খধি শবের অর্থ অতীন্দ্রিয়দর্শা। ) তিনি দেখেছেন, 
তার পর সাধারণের জন্যে সেই বিষয়টা গ্লোকে নিবন্ধ 
করেছেন। তার কাছেই মন্ত্র প্রথম প্লিকাশিত 
হয়েছিল, অতএব খষি শব্দের অর্থ ইংভা্জীতে যাকে 
40000 বলা হয়, তাই। প্রত্যেক মঞ্ত্রেরে যেমন 
খষি অর্থাৎ রচয়িতা, দেবতা অর্থাং যে বিশেষ বিষয় 
নিয়ে মন্ত্র রচিত হয়েছে, ছন্দ অর্থাৎ যেরূপ পদ- 
বিন্যাসে মন্ত্রে ভাষা লিপিবদ্ধ ছুয়ে থাকে, 
তেমনি বীজও থাকে, গীতারও আছে। : বীন্প থেকে 
যেমন গাছ হয়, তেমনি গ্রন্থের মধ্যে এমন একটা! বিষয় 

১১ 


শীতাতন্ব 
থাকে, যেটা অবলম্বনে বা যেটাকে ফলিয়ে বাকিটা লেখা 
হয়। গীতার বীজ স্বরূপ সে বিষয়টি কি? 

“অশোচ্যানম্বশোচন্ং প্রজ্ঞাবাদাংস্চ ভাষসে 1” 

অর্থাৎ “যার জন্যে শোক করা উচিত নয়, তার জন্যে : 
শোক করছ আবার পণ্ডিতের মত্ত কথা বল্ছ।, 
এর অর্থ এই যে, তোমার মুখে এক, মনে আর এক 
এবং তুমি সরল নও। যার মুখে একখানা, মনে আর 
একখানা, তাকে ধাক্কা খেতে হবে। তার সত্য ৰা 
' ভগবান লাভের ঢের দেরি। পরমহংসদেব বল্তেন, 
মন মুখ এক করতে হবে, উহাই প্রধান সাধন। গীতাও 
সেই কথা, বল্তছন। ধর্মরূপ মহাবৃক্ষের বীজ সরলতা 
ভিন্ন আর কিছুই নয়। তার পর যেমন প্রত্যেক 
মন্ত্রের শক্তি আছে, তেমনি গীতার বিশেষ শক্তি এই 
শ্লোকে তিবদ্ধ। 

“সর্ববধস্ম্‌ পরিত্যজ্য মামেকং শরণ, ব্রজ | 

অহ. ্বাং সর্ববপাপেভ্যো মোক্ষয়িয্যামি মা শুচঃ | 
_ সব ছেড়ে দিয়ে আমার শরণাপন্ন হতে পার, সব 
হয়ে যাবে আমরা কত রকম 71870 বা মতলব করে 
থাকি। এটা করব, ওটা করব। অনেক সময় 
কিন্তু সব যেন এক ঘায়ে ভেঙ্গে যায়, একটা মহা- 
শক্তি যেন সব ভেলে দেয়! তার হাতের ভেতর যেন 

১২ 


রয়েছি, ভার অনুমতিতে নড়ুছি চড়ছি। তা বলে কেউ 
যেন মনে না করেন যে, ম196 1] বা মানবের 
স্বাধীন ইচ্ছা নেই। মানুষ, স্থাধীন ইচ্ছা ও অনৃষ্টের 
মধ্স্থলে পড়ে রয়েছে। যেন কেমন একটা আলো- 
আধার, একটা! ঠিক করে বল্বার যে! নেই, আলো 
বল আলো, জাধার বল আধার। স্থির প্রারস্ত হতেই 
মানুষ এই অভীক্রিয় জিনিষটা জান্বার চেষ্টা করছে। 
ইউরোপে মক্রেটিস থেকে চিন্তাশীল ব্যক্তিমাত্রেই এই 
জগংট! কি, কোন্‌ শক্তি অবলম্বনেই বা প্রকাশিত 
হয়ে রয়েছে, স্বাধীন বা পরাধীন ইত্যাদি বিষয় জান্বার 
চেষ্টা করৃছে, কিন্তু কিছুই করে উঠতে পারেনি। 
কারণ, মনের দ্বারা ওবিষয়টা জানা যায় না, মনের 
সীমা আছে। অস্তবিশিষ্ট জিনিষ অনন্তকে কি করে 
জান্বে? ইঙ্জ্রিয়াদির পারে না গেলে যে সরল প্রশ্নে 
মীমাংসা হয় না, সে সকল প্রশ্নের সমাধান মন কেমন 
করে করুবে? একটা গল্প আছে, একজন পণ্ডিত এই 
মকল তত্ব বোঝবার ও বোঝাবার চেষ্টা অনেক দিন 
ধরে করেছিলেন। কিছুই না পেয়ে সমুদ্রে ডুবে মর্তে 
যান। সেখানে দেখেন। এক বালক অদ্ভুত খেলা 
খেল্ছে। সমুদ্রের কিনারায় বালিতে একটা গর্ভ খুঁড়েছে 
এবং ছোট ছোট হাতে সমুদ্র হতে অঞ্জলি অঞ্জলি জল 
১৩ 


,গীতাতত্ব 

এনে এ গর্তটা পোরাবার চেষ্টা কর্ছে। অশেষ আয়াস 
এবং অনেকক্ষণ ছুটোছুটি চল্‌তে লাগল। পড়ি 
দৃষ্টি সে দিকে আকৃষ্ট হল এবং বালক কি করুছে, 
সেই বিষয় জান্বার কৌতুহল হল। নিকটে গিয়ে 
জিজ্ঞাসা করলেন, বালক, একি কর্ছ? বালক 
বললে, নমূদ্রের সব জলটা এই গর্তে আন্ছি। পণ্ডিত 
কথা শুনেন! হেসে থাকৃতে পার্লেন না, কিন্তু পরক্ষণেই 
ভাবতে লাগলেন, মনের দ্বারা মনাতীত বস্ত ধর্বার 
প্রয়াস_-আমারও কি এরপ হচ্ছে না? বিবেকানন্দ 
স্বামিজী বলতেন, 'আমরা যেন সব গজ নিয়ে 
বেরিয়েছি। . ভগবানকে ছেঁটে ছুটে মেপে বের করে 
বুঝেনেব। তাহয়না। মন জড়। আমাদের খষিরা 
জান্তেন,_মন নৃক্ষম জড়__এই স্ুল জড়টাকে চালাচ্ছে; 
কিন্তু ওর আপনার শক্তি নেই, আত্মার শক্তিতে 
শক্তিমান, তিনিই সব চালাচ্ছেন। ইউরোপের অনেকের 
বিশ্বাস, মনই আত্মা। তা নয়। গীতা বলেন, এ 
“নকল প্রশ্ন, সমাধান কর্বার আগে উপযুক্ত অধিকারী 
হতে হবে। কিরূপে তা হওয়া যায়? বিশ্ব-মনের 
বিশব-ইচ্ছার দক্গে আপন ক্ষুপ্র মন ও ইচ্ছা এক- 
তানে যোগ কর্তে হবে। একটিতে যেমন ভাব, 
যেমন স্পনান হতে থাক্বে, অপরটিতেও সেইরূপ ভাব 

১৪ 


ও স্পন্দন উিত হবে । তবেই ক্ষুদ্র মনে বাসনাপ্রন্থত 
জ্ঞানের বিশ্ববাধাসকল দূরীভূত হয়ে বিশেষ শক্তি 
প্রকাশিত হবে। সেই জন্তেই গীতোক্ত ধর্শের সমস্ত শক্তি 
এই শ্লোকে নিবন্ধ । 

“সর্ববধর্ান্‌ পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ ।৮ 

.ভিনি জগতের নিয়ন্তা। তাঁর যা ইচ্ছাঃ আমারও 
সেই ইচ্ছা হোক, আমি আর কিছু চাই না। এই 
ভাবটা যিনি মনে দৃট় রাখেন, তিনি এই 'মহাশক্তির 
সঙ্গে সঙ্গে চলেন। তারই অহঙ্কার দূর হয়, জ্ঞান আসে। 
কিন্তু অধিকাংশ সময় আমার্দের ভেতর এর ঠিক 
বিপরীত ভাবই থাকে। বিশ্ব-ইচ্ছার সঙ্গে যুক্ত না 
হয়ে লড়ালড়ি করেই মরি কেবল বাসনার জঙ্যো। 
দেখ না, পরিবর্তন হচ্ছে জগতের নিয়ম, তা সকলেই 
জানে, কিন্তু তবু আমাদের প্রত্যেকের মেষ্টা হচ্ছে, 
যাতে অনিত্য শরীরটা চিরকাল থার্ধে।* আমার্দের 
ভালবাসাটাতেও কি এই ব্যাপার হয় না? যাকে 
ভালবাসি, তার শরীর মনটাকে ধরে রাখবার, 
চেষ্টা। আমরা ভালবাসার পাত্রের অনিত্য শরীর 
মনকে আপনার করে টিরকাল রাখতে চাই। সেই 
জন্যে আমাদের ভালবাসায় মোহ হয়। নতুবা ঠিক 
"ভালবাসা ভগবানের অংশ, তাতে মোহ আসে না। 

১৫ 


গীতাততব 
প্রকৃত ভালবাসা হলে ভালবাসার পাত্রকে অনন্ত. 


স্বাধীনতা দেয়, আমার করতে, চায় না। এইরূপে 
মানুষ বাসনার বশীভৃত হয়ে বিশব-ইচ্ছার বিরুদ্ধে অনিত্যকে 
নিত্যকাল ধরে রাখতে চায়। ইহা মনে রেখো। 


ঈসপের একটি গল্প এই প্রসঙ্গে মনে পড়ে। এক, 


গরিব বৃদ্ধ একদিন একট! কাঠের বোঝা মাথায় করে 
অতি কষ্টে যাচ্ছিল। একে গরমিকাল, তাতে বোঝাটা 
অত্যন্ত ভারী, বৃদ্ধের অল্প শক্তি, বৃদ্ধ কিছুদুর গিয়ে 
ঘর্মাকদেহে শ্রান্ত হয়ে এক জায়গায় বসে পড়ল 
মার আপনার অনৃষ্টকে ধিক্কার দিয়ে বল্তে লাগ্ল, 
মৃত্যুও কি আদ্বায় তুলেছে! বল্‌তে বল্‌তে বিকটাকার 
মৃত্যু এসে উপস্থিত, বৃদ্ধকে বল্‌লে, বৃদ্ধ, আমায় ডাকছিস্‌ 
কন? বৃদ্ধের বাঁচবার ইচ্ছা প্রাণে প্রাণে। আম্তা 
আমৃতা৷ ক্‌র সভয়ে বল্‌লে, মহাশয়, বোঝাটি বড় ভারী । 
একলা তুল্ছৈ পার্ছিলুম না। তাই তুলে দিতে 
আপনাকে ডেকেছি। আমাদেরও অনিত্য বিষয় ছাড়তে 
. ঠিক এইরূপ হয়। 
গীতার আরম্তটি বড় সুন্দর বলে বোধ হয়। দুই 
দল যুদ্ধা্থেপ্রস্তত, উভয় পক্ষে মহা মহা! বীর রয়েছেন 
-সকলের এক এক শাক ছিল, শীকের আওয়াজে 
তখন যোদ্ধা চেনা যেত। চারিদিকে শাক বেজে 
১৬ 


প 


পরিচয় 


উঠল। এমন সময় অঙ্জুন বল্লেন, ছুই দলের মাঝ- 
খানে আমার রখ রাখ, দেখি, আমার সঙ্গে যুদ্ধ কর্বে 
কে? তখনও ভার মোহ আসে নি, সম্পূর্ণ সাহদ 
ছিল। শ্রীকৃষ্ণ রথ রাখ্লেন। অজ্জুন দেখলেন, বিপক্ষ 
'দলে ইচ্ছামৃত্যু পিতামহ ভীগ্ম এসেছেন; ধার কান 
থেকে অন্ত্রবিষ্তা শিখেছেন সেই আচার্য জ্রোণ, অমর 
কৃপাচার্ধা, সমযোদ্ধা কর্ণ প্রভৃতি বীরগণ এসেছেন। : 
কোন কোন টীকাকার বলেন, এই সব দেখে তার 
একটু ভয় হয়েছিল। কারণ, ভীম্মের ইচ্ছামৃত্যুবর ও 
পরশুরামকে যুদ্ধে জয়ের কথা, সিদ্ধুরাজতনয় জয়দ্রথের 
উপর শিবের বিশেষ বরের কথা এবং কর্ণের পরাক্রমাদিও 
তার অদ্জঞাত ছিল না। এই জম্তে বিচিত্র নয়, 
তার ভয় হয়েছিল। তারা এ কথার প্রমাণ স্বরূপ আরও 
রলেন, গীতার একাদশ অধ্যায়ে অঞ্ছুন যখন” ভগবানের 
বিশ্বরূপ দেখেন, তখন বিশেষ করে ভ্রোণ, ভীত্ম, 
জয়দ্থ ও কর্ণকে মৃত দেখেছিলেন। তাতেই অঙ্জুন 
সংগ্রামে নিজে জয়ী হবেন এবং জয়-পরাজয় প্রভৃতি 
সমস্ত ঘটনা ও কাজের পিছনে কার শক্তি বিদ্যমান, 
তা বুঝতে পারুলেন। এখন একটা প্রশ্ন হতে পারে। 
সমগ্র গীতাশান্ত্র শুনে অঞ্জুন কুরুক্ষেত্র সমরের ভীষণ 
হত্যাকাণ্ড নিশ্চিন্তনে করলেন ও দেখলেন। এতে তার 
১৭ 


*গীতাতন্ব 
উপর অভ্যাচার করা হলো । আজ স্বার্থপরতায় অন্ধ হয়ে 
স্বেচ্ছায় অন্যায়ের প্রতিকার করলে না, কাল তোমার 
উপর যখন অত্যাচার হবে, তখন তোমার আর: প্রতি- 
কার করবার সামধধ্য থাকবে না। এইরূপে বীরোীরে 
অবনতি এবং দাগত্ের পথে অগ্রসর হবে। 
দ্বস্থলে অন্জুর্নেরও মোহ এল) বল্লেন, এ 
খের আর দরকার নেই। আত্মীয় স্বজনই যদি সব 
মরে গেল। ত রাজন্ব নিয়ে কর্ব কি। শ্রীকৃষ্ণ 
দেখলেন, অঙ্ছন ভয়টুকু লুকুচ্ছেন আর আপনার 
জীবনের উদ্দেশ্য ভূলেছেন। মনে করেছেন, নিজের 
জন্যে লড়াই' করতে দাড়িয়েছেন। তিনি যে সত্যের 
জন্যে টাড়িয়েছেন। অগ্ভের উপর অত্যাচার প্রতিবিধান 
করতে, কর্তব্য পালন করতে দীাড়িয়েছেন, তা ভূলেছেন। 
পূর্বে পূর্বের বকরাক্ষদ বধ ইত্যাদি স্থলে যেখানে 
যেধানে তারা অন্যায় অবিচার দেখেছেন, সেখানেই ধর্ম 
বোধে ভার প্রতিবিধান করে এসেছেন। এখানে ত। 
উলে গেছেন_মনে করেছেন, রাজ্য পাবার জঙ্োই বুঝি 
যুদ্ধে দীঁড়িয়েছেন। সংসারে আমরা অনেক সময় এরূপ 
দেখতে পাই, রূপের মোহে, কাঞ্চনের মোহে, ব্স্ত 
হয়ে উদ্দেশ্য, হারিয়ে: বসে থাকি। যদি সাধনা | থাকে, 
ভবে ভবে দেই উদ্েস্য আবার ফিরে আসে 'বটে, তা না 
ই 


পরিচয় 


হলে কেবল ছুটোছুটিই সার হয়। শ্রীকৃষ্ণ তাই দেখেই 
প্রথম ছুটি শ্লোকে তাকে বিশেষ শিক্ষা দিয়ে বল্ছেন-_ 
“কুতত্বা কশ্মলমিদং বিষমে সমুপস্থিতম্‌। 
অনা্ধ্যজু্টমন্বগ্যমকীত্তিকরমর্জবন ॥ রি 
ক্েব্যং মান্ম গমঃ পার্থ নৈতত্বয্যুপপদ্ধতে |. 
রং হাদয়দৌর্ব্বল্যং তজোত্তিষ্ পরস্তপ ৪৮ 
“হে অর্জন, এই সময়ে তোমার মোহ কোথা থেকে 
এল? তোমার মত শ্রেষ্ঠ লোকের স্বর্গের পথে বাধা/ 
দিতে এমন মোহ কেনই বা এল? হে অর্জুন, এ 
ক্লীবতা ত্যাগ কর। এ হৃদয়ের দুর্বলতা তোমার' 
মতন শক্তিমান পুরুষে শোভা পায় না। 'দূর করে 
দিয়ে ওঠ, লড়াই কর। ওই থেকে একটা বিশেষ 
উপদেশ আমরা পাই,__ঘেটা মোহ আনে, দুর্বলতা আনে 
টি 
সেইটাই মহাপাপ। মনের সম্বন্ধে যেমন, শরীরের 
সন্বন্ধেও তেমনি। শারীরিক দূর্বলতা যাতে আনে, 
সেটা করাও পাপ। আজকাল ছেলেদের পাশের 
পড়ার ঝৌকে শরীরের দিকে কোন দৃষ্টি থাকে না। 
এটা যে একটা পাপ, সে ধারণা আমাদের নেই। 
বিশ্ববিদ্ভালয় থেকে ছেলেরা বেরোবার পর আর তাদের 
শরীর বয় না। তার! হাত পার ব্যবহার একেবারে 
ভুলে যায়। ফল, অনেক কার্যে অক্ষমতা । শরীর 
২১ 


বদ্ধ দৃষ্টি রাখা বিশেষ দরকার। না রাখলে দূর্বলতা 
আনে। শরীর ও মনের সম্বন্ধে যা অত্যাচার কর্বে, 
তার ফল ভুগতে হবেই হবে। 

অঞ্জুন তার পর বল্ছেন, ভীম্মের সঙ্গে যুদ্ধ কর্ব 
কি করে? গুরু দ্রোণকে মার্ব কি করে? তার 
পরই দেখতে পেয়েছেন, মুখে যে ধর্মভানটা কর্ছেন, 
মনে তা নেই (মন টের পায়কি না।) আর 
»বল্ছেন”_ 

£কার্পণ্যদোযোপহতম্বভাবঃ পৃচ্ছামি ত্বাং 
ধর্মমসংমূঢ়চেতাঃ। 
যচ্ছেয়ঃ স্তান্িম্চিতং ব্রহি তন্ে শিশ্বাস্তেহহং 
শাধি মাং ত্বাং প্রপন্নম্‌॥৮ 

'আমার কার্পণা দোষ এসেছে, আমি দয়ার পাত্র 
হয়েছি। (কৃপণ শব্দ দয়ার পাত্র, এ অর্থে ব্যহত 
হত।) 'মনের আঁট গ্েছে। সব গুলিয়ে গিয়ে একটা 
দয়ার পাত্র হয়েছি। তাই প্রার্থনা কর্ছি, অনুনয় কর্ছি, 

[আমি তোমার শিষ্য, শিক্ষা দাও তখন শ্রীক্ণ 

অঞ্জনের মনে গোলমাল কোথা হতে হয়েছে, তাই ধরে 
বল্ছেন,_ 

“অশোচ্যানম্বশোচত্বং প্রচ্জাবাদাংশ্চ ভাষসে।” 

'তুমি পণ্ডিতের মত কথা বল্ছ, কিন্তু পণ্ডিত যে 

২২ 


কে 


জন্য শোক করেন না, তুমি ভাই আনে ৩ 
করছ। এই ছুই বথায় অঙ্জনকে খুব ঘা দেওয়া 
হল। প্তিতেরা কি বলেন? কোন্টা নিত্য? শরীর 
ত পরিবর্তনশীল । পণ্ডিত লোক এই অনিত্য শরীরের 
জন্যে কখনই শোক করেন না। তুমি শোক কর্ছ। 
অতএব তোমার মন মুখ এক নয়, তুমি পণ্ডিত নও। 
আমরা ভগবান ্রীকৃষ্ণের এই কয়টি কথায় ধর্মারাজোর 
আবশ্যকীয় প্রধান ছুটো জিনিষ দেখলুম। প্রথম, কোন- 
রূপ ছূর্ধলতা আস্তে দেওয়। হবে না। তা হলে 
উদ্দেশ্য লাভ বহুদুর। দ্বিতীয়, মন মুখ এক করতে 
হবে। এই ছুট উপদেশ যদি জীবনে পাঁলন করতে 
. পারি, তা হলেই উন্নতির দ্বার মুক্ত হবে। যে 
যে পরিমাণে এই ছুটো পালন করেছে, সে যেখানেই থাক্‌, 
সংসারে বা সংমারের বাইরে, দেই পরিমাণে স্হার্থ 
কাঁজ তার দ্বারাই হবে। 


সাপ 


হত 


দ্বিতীয় অধ্যায় 
জ্ানযোগ 


(২৭ে অগ্রহায়ণ, ১৩ই'ডিসেম্বরে কলিকাতা 
বিবেকানন্দ সমিতিতে প্রদত্ত 
বক্তৃতার সারাংশ ) 


গতবার আমর! ছুটি কথা বিশেষরপে শিখেছি। 
প্রথম দুর্বলতা, শারীরিকই হোক, বা মানসিকই' হোক 
ঘা থেকে আসে, মৈ সমস্তই পাপ; অতএব তা একে- 
বারে ত্যাগ কর্তে হবে। কারণ, সে সময়ে মানুষ 
মোহে আছন্ন হয়ে শান্্রবাকা, গুরুবাক্য প্রভৃতি সব. 
ভুলে যায়। দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, মন মুখ এক করতে 
হবে অর্থাৎ পণ্ডিতের মত কথা বলা অথচ কাজে অষ্ট 
রকম করা চল্বে না। পরমহংসদেব বল্তেন, মন মুখ 
এক করাই প্রধান সাধন। সকল স্থানে সব বিষয়েই 
এ মতা । কি ধর্ম সম্বন্ধে, কি সাংসারিক বিষয় সম্বন্ধে, 
সব জায়গায় এর দরকার। অনেকে হয়ত বল্বেন যে, 
মন মুখ এক করে ধর্ম কর্ম হতে পারে, কিন্তু সংসার 

২৪ 


জ্ঞানযোগ 


করা চলে না। কিন্তু সেটি ভুল। জগতের নানাবিষয়ের 
উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে আজকাল মানুষ বেশ বুঝতে 
পার্ছে, বাণিজ্য ব্যবসায় প্রভৃতি ঘোর সাংসারিক 
বিষয়েও যে যত পরিমাণে উদ্ম আন্তে পার্বে, যত 
পরিমাণে মন মুখ এক করে খাট্তে পার্বে, তত 
পরিমাণে তার উন্নতি। , কি 

গীতা সম্বন্ধে আর একটি কথা৷ জানা আবশ্যক। 
দ্ধক্ষেত্রে ভগবান্‌ শ্রীকষ্চ অঙ্জ্নকে গীতা বলেছিলেন ।, 
সে কথা শুন্লেই বা কে) লিখলেই বা কে? যুদ্ধক্ষেত্রে 
ত ব্যাসও ছিলেন না, সঞ্ধয়ও ছিলেন না, অথচ গীতা 
পাঠে দেখতে পাই, রাজা ধূতরাষ্ট্রের অনুচর স্তয় তার 
প্রভৃকে গীতা বল্ছেন আর মহধি ব্যাস তা গ্লোকাকারে 
মহাভারতনিবদ্ধ করেছেন। তারা জান্লেন কি রকম 
করে? গল্প আছে, ধৃতরাষ্্ী অন্ধ ছিলেন। কুরুক্ষেত্র 
যুদ্ধের বিবরণ জান্বার জন্তে মহধি বেদব্যাসের নিকট 
প্রার্থনা করায় ব্যাস তাকে দিব্যদৃ্টি দিতে চেয়েছিলেন, 
কিন্ত তিনি তা নিলেন না। তখন মহধি ব্যাস তার 
বাসনা পূর্ণ কর্বার জন্যে এ যোগমৃষ্টি সঙয়কে দিয়ে- 
ছিলেন। তাই সঙয় যুদ্ধক্ষেত্রের সব ব্যাপার দেখছেন 
আর ধুতরাষ্্কে বল্ছেন। 

আজকার বিষয় জ্ঞানযোগ। মানুষের যখন মোহ 

০ 


* গীতাততব 
আসে, তখন আত্মগ্জান ছাড়া আর কিছুই তাকে ঠিক 
পথে নিয়ে যেতে পারে না। যখন আত্মীয় স্বজন কেউ 
মরে যায়, বা জীবনপ্রবাহের একটা ভয়ানক পরিবর্তনরূপ 
. আবর্ত এসে উপস্থিত হয় আর ক্ষুদ্র মানুষের যত কিছু 
মতলব এক ঘায়ে সব ভেঙ্গে দেয়, সেই শোকের সময় 
আত্মজ্ঞান যদি কারও থাকে, তবেই সনে ঠিক থাকতে 
পারে। এইবূপ পরিবর্তন মকলেরই জীবনে কখন না 
,কখন এসেছে বা আস্বে। ঞ্জুরনের জীবনে এই 
মহাসমর সেই পরিবর্তন এনেছিল। ভগবান স্ত্রীকে 
'উপদেশে আত্মজ্ঞান সহায়ে বীরাগ্রণী অঞ্জন জীবনের 
এই মা সন্বি্থল সহজে উত্তীর্ণ হয়ে উন্নতির দিকে 
ধাবিত হয়েছিলন। কিন্তু কত লোকই না এরূপ 
স্থলে আশার আলোক না দেখতে পেয়ে পথহারা হয়ে 
অবনতি ও মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে! সে জন্যে গীতার 
প্রথমেই 'আত্বস্জানের উপদেশ। অর্জনের প্রতিও বটে, 
আর সর্বদেশের, সর্বকালের, সকল মানবের প্রতি 
' বটে। এই জম্ে পরমহ'সদেবও শিক্ষা দিতেন, 'অধৈত- 
জান আঁচলে বেধে যা ইচ্ছা তাই কর, সংসারের মধ্যে 
দব পরিবর্ধনশীল। জড়রাজ্যের অন্তভূতি সকলেই এই 
নিয়মের অধীন। কোথায় যাচ্ছে কি উদ্দেক্টে, কে 
বলৃতে পারে? পরিণামবাদীরা (01801001868) 


ত্৬ 


বলেন, ক্রমোক্পতি হচ্ছে; হবার উদ্দেশ্ঠ কি। তা বলতে 
পারেন না। বীজ থেকে গাছ, ফুল, ফল হচ্ছে; এর 
উদ্দেশ্য কি! কিসের জন্য এ খেলা? মানুষের মনে 
সর্ববযুগে সর্বদাই এই প্রশ্ন উদয় হয়েছে ও হচ্ছে, কিন্ত 
এ পর্য্যন্ত কোন উত্তর পায় নাই। ইউরোপের পণ্ডিতের 
বলেন, এর উদ্দেশ্য এক অপূর্ব সর্ববাসুসম্পন্ সমাজ- 
শরীর গঠন করা । আমাদের শাস্ত্রে বলে, এই যে সৃষ্ট 
স্থিতি ও লয়ের শৃঙ্খলরূপ বিচিত্র জগতকার্ধা চলেছে, 
এ অনাদি। এই যে ব্যাপার, এ ভগবানের দিক্‌ 
থেকে দেখলে উদ্দেশ্টবিহীন লীলা বিলাস বা খেলা 
মাত্র বোধ হয়, কারণ, বিশ্বস্থজনে ভগবানের ঈকোন 
এক উদ্দেশ্য সাধনের ইচ্ছা আছে বল্লে তাতে অপূর্ণতা 
দোষ উপস্থিত হয়। তাই শান্ত্রকারেরা বলেন, স্ষ্ি 
তার খেলামাত্র। তিনি যে স্থা্টি করে বড় হলেন 
বা ছোট হলেন, তা নয়। কিন্তু আমাদের দিক্‌ থেকে 
দেখলে অর্থাৎ মানুষ এ জগতে এসে নান! চেষ্টা কেন 
করছে, এ কথা ভাবলে উদ্দেশ্য এই বোধ হয়, সংসারবন্ধন 
কেটে আত্মজ্ঞান লাভ করা, পূর্ণত্ব লাভ করে সমস্ত 
ছ:খ কষ্টের হাত অতিক্রম করা। সঙ্গে সঙ্গে এও 
বল! যায় যে, এরূপ ইন্দজ্রিয়জিও, আত্মঙ্ঞানী, সর্বববিষয়ে 
সম্পূর্ণ জীবনুক্ত মনুত্যসমাজ সর্ববাঙ্গপূর্ণ হবে অর্থাৎ সে 
২৭ | 


'গীতাতব 
সমাজে সকল অঙ্গের মনের ভিতরের অভাব সম্পূর্ণরূপে 
দুর হওয়ায় সদা শান্তি ও আনন্দ বর্তমান থাকৃবে। 

শ্রীকৃষ্ণ যখন দেখ লেন, অর্জ,নের এ মোহ, আত্মঙ্ঞান 
ভিন্ন যাবার নয়, তখন তিনি' বলুলেন--" 

“ন ত্বেবাহং জাতু নাসং ন ত্বং নেমে জনাধিপাঃ1৮ 

তুমি, আমি যে কখন ছিলাম না বা থাকৃব না, 
তানয়? আত্ম! অজর, অমর। এই শরীর জড়। যে 
জিনিষ জড় হতে উৎপন্ন, তাকে জড়ের নিয়মে থাকৃতে 
"হবে। যা সুম্মম জড় অর্থাৎ মন হতে প্রন্ত, তা৷ 
*সৃক্ষের নিয়মে চল্বে। যা জড় হতে উদ্ভূত, তাকে 
নিত্কাল, ধরে রাখবার চেষ্টা বৃথা। জড়ের নিয়ম 
পরিবর্তশীলতা। তাকে পরিবপ্তিত হতে দেব না, 
এক ভাবে টিরকাল রাখব, এ চেষ্টা মূর্ের কাজ, 
অজ্ঞানের কাজ। সংসারে এ চেষ্টা প্রতিনিয়ত হচ্ছে। 
কোন মময়ে যুধিষ্টিরকে বকরূগী ধর্নন জিজ্ঞাসা করে- 
ছিলেন, জগতে আশ্চর্য কি? যুধিষ্ঠির উত্তর দিলেন-__ 

“অহম্যাহনি ভূতানি গচ্ছন্তি যমমন্দিরং | 
শেষাঃ স্থিরত্বমিচ্ছস্তি কিমাশ্চর্য্যমতঃপরম্।॥” 

রোজ রোজ লোক মর্ছে, দেখতে পাচ্ছি। সংসারের 
মধ্যে এমন কেউ নেই যে, একজনকে-না-একজনকে 
মর্তে দেখেনি। তবু সকলেই এমন ভাবে কাজ বর্ছে, 

[ও ২৮ 


জ্ঞানযো্গ 


যেন সে অমর। সকলের ভেতরেই এই জড় শরীরকে 
চিরকাল ধরে রাখ বার বাঞ্া। 

জড়ের ষড়বিকার আছে। জম্ম, কিছুকাল অস্তিত্ব, 
বৃদ্ধি, পরিণতি বা সুপক্াবস্থা, ক্ষয় বা হাস ও বিনাশ, 
এই ছয় অবস্থাভেদ। শান্তর বলেন, মনও লু জড় 
হতে তৈরী। অনেক ইউরোগীয় পণ্ড বলেন, 
71100) 3010, ৪০0] সব একই জিনিষ। আমাদের 
দেশে চার্বাকের মতও তাই! মন বা আত্মা মস্তিষষের্‌ 
কার্ধ্য মাত্র। মস্তিফের সঙ্গে সঙ্গে এর উৎপত্তি ও 
লয় হয়ে থাকে। কোন কোন পরিণামবাদী পণ্ডিত 
বলেন, মনটা মস্তিক্কের কাধ্যমাত্র নয়। ও এক 
স্বতন্ত্র পদার্থ-এ সর্বদা 'আমি'। “আমি কর্ছে, 
এবং এ আত্মা। কিন্ত প্রত্যক্ষ দেখতে, পাচ্ছি, 
মানসিক শক্তির হ্রাস বৃদ্ধি আছে। মনও জড়ের হ্যায় 
পরিবর্তনশীল--এ কিরূপে আত্মা হবে?" অতএব 
শান্্কারেরা বলেন, আত্মা স্বতন্ত্র পদার্থ। শরীরের ছারা 
যেমন মনের দ্বারাও তেমনি কাজ করাচ্ছেন বা 
চালাচ্ছেন। প্রশ্ন হতে পারে--মন খারাপ হলে পাগল 
হয়; আত্মা যদি মন থেকে স্বতন্ত্র পদার্থই হবে, তবে 
শরীরের এবং মনের পরিবর্তন তাতে লাগে কেন? 
তাকে অন্যরূপ করে দেয় কেন? উত্তরে বল! যেতে 

২৯ 


' গীতাতন্ব 
পারে, আত্মা কিছুতেই পরিবত্তিত হন না, তবে যে 
পরিবর্তন দেখা যায়, তার অন্য কারণ আছে। ধর_- 
একজন এক্টা বেহাল! বাজাচ্ছে, হঠাৎ তার ছিঁড়ে 
গেল, আর বাজ্ল না। এ স্থলে যে বাজাচ্ছে, 
তার দোষ, না, বেহালার দোষ? সেইরূপ আত্ম। 
রূপরসগন্থু প্রভৃতি ভোগ কর্বার জন্যে মন ও দেহরপ 
য্ত্র স্ট্রি করেছে। এ বিকল হলে আর কাজ 
য় না। কিন্তু যন্ত্র বিকল হয়ে পূর্বে ম্যায় আওয়াজ 
না বেরুলেই আত্ম যনত্রী যেমন তেমনি থাকে । আমাদের 
শান্তর এইরূপ শরীর ও মন হতে আত্মার পার্থক্য 
দেখিয়েছেন! শরীর ও মন জড়, আত্ম। চি ব! 
জ্ঞানম্বরূপ। শরীরের ন্যায় মনেরও উৎপত্তি, স্থিতি 
এবং বিনাখ। আত্ম! নিত্য ও অবিনাশী। 

“নিত্যঃ সর্ববগতঃ স্থাণুরচলোহয়ং সনাতনঃ1৮ 

আত্মা নিত্য, পরিবর্তনরহিত এবং সকলের মধ্যে 
একভাবে রয়েছেন? 

“দেহিনোইম্মিন্‌ যথা দেহে কৌমারং যৌবনং জরা। 

তথা দেহাস্তরপ্রাপিধারস্তত্র ন মুহাতি | 

“এই দেহীর দেহে যেমন কৌমার, যৌবন, জরা 
আস্ছে, মরে গেলেও তেমনি একটি দেহ আসে অথবা 
পুনর্জন্ম হয়। আমাদের শরীরের যেমন বৃদ্ধি, পূর্ণতা 


৩৩ 


জ্বানযোগ 
এবং হ্থাসরূপ নান! পরিবর্তন আছে, দেহাস্তর প্রাপ্ত 
হওয়াও তেমনি একটা ।' শাস্ত্র আরও বলেন যে, এ কথা 
আমরা যোগের দ্বারা প্রত্যক্ষ জান্তে পারি। 
আত্মা পরিবন্তিত হন না। জিজ্ঞাসা করা যেতে 
পারে, তবে ভোক্তা কাকে বলি? কে ভোগ করছে? 
কে সুখী, ছুঃখী হচ্ছে? বেদ বলেন, যত্ক্ষণ আত্মা 
আপনাকে ইন্দ্রিয় ও মনযুক্ত বোধ করেন, ততক্ষণই 
তিনি ভোক্তা থাকেন, যখন ইন্দ্রিয় ও মনের সহিত 
সম্বন্ধ ঘুচে যায়, তখনই আত্মা আপনার যথার্থ পূর্ণ- 
স্বরূপ অনুভব করেন। শানে তাই বলে, আমরা 
যে আপনাদিগকে মন ও ইলন্জরিয়যুক্ত ভাবছি, এটাই 
আমাদের কারণ-শরীর। কেননা, যথার্থ আমরা কে, 
এ কথাটি ভূলে গিয়ে যদি আমরা আমাদিগকে শরীর ও 
মনবিশিষ্ট বলে না ভাবতুম, তা হলে অজ্ঞান, ছুঃখ 
ও মৃত্যু প্রভৃতি কিছুই আমাদিগকে স্পর্শ ' করত . না। 
এ ভুলে যাওয়াটাই যত নষ্টের গোড়া, অতএব এঁটেই 
কারণ-শরীর। কেবল মাত্র জ্ঞানলাভেই এই. শরীরের *. 
নাশ হতে পারে, অন্ত কোন উপায়ে হয়: না। 
কিন্ত আপনার স্বরূপ ভূলে গেলেও আত্মার বাস্তবিক 
ক্ষতি বৃদ্ধি নেই, আত্মা চিরকাল পূর্ণ। মনবিশিষ্ট, 
ইন্জ্রিয়বিশিষ্ট বলে ভাবলেই কি যথার্থ তাই হবে? 


৩১ 


গীতাতত্ব 
না, আত্মা যেমন তেমনি ঠিক আছে। পরমহংসদেব 
বলতেন, যেমন চকমকি পাথর চারশ বছর জলের 
ভেতর রাখ, তুলে এনে ঢুকলেই যেকে সেই, আগুন 
বেরুচ্ছে, আতআআমাও ঠিক তাই। শরীর মনকে যখনই ও 
দেখে বন্ধন, তখনই তা ফেলে দিয়ে আপনি কে, জেনে 
নেয়। আমরা সংসাররপ স্বপ্ন দেখছি। স্বপ্নও ত 
নানা রকম দেখি। যেন আমি মরে গেছি, যেন আমায় 
একজন কেটে ফেলেছে, রক্তের ধারা বয়ে যাচ্ছে আর 
কাটা মুণ্ড ও ধড়টা সামনে পড়ে রয়েছে, আবার 
জীগলেই কোথাও কিছু নেই। স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়। 
সকলেই একদিন তেমনি জেগে উঠবে। সেই জন্যেই 
শান্ত্কার যাস্ক বলেন, আত্মজ্ঞজানে আধ্য, ম্েচ্ছ, ব্রাহ্মণ, 
শূদ্র সকলের সমান অধিকার। সকলকে তা শিখাও। 
কে জানে, কার আত্মা কখন জাগরিত হবে? 
পরমহংসদেধ বলতেন, যদি তীব্র বৈরাগোর উদয় হঘ 
ত তিন বছরে, তিন মাসে বা তিন দিনেও আত্মজ্ঞান লা৬ 
হতে পারে। 

-গীতাও বলেন_ 

্তবাস্তামস্তকালেইপি ত্রদ্ধনির্ববাণমৃচ্ছতি 1৮ 

মৃত্যুকালে যদি ক্ষণমাত্রও এই জ্ঞানের উদয় হয় ত 
সমস্ত অঙ্ঞান নাশ হয়ে ব্রন্মের সহিত মিলিত হয়।” 

৩২ 


জ্ঞানযোগ 


এই আত্মজ্ঞানই বেদের মূল ভিত্তি, ভারতের একমাত্র 
জাতীয় ধন। ভারত হতেই অপরাপর দেশে এই জ্ঞানের 
প্রচার হয়েছে। যেদিন ভারত এই জ্ঞানের কথা 
তুলবে, মেদিন জাতীয়দ্বের সঙ্গে সঙ্গে তারও নাশ হবে। 
অপরাপর দেশের লোকের এই জ্ঞান যথাযথ বুঝতে 
এবং অনুভব করতে এখনও ঢের দেরি।* ধর্মরাজ্যে 
এখনও আমর! জগতের গুরুত্থানীয় রয়েছি। ইংরাজ 
প্রভৃতি অপরাপর জাতকে বাণিজ্য, রাজনীতি, যুদ্ধা্দি 
অপর সমস্ত বিষয়ে গুরু স্বীকার করে শিক্ষা করে! 
কিন্তু ধর্মে এ স্থানটা অধিকার করবার এখনও তার! 
উপযুক্ত হয় নি। ধর্মের জীবন্ত মৃত্তি পরমহংসদেব 
প্রমুখ সাধুদের ছেড়ে বিদেশী, বিধন্মীর নিকট আপন 
ধর্মের মহিমা শুন্তে যাওয়ার চেয়ে মূর্খতা আর কি 
হতে পারে? আজকাল কোন কোন সম্প্রদায় বৈদিক 
ধর্মের ছুচার্ুটে তন্ব আপনাদের ভিত্তর উল্টো করে 
ঢুকিয়ে নিয়ে যথার্থ ধর্ম বলে শিক্ষা দিষ্ছে। কেউবা 
বল্‌ছে। এককোটি জন্মের পর মানুষ চাক আর নাই 
চাক, মুক্ত হবেই হবে এবং তার আত্মজ্ঞান হবে। 
এরূপ কর্মবাদ ঘোর অুষ্টবাদ ভিন্ন আর কিছুই নয়। 
বেদ কখন এরূপ শিক্ষা দেন না। বেদ বলেন, মানুষ 
মনে করলে এখনি মুক্ত হতে পারে, অথবা না মনে 

৩৩ 


গীতাতত্ 
করলে অনন্তকাল সপ্ন দেখতে পারে। মানু মুত 
হবার একটা নির্দিষ্ট সময় কোথাও দেওয়াও হয়নি। 
পুরণাদিতেও বলা আছে মাত্র যেঃ চুরাশি শট যোনি 
দ্রমণ করে জীব মনুষ্য জন্ম পায়। মুক্তির একটা 
নির্দিষ্ট সময় কেমন করেই বা হতে পারে? নস 
মরণাদিতে" আত্মার ত কোন দোষ বাস্তবিক লাগে নি। 
আত্মা যেন নিপ্রিত; যেদিন ঘুম ভাঙ্গবে, সেদিন 
মুক্ত হবে। আত্মা সর্বশক্তির আধার ; যেদিন তা 
উপলব্ধি করবে, যেদিন জান্বে, আমি রাজ্জার 
ছেলে, সেদিনই স্বস্থানে চলে যাবে, আপন মহিমায় 
বর্তমান থাকবে। কোন কোন সম্প্রদায় বলছেন, 
*চিরতুষারাবৃত গিরিশুক্গনিবাসী ফুক্তাত্মাদিগের সহিত 
তাহারা বিশেষ মন্বন্ধে অবস্থিত। নিত্য তাহাদের সহিত 
দর্শন ্পর্ণন এবং পত্র প্রেরণাদি পর্যন্তও হইয়া থাকে।' 
বেশ কথা? হয়ে থাকে হোক! কিন্তু বেদ পুরাগাণ 
ধর্দগ্রন্থে যখন তাদের কিছুমাত্র নামগন্ধ নেই, তখন 
তাদের পরিচয় নেবার জন্যে আমাদের ব্যগ্র হবার 
প্রয়োজন নেই। আঘ়ু অল্প; যে যা বল্বে, তাই 
নিয়েই ছুটোছুটি করে হয়রান হবার সময় কোথা? 
আত্মায় সুখ দুঃখের লেশ লাগছে না; তিনি পূর্ণ। 
কিন্তু শরীর এই জড়রাজ্যের নিয়ম অনুযায়ী পরিবপ্তিত 
৩৪ 


জ্ঞানযোগ 


হচ্ছে। এখন প্রশ্ন হতে পারে, মানুষের মর্বার সময় 
কি হয়? স্থল শরীরটা, যেটা নিয়ে মন খেল্ছে, তখন 
একেবারে বিকল হয়ে যায়;-তখন লোকে ছেঁড়া 
কাগড় ছেড়ে ফেলে দিয়ে যেমন নূতন কাপড় পরে, 
আত্মা তেমনি জীর্ণ শরীর ত্যাগ করে নৃতন শরীর 
ধারণ করে আর এই শরীরে যে সমস্ত চিন্তা, চেষ্টা 
ও কাধ্য কর! হল, তার সংস্কার মনের সঙ্গে থেকে 
যায়।. মন, বুদ্ধি, দশ ইন্দ্রিয় এবং রূপরসাদির সংস্কার 
এইগুলি আত্মার সূক্ষ্ম শরীর। সৃঙ্ষ শরীর সূক্ষ্ম জড়ে 
পরস্তত। মন ও ইন্জ্রিয়াদি বিশিষ্ট সৃক্সু শরীর স্ুল 
শরীরের মৃত্যুতে নষ্ট হয় না, মৃত্যুর পরেও আত্মার 
সহিত সংযুক্ত থাকে। অথবা স্থুল শরীরটা ফেলে দিলে 
আত্মার, আমি শরীর ও ইন্দ্রিযবান, এ বোধ নাশ 
হয় না। তখন পূর্র্ব শরীরের সংস্কারানুযায়ী হয়ে আত্মার 
অন্য একটা স্থল শরীর ধারণের বা গঠমের ইচ্ছা হয় 
এবং যে পিতামাতার ওরসে জন্মিলে পন সংস্কার- 
বিকাশের উপযোগী শরীর পাওয়া যাবে, তাদের নিকট 
আকৃষ্ট হয়। পূর্ববানুিত কর্মাই তাঁকে আকর্ষণ করে 
নিয়ে যায়! এ সুজ্ত্র শরীরের দৈর্ঘ্য, বিস্তার বা গুরু- 
ত্বাদি নাই এবং গর্ডাধানের দিন হতেই মাতৃগর্ভে 
অবস্থান করে। ন্ুক্ম শরীর চক্ষু দিয়ে দেখা যায় না 
৩৫ 


গীতাতত্ব রি 
বটে। কিন্তু সেটাও জড়। বায়ু এবং আকাশের 
চেয়েও তা সুক্ষ । মৃত্যুর পূর্বের স্থুল শরীরের সাহায্যে 
যতদুর শিখে গেছে, নূতন জন্মে নূতন স্ুল শরীর পেয়ে 
আত্মা তার পর থেকে কাজ আরম্ভ করে এবং জ্ঞানলাভ 
করতে থাকে। 

পূর্বে যা বলা হল, তা থেকেই বেশ বোঝ! 
যায়, কেন আমরা সকলে সমান বিদ্যাবুদ্ধি সম্পদ 
নিয়ে সকল বিষয়ে সমান হয়ে সংসারে জন্মাই না, 
কেনই বা সংসারে একটি মানুষের শরীর মন আর 
একটির সঙ্গে সমান হয় না? কেনই বা মানসিক, 
আধ্যাত্মিক, ' সকল বিষয়েই আমাদের ভিতর 
স্বাভাবিক প্রভেদ বর্তমান? পুনর্জন্মবাদ হতেই এর 
বেশ মীমাংসা হয়। পিতার দৌষগুণ সন্তানে আসে, 
এই কথা বলে আধুনিক ইউরোগীয় পণ্ডিত এই 
সরবববাদিপ্রত্যক্ষ ভেদ বা বৈষম্যের মীমাংসা! করেন, 
. কারণ, শারীরিক নান প্রকার রোগ, মানসিক অশেষ- 
বিধ দোষ বা গুণ পিত| হতে অনেক পরিমাণে সস্তানে 
আসে-এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। যে সব স্থলে*দেখা 
যায়, ছেলে বাপের মত আদৌ নয়, সেখানে তারা 
শিক্ষার তারতম্য কলে বোঝাবার চেষ্টা করেন। 
এইরূপে দোষটা সুব বাপের ও গুরুর উপর এসে গড়ে। 

৩৬ 


জ্ঞানঘোগ 


তার! উক্ত ব্যক্তিগত বৈষম্যের অন্য সমাধান দিতে 
পারেন না। আমাদের শাস্ত্র বলেন, এ প্রভেদ কর্ম 
অনুসারে হয়। মানুষ যখনি যে কাজ করে, তা কোন 
বিশেষ উদ্দেশ্যে করে এবং এ উদ্দেশ্য লাভ কর্‌তে তার 
নিজের ভেতরের এবং বাইরের কতকগুলি শক্তিকে 
এক বিশেষ ভাবে চালিত করে থাকে । এ সকল 
শক্তি যখন জাগরিত ও চালিত হল, তখন ফলম্বরূপ 
কতকগুলি পরিবর্তন এনে দেবেই দেবে। এ পরিবর্তন: 
গুলিকে আবার তার মন ভাল বা মন্দ, সুখ বা ছুঃখ 
বলে বোঝে বা অনুভব করে। যদি ভাল বা সখ 
বলে বোঝে, ত মন সেগুলিকে চিরকাল ধরে 
নিজন্ব করে রাখতে চায়। আর যদি মন্দ বাছুঃথ 
বলে বোঝে বা ভবিষ্যতে সেগুলি নিশ্চিত দুঃখ এনে 
দেবে এমনও বোঝে, তা হলে মন সেগুলিকে যে কোন 
উপায়ে হোক, তাড়াবার চেষ্টা করে। এইরঁপে বীজ 
থেকে যেমন গাছ হয়, আবার সেই গাছে ফুল ফল ও 
বীজ উৎপত্তি হয়, সেইরূপ এক কন্ম হতে সুখ বা' 
ছু'খ ভোগ এবং অপর কর্ধও এসে উপস্থিত হয়। অনেক 
কর্মের ফল বা সুখদুঃখ ভোগ হবার এ জন্মে সময় হল 
না, দেখতে পাওয়া যায়। কাজেই তা পরজম্মে হয়ে 
থাকে। . 
৩৭ 


গীতাতব 


বেদান্তে মনুষ্যকৃত মকল কর্মের পাচ ভাগে বিভাগ 
করা হয়েছে, যথা_নিতয, আগামী, সঞ্চিত, প্রাব্ ও 
প্রতিষিদ্ধ। নিত্য কর্ম শৌচ, সন্ধাদি প্রত্যহ কর্তেই 
হয়। করুলে বিশেষ ফল নেই, না, করলে দোষ আছে। 
্রতিষিদ্ধ কর্গুলি কর্তে শাস্ত্র নিষেধ করেন, যেমন, 
ছুরি করো না, খুন করো না ইত্যাদি। সঞ্চিত কর্ণ- 
গুলি মানু পূর্ব পূর্ব জন্মে করে ফেলেছে, কিন্তু 


0. 


এখনও তাদের ফল ভোগ করতে বাকি রে 





'জন্মে ভাল বা মন্দ শরীর, মন ও নানা চেষ্টা ৫: 
হয়েছে। 'এইগুলির নামই প্রারূ। আর ;* 
জন্মে অনুষ্ঠিত কর্মগুলিকে বা যে কর্মগুলির ফলে 
জন্ম হবে, তাদের আগামী কর্ণ বলা হয়েছে। আগ) 
সঞ্চিত ও প্রারন্ধ, এই তিন প্রকার কর্ধ বোঝাবার জন্ে 
মং শক্করাচারধ্য তার রচিত "গ্রন্থে একটি বেশ দৃষ্টান্ত 
দিয়েছেন। যথা_একজন লোক ধনুক ধরে তীর 
' ছুড়ছে। একটা তীর ছুড়ে ফেলেছে। একটা ছুড়ংবে 
মনে করে ধুকে লাগিয়েছে আর কতক- 
গুলো তার পিঠে বাধা-_তুণে রয়েছে। যেটা ছুড়ে 
ফেলেছে, সেটা যেখানে হয় .লাগ্বে। এ তীরটার 
সঙ্গে প্রারন্ধ কর্মের তুলনা করা যেতে পারে। ই্র 
৩৮ 


জ্ঞানযোগ 


কর্মের উপর মানুষের কোন হাত নেই! এ কর্মের 
ফল তার শরীর মন ভোগ কর্বেই কর্বে। ইচ্ছা 
করলেও সে এ ফলভোগ রোধ কর্তে পার্বে না। 
সেই জন্যে মুক্ত পুরুষেরা 'আত্মজ্ঞান লাভ করেও 
প্রারন্ধ কর্মের ফল শরীরে ভোগ করেন । 

যে তীরট! ছুড়্‌বে বলে হাতে নিয়েছে *সেটাকে 
আগামী কর্মের সঙ্গে তুলনা করা যায়। এ ভীরটা 
যেমন সে ছুড়ুতেও পারে, ন৷ ছুড়তেও পারে সেই”. 
রূপ আগামী কর্ম মানুষ ইচ্ছা করুলে রোধ কর্তে পারে । 
যে তীরগুলি গীঠে বীধা রয়েছে, সেইগুলোর সঙ্গে 
তার সঞ্চিত কর্শের তুলনা হতে পারে। 

শান্ত্রকার বলেন, যে কর্ম কর্ছ তার ফলভোগ 
করতেই হবে। একটা কর্ম আবার অন্ত কর্ণ প্রসং 
করে। এইরূপে কর্ধ-বন্ধন দিনে দিনে জন্মে জন্মে 
বাড়তে থাকে। এর শেষ কবে হবে? যেদিন আত্ম- 
জ্ঞান লাভ হবে। মানুষ যেদিন দেখবে সে অখণ্ড, 
অধিনাশী, জরামরণরহিত পূর্ণানন্দময় আত্মা। সে কখন: 
ভোগ করেও নি, করুবেও না। শরীর ও মনই এতকাল 
কাজ করেছে ও ভোগ করেছে। জবাফুলের পাশে 
থাকাতেই রংটা কীচের গায়ে লেগেছে, কাচটা লাল 
দেখিয়েছে, তা বাস্তবিক কাচের রং নয়। 


৩৯ 


গীতাতত্ব 


অথচ শ্তুদ্ধস্ববূপ আত্মা আছেন বলেই সব 
কাজকর্ম চলেছে, অতএব সেই জ্ঞান লাভ হলেই আর 
কোন কর্মের জোর চলে না, সমুদয় কন্ম শেষ হয়ে যায়, 
জ্ঞানাগ্রির তেজে সমুদয় ভম্ম হয়ে যায়। 
“সর্ধ্বং কর্ম্মাথিলং পার্থ জ্ঞানে পরিসমাপ্যতে 1” 
“জ্ঞালাগিঃ সর্ববকর্ম্মাণি তম্মসাৎ কুরুতে তথা 1” 
এই জ্ঞান লাতই আমাদের জীবনের রে 
ন্ুখই ভোগ কর বা ছুঃখই ভোগ কর তোমার ৬ বনের 
উদ্দেগ্ত ওছুটোর একটাও নয়। সংঙগারে থাক ৭1 
ন্্যাসীই হোক্‌, ছাত্র-জীবনের মধ্যে বা ব্যবসা বাণিজ্যের 
ছুটোছুটির 'তেতর যেখানেই থাকুক না কেন, মানুষ সকল 
অবস্থায় এমন ভাবে কাজ কর্তে পারে, যাতে তার 
প্রত্যেক কাজই তাকে জ্ঞানের পথে এগিয়ে দেবে 
লোকে মনে করে বটে, কিন্তু ধর্ম জিনিষট! সংসার থে. 
আলাদা করে রাখবার যো নেই। এটা বোঝ ..র 
জস্তোই যেন গীতার উপদেশ আরম্ত হয়েছে রণভূমিতে, 
যেথায় হিংসা, দেষের তরঙ্গ গর্জাচ্ছে। উগ্ঠমরহিত 
হয়ে থাক্বার সাবকাশ মাত্র নেই এবং মানব-মনের 
পৈশাচিক প্রবৃত্িগুলোই নিঃসঙ্কোচে খেলতে দাড়িয়েছে । 
এখানে যদি ধর্শের সর্বোচ্চ উপদেশ ও অনুষ্ঠান চলে, 
তবে সংসারে আর এমন কোন্‌ স্থান আছে, যেখানে 
৪5০ 





জ্ঞানযোগ 


তা চল্বে না? যেধন্ম সকলের জন্যে নয়, সে ধর্ম কে 
চায়? তুমি স্থুখে থাক, শাস্তি পাও আর আমি 
ছুঃখকষ্টে মরি, এ শান্ত্রকারের ইচ্ছা, নয়। যথার্থ ধর্মের 
অনুষ্ঠান, গৃহস্থ জীবান বা সন্ন্যাস নিয়ে সব জায়গায় 
চল্বে। ধর্ম সকলকে এক জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে এবং 
বুঝিয়ে দিচ্ছে, “মানুষ তুমি যে পূর্ণস্বরূপ, তাই আছ, 
হাজারই কেন মনে কর না, তুমি ক্ষুদ্র; তোমার শরীর 
আছে, তোমার সখ ছুঃখ ভোগ হচ্ছে, তুমি মর্বে, 
ইত্যাদি, তুমি যা তাই আছ ও থাক্বে॥ ধর্ম 
বল্ছেন-- | 

“য এনং বেত্তি হস্তারং যশ্চৈনং মন্যাতে হতম্‌। 

উভোৌ তৌ ন বিজানীতো নায়ং হস্তি ন হস্তে ।” 

যে কেউ আত্মাকে হস্তা বলে মনে করেন কিংবা! মনে 
করেন আত্মা মরে, তারা উভয়েই আত্মাকে জানেন 
না, আত্মা জন্মেনও না, মরেনও না। 

“ম জায়তে মরিয়তে বা কদাচি।” 

(আত্মা ) কখনও জন্মেন না, বা মরেনও না? । 

“বেদাবিনাশিনং নিত্যং য এনমজমব্যয়ং। 

কথং স পুরুষঃ পার্থ কং ঘাতয়তি হস্তি' কম্‌।॥” 

“যিনি নিত্যন্বরূপ আত্মাকে জানেন, তিনি কাকেই 
বা মার্বেন, কার দ্বারাই বা হত হবেন? তিনি কিছুই 

৪১ . 


গীতাতত্ব 
করেন না। ত্ৰার শরীর মন আমরণ আপনা আপনি 
কাজ করে চলে যায়। সংকাজ, পরোপকার প্রভৃতি 
তার স্বভাবসিদ্ধ হয়ে যায় । 

দেখা গেল, আত্মজ্ঞান মানুষকে স্ৃখছুঃখের পারে 
নিয়ে যায়। সেই জন্তে মান্থুষ যখন শোকে মোহে অবশ 
হয়ে পড়ে, তখন আত্মজ্ঞান উপলব্ধি করিয়ে দেওয়া 
ছাড়া অন্য উপায় নেই। এ জ্ঞান উপলব্ধি না করে 
অঙ্জুনেরও শোক মোহ যায়নি। বিশ্বরূপ দর্শন না 
করে, এক মহাশক্তির হাতে যন্ত্ত্রূপ হয়ে রয়েছি, 
"এ কথা অনুভব না করে কারও কোন দিন অজ্জান- 
প্রত শোর মোহ ছূর্ববলতাদি লোপ হয় না। অর্জুন 
যধন দেখলেন যে, সংসারে কারও কিছু করবার ক্ষমতা 
নেই, তথুনি তার ভ্রম ঘুচলো, তখুনি তার শোক মোহ 
দুরে গেল। 


দ্বিতীয় অধ্যায়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শুধু যে এই আত্মতত্ 

বলে গেছেন মাত্র, তা নয়, কিন্তু সাধারণ ভাবে 
অঞ্জুনকে আরও অনেক বুঝিয়েছেন । বলেছেন, 
তোমার যশ যাবে, তোমাকে লোকে কাপুরুষ 
ঠাউরে অবস্তা করবে, তার চেয়ে তোমার মরণ ভাল 
ইত্যাদি। এ কথাগুলি অনেক সময় লোকে না৷ বুঝে 
দোষ দেয়। মনে করে, ভগবান প্রীক। এখানে কি 
৪২ 


জ্ঞানযোগ 
ছাই কথা বল্ছেন। তবে কি লোকে নিন্দা কর্বে 
বলে, ভয়ে অসৎ কাজগুলোও করতে হবে? না, 
তা নয়। একটু তলিয়ে দেখলে ভগবানের এ কথা- 
গুলিরও গভীর ভাব আছে দেখা যায়। দেখতে পাই, 
লোকে যার যশ করে, বাস্তবিক তার কোন-না-কোন 
বিশেষ গুণ আছে। যদি গুণ না থাকে, তবে সে 
যশ স্থায়ী হয় না। ভাল কাজ করুলে সাধারণ লোকে 
তোমার সৎ উদ্দেশ্য বিশেষ করে না বুঝলেও গুণ 
কীর্তন করে। কারও দোষ গুণ বিচার কর্বার জন্যে 
সম্মুখে ধরলে অশিক্ষিত, অজ্ঞ মানুষও বুঝতে পারে । ' 
কেন না, সকলের ভেতর ভগবান্‌ রয়েছেন, তার শক্তিতেই 
ভাল মন্দ বোঝ বার ক্ষমতাও তাদের স্বভাবতঃ রয়েছে। 
যদি তোমায় লোকে নিন্দা করে, তবে তার ছুটে! কারণ 
হতে পারে। হয় লোকে তোমায় বুঝতে পারে না, 
তুমি এত উন্নত অথবা তুমি যথার্থ নিন্দার পাত্র। সে 
স্থলে আপনাকে তোমার প্রথমত; বোঝা দরকার । 
স্থির ভাবে আপনাকে খুব তন্ন তন্ন করে দেখে তবে" 
লোকের কথা তোমার উপেক্ষা করা উচিত। তাই 
ভগবান অর্জুনকে প্রথমেই দেখালেন যে, মোহের জন্েই 
তার এই ভাবের উদয় হয়েছে--ভয় হয়েছে-__-তাই তিনি 
যুদ্ধ ছেড়ে পালাবার চেষ্টা কর্ছেন। তাই অকারণ 
৪৩ 


গীতাতত্ব 
লোকে তার অযশ কর্বে না, এ কথা তার জানা উচিত 
এবং মোহ ছাড়া উচিত, 
ভগবান তার পর বল্ছেন-- 
«অথ চৈনং নিত্যজাতং নিত্যং বা মন্াসে মৃতম্‌। 
তথাপি ত্বং মহাবাহো নৈনং শোচিতুমসি ॥৮ 
'আত্মা নিত্য জন্মাচ্ছেন ও নিত্য মর্ছেন, এ কথাও 
যদ্রি স্বীকার কর, তা হলেও তোমার শোক করা 
,উচিত নয়" কারণ, মরুতে হবে, এটা সকলে জানে। 
যে দিন থেকে ছেলেটা জন্মাল, সে দিন থেকে সে 
" মর্বার দিকেই এগুতে লাগল। তাই বল্ছেন, এই 
অপরিহার্ধ্; বিষয়ের জন্তে ভাবলে কি হবে? শরীর 
ত নিশ্চিত যাবেই। আবার জন্মাবে। তবে তার 
জন্যে আর শোক কেন? এ বিষয়ে শোক করা মূর্ের 
কাজ। 
“অব্যক্তাদীনি ভূভানি ব্যক্তমধ্যানি ভারত। 
অব্যক্ত নিধনান্তেব তত্র কা! পরিদেবনা ॥৮ 
“মানুষ কোথা হতে এখানে এসেছে, কেউ জানে না, 
কোথা যাবে, তাও জানে না। এই যে সব সম্বন্ধ 
রয়েছে, তাও ছুদিনের জগতে, একথাও জানে। তবে 
আবার মিছে শোক কেন? আর যদ্দি মানুষকে 
অবিনাশী আত্মা বলে জেনে থাক, তা হলে দে ত 
৪৪ 


জ্ঞানযোগ " 


কধন মর্বে না, এ কথা স্থির। তবে আবার শোক 
কিসের? [ও 
“আশ্চ্যযবৎ পশ্যতি কশ্চিদেনং 
আশ্চর্যাবদ্ধদতি তখৈব চান্তাঃ। 
আশ্চরধ্যবচ্ৈনমন্যঃ শৃণোতি 
শ্রত্বাপ্যেনং বেদ ন চৈব কশ্চিত॥ * 

“সেই আত্মাকে কেহ বা আশ্চর্ধ্য হয়ে দেখে, কেহ বা 
এর আশ্র্ধ্য স্বরূপ বলে, কেহ বা তাই অবাক্‌ হয়ে, 
শোনে, আবার মন্দভাগ্য কেহ বা শুনেও এর বিষয় ধারণ! 
করতে পারে না " 

“হতো৷ বা প্রাপ্গাসি ্বর্গং জিত্বা বা ভোক্ষ্যসে মহীমূ্‌। 

তম্মাছৃততিষ্ঠ কৌস্তেয যুদ্ধায় কৃতনিশ্চয়ঃ |” 

দি এই যুদ্ধে হেরে যাও, ক্ষত্রিয় তুমি; কর্তব্য পালন 
করে সম্মুখ যুদ্ধে মরে স্বর্গে যাবে, জিতূলে রাজ্য পাবে 
অতএব যুদ্ধ কর। কিরূপে যুদ্ধ করবে? 

এম্থখতুঃখে সমে কৃত্বা লাভালাভৌ জয়াজয়ৌ» ৃ 

সখ ছৃঃখ, জয় পরাজয়, লাভ লোকসান সমান জ্ঞান : 
করে যুদ্ধ কর।' তা হলে পাপ স্পর্শ করতে পারবে 
না। কিছু দেখো না। কেবল কর্তব্য ও সত্য পালন 
কর্তে যুদ্ধ করছ, এইটি দেখ। এই রকমে সংসারে 
যদি আমরা কাজ করতে পারি, সব সময়ে এই ভাব 

৪৫ 


গীতাত্ 

যদি মনে রাখতে পারি, সংসারে এসে লাভ লোক্সানের 
দিকে নজর না রেখে যদি ঈশ্বরের চাকর চাকরাণীর মত 
কাজ করে যেতে পারি, কিছুতে আর বন্ধন আম্বে 
না। ধীরে ধীরে মুক্তির দিকে অগ্রসর হব। এইটি 


জ্ঞানযোগের মূল কথা । 


৪৬ 


তৃতীয় অধ্যায় 
জ্ানযোগ 


(১৯০২ খৃষ্টান্দের ২৭শে ডিসেম্বর, বিবেকানন্দ সমিতিতে 
প্রদত্ত ব্তৃতার সারাংশ ) 


গীতা প্রক্ষিপ্ত নয়, একথা আমি প্রথম বারে 
বলেছি। প্রক্ষিপ্ত নয়, তার একট! কারণ আছে। 
শান্্পাঠে দেখতে পাই, আমাদের দেশের দ্ার্শনিকদের 
একটা অসাধারণ গুগ ছিল। সেই খুণটার একটু আধটু 
এখানকার দেশীয় ও বিদেশীয় দার্শনিকদের জীবনে: এলে 
তাদের নিজের এবং অপর সাধারণের পরম লাভ হয়। 
আমাদের দেশের দার্শনিকের শুধু বুদ্ধি দিয়ে কোন 
বিষয় প্রমাণ করে নিশ্চিন্ত থাকৃতেন না, কিন্তু যাতে 
সেটা জীবনে পরিণত করতে পারেন, তার চেষ্টা কর্‌তেন 
এবং পরিগত হবার পর এ সত্য জনসাধারণে প্রচার 
করতেন। প্রীরষষের জীবন দেখলে বুঝতে পারবে, 
তিনি গীতাতে যা বলেছেন, ভার জীবনের প্রত্যেক 
ঘটনাতে তা৷ অনুষ্ঠান করে তার সভ্যত! দেখিয়ে 

৪৭ 


গীতাতত্ব ' 
গিয়েছেন অথবা গীতায় প্রচারিত সতা সকল তার 
ভীবনেই প্রথম সম্যক্‌ অনুঠিত, দেখতে পাই। অতএব 
তিনিই যে গীতাকার, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। 
যোগের বিষয় পূর্ব কতক বলেছি। মনের শক্তি 
উদ্দি্ট বিষয়ের দিকে পূরণভাবে চালিত করার নাম 
যোগ । ০ দেখতে পাই, কোন ছেলে চেষ্টা করেও 
লেখাপড়া শিখতে পারছে না, পাশ করতে পারছে না, 
এর কারণকি? তার মনের শক্তি এক, জায়গায় জড় 
কর। তে পারে না, আর কতকগুলি বিষয়ের দিকে মনের 
'কতকট! সর্বদা গড়ে থাকে; দে সমস্ত মন গুটিয়ে 
নিযে এক 'বিষয়ে দিতে পারে না। মনের শক্তি অন্য- 
দিকে ব্যয় হয়ে যায়, সেজন্যে সে উদ্দিষ্ট বিষয় ঠিক 
আয়ন্ত করতে পারে না। যোগ মানে উদ্দেশ্য যাই 
হোক না কেন, তাতে পৌঁছুবার বা তা লাভ করবার 
সহজ উপায়। সে সহজ উপায়টি কি? শরীর, 
মনের সমস্ত শক্তি গুটিয়ে এনে এ বিষয়ে লাগান। 
- ধনলাভ হোক, অথবা ধর্মলাভ হোক, পরের কল্যাণের 
জন্যে অন্য কোন কাজ হোক, তাতে কৃতকাধ্য হবার 
জন্যে অন্য কোন কাজ হোক, অথবা পরের কল্যাণের 
সহজ উপায়ের সাধারণ নামই 'যোগণ দেওয়া যেতে পারে। 
সমস্ত মন গুটিয়ে আন্বার শক্তি কোথা থেকে আস্বে ? 


৪৮ 


অঅ 


সকল শক্তিই আমাদের ভেতর রয়েছে । কেন নাঃ 
আত্মাই সকল শক্তির আকর। শরীর, মন, বৃদ্ধি প্রভৃতি 
তার হাতের যন্ত্র মাত্র। এসকল যন্ত্রনিয়ে তিনি এই 
অন্তত খেলা খেল্ছেন। যন্ত্র খারাপ হলে যেমন কোন 
বিষয় ভাল করে করা যায় নাঃ সেইরূপ মন, বুদ্ধি 
মলিন হলে আত্মার খেলাও তদ্রুপ হয়। স্তার অশেষ 
শক্তি প্রকাশের স্ববিধা হয় না। কিন্তু মন, বুদ্ধি যদি 
খুব শুদ্ধ হয়, সত্বগ্ুণবিশিষ্ট হয়, তবে তার ভেতরের 
শক্তির অদ্ভুত প্রকাশ হয়ে থাকে। 

যোগ শব্দ সাধারণ ভাবে প্রয়োগ করতে পারলেও 
আমাদের শাস্ত্রে ত কেবল ধর্মা সম্বন্ধে ব্যবহৃত 
হয়েছে। এখন জ্ঞানযোগ কাকে বলে, দেখা যাক্‌। 
পরমহংসদেব বলতেন, একজ্ঞানই জ্ঞান, বহুচ্ছান অজ্ঞান। 
কোন বিষয়ে কারও বাস্তবিক জ্ঞান হয়েছে, কখন 
বলব? যখন সেই জ্ঞানের প্রকাশ-সে সকল 
জায়গায় সকল জিনিষের ভেতর দেখবে । যাঁর স্বরজ্ঞান 
হয়েছে সে সকল শব্দের ভেতরই স্থুরের খেলা দেখতে 
পায়। একটা জিনিষ পড়ল, একখানা গাড়ী 
দৌড়ুল, একজন লোক কথা কইল, এই সব ভিন্ন 
ভিন্ন আওয়াজ কোন্‌ সুরের কোন্‌ পরদ্ায় হল, সে 
তা বুঝতে ও বলতে পারে। এমন কি, সে ভিন্ন ভিন্ন 

৪৯ 


গীতাতত্ব 
আওয়াজের ভিন্ন ভিন্ন রূপ দেখতে পায়। রঙের 
খেলাতেও সে স্থুরের খেল! দেখতে পায়। সমগ্র জগৎ 
তার কাছে অপূর্ব স্বরলহরী মাত্র এবং নাদই জগং- 
কারণ ব্রন্গরূপে প্রতীত হয়। পিথাগোরসের অনুভব 
হত, সূর্ধ্য-চন্দ্রর ঘোর্বার সঙ্গে সঙ্গে এক অপূর্ব 
স্বর চলেছে। তিনি উহাকে 20810 ০1 68৪ 
910105 বলতেন। পরমহংসদেবের অন্তুভব হত, 
মমুদয় জগত্মধ্যে এক অপূর্ব ওক্কার ধ্বনি উঠছে। 
পাখীর ডাকে, নদীর তরঙ্গে) সমুদ্রের কল্লোলে। সেই 
৪ ধ্বনি। সকল স্থানের সকল শবের ভেতর দিয়ে 
কল সময়ে সেই অনাহত নাদ প্রবাহিত হচ্ছে। 

সবর জ্ঞানের সম্বন্ধে যেমন, অন্তান্ বিষয়েও সেইরূপ । 
রূপ বা রস জ্ঞান যার হয়েছে, তার কাছে সমগ্র 
জগং রূপ ও রসের বিকার মাত্র বলে অনুভূত হয়। 
বহুচ্জান মকলেরই রয়েছে। নুখছুঃখের জ্ঞানও সকলের 
_আছে। স্থুলচক্ষে যাদের জড় বলে মনে হয়, সে 
সকল পদার্থও আঘাতে প্রতিঘাত দিয়ে নিজ জীবন এবং 
কিছু-না-কিছু জ্ঞানের পরিচয় দিচ্ছে। আহার, রিল্রা, ভয় 
ইত্যাদির জ্ঞান “জ্ঞানমেতনননুয্যানাং যত্েষাং মৃগপক্ষিণাম্গ 
(চশী)_পণড,গঙ্গী ও মানুষের সমান ভাবেই রয়েছে, 
এ জ্ঞানকে আমরা জ্ঞান বলি না। কিন্তু কতকগুলি 

৫০ 


জ্বানষোগ 


বিষয়ের ভেতর যদি আমরা এক শক্তির বিকাশ, এক 
নিয়মের খেলা দেখতে পাই, ঘবেই তাকে জ্ঞান বলে 
থাকি। ফলটা পেকে গাছ থেকে মাটিতে পড়ল, 
টিলটা ছুঁড়লুম্--মাটিতে এসে পড়ল, মানুষ লাফ 
দিয়ে আকাশে উঠতে পার্ল না, পৃথিবীটা হূর্্যের 
চারদিকে ঘুরছে ইত্যাদি জ্ঞানগুলিকে যত *দিন না 
আমরা এক শক্তির প্রন্থৃত বলে দেখতে পেয়েছিলাম, 
ততদিন এ বনুজ্ঞানগুলি আমাদিগকে জ্ঞানের পথে বড়, 
বেশী অগ্রসর করেনি। আর যাই দেখলুম যে,.এঁ 
সকলগুলি মাধ্যাকর্ষণ নামক এক শক্তির খেলায় হচ্ছে" 
অমনি আমাদের জ্ঞান কতদুর ব্যাপি, কতগুলি 
বিষয়কে আমর! একনৃত্রে গাথ্‌তে পার্লাম, তা 
আর বলে বোঝাতে হবে না। এইরূপে পৃথক্‌ পৃথক্‌ 
পদার্থ ও অনুভব সকলকে ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণীবদ্ধ করার 
নামই জ্ঞান। এই সকল অসংখ্য ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণী আবার 
কয়েকটি শ্রেণীর অন্তভূ্ত দেখতে পাওয়া যায় এবং 
শাস্ত্র বলেন, প্রকৃত জ্ঞানী তিনিই, ধিনি এই সমস্ত ' 
শ্রেণীকে একের অন্তভূ'ত দেখতে পান। এই একজ্ঞান 
একবার হলে আর কখনও অজ্জান আস্তে পারে না) 
এইজন্তে গীত! বলেন, জ্ঞানী তিনিই, যিনি সদা অর্ধ 
সেই একের প্রকাশ দেখেন। এই বছুজ্ঞানের ভেতর 
৫১ 


শীতাতত্ব 
যিনি সেই এককে দেখতে পান, “একো বহুনাম্‌” তিনিই 
ৃত্যা্জয় হন, সথথহুঃখের পারে যান। 

্্ীকফণের উপদেশ ও জীবনের সর্বত্র এই শিক্ষাই 
দেখা যায় যে, জ্ঞানসহায়ে কিরূপে আমরা সেই একের 
কাছে গৌঁছুব। দে এক যাই হোক না কেন, তাতে 
কি এস্ছে যায়? যা হতে এই সব হয়েছে, সে তাই, 
সেখানে যেতে হবে! তাকে যাই বল না কেন, ঈশ্বর, 
ভগবান, কালী, বরহ্ম__ঠিক বল্তে গেলে সে স্ত্রীলিঙ্গও 
নয়, পুংলিঙ্গও নয়, ক্লীবলিঙ্গও নয়। এখন সেই এক- 
'জ্ঞান লাভের উপায় কি? পরমহংসদেব বল্তেন, 
একটা! বিষয়ে যদি আপনার লাভ লোক্সান ভূলে 
যোল আনা মন ঢেলে দিতে পার, তবে সেই এক- 
জ্ঞানে নিশ্চয় উপস্থিত হবে। সাধুই হও বা বিষয়ীই 
হও, যদি ষোল আন! হতে পার ত সেই একের প্রকাশ 
দেখতে পাবে। স্বদেশের জন্যে যদি ষোল আন! মন 
দ্রিয়ে কেউ পাগল হতে পারে ত সেই দেশহিতৈষিতার 
' ভেতর দিয়ে তার নিকট সেই একের প্রকাশ হবে। 
বিজ্ঞান, সংগীত, শিল্প প্রভৃতি যে বিষয়ের চর্চাই কর 
না কেন, যদি যোল আনা মন দিয়ে কর ত তাই 
তোমাকে মেই জ্ঞানে নিয়ে যাবে। এ পরমহুংস- 
দেবের কথা । বড় নৃত্তন কথা, বড় অন্ভুত সত্য ! শুন্তে 

৫২ 


জ্ঞামযোগ 


যেমন সোজা, কর্‌তে তেমনি শক্ত । সব বিষয়েই এরূপ 
দেখি। যেটা খুব লহজ, সেটাই আবার খুব শক্তু। 
যেটা খুব নিকটে, নেটাই আবার খুব দুরে। গলায় 
হার রয়েছে, চারদিকে খুঁজছি, এ ভ্রম প্রায় হয়। 
আত্মা অত্যন্ত নিকটে কি না, তাই বুঝতে পারি না। 
তিনি যে আমারই ভেতর, এ কথা বিশ্বাস কুরি না। 
তার দেখ! পাবার জন্যে পাহাড় পর্ব্বত নানাদেশ ঘুরে 
উপোস করে খুঁজে খুঁজে হয়রান হয়ে শেষে দেখি 
আমারই ভেতর তিনি। পরমহংসদেব বল্তেন, মানুষের 
মন যেন জাহাজের মাস্তুলের পাখী । কোন সময়ে একটা: 
পাখী একখানা জাহাজের মাস্তুলের ওপর ' বসেছিল। 
জাহাজ খান। চল্তে চল্তে ক্রমে সমুদ্রের মাঝখানে গিয়ে 
পড়ল। পাখীটা বসে বসে বিরক্ত হয়ে অন্যাত্র যাবার 
চেষ্টায় উড়ল। কিন্তু চারদিকেই জল। উড়ে 
উড়ে কোথাও স্থল না পেয়ে ক্লান্ত হয়ে শেষে সেই 
মান্তুলের ওপর এসে বস্ল। মানুষের মনও সেই 
রকম নানাদিকে নানাবিষয় অনুসন্ধান করে ক্লাস্ত ' 
হয়ে, শেষে আপনার ভেতর সেই একের দেখা পেয়ে 
নিশ্চিন্ত হয় | «. | " 

সর্বদা সকলের ভেতরে থাক্লেও শুদ্ধ বুদ্ধির নিকট 
সেই একের জ্ঞান খুব কাছে। বদ্ধ জীবের জড় বুদ্ধির 

৫৩ 


শীতাতন্ত 


অনেক দুরে। জ্ঞানযোগ সাধন করা বা জীবনে পরিণত 
করা শক্ত। অতি শুদ্ধ বুদ্ধি যাদের, তারাই 
পারে। বিচার করে কোন বিষয় ঠিক দেখে যখন 
তা তৎক্ষণাৎ কাজে কর্তে পার্বে, তখনই তুমি জ্ঞান- 
সাধন করবার উপযুক্ত অধিকারী। মনে উঠজ-বড় 
লোক হবো, দেশ জুড়ে গণামান্য হবো । অথচ বিচার 
করে দেখলে, এই দুদিনের জীবনে নাম যশের চেয়ে 
'ভগবান লাভের চেষ্টাই ঠিক। কিন্তু মনকে ধরে 
রাখতে না পেরে যদি তুচ্ছ ধনমানের জন্যেই ছোট, তা 
'হলে তোমার দ্বারা জ্ঞানযোগ হবে না, তোমার অন্ত 
রাস্তা। যে জ্ঞানযোগের সাধক, মন তার মুটোর ভেতর, 
আয়ত্বের ভেতর থাকৃবে, যা হুকুম করবে, তাই করবে। 
ভগবান যীশু যখন নিজ অন্তনিহিত শক্তি বিকাশের 
জন্যে চল্লিশ দিন উপবাস. করে তপস্তা করেনঃ 
তখন শয়তান প্রলোভন দেখাতে এসেছিল । ধন দেবে, 
মান দেবে, রাজ্যসম্পদ দেবে, স্মুন্দরী স্ত্রী দেবে ইত্যাদি 
' বলেছিল। তাই শুনে তিনি অমনি বলে উঠলেন, 
99৮ 0169 0910100 706) 98090 1 বাসনা-শয়তান) 
দুর হও। আমাদের ভেতরেও এ রকম অনবরত বাসনা 
উঠছে। নানান্‌ জন্মের বাসনা সব ফুটে উঠ.ছে। আবার 
যখন সং উদ্দেশ্তে সাধারণ-কল্যাণের জন্তে কোন কাজ 
৫৪ 


জ্ঞানযোগ 


করতে যাচ্ছ, তথখুনি রক্তবীজের বংশের হ্যায় বাসনা 
সন্তান শত শত এককালে জাগরিত হয়ে ব্যাকুল করে 
তুল্ছে। যিনি ইন্দ্রিয়য়ী, তিনি এ সব বাসনা- 
বীজ দেখতে এবং মন থেকে তাড়াতে পারেন। কিন্ত 
সংস্কার যদি বেশী দৃঢ় হয়, তবে আর শুধু বিচার 
করে তাড়াতে পারা যায় না। এপ্রকার *লোকের 
অন্য পথ। সংস্কার অল্প হলে বিচার করে মন ঠিক 
রাখা যেতে পারে। জ্ঞানযোগ যিনি সাধন করেন,” 
তার বাসনা তত প্রবল নয়, মন সহজেই তাদের আয়ত্ত 
কর্তে পারে এবং স্থির থাকে। | 

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নিজ জীবনে মহাজ্ঞানীর ভাব 
প্রতিপদে দেখতে পাওয়া যায়। জীবনের অতি সঙ্কট 
স্থলেও তার কি অদ্ভুত সমুদ্রবৎ স্থিরত্ব ও গাস্তীর্য। 
ফলফুলশোভিত মধুর বৃন্ার্যে শত্রবেষ্টিত মথুরায়, 
রাজকুলসম্মানিত হস্তিনায়, রাগছেষপৃরিত রণন্থুলে, পূর্বব- 
স্থৃতি মুখরিত প্রভাসে এবং স্ববংশধ্বংসের সময়ও সেই 
: স্থির, অচল, অটল ভাব । যছুকুল ধ্বংস হবার পূর্ব্রেই 
তিনি দেখলেন, কার্য্যকারণ-প্রবান্থের ফলস্বরূপ ভা! 
ঘঘটুবেই ঘট্বে। এদের কর্পেই এই ভীষণ ফল প্রীদৰ 
করবে। অশেষ চেষ্টায়ও যখন তা ফিরল না, তখন 
মহাজ্ঞানী গীাকার স্থির হৃদয়ে আপন বংশের" নিধন 

৫৫ 


শ্বীতাত্ব 

দর্শন করলেন। নিজের সাম্নে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, 
অথচ মন অব্চলিত হয়ে চুপ করে আছে। ্বামিজী 
বলতেন, গীতার ভাব হচ্ছে [780086 808151র 
ভেতর [69089 7891, অবিরাম কার্য্যের ভেতর অন্তত 
বিশ্রাম, যোগীর অচল ভাব। গীতাম্বন্ধ স্বামিজীর 
এইভাবে, একখানি ছবি আঁকার ইচ্ছা ছিল। শরীক 
সারথি বেশে ঘোড়ার লাগাম ধরে সৈম্তদলের ভেতর 
রথ চালাচ্ছিলেন, এমন সময় বিষাদাতিভূত অর্জন 
লড়াই করবে ন! বলাতে এক হাতে তেন্ীয়ান ঘোড়াকে 
টেনে আয়ন্তে রেখেছেন আর অর্জনের দিকে মুখ 
ফিরিয়েছেন'। শরীরের দ্বারা ঘোটক-সংযমরূপ মহা 
আয়াস করলেও মনের অনন্ত প্রশান্তভাবের জন্যে মুখে 
যোগীর ছবি আকা রয়েছে। ভয়ঙ্কর কুরুক্ষেত্রের সংগ্রামের 
ভেতর তার মনের এই অপরপ প্রশান্ত ভাব 
আঁকাবার তার ঝড় ইচ্ছা ছিল। এই সময়ে কত 
রাজা মহারাজা মর্বে, কোন্‌ পক্ষে জয় পরাজয় 
তার কিছুই ঠিক নেই, সকলেই অস্থির, আাত্ুহারা, 
পাগল, কিন্তু তিনি স্থির, অটল, অচল হয়ে অপরের 
কল্যাণের জস্তে, ধর্ম স্থাপনের জন্যে সকল কাজ 
চালাচ্ছেন আবার দেই সময়েই যোগের অতি গৃঢ় বিষয় 
শিক্ষা দিচ্ছেন। এই স্থির প্রত্যেক মানবের শিক্ষা করা 

৫৬ 


জ্ঞানযোগ 


চাট । কাজ করতে করতে আমাদের ভেতর কাজের 
মন্ততা এসে যায়। সেইটেই খারাপ। তখন আমরা 
কাজ না. চালিয়ে কাছ আমাদের চালায়, ইঙ্জিয় 
আমাদের চালায়। প্রত দাসপদ্ধে নত হয়, হত 
দাস প্র প্রতি ঘা ইচ্ছা ব্যবহার করে। এই জীরন- 
সংগ্রামে, কার্্যক্ষেত্রে সেই জন্যে জদাসর্বদা স্থির থাকৃতে 
হবে। এই জঙ্বেই গীতার শিক্ষা, শুধু সর্যাসীর জদ্কে 
নয়, সংসারীর জন্যেও নয়, কিন্তু সকল দেশের, সকল, 
কালের, সকল লোকের জন্যেই প্রযুক্ত। এই জন্যেই 
গীতার অপর নাম গীতোপনিষৎ। কেন না, উপনিষদের . 
জ্ঞান ও শিক্ষার বিশেষত্বই--তাদের . সার্বজনীন 
উদারতা; সকল প্রকার অধিকারীর জগ্ে ভিন্ন ভিন্ন 
ব্যবস্থা দিয়ে উপনিষদের খধি আবার যুক্তকণ্ঠ প্রচার 
করছেন, "মানুষ, তুমি অম্ৃতের অধিকারী, অম্বতই 
তোমার স্বরূপ) তুমি ভ্রমে পড়ে আপনাকে আধ্য, 
যনেচ্ছ, ব্রাহ্মণ, শূদ্ প্রভৃতি যাই মনে কর' না কেন, 
কিছুই তোমায় বাঁধতে পারে না। তুমি স্বাধীন, স্বাধীন, 
চিরঙ্থাধীন॥ এই অপূর্ব উদারতা গীতার মধ্যে দেখেই 
মাহাত্মাকার লিখেছেন, সমস্ত উপনিষৎ মন্থন করে 
গীতার উৎপত্তি হয়েছে। 

জীবন-সংগ্রামের এই মন্ততার ভেতর, এই যোগীর 

৫৭ 


গীতাতত্ব 
স্থিরতা আমাদের না নি কান্ত করতে গেলেই 


হাত থেকে বাঁচতে শেখা | ঢাই। তোমার 
ছারা বার্থ বড় কাজ হবে, তবেই তুমি ঠিক মানুষ 
নামের যোগ্য হবে। ফলাকা্গাপ্রসত এই কর্মমন্ততা 
কত সময় কত যে বিষময় ফল প্রমব করে, তা. 
আর দেখিয়ে দিতে হবে না। বাবসা বাণিজ্যে লোক্‌- 
দিয়ে কত লোক হতাশ-মাগরে ডোবে, আর উঠতে: 
পারে না; গাশ করার মন্ততায় পড়ে কত ছেলেই 
.না একেবারে চিররোগী হয়ে পড়ে! আবার অশেষ 
চেষটায়ও পাশ না কর্তে পেরে ছাত্রদের মধ্যে সময়ে 
সময়ে আত্মহত্যার অভিনয়ও দেখতে পাওয়া যায়। 
এই মন্ততার ভেতর স্থিরতা আন্তে শেখা সকলেরই 
প্রয়োজন, বিশেষত; সংসারী লোকের। কারণ, তার 
পক্ষে সাংসারিক ও পারমার্থিক সকল বিষয়ে উন্নতি 
লাভ করবার এবমাত উপাই হছে, ক কর 
এবং কর্মের ভেতর এই স্থিরতা আন্তে পারলে 









গীতাকারের, নিজ জীবনেই সম্পূর্ণ ৫ ইসরাত হ হয়েছে) 
শীষের সমস্ত জীবনের সহিত গীতার শিক্ষা উর 
নাও, দেখবে, এতেও এভ্টুকু অনৈক্য নেই। স্বার্থের 
৫৮ 


জ্ঞানযোগ 


জন্যে কর্ম না করলেও তার একার কর্্-উদ্ম অসংখ্য 
লোকের উদ্ভমের চাইতে অধিক দেখতে পাওয়া 
যায়। বৃন্দাবনের খেলার তেতর দেখ, মথুরার এবং 
দ্বারকার রাজসম্পদের ভেতর দেখ, যছ্ুবংশ ধ্বংসের. 
সময় দেখ, কুরুপাগুবের যুদ্ধক্ষেত্রে দেখ, সব জায়গায় 
অপূর্ব কাজের মন্ততার ভেতর তার হ্বদয়ে এই অস্ভুভ 
স্থিরতা ও শান্তি দেখতে পাবে। কথিত আছে, 
কুরক্েত্র যুদ্ধ বাধবার পূর্বে ছূর্য্োধন রাজাকে ভিনি, 
একাদশ অক্ষৌহিণী নারায়ণী সেনা প্রদান করেন। 
ছুর্ধ্যোধন ভাবলে, একা শ্রীকঞ্চকে দলে না পেলাম, ' 
তাতে কি? তার একার উদ্ঘম কিছু আর একাদশ 
অক্ষৌহিদী লোকের উদ্ভমের সঙ্গে সমান হবে না। 
কিন্তু কার্ধ্যক্ষেত্রে দেখা গেল, ঠিক তার বিপরীত । 
ভার উদ্ধম ও অধ্যবসায়, বিপদ্‌কালে তার অনন্ত 
উপায়-উষ্ভাবনী-শক্তি, ঘোর নিরাশ-অন্ধকারে তার 
প্রাণসঞ্চারিণী অগ্নিময়ী বাণী, আবার মৃত্যুর ছায়ার 
ভেতর, স্বপক্ষের পরাজয়ের ভেতর, তার অপূর্ব্ব 
অনবসাদ ও চিত্তপ্রসন্নতা, এই সমস্ত গুণ তাকে একাদশ 
অক্ষৌহিদী কেন, ভারতসমরে সমাগত উভয় পক্ষীয় সমস্ত 
বীরের সহিত সমতুল্য করেছিল। 

জ্ঞানযোগের সার কথা এই। জ্ঞানযোগের ,সাধন 

৫৯ 


গীতাতত্ব. 

হচ্ছে, দনেতি, নেতি' বিচার অর্থাত ষ| একত্ে নিয়ে 
যাবার পথে অন্তরায়, তা বিচারপূর্বক এককালে 
পরিত্যাগ করা। জ্ঞানযোগ শুনে অজ্জন জিজ্ঞাসা 
কর্ছেন, 'জ্ঞানী হলে, স্থিতপ্রজ্জ হলে, তার লক্ষণ 
চাল-চলন, আচার ব্যবহার ইত্যাদি কিরূপ হয়? এই 
খরআোতু কর্ণ-প্রবাহের ভেতর যিনি সর্ধবদা নিজ 
জীবনে স্থিরভাব রাখতে পেরেছেন, তার [)%01988107, 
“অর্থাৎ ভাষা, চাল-চলন এবং অপরের সঙ্গে ব্যবহার 
কেমন হয়? সিদ্ধপুরুষেরা যেমন ভাবে সংসারে কাজ- 
'কর্মা করে গেছেন, সেই সকল আমাদের শিক্ষার 
জন্যে গীতা ও সন্ত'্যা শাস্থে লিপিবদ্ধ আছে। প্রশ্ন 
হতে পারে, তাদের চাল-চলন দেখে আমরা শিখব 
কি করে? আমরা জড়বুদ্ধি, কর্মফলপ্রত্যাশী, কাম- 
কাঞ্চনলুন্ধ জীব, আমাদের জীবনে তাদের গ্তায় মহৎ 
উদ্দেশ্য ত নেই? নেই সত্য, কিন্তু সেই প্রকার মহৎ 
উদ্দেনট, সেই প্রকার বৈরাগ্য ও নিষ্বার্থ দ্ধ জীবনে 
না আনতে পারলে উন্নতির আশা কোথায়? আবার 
আমাদের ভেতর যাঁরা গুরুর উপদেশে বিশেষ উদ্দেশ্টে 
জীবন চালাতে চেষ্টা করছে, কর্ধাবর্তে পড়ে অনেক 
সময় তারা কি করবে, কিছুঠিক কর্তে পারে না। 
অথবা, সেই পথে টলতে যে নব নব ভাব ও অনুভব 

৬৪ 


জানযোগ 


জীরনে উপস্থিত হয়, লেখি টিক কিনা, এ সন্দেহে 
তাদের মন ব্যাকুল হয়, তখন: এই সকল. 'গদ্‌গুরুর 
পদপ্রান্তে দাড়িয়ে তাদের জীবনের অন্গুভবের . সঙ্গ 
নিজ নিজ জীবনের উপলব্ধি মিলিয়ে পেলে সংশয় 
সন্দেহের হাত থেকে যুক্ত হয়ে আবার চিন্ুপ্রসাদ 
লাভ হয়। সেই জন্যে শান্তর বলেন, সিদ্ধ পুরুষের 
লক্ষণগুলি বিশেষভাবে লক্ষ্য করে সাঁধক নিজ জীবনে 
আনবার চেষ্টা কর্বে। এই-ই তার পক্ষে প্রধান 
সাধন। রী 

সাধকের নিজ জীবনের উপলব্ধির সঙ্গে গুরুবাক্য. 
ও শাস্ত্রবাক্য মিল্লে সে অনুভবে আর ভুল নেই, 
একথাও ধারণ! করতে শাস্ত্র বলেন। শুকদেব আজন্ম 
জ্ঞানী হয়েও যতদিন না নিজের উপলব্ধ জ্ঞান--গুরু 
এবং শান্ত্রবাকের সঙ্গে মিলিয়ে নিতে পেরেছিলেন, 
ততদিন তার নিজের অনুভব ঠিক কি না, এইরূপ 
সন্দেহের হাতে . মধ্যে মধ্যে পড়তেন এবং মহধি 
ব্যাসকে এই সন্দেহ দূর কর্বার উপায় জিজ্ঞাসা 
করেন। ব্যাস দেখলেন, আমি শুকের বাপ, আমার 
কথা সে বাল্যাবধি শুনে আস্ছে, তাতেও যখন সন্দেহ 
যায় নি, তখন এর অন্ত ব্যবস্থার প্রয়োজন । 
ভেবে চিন্তে তিনি শুককে রাজধষি জনকের নিকট 

৬১ 


শীতাতৰ |] রি 
গিয়ে তাকে গুরু স্বীকার করে উপদেশ নিতে বল্লেন। 
জনকের বাড়ীতে গিয়ে শুককে সাতদিন দরজায় ঠাড়িয়ে 
থাকৃতে হয়েছিল, কেউ খোজখবর নেয় নি। এরূপ 
অবজ্ঞাতেও তার চিন্তে রাগঘেষাদির উদয় হল না। 
পরে বাড়ীর ভেতর নিয়ে গিয়ে রাজধি জনক তার 
অশেষ মান্য ও অদ্ভুত সেবা করতে লাগলেন। এরূপ. 
সম্মানেও' শুক তার উদ্দেশ্বা ভুল্লেন না। তখন 
জনক তাকে বন্মজ্ঞানের সমতা ও অবিচলতা বুঝিয়ে 
'দিলেন। জনকের কথাতে বাপের কাছে যে সব-শান্্র 
.পিড়েছেন, সে সব শিক্ষার আর নিজের উপলব্ধির 
একতা শুক যখন মিলিয়ে পেলেন, তখন তার সকল 
সন্দেহ দুর হয়ে মনে শান্তির উদয় হল। 

জ্ঞানীর লক্ষণ সম্বন্ধে গীতা এখন কি বলেন, তাই. 
দেখা যাক্‌। | প্র 

প্রজাতি যদা কামান্‌ সর্বান্‌ পার্থ মনোগতান্‌। 

আত্মনযেবাত্ব' তুষ্ট: স্থিতপ্র্ঞন্তদোচাতে । 

সফল বামনা ছেড়ে যিনি আপনাতে আপনি তুষ্ট 
হয়ে আছেন, যিনি কাম ক্রোধ প্রভৃতিকে আয়স্তাধীন 
করেছেন, যিনি ইন্জিয়ের বশ না হয়ে ইন্িয়গণকে 
আপন উদ্দেশ্ত লাভের জন্ে খাটিয়ে নেন, তিনি যথার্থ 
দানী। জ্ঞানী পুরুষ আমাদের মতনই ইন্জিয়ের ছারা 


৬২ 


জ্ঞানযোগ 


কাজ কর্ম করেন, কিন্তু কখনও আপনার উদ্দেশ্য ভোলেন 
না। ইন্ত্রিয়গণ' যে তাঁর চাকর এবং তিনি তাদের প্রভু, 
এ কথা সর্বদা মনে রাখেন। আমরা এ কথাটা কেবল 
ভুলে যাই। তাই ইন্দ্রিয় যে দিকে চালায়, সেই দিকে 
ছুটি। উপনিষদ্‌ বলেন, আত্মা যেন রথী, এই শরীররূপ 
রথে আরোহণ করে রয়েছেন, ইন্দ্রিয় সেই রথের 
ঘোড়া এবং মন সেই ঘোড়ার লাগাম। বুদ্ধি সারথি 
সেই লাগাম ধরে ঘোড়াগুলোকে রূপ রসাদি বিষয়ের 
পথ দিয়ে জ্ঞান ও শাস্তিরূপ লক্ষ্যস্থানের দিকে চালাচ্ছে। * 
শিক্ষার গুণে সারথির নিজের মাথার ঠিক থাক্‌লে এ , 
সব পাগলা ঘোড়াদের এরূপ ছূর্গম পথের ভেতর দিয়েও. 
ঠিক চালিয়ে নিয়ে যান। আর তা না হলে ঘোড়াগুলো 
রাশ না মেনে কোন্‌ পথে যেতে কোন্‌ পথে নিয়ে যায়; 
কখন বা গাড়ীখানা উল্টেও দেয়। শুদ্ধ বুদ্ধি ঘোড়া 
চালিয়ে গন্তব্যস্থলে ঠিক উপস্থিত হয়। কিন্তু কামকাঞ্চন- 
ব্ধতৃষ্টি মলিন বিষয়বুদ্ধি ঘোড়ার বশীভূত হয়ে পড়ে সর্ব : 
নাশের পথে অগ্রসর হয়। | 

জ্ঞানীর অপর এক লক্ষণ হচ্ছে, তিনি সৃখহুঃখ উভয় 
অবস্থাতেই স্থির থাকবেন। আমরা স্বার্থপর, নিজেদের 
সুখের জন্যে লালায়িত। এতটুকু ছুঃখ উপস্থিত হলে 


একেবারে আত্মহারা হই; ইচ্ছায় নিজেকে বিপদ্গ্রস্ত 
৬৩ 2: 


গীতাতত্ 


করে পরের কাজে যাওয়া ত দূরের কথা, ঘরের 
পাশে প্লেগ হয়, কিন্তু আমি নিশ্চিন্ত থাকি। এই যে 
দেশে এত দুতিক্ষ হচ্ছে, আমরা তার কি করছি? এ 
যদি ইউরোপের কোন স্থানে হত, ত দেশের সমস্ত 
লোক একেবারে ক্ষেপে উঠত। বল্ত, কেন ছুতিক্ষ 
হবে? কেন আমার দেশে লক্ষ লক্ষ লোক অনাহারে , 
মর্বে?*তার! জীবন উৎসর্গ করতো তা দূর করবার 
জন্ে। আমরা এ বিষয়ে জড়, মহাতমোগ্ুণী ; কাজে 
*একেবারে অলম। ডিগবি সাহেব লিখছেন, বিগত 
১ম্ণ বসরের লড়াইয়ে পৃথিবীর তেতর যত লোক 
মরেছে,.. এই ভারতবর্ষে তার ৪ গুণ অধিক লোক মরেছে 
গত ১৯ বংসরের দুতিক্ষে। কি ভীষণ ব্যাপার! আমরা 
আবার ঠেঁচাই, বড়াই করি,--আমাদের বাপ দাদ! 
পৃথিবীতে ভারি বড়লোক ছিল। তারা বড়লোক 
থাকলেও তোমার কাজ দেখে তোমাকে ত সে বংশের 
সন্তান বলে বোধ হয় না; তুমি কি করছ, তা 
একবার ভেবে দেখ দেখি। তুমি, আমি ত্রাণ, 
জগতের পুজ্যা, বল্লে কি হবে? যেসান্িক ভাব: 
নিয়ে ব্রাহ্মণের ্রা্মণর্, .দে ভাব যে একেবারে লোপ 
হয়ে মহা জড়ত্ব আস্তে বসেছে । আর এই মলিনমুখ, 
ছিব, ভারতের শ্রমজীবী, যাদের শুভ্র. বলে 
৬৪ 






জ্ঞানযোগ 


চিরকাল পায়ে দলেছ, অথচ যাদের পরিশ্রম, যাঁদের 
অধ্যবসায়, যাদের শিল্পনৈপুশের জোরে ভারত 
আজও বিখ্যাত, যাদের বংশধরদের নিকট হতে 
কর আদায় করে এখনও দেশে স্কুল, কলেজ এবং 
তোমাদের ছেলেদের শিক্ষার বন্দোবস্ত হচ্ছে, তাদের 
দিকে এখনও কি. তোমরা ফিরে চাও, আপর্নর বলে 
দেখে তাদের ছুঃখে একবারও কি ছুঃখিত হও? এই 
জাতীয় পাপের ফলেই আজ দেশের এই শোচনীয় * 
অবনতি। আমরা বুঝি আর নাই বুঝি; কর্মফলদীতা . 
কর্ণের ফল দেবেনই দেবেন। ভাবের ঘরে চুরি হলে 
এইরূপই হয়ে থাকে। আমরা মুখে বলি, সর্ব্ঘটে 
নারায়ণ আর .সকল স্ত্ীতে দেবী জগদ্বার আবির্ভাব। 
কিন্ত কারধ্যকালে € বেটা চাষা, ও বেটা টাড়াল, ওকে 
ছলে নাইডে. হবে, ওর..ৃষ্টিতে আমার ভাত নষ্ট হবে, 
ওর ছয়! মারলো আমি অপবিত্র হব। এই মুখে 
_ একখানা; পেটে ' একখানা, কখনও কারও চেষ্টায় যদি 
দেশ হতে দুর হয়, ত তা ছাত্রদের দ্বারাই হবে। 
ছাত্রেরা এখন থেকে শান্্কধিত এই সকল সত্য হৃদয়ে 
দৃঢ় ধারণা করে যদি প্রাণপণে দেশের এই অজ্ঞান হি 

করে, তবেই হবে! ৃ 

জ্ঞানীর লক্ষণে গীতা পুনরায় বলছেন বীজ এ 

রঃ রর 















গীতাতনব 
ভয়ক্রোধঃ।' আমি একটা জিনিষ লাভ করতে বিষেশ 
আগ্রহ ও চেষ্টা করছি। এমন সময় আর কেহ বা 
কিছু মাঝে এসে সেই পথের অন্তরায় বা বাধা হল। 
তখন তার প্রতি মনে যে ভাব ওঠে, মেইটেরই নাম 
ক্রোধ। আর কোন কিছু লাভ করবার অতীব আগ্রহের 
নামই রাঁগ বা কাম। এই কাম ক্রোধ যার নেই, তার 
কোন বিষয়ে আসক্তি থাকে না। আমরা যে কাজই 
'করি না কেন, যদি আসক্ত না হয়ে করি, তা হলে 
. তাই আমাদের একজ্ঞানে নিয়ে যাবে। প্রত্যক্ষ দেখতে 
পাব, ধ্যান জপাদির ন্যায় প্রতিদিন করণীয় সাধারণ কাজ 
সকলও তখন যোগীর লক্ষ্য একজ্ঞানের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। 
অতএব আসক্তি আস্তে দেওয়া হবে না। উচ্চ উদ্দেশ্যে 
সব কাজ কর্‌তে হবে, অথচ স্থির থাকৃতে হবে। জ্ঞানী 
পুরুষ যে সব কাজ করেন, স্বার্থ প্রস্থত কাম ক্রোধাদির 
বশে করেন না। অতএব ইঞ্জিয় জয় করা, স্বার্থপর 
কামনা বাসনা ত্যাগ করা আর ন্মুখ বা ছুঃখে অবিচলিত.. 
থেকে উদ্দেশ্যে স্থির থাকাই জ্ঞানলাভের উপায়। 
তারপর গীতাঁকার জ্ঞানের মহিমায় বলছেন, 
এধা রানী স্থিতিঃ পার্থ নৈনাং প্রাপ্য বিমুহাতি। .. 
সথিহ্বাইস্যামস্তকালেইপি কর্ম নি্বাণমূচ্ছতি ॥ 
হে পার্থ, ইহারই নাম রন্ধে বুদ্ধি স্থির রাখা, 
৬৪ 


একবার এই ভাব জীবান এলে সর 
২৬ ২৬১৯ 


কই দিতে গম মত 
ভাব ঠিক ঠিক এলে মৃত্যু লাভ হয়। অতএব টি 
জ্ঞানী হও, নেতি নেতি করে সব ছেড়ে দাও। অদ্বৈত 
জ্ঞান লাভ করে, কাজ করতে হয়_করো। যদি 
সত্যের উদ্দেশ্যে সব ছাড়তে না! পার, তবে টতামার পথ 
কর্মযোগ। বল্তে পার, কর্ম ত সকলে করছে। তা 
করে জ্ঞান লাভ কি করে হবে? তানয়। আপনার 
ভোগ স্বুখাদির জন্য অনুষ্ঠিত কর্ম হাজার হাজার বংসর 
করলেও তা কখনও আমাদের একজ্ঞানে নিয়ে যাবে না। 
যেমন শীত উচ্চ ও সখ ছুঃধাদি সাধারণ জ্ঞান প্রকৃত জ্ঞান 
নহে, পশ্ড ও নরে সমান ভাবে আছে, সেইরূপ আপন 
স্বুখের জন্য কৃতকর্ম্ প্রকৃত কর্ম নহে। এ প্রকার কর্ও 
সামান্যমেতৎ পণ্ুভির্নরাণাম্‌।' এরপ কর্ম বন্ধনের ওপর 
বন্ধনই এনে দেয়। অতএব প্রকৃত কর্ম করবার কৌশল 
জানা চাই। নতুবা আমরা সকলেই ত কর্ম কর্ছি। ' 
চুপ করে থাক্‌বার ত যো নেই। জড়ের ভেতর, 
চেতনের ভেতর, সকলের ভেতরই কর্মাকৃত এই অবিরাম 
গতি চলেছে। মনের ভেতর, বুদ্ধির ভেতরও সেই গতি 
সর্বদা ছুটছে । 

নহি কশ্চিৎ ঘণমপি জাতু ভিষঠত্যকর্মকৃৎ। 


৬৭ 


গীতাতন্ব 


সকলেই আপনার আপনার স্বভাব নিহিত গুণের 
বশে অবশ হয়ে কণ্ম করছে। যার কাম বেশী, সে 
কামের চেষ্টায় ফিরছে । যার ক্রোধ বেশী, সে তার 
দাস হয়ে ছুটোছুটি কর্ছে। যার লোভ বেশী, সে 
নিত নৃতন জিনিষের পেছনে ছুটোছুটি করে হয়রান 
হচ্ছে। আঁবার যার সাধুতায় হাদয়পূর্ণ, সেও সংকাজের 
অনুষ্ঠানে জীবন কাটাচ্ছে। এইরূপে কর্ম সমস্ত 
জঠং ব্যাপে অধিকার স্থাপন করে রয়েছে। প্রত্যেক 
অগুর ভেতরে, রাসায়নিক আকর্ষণ ও বিকর্ষণ অনুক্ষণ 

চলেছে। এও কর্মের রূপান্তর মাত্র। তোমার 
মনের ভেতর যেমন সর্বদা কাজ চলেছে, ওদের 
ভেতরও তেমনি। অতএব কাজ করছ বলেই যে 
একতব লাত করবে তা নয়। 'কর্মযোগেন যোগিনামূ।' 
যোগের আশ্রয় নিয়ে সকল কর্মের অনুষ্ঠান কর্তে 
হবে, তবেই হয়। এমন ভাবে সকল কাজ কর্তে 
হবে, যাতে সেই একজ্ঞানের দিকে নিয়ে যায়। 
গীতা বলছেন, কাজ কখনও ছেড়ো না। কিন্তু এমন 
কৌশলে কর, যাতে তোমায় কাম-কাঞ্চনে না বাধতে . 
পারে! ঃ 

গীতাতে কর্ম করা উচিত কি না, এ সমন্ধে অনেক 


বার আনক কথা বল! হয়েছে, দেখতে পাওয়া যায়। 
৬৮ 


জ্ঞানযোগ 


এমন কি, এক একবার মনে হয়, কর্ম করা যে উচিত, 
এবং যতক্ষণ শরীর থাকৃবে, ততক্ষণ সকলকেই যে 
কোন না কোন ভাবে কর্ম কর্তে হবে, এ সব ত 
স্বতঃসিদ্ধ সত্য, এর উপর গীতাকার এত কথা কেন 
বলছেন? এ প্রশ্নের উত্তরে বলা যেতে পারে যে গীতো- 
পদেশের পূর্ববাবধি ভারতের দর্শনের চর্চা অত্যধিক হয়ে- 
ছিল। দর্শনের নানা মত নিয়ে নানা সপ্প্রদায়েরও স্থা্টি 
হয়েছিল। দর্শনচ্চার ফলে এও স্থির সিদ্ধান্ত হয়েছিল" 
যে, মন অন্তবিশিষ্ট, নামরূপ বা দেশ কাল ও কাধ্যকারণ .».. 
শৃঙ্থলের গণ্ডির বাইরে মনের যাবার শক্তি নেই 
এবং কোন কালে যেতেও পারবে না। মনের এই 
সীম স্বভাব সম্বন্ধে সকল দর্শনকারই একমত ছিলেন। 
অতএব তাদের সকলের অনুসন্ধানের এই এক উদ্দেশ্ঠাই 
হয়েছিল যে, মানুষ কি করে এই সসীম মনের পারে 
গিয়ে অনন্ত সত্যের অধিকারী হতে পারে। মন 
যখন সীমাবদ্ধ, কখন অনস্তকে ধরতে পারবে না, 
তখন সম্পূর্ণরূপে মন স্থির করে বসে থাকা, 
সত্য লাভ করবার ইহাই একমাত্র উপায় বলে 
প্রচারও হয়েছিল। এরূপ প্রচারের ফলে অপর সাধারণ 
লোকেরাও বুঝুক আর নাই বুঝুক, সেই দিকে, যেতে 
লাগ্ল। ইন্দ্রিয়জয়ী পুরুষ মনকে যথার্থ স্থির করে. 
রি ৃ 


শীতাতৰব 


নিলেন, কিন্তু জড়-দর্শী অপর সাধারণ কেবল মাত্র 
বাইরে কাজ ছাড়ল, কেহ কেহ বা নাম মাত্র সন্ন্যাসী 
হল। সাধারণের সেই বিপরীত বুদ্ধি ফিরিয়ে 
আন্বার জন্যেই গীতাকারের কর্ম করা উচিত কি না» 
এই বিষয় নিয়ে এত তর্কের প্রয়োজন হয়েছিল। সেই 
জহ্যেই তার যথার্থ কর্মাই বা কি, কেমন করেই বা 
কর্তে পারা যায় এবং যথার্থ কর্মরহিত হরর 
বন্ধন হতে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত হওয়াই বা 
-বোঝাবার এত চেষ্টা। সেই জন্যেই ভগবান কুচ 
গীতার তৃতীয় অধ্যায়ে এবং চতুর্থ ও পঞ্চম অধ:যর 
অনেক স্থলে কর্্মযোগ কাকে বলে, এ কথা সির 
বুঝিয়েছেন। 





চতুর্থ অধ্যায় 


কর্মযোগ 


(১৯০৩ খুষ্টান্ধের ১৮ই জানুয়ারি, কলিকাতা! বিবেকানন্দ 
সমিতিতে প্রদত্ত বক্তৃতার সারাংশ) * 


ইউরোপ ও আমেরিকার পণ্ডিতদের মতে ভারত. 
বর্ষের ধর্মই বল, দর্শনই বল, কেবল বৈরাগ্যের কথাই 
বল্ছে সংসারের কোন বিষয়ে মন দিও না, কেবল 
ত্যাগ কর, ত্যাগ কর, এই কথাই বল্ছে। কারা 
বলেন, সেই জন্যেই হি'ছু জাতটার ভেতর কটা 
10618001001 বা বিষাদের ছায়া, একটা কর্মে 
উদাসীনতা বা উদ্ঘমরাহিত্য, ছ্দিনের জীবনে এ সব 
আর কেন, এই রকম একট ভাব এবং তার ফলম্বরূপ ' 
আলম্ত ও জড়তা এসে পড়েছে। কথাটা কতদূর 
সত্য, তা' গ্বীতা পড়লেই বুঝতে পারা যায়। 
ভগবান্‌ গীতাকার কেবল যে বার বার বল্ছেন, কর্ম 
ছেড়ো না, তা নয়। কিন্তু নিজ জীবনে প্রতিক্ষণে 
দেখাচ্ছেন, 10690968061 ছা?) 10661086 . 

৭১ 


শীতাতত্ব 


:681,--অপূর্ব্ব কর্-উগ্ভমের মধ্যে অপূর্ব বিরাম। 
সব কাজ করুছেন, অথচ ভেতরে অনন্ত স্থিরতা। 
একেই গীতাকার নিলিপ্ততা, অনাসক্তি ইত্যাদি নামে 
নির্দেশ করেছেন। অতএব ইউ!রোপীয় পণ্ডিতের! যে 
বলেন, হিন্দুশান্ত্র মানুষকে অকর্মণ্য করেছে, এ কথা 
সত্য নয়। ধরা মনে করেন, ও'দের ধর্ম ও'দের জাতটাকে 
বড় লড়ায়ে করে তুলেছে, এবং সে জন্যাই ও'দের ভেতর 
সাংসারিক উন্নতি এবং কর্মোগ্চম এত বেশী। সেটাও - 
্রান্তবিক ঠিক কথা নহে। বাইবেলে প্রত্যেক জায়গায় 
বৈরাগোর . উপদেশ 21183 10298 .. 11856 
10188, 800 6)09 মাঃ ০006 ৪1] 17059 
08808,৯ ০ 009 ৪০0. 01 [0080 11800 00% 
10916 60 18 1018 11990.” কাল্‌কের জন্যে কিছু 
ভেবো না, আকাশের পাখীরও বাসা আছে এবং বন্য 
পশুরও থাকৃবার গর্ত আছে” কিন্তু শিক্ষাদাতা যে আমি, 
আমার মাথা গুঁজে থাক্বার একটুও স্থান নেই। ঈশার' 
জীবনী আমাদের দেশের সঙ্ধ্যাসিজীবনের মত--পড়লেই 
বুঝা যায়। ওঁরা এখন বাইবেলের মানে ঘুরিয়ে 
আপনাদের দরকার মত মানে করে নিয়েছেন। তা বলে 
কি সেই মানে নিতে হবে ? গীতা বলেন, মানুষের ধর্মানুষ্ঠান 
তার প্রকৃতি অনুযায়ী হয়ে থাকে। 82810 ি৪য়০2 
৭২ 


কর্মাযোগ 
জাত সকলকে দাবাবে, সকলের. সঙ্গে লড়াই 
করবে, কেন না ওদের ভেতর রজোগুণ ঠাসা রয়েছে। 
ওর ধর্মের মর্দও যে এরূপে আপনাদের মত বুঝবে, 
এতে আর বিচিত্র কি? নচেৎ সকল ধর্মের মর্্মই 
এক, এবং সকল ধর্ম, ত্যাগ পুর্ণজ্ঞান ও অমৃতত্ব 
লাভের একমাত্র পথ, এ কথা মানুষুকে শিক্ষা 
দিচ্ছে। | 
মহাভারত ও গীতা পাঠে বুঝা যায়, কোন্টা কর্ম, 
কোন্টা অকর্ম্ন। কিকি কাজ করা উচিত এবং কিকি 
উচিত নয় এবং মনুষ্য-জীবনের উদ্দেশ্ট__জ্ঞান__কর্টেরঁ 
দ্বারা লাভ হয় কি না, এই বিষয় নিয়ে যে €কোন কারণেই 
হোক, সেই সময়ে একটা সন্দেহ উঠেছিল ! সেই জন্য 
গ্ীতাতে বারবার ইহা বুঝাইবার চেষ্টা যে, জ্ঞান ও কর্ম 
পৃথক নয়। কর্ণ আশ্রয় কর্লে চিত্ত শুদ্ধ হবে এবং. 
তা হলে জ্ঞান আপনিই আস্বে। অর্জুন কিন্ত 
ওকথা সহজে বুঝতে পারছেন না, কেবল ভুলে যাচ্ছেন। 
সেই জন্তে শ্রীকৃষ্ণ ফের বল্ছেন, সকলের এক পথ নয়। 
নিজের লাভ লোক্সানের দিকে দৃষ্টি না রেখে কর্তব্য 
বোধে সংসারের যাবতীয় 'কাজই- কর, অথব! কামকাঞ্চন 
ত্যাগ করে সঙ্গাসী হয়ে একটা বিশেষ উদ্দেশ্ট নিয়ে 
জীবন কাটাও, উভয় পথের ফল একই হবে।* কারণ, 
৭৩ 


গীতাতত্ব 
উভয় পথই মানুষকে ত্যাগ শিক্ষা দিচ্ছে এবং সম্পূর্ণ 
আত্মত্যাগই ধর্নলাভের একমাত্র পথ। 

ভোগ সুখের জন্যে অনুষ্ঠিত সাংসারিক কর্ম 
মানুষকে ধীরে ধীরে ত্যাগ শিক্ষা দেয়। সাংখ্যকার 
মহামুনি কপিল বলেন, পুরুষকে স্বমহিমা অনুভব 
করিয়ে দেবার জন্যই প্রকৃতির জগৎ স্ষ্টিরূপ বিচিত্র 
উদ্ঘম। ভোগ মুখের দ্বা আপনার তৃপ্তি সাধন 
কুর্তে গিয়ে ধাক্কার ওপর ধাক্কা খেয়ে মানুষ, জীবনের 
প্রতিদিন কেমন ধীরে ধীরে অনিত্য স্থখের ওপর বিরক্ত 
প্হয়ও ত্যাগ শিক্ষা করে, তা ভাবলে ওকথা গ্রব সম্জয. 
বলে বোধ .হয়। আবার ছেলেকে ভুলিয়ে ওধং 
খাওয়ানোর মত মানুষের চোখের ওপর নাম, রূপ, যশ, 
প্রভৃত্ব বা অন্ত কোন একটা অনিত্য পদার্থবিশেষকে 
অতিরঞ্জিত করে ধরে তাইতেই সুখ শাস্তি, তল্লাভেই : 
পুরুষার্থ, এই বুৰিয়ে কেমন সহজ উপায়ে প্রকৃতি তাকে 
অন্যান্য অনিত্য পদার্থ সকলের তুচ্ছতা অনুভব করিয়ে 
দেয়। ৃ 

মনে কর, একজন ভাবলে, আমি বড় লোক হব। 

প্রথমে বুঝলে, বড় লোক মানে টাকা হবে, দশ জন 
লোক বশে থাক্বে ইত্যাদি। অনেক পরিশ্রমে ধনী 
হল, বুদ্ধিপুদ্ধিও একটু মার্জিত হল, কিন্তু ধনী 


৭8 


কর্মযোগ 


হবার পর দেখলে, বিদ্বান্‌ হওয়া আরও বড়। তখন 
একটু এগিয়ে গিয়ে বুঝলে, ঠিক বড় হতে গেলে 
আরও কিছু ত্যাগ স্বীকার চাই। কেন না, বিদ্যা 
শেখা দরকার, নচেং লোকে বড় লোক বলে মান্বে 
কেন? বি্ভা শিখতে গেলে কাজেই পাঁচজনকে 
নিয়ে বৃথা আমোদ প্রমোদ, আপাতমধুর নানাপ্রকার 
সখসন্ভোগ ইত্যাদি হতে আপনাকে পূথকৃ*রাধ্‌তে 
হল। এইরূপে বড়লোক, কথাটার মানে যত বুঝতে, 
লাগল, তত ধীরে ধীরে তাঁর ধারণা হতে লাগল 
যে, তাগ-স্বীকার ন! করলে উচ্চ হওয়া যায় না। ৮”. 
মানুষ এইরূপে সকল বিষয়ে বোঝে যে, ত্যাগ স্বীকার 
ন! করলে কিছুই লাভ হয় না। শান্তর বলছেন, ছোট- 
খাট বিষয়গুলিতে এইরূপে অল্প অল্প ত্যাগ কর্ণে 
শিখে অবশেষে মানুষ পূর্ণ ত্যাগ করে অমৃতত্ব পর্য্ত 
লাভ করে। 

কর্মের দ্বারা মানুষ যতই অগ্রসর হয়, ততই 
উচ্চতর মহত্বের আদর্শ তাঁর মন বুঝতে ও ধরতে পারে। 
তা লাভ করতে অন্যান্য সামান্য বিষয় ত্যাগ করা- 
আবশ্যক দেখে দে সেগুলি ত্যাগ করে ফেলে। 
বিবেকানন্দ স্বামিজীর একটি উপমা এখানে বেশ খাটে 
__আমরা নুধ্যকে এান থেকে দেখছি, একটি খুলার 

৭৫ 


গীতাতনব 
মত। হাজার মাইল এগিয়ে যাও, সেই হৃর্্যই, কত 
বড় দেখাবে। আরও হাজার মাইল যাও, আরও বড় 
দেখাবে। কিন্তু তোমার বোধ থাক্বে, এ মূরধ্য সেই। 
তেমনি আদর্শ এগিয়ে এগিয়ে ভগবানে পৌঁছুবে 
অথচ আমাদের বোধ হবে, আমরা একটা আদর্শ ই 
চিরকাল ধরে আছি। পরমহংসদেধ বলতেন, মানুষ যদি 
একটা বিষয় ঠিক ঠিক করে ধরে, তা হলে তাতেই 
শেষে ভগবানের পূর্ণ বিকাশ দেখতে পারে। 

গীতায় বলছেন, যোগ ও ভোগ, কর্ম ও সন্ন্যাস 
মানুষের নিজের অবস্থা ভেদে সত্য ও অসত্য। লাভের 
বিষয় বা ত্যাগের বিষয়, এই ভাবে অনুভূত হয়। অর্থাং 
কারও মনে যোগই ঠিক আবার কারও মনে ভোগই 
ঠিক, বলে ধারণা হয়। দেখা যায়, কর্ম সকলের সমান 
নয়। সাধারণ মানবের কর্ম আপনার সুখ বিলা এবং 
সী পনর প্রতিপালন আবদ্ধ। তা হতে যে একটু উচ 
হয়েছে, সে নিজের দেশের জন্যে ভাবে। কিসে দেশের 
লোক খেতে পাবে, কেমন করে তাদের লেখা পড়া 
শেখ বার সুবিধা" হবে, কেমন করে তারা পৃথিবীর অপর 
জাতের সঙ্গে সমান হয়ে চলতে পারবে, এই সব চিন্তায় 
ব্যাকুল হয়; তার চেয়ে যার৷ বড় হয়েছেঃ তার! ভাবে 
কেমন করে দেশের লোক সত্য পথে, থাক্‌বে, সংযমী 

৭৬ 


কর্মযোগ 


হবে অপরের ওপর বিনা কারণে অন্যায় অত্যাচার না 
করে দয়ার চক্ষে দেখবে ইত্যাদি। .কেন না, তারা 
দেখতে পায় এ সব দোষ এলে পরেই জাতটার পতন 
হবে। আবার তার চেয়ে যে বড়, তার কর্ম জগদ্ধযাপী। 
সকল কালের সকল দেশের সকল অবস্থাপন্ন মানবের 
কিসে প্রকৃত কল্যাণ হয়, তারা সেই ধ্যানে মগ্ন; যেমন 
অবতারেরা। 

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বল্‌ছেন, সাংখ্য ও যোগ তফাৎ নয়। 
মূর্খেরাই আলাদা মনে করে। হে অর্জুন, যখন তুমি 
এখনও এত উচ্চ অধিকারী হওনি যে, একেবারে” 
কর্ম ছেড়ে দিতে পার, তখন কর্মের মধ্য দিয়ে তোমার 
উদ্দেস্ত লাভ কর্তে হবে, নিজের লাভ লোকসানের 
দিকে দৃষ্টি না দিয়ে কর্তব্য কর্ণ করতে করতে যার 
চিত্ত একেবারে স্বার্থগন্ধহীন হয়ে গেছে, তারই ধ্যানাদি 
দ্বার সমাধি লাভ করা ছাড়া সাধারণ মানবের ন্যায় কাজ 
করায় কিছু লাভ নেই। সেই তখন নিজের মনকে 
সম্পূর্ণ বশীভূত করে ক্রমবিকাশের স্রোতে সাধারণ 
মানব-প্রকৃতির সীমা উল্লজ্বন করেছে। অতএব তার 
পক্ষে তখন অন্যরূপ ব্যবস্থা এই বুঝে কাজ করে যাও। 

ভগবান শ্ত্রীকষ্ণের আবির্ভাবের পূর্ব্বে এইরূপে 
কর্মের চরম পরিণাম অকর্ম্ম বা কর্মরহিতাবস্থা/শাস্ত্ে 

৭৭ 


গীতাতত্ব 
এই কথা না! বোঝায় এক বিষময় ফল হয়েছিল। যত 
ভণ্ড, ধূর্ত ও অচ্ঞ লোকেরা কর্তব্য কর্ম ছেড়ে দিয়ে 
একেবারে বড়লোক হতে বসেছিল। অমুক কন্মী, 
এ কথা বললে লোকে নাক সেঁটকাত বা তাকে 
দয়ার চক্ষে দেখে বলত, “এখনও বুঝতে পারেনি, ধীরে 
ধীরে বুঝতে পারবে, কর্ম না ছাড়লে কিছু হবে নাঃ 
ইত্যাদি। 
, মানুষের এই রকম তুল সকল দেশেই সকল সময়েই 
হয়ে থাকে। ভগবান শ্রীচৈতগ্তাদেব জ্ঞানমিশ্রা ভক্তির চেয়ে 
-জ্ঞানশৃন্তা ভক্তি বড় বলছেন অথচ জ্ঞানমিশ্রা! ভক্তিই 
জ্ঞানশৃন্ঠা বা অহেতুকী ভক্তি লাভের একমাত্র উপায়, এ 
কথাও বলেছেন। সে কথাটি ভুলে যাওয়ায় আজকালকার 
বৈষ্ণব*বাবাজীদের দুর্দশা দেখ। সকলেই একেবারে 
জ্ঞানশুন্তা ভক্তি লাভ করবে। জ্ঞানমিশ্রা ভক্তি যে 
করে, সে যেন তাদের চোখে বড় কুকাজ কর্ছে। 
সকলেই একেবারে বড় লোক হবে। বড় লোক হতে 
গেলে যে কত “কাঠ খড় পোড়াতে হয়, কত স্বার্থ- 
ত্যাগ ও উদ্ঘম করতে হয়, তা কেউ করবে না। একটা 
গল্প মনে পড়েশ-একজন লোক এক সম্ন্যাসীর মঠে 
গিয়ে এক সাধুকে বললে, “মহারাজ, আমায় চেল! 
বানিয়ে, নিন” মঠের লোকেরা জিজ্ঞাসা করলে, 
৭৮ 


কর্মযোগ 


“তুমি পারবে? চেলা হওয়া বড় শক্ত। মঠের ঠাকুরজীর 
ভোগ রাধ্তে হবে, হাণ্ড মলতে €মাজ তে ) হবে, 
জল তুলতে হবে, সাধুদের ফাই ফরমাস খাটতে হবে, 
গুরু য| বলে দেবেন, সে পড়া মুখস্থ করতে হবে, 
তার সব কথা শুনতে হবে ও সন্ধ্যার পর তার পদসেবা 
কর্‌তে হবে।” সে দেখলে বিষম মুক্ষিল। ভেবে 
চিন্তে জিজ্ঞাসা করলে, “আচ্ছা গুরু যিনি হবেন, তাকে 
কি করতে হবে?” তারা বললে, “গুরু 1 জপধ্যানু 
পুজাদি করবেন, চে্লাদের শিক্ষা দেবেন ও তাদের 
দিয়ে কাজ করিয়ে নেবেন।” তখন সে বল্‌লে, “তবে, 
মহারাজ! আমাকে একেবারে গুরুই বানিয়ে নিন্‌।” 
আমাদের দেশে এখন এই ভাবটা বড় বেশী। ভক্ত- 
শ্রেষ্ঠ তুলসীদাসের কথাটি শ্রীরামকৃষ্ণদেব প্রায়ই 
আমাদের শোনাতেন, “গরু মিলে লাখ লাখ চেল! 
না মিলে এক ।” এ ভাবটা! যে গৃহস্থের ভেতর বেশী, আর 
সন্গাসীর ভেতর কম, তাও নয়। লোকে মনে করে, 
সন্ন্যাসী হয়ে গেরুয়া কাপড় পরলেই আর কর্ম থাকে না, 
একেবারে জ্ঞানী হয়ে যায়। তা নয়। গীতাকার বলেন, 
কর্মপ্যকর্ম যঃ পশ্যেদকর্্মণি চ কর্ম যঃ। 
স বুদ্ধিমান মনুত্যেযু স যুক্ত কৃত্নকর্মকৃৎ॥' 
সর্বদা কর্ণ করলে আগ্মাকে সাক্ষাৎ দেখার দরুণ 
৭৯ 


গীভাতত্ 
নার সর্ধবদা সকল অবস্থায় এই জ্ঞান ঠিক ঠিক থাকে 
যে, আমি কিছুই করি না, আমি আত্মা, আর আত্মাকে 
না দেখে জ্ঞানীর ভান করে অলস হয়ে বসে থাকলে 
যিনি দেখেন যে, বিষয় চিন্তারূপ যত কর্ণ সব করা 
হচ্ছে, মানুষের ভেতর তিনিই বুদ্ধিমান, তিনিই যোগী, 
তিনিই সকল কর্ম যেমন করে করা উচিত, ঠিক 
সেই রকম করে কর্তে পারেন। তার ভেতরই 
, গীতাকারের ন্যায় অনবাচ্িন্ন কর্ম উদ্ঘমের ভেতর যোগীর 
অবিরাম শান্তি দেখতে পাওয়া যায়। যিনি ঠিক 
ঠিক জ্ঞানী বা ঠিক ঠিক ভক্ত হয়েছেন, তার এরূপ হয়। 
তিনিই কর্ম কর্বার সময়েও আপনাকে তা থেকে 
আলাদা দেখতে পান। তিনি যেন পাকা নারকেল, 
ভেতরে, খোলা থেকে শীস আলাদা হয়ে গেছে, নাড়, 
খট্‌ খটু করে আওয়াজ হবে, আর আমরা যেন ডাব,__ 
খোলাতে শাসেতে এক সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছি। খোলায় 
আঘাত লাগ.লে শাসেও গিয়ে লাগে। কর্মযোগ করতে 
করতে মানুষ পেকে যায়। পাকা নারকেলের মত 
তার ভেতরে খোলা'ও শীস ছেড়ে যায়। মন, বুদ্ধি, 
অহঙ্কার, ইন্দ্রিয় ও শরীর প্রভৃতি হতে তার আত্মা 
আলাদা হয়ে গিয়ে আপনাতে আপনি থাক্‌তে গারে। 
এ মুব বাইরের জিনিষগুলো ছেড়ে দিয়ে তার আত্ম! 


৮০ 


কন্মযোগ 


আলাদা হয়ে দাড়াতে পারে । জেগে থাকবার সময় তো: 
কথাই নেই, ঘুমোবার সময়ও সে আপনার শরীরটাকে 
দেখে যেন আর একটা কার শরীর, ধেন অপর 
একজন কেউ ঘুমোচ্ছে। সাধকশ্রেষ্ঠ স্রীরামপ্রসাদ গেয়ে 
গেছেন, 
“ঘুম ছুটেছে আর কি ঘুমাই, যোগে যাগে জেগে,আছি। 
এবার যার ঘুম তারে দিয়ে, ঘুমেরে ঘুম পাড়ায়েছি।” 

তার অবস্থাও তখন ঠিক এরূপ হয়! আর এ 
গানের মানেও সেই ঠিক ঠিক বুঝতে পারে। মানুষ 
যত নিঃস্বার্থ ভাবে কর্ণ করে, ততই ধীরে ধীরে তার 
শরীরেন্দরিয়াদি থেকে আমি-বুদ্ধি উঠে গিয়ে আত্মায় গিয়ে 
দাড়ায় ও এরূপ অবস্থা! লাভ হয়। 

আর এক কথা এখানে সংক্ষেপে বলা যেতে পারে। 
হিন্দুশান্ত্রে সর্বত্র একটা বিষয় বোঝাবার বিশেষ চেষ্টা 
দেখতে পাওয়া যায় যে, মুক্তি জিনিষট। কর্মের বার৷ 
লাভ করবার নয়। উহা “কর্ম্মসাধ্য” নয়। গীতাকারেরও 
এ কথাটা এ ভাবে বোঝাবার চেষ্টা দেখা যায়। এর 
মানে কি? এ কথাটার ঠিক ঠিক মানে বোঝা দরকার । 
না বুঝলে বিশেষ ক্ষতি। কেন না, তা হলে কর্মমটাকে 
ছোট জিনিষ মনে হবে। মনে হবে, মুক্তির সঙ্গে 
.ওটার কোন বিশেষ সম্বন্ধ নেই অতএব কর্ম করতেও 

পু ৮১ 


গীতাতত্ব 


প্ররৃতি থাকবে না, কর্শে নিষ্ঠা আল্গ! হয়ে যাবে । 
তবে এ সব বিচার শান্ে কিসের জন্য 1? এইটি বোঝাবার 
জন্য যে, কর্ণের ঘারা আত্মার স্বরূপ বা স্বভাবের কিছু 
মাত্র পরিবর্তন হয় না, আত্মা ক্ষয়বৃদ্ধিরহিত। উৎপত্তি- 
বিনাশশূ্য, নিত্যানন্দস্থভাব। কর্ধ-শরীর। মন, 
ইন্দডিয়াদিকে রদ্লে দেয়। যে সব যন্ত্রের ভেতর দিয়ে 
আমরা আত্মা ও জগত দেখছি, কর্ম সেইগুলোকে 
ঘসে মেজে পরিষ্কার করে দেয়। ফলম্বরূপ মন বুদ্ধির 
ভেতর দিয়ে এতদিন যে ঝাপসা ঝাপসা দেখছিলাম, 
কুয়াসার ভেতর দিয়ে দেখার মত এতদিন যে ছোট 
জিনিষটাকে "বড় দেখাচ্ছিল বা জিনিষটার অস্তিত্ব্ট বোধ 
হচ্ছিল না সেই সব ভুলগুলো ঘুচে গিয়ে যে জিনিষটা 
যেমন* সে জিনিষটাকে ঠিক তেমনি দেখতে পাওয়া 
যায়। অতএব তাদের মতে কর্মের ফল হচ্ছে চিত্তশুদ্ধি। 
আত্মাটা যে ছোট ছিল, কর্মের দ্বারা ধীরে ধীরে বাড়তে 
লাগল এবং অবশেষে এত বেড়ে উঠল যে, তার সব 
বাঁধন গুলে! পটপট করে ছিড়ে গেল, তা! নয়; কেন 
না, এক রকম কর্মের দ্বারা আত্মাটা যদি বাড়তে পারে 
তা হলে আর এক রকম কর্মের দ্বারা সেটা ছোট হয়ে 
হয়ে অবশেষে বিলকুল নাও থাকতে পারে-_এইটা 
এসে পড়ে। এই জন্য তারা বলেন যে; আত্মার মুক্তি 
৮২ 


কর্মযোথ 


যদি কর্মসাধ্য হয়, তবে তার অন্তও আছে। কারণ, কর্ম 
দ্বারা যে জিনিষের উৎপত্তি হয়, ভার আদিবৃদ্ি, ও 
বিনাশ আছে। অতএব তার! বলেন, মুক্তিটা আত্মাতে 
স্ব্দা রয়েছে, ওট! হচ্ছে তার যথার্থ স্বভাব ; সেইটে 
ভুলে গিয়েই তার আপনাকে দেহ মন উত্যাদি বলে 
মনে হচ্ছে, আর তার ফলেই আপনাকে স্থৃখী ছুঃখী বলে 
মনে করছে। 

যদি জিজ্ঞাসা কর, এ রকম ভুল তার কেন হল? 
তাতে তাঁরা বলেন, সেটা বোঝ বার বা বোঝাবার কথ! 
নয় হে বাপু--সে ভুলটা আগে গেলে তবে বোঝা বা 
বোঝান আসে । তোমার মনবুদ্ধির দৌড়টা এ ভুলের 
গণ্ডির ভেতর । সে জন্য সে ভুলটার কারণ মন বুদ্ধি কেমন 
করে জান্বে হে? তবে যদি জিজ্ঞাসা কর, কেমন 
করে সে ভুলটা! হল, তা হলে তারা বলেন, 'জ্ঞানে- 
নাবৃতং জ্ঞানং তেন মৃহ্ান্তি জন্তবঃ।” অজ্ঞানের দ্বারা 
জ্ঞানটা ঢাকা পড়েছে, সেই জন্য এই কষ্ট। আবার 
যদি জিজ্ঞাসা কর, তবে উপায়? তা হলে তারা বলেন, 
হা, সেটার একটা উপায় ঠাউরিছি। সুখ ছুঃখ, লাত 
লোকসানের দিকে নজর না দিয়ে সৎ কাজগুলো করে 
যাও দেখি। তা হলেই এই অজ্ঞানের জড় অহস্কারটা। নষ্ট 
হয়ে যাবে; আর “তৎ স্বয়ং যোগসংসিদ্ধ; কালেনাত্মনি 

৮৩ 


শীতাতত্ব 


বিন্দতি। এইরূপে কাজ করতে কর্‌তে পূর্ণভাবে 
নিষ্ধাম হলেই সে জ্ঞান আপন! আপনি এসে পড়বে । 
তা হলেই ভ্রমটা ঘুচে যাবে। তখন শরীর মন যে আর 
কাজ করবে না, তা নয়, ঈশ্বরেচ্ছায় আরও ভাল করে 
কাজ কর্বে। তখন বুঝবে, কখন বা কর্ম করা দরকার 
আবার ক্খন বা চুপ করে থাকা দরকার। আরও 
বুঝবে কণ্র্ই বা কি আর কর্ম থেকে বিরত হয়ে ঠিক 
ঠিক চুপ করে থাকাটাই বা কাকে বলে। তখনি 
মানুষের কাজ করা বা না করা এ ছুটো ক্ষমতাই 
আস্বে। সাধারণ মানুষের তা নেই । সে কেবল কাজ 
করতে জানে। এক দগুও কাজ না করে চুপ করে 
থাকৃতে জানে না। কাজ যেন ভূতের মত তার ঘাড়ে 
চেপে ৰয়েছে আর ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে । এইরূপে 
কর্মের অধীন হয়ে সে এমন জড়িয়ে পড়ে যে, বিশ্রাম 
বা মুক্তির ভাবট। তার নজর থেকে একেবারে উড়ে 
যায়। মর্বার আর অবসর পায় না। ইহাই বিপদ্‌। 
যদি বল কেন? কোন কাজ না করে কি আমরা স্থির 
হয়ে কখন কথন বসে থাকি না, বা রাত্রিকালে ঘুমোই 
না? তখন আর কি কাজ করে ঘুরে বেড়াই? গীতা- 
কার বলেন, হা, ঘুরে বেড়াও না সতা, কিন্তু তাবলে 
কি কাজৎকর! একেবারে বন্ধ দাও? চিন্তা, ভাবনা বা 
৮৪ 


স্বপ্ন এগুলোও যে কর্ণ। তারপর নিঃশ্বাস ফেলা, 
হাদয়স্পন্দন, রক্তসঞ্চালন প্রভৃতি কাজগুলো তো হতেই 
থাকে। তবে আর একেবারে কাজ থেকে বিরত হলে কি 
করে? ওকথা কোন কাজের কথা নয় হে বাগু। তুমি 
কর্মের দাস-__-একেবারে পরাধীন। ভুলে মনে কর্ছ, 
আমি স্বাধীন, আমি কাজ করলেও করুতে গ্লারি। না 
করলেও করতে পারি; বিরাম কাকে বলে, তার 
কিছুই বোঝ না এবং একটু আধটু বুঝলেও তোমার* 
তা কর্বার শক্তি নেই। যদি বিরাম কথাটার যথার্থ মানে 
বুঝতে চাও, তা হলে নিজের লাভ লোকসানট।৷ আজ 
থেকে আর না খুঁজে--কর্তে হয় তাই কর্ছ__বলে 
সব কাজগুলো করে যাও। তা হলেই কালে বুঝতে 
পারবে, এই রকমে কাজ করার নামই হচ্ছে কর্্মযোগ । যে 
কাজগুলো কর্‌তে করতে লোকের নানাপ্রকার বন্ধন 
আসছে, সেইগুলোকে এমন ভাবে করা ষে, যা কিছু 
শুন্ছ, যা কিছু বলছ, যা কিছু করছ, সেই 
সমুদয় কাজগুলো তোমায় আর জড়িয়ে না ফেলে. 
কর্মের দাসত্ব থেকে মুক্ত করে দেবে । 

কর্মযোগ ব্যাপারটা কি? না, কন্মকরবার এইরূপ 
কৌশল 1--যোগঃ কর্ন কৌশলং-__-এমন কৌশলে 
.কন্মকরা যায় যে, কাজ করে আর জড়িয়ে পড়তে 

৮৫ 


গীতাতত্ব 


না হয়; যাতে আমাদের ইচ্ছামত স্থাধীন ভাবে 
কাজ করতে পারি। কি করুলে তেমন করে কাজ 
করা যায়? নিজের লাভের দিকে দৃষ্টি নারাখলে। 
যেখানেই স্বার্থ সেখানেই ফলের আশা আর সেইধানেই 
আসক্তি এসে পড়ে। তুমি কাজ কর কিন্তু দেখো, 
কাজ যেন তোমায় না পেয়ে বসে। নতুবা 
ত কর্তেই হবে। পিতামাতার সেবা করতে হবে, 
*্যদি বিবাহিত হও তে। স্ত্ীপুত্রদের পালন কংতে 
হবে। যে সমাজে আছ, তার প্রতি কর্তব্য আছে, যে 
দেশে জন্মেছ, তার প্রতি কর্তব্য আছে; সমগ্র মনু 
জাতির প্রতি কর্তব্য আছে। শাস্ত্র বলেন, দেব-খ”, 
ধযি-ধণ ও পিতিধণ নিয়ে মানুষ পৃথিবীতে জন্মায় 

কাজ করতেই হবে। তবে পরমহংসদেব যে- 
বল্‌তেন, সেই ভাবে কান্জগুলো কর। মনে কর,যেন 
বড় লোকের বাড়ীর চাকরানী। সে কাজ কর্ম কণৃছে, 
ছেলেদের খাওয়াচ্ছে দাওয়াচ্ছে, তাদের সুখে সখী, ছুঃখে 
দুখী হচ্ছে কিন্তু মনে আনে জানে, আমি এদের 
কেউ নই। মনিব যে দিন ইচ্ছে কর্বে, সেই দিনই 
তাড়িয়ে দেবে। তুমিও সংসারে এই ভাবে থেকো। 

অজ্জন যতদিন রাজত্ব ভোগ, লড়াই দাঙ্গা প্রভৃতি 
তার জুবনের সব কাজগুলো এই ভাবে করে আসুছিলেন, 

৮৬ 





ততদিন তার বুদ্ধি পরিষ্কার ছিল। ভালবাসার 
মোহে পড়ে ততদিন তার বুদ্ধিগুদ্ধি গুলিয়ে যায় নি। 
ক্ষত্রিয় জীবনের উচ্চ উদ্দেখ্ট-_সত্যনিষ্ঠা, অন্যায় অত্যা- 
চারের দগুবিধান করে গ্যায় বিচার স্থাপন, ধর্ট্মের 'উচ্চ- 
ভাব আপনার হৃদয়ে পোষণ করে অপরকে তাতে 
প্রবৃত্ত করান, শরণাগতকে শরণদান, দুর্বল শব্রু় প্রতি 
ক্ষমা ও দয়াভাব, আপনার আত্মীয় কুটুম্ব বা ভালবাসার 
পাত্র অন্ায় অধন্ম করলে তার বিরুদ্ধে দণ্ডায়মানু 
হওয়া ইত্যাদি--এতদিন বজায় রেখে কাজ করে যাচ্ছি- 
লেন। মনে. করেছিলেন, এত খুব সোজা । এই 
ভাবেই চিরদিন কাজ করে যাবেন। কিন্তু মায়ার 'বিষম 
প্রতাপ! হঠাৎ একদিন কুরুক্ষেত্রের ভীষণ হত্যা- 
ভিনয়ের আড়ম্বর উদ্ভোগ, জীবনের পরিবর্তনসন্কুল 
পরীক্ষার দিন সাম্নে উপস্থিত। দেখলেন, ঘটনা 
শ্রোতে আপনি একদিকে এমন জড়িয়ে পড়েছেন যে, 
ছাড়বার পথ নেই! ধর্ম, সতা, ন্যায়, বিচার সব তাঁর 
দিকে। অমিতপ্রজ্ঞ ধর্ম্ববন্ধু ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তার দিকে, 
নেই কেবল তারা, ধাদের জীবনের কিশোর কাল হতে 
শ্রদ্ধাভক্তি করে এসেছেন, ভালবেসেছেন, হৃদয়ের কোমল 
ভাবগুলো দিয়ে এসেছেন। নেই কেবল তারা, ধাদের 
হাত থেকে এমন অত্যাচার, অবিচার, অধর্ম,এবৃশংসতা 
৮৭ 


গীতাতত্ 


পাবার প্রত্যাশা মানুষ স্বপ্নেও করে না। আবার তার! 
যে কেবল তার দিকে নেই, তাও নয়, তার বিপক্ষে 
দাড়িয়েছেন। এত সাধের ক্ষত্রিয়-ধর্ম, জীবনের উচ্চ 
জান যি রক্ষা করতে হয়ত তাদের হত্যা করা ভিন্ন 
অন্য উপায় নেই। দেখলেন,_তাদের ' হাদয়ের উষ্ণ 
শোণিতধারায় তর্পণ ভিন্ন ধর্নিষ্ঠা-দেবী প্রসননা হচ্ছেন 
না। অর্জনের বীর হৃদয় সে ছবি স্থির হয়ে দেখতে 
প্রারূলে না। ভেতরে সহত্র সহস্র বিপরীত ভাবের প্রবল 
তরঙ্গ সমূহ এককালে ছুটাছুটি করে আব্তসঙ্কুল করে 
ফেললে । ভালবাসায় মোহ এল। মোহ, ধর্মাতাবের 
.. উচ্চ স্মৃতিস্তস্ত ডুবিয়ে ফেল্লে। কাজেই বুদ্ধি আর 
দিউনিণয়ে সমর্থ না হয়ে আবর্তের ভেতর নৌকা চালিয়ে 
অসহায় হয়ে পড়ল। তখন স্বার্থ এল। মান 
অপমানের চিন্তা, জয় পরাজয়ের ভয় ও ভাবনা মব 
একে একে এসে বল্লে, “পালাও পালাও, এ ত ধর্ম 
নয়, এ যে অধর করতে বসেছ। কাদের সঙ্গে' লড়াই 
কর্‌তে কোমর বেঁধেছ? এদের সঙ্গে পার্বেই বা কেমন 
করে? - এ দেখ ইচ্ছামৃত্যু ভীগ্ম। এ দেখ গুরু দ্রোণ, এ 
দেখ বিচিত্রকবচকুগুলধারী, একঘাতী অস্ত্রসহায় কর্ণ, এ 
দেখ অমর, কৃপ ও অধ্থথামা, এ দেখ পিতৃবরদর্পাঁ দিল্ধু- 


রাজ জন্ব্রথ-এদের সঙ্গে পার্বে? এতটুকু জমির 
৮৮ 


কর্মযোগ 

জন্যে এত বড় বিশ্বব্যাপী নামটা কি খোয়াবে? পালাও 
পালাও, ভিক্ষা করে খাও, সেও ভাল । আর যদি জেত ও 
তো এদের মেরে, সে রাজ্যভোগ কি সুখের হবে ?” 
অর্জুন যে ধর্শের জন্ে, সত্য বিচারের জন্যে, লড়াই 
করতে দড়িয়েছেন, সে কথা ভুলে গেলেন। সব কালেই 
জীবনের এইরূপ স্থলে মানুষের এমনি হয়| উদ্দেশ্য 
ভূলে স্বার্থে জড়িয়ে পড়ে। গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এটি 
বেশ বুঝিয়ে দিয়েছেন ;__ নু 

ধ্যায়তো বিষয়ান্‌ পুংসঃ সঙ্গস্তেষপজায়তে। 

সঙ্গাৎ সঞ্জায়তে কাম: কামাত ক্রোধোইভিজায়তে ॥ 

ক্রোধান্ভবতি সমন্মহঃ সম্মোহাৎ ম্মৃতিবিভ্রম। 

স্বৃতিভ্রশাদুদ্ধিনাশো বুদ্ধিনাশাৎপ্রণশ্ঠাতি ॥ 

রূপ রসাদি ভাবতে ভাবতে কোন জিনিষটা প্রথমে 
মানুষের মনে ভাল লাগে ও মন সেই দিকে ঢলে পড়ে, 
188560 হয়। অমনি কামের উদয় অর্থাৎ এঁটে 
আমার হোক, এইরূপ ইচ্ছা! হয়ে সেইটে ধর্‌তে এগিয়ে 
যায়। ওতে বাধা গেলেই বিরক্তি আসে। বিরক্তির 
পরিণাম ক্রোধ। তার বশীভূত হয়ে সে সেই বাধাটা 
দূর কর্তে চেষ্টা করে। তার পরিণামে মোহ আসে। 
মোহ এলে 'সত্যপথে চলব, ধর্দপথে থাক্‌ব' ইত্যাদি 
উচ্চ উদ্দেশ্যগুলি ভুলে যায়। এরই নাম, ম্মৃতির 


৮৯ 


গীতাতত্ব 


লোপ হওয়া। তখন ম্যায়ে হোক অন্যায়ে হোক সে 
জিনিষটা মানুষ লাভ করতে ছোটে। ক উপদেশ 
প্রভৃতি এতদিন যা তাকে মন্দ কাজ, পাপ কাজ থেকে 
বিরত রেখেছিল, সে সব ভুলে যায়। ফলে বুদ্ধি 
গুলিয়ে যায় ও পাপ কাজ করে অশেষ প্রকারে কষ্ট 
পায়। 

মনে কর, কেউ অর্থ উপার্জন করতে চায়, দেশের . 
উপকার করবে বলে। প্রথম প্রথম এ ভাব বেশ 
প্রবল থাকে। কিন্তু টাকা হাতে এলে টাকার প্রতি 
মায়া হয় এবং ক্রমে অর্থ লালায় উদ্দেশ্ত তুলে নিজের 
" সুখবিলা অধব৷ কাঞ্চনকেই জীবনের লক্ষ্য করে জলে। 
সেই জন্ত উদ্দেশ্য ঠিক রাখতে হয়, ফলের দি; 'ষ্টি 
রাখলে চলবে না; এই হচ্ছে কর্মযোগ। কর গী 
কে হতে পারে? যে আপনাকে বশ কর্‌তে পেরছে, 
আপনার ইন্দ্িয়গ্ুলোকে বশ করেছে; জীবনের উচ্চ 
উদ্দেশ্য যার অবিচলিত আছে, কাজ যাকে না চালিয়ে যে 
কাজকে 'চালায় সেই কর্ধযোগী হতে পারে। উদ্দেশ 
পূর্ণ হলে সে বুঝতে পারে, আমার কাজ ফুরিয়েছে এবং 
কাজ থেকে অবসর নেয়। 

গীতায় তাই শিক্ষা দিচ্ছেন, কাজ কর। কাজ না 
করার «চেয়ে কাজ করা ভাল। কিন্তু কাজ করতে 

৯৪ 










কর্মযোগ 


গিয়ে ফলকামনা করো না। ফলকামনা এলেই 
বাঁধা পড়তে হবে! দেখতে পাওয়া যায়, পৃথিবীতে 
যারা কোন বড় কাজ করেছে, তারা সকলেই সংযমী 
পুরুষ, আপনার উদ্দেশ্য ঠিক রাখে। ছাত্রজীবনে কে 
বড় হয়? যে পাঁচটা আমোদে না মেতে উদ্দেশ্য ঠিক 
রাখে । সংসারে কে বড় হয় ?_ ধর্মে কে বড় ,হয়?-_ 
যে উদ্দেশ্য ঠিক রাখতে পারে। উদ্দেশ্তহারা হলেই 
পড়তে হবে ও তোমার দ্বারা কাজের মত কাজ আর * 
একটাও হবে না। কেন না, তোমার বুদ্ধি গুলিয়ে যাবে। 
কোন্টা করা উচিত, কোন্টা নয়, .তা আর ধর্‌তে 
পারবে না। ফলে কতকগুলো বাজে কাজে ছুটো-ছুটি 
করে মরাই সার হবে। 
প্রশ্ন হতে পারে, মন থেকে একেবারে ফলকামন 
যদি যায়, তা হলে কাজ করব কেমন করে? কেস 
উদ্দেন্টা বিশেষ কামনা করা ভিন্ন কাজ কি করা যায়? 
ঠিক কথা; উদ্দেশ্য ছাড়া কাজ হতে পারে না। কিন্ত 
সেই উদ্দেশ্ঠের দিকে যাবার সময় নিজের লাভালাভ 
খতাব কেন? আমরা কেবল নিজের লাভ লোক্সান 
খতাতে চাই। ওইটে আগে খতিয়ে তবে কাজে লাগি। 
লেখা পড়া শিখি রোজগার করতে পারব এবং নাম 
হবে বলে, জ্ঞানের জন্যে নয়। স্ত্রী পুত্র গ্রতৃতিকে 
৯১ 


গীতাতত্ব 

ভালরাসি নিজে সুখী হই বলে, তাদ্রে জন্তে নয়। 
এইরূপে তলিয়ে দেখলে আমাদের সকল কাজেরই উদ্দেশ্য 
দেখতে পাই স্বার্থসেবা--মাপনার অস্কারের যোড়শো” 
পচারে পুজা ভিন্ন আর কিছু নয়। আমাদের মুখে 
একখানা থাকে আর মনে একখানা থাকে। এই 
ভাবের ঘরে চুরিটা প্রথমে না ঘুচলে কোন বার্থ 
কাঁজই আমাদের দিয়ে হবে না। কোন সত্যের পথই 
,আমাদের চোখের সাম্নে পড়বে না। সেই জন্ গীতাকার 
অর্জ,নকে সামনে রেখে আমাদের সকলকে বলছেন, 
ফলকামনাই সর্ববনাশের মূল। ফলকামনাই তোমায় 
অজ্জানে জড়িয়ে রেখেছে, কর্তব্য করতে দিচ্ছে না। 
চোখে ঠুলি বেঁধে সামনে সত্য থাকলেও দেখতে দিচ্ছে 
* না। ফলকামনা ছাড়, ছাড়। ফলটার দিকে দৃষ্টি না 
রাখলেই অজ্ঞান অধর্থ্ের মূল স্বার্থপরতার হাত থেকে 
এড়াবে। তখন ঠিক ঠিক সুখ কাকে বলে, তা বুঝ) 
ঠিক ঠিক ভালবাসা কাকে বলে, তা দেখবে। ফলটার 
দিকে দৃষ্টি না রাখলেই তুমি যোগী হবে, জ্ঞানী হবে, 


ভক্ত হবে। তোমার সব ছুংখ দুরে যাবে। 
শান্্র পড় বা বক্তৃতা শোন, শাস্ত্রের কথাগুলি 
যদি জীবনে পরিণত করে কাজ না করতে পার, শাস্ত্র 
যদি ভ্ীবনে না খাটে, জীবনের প্রত্যেক ঘটনায় সহায় 
৯২ 









ন। হয়, তবে. সে পড়াপ্ডনো সব মিথ্যে । ভার কোন 
প্রয়োজন'নেই। ছাত্রজীবনেই বল, সংসারে ভোগের 
ভেতরেই বল, আর সন্ন্যাসের ত্যাগের মধ্যেই বল, এটি 
করতে শেখা আগে চাই। তা হলেই মান্তুষ যেখানে 
যেমন অবস্থায় থাকুক না কেন, শাস্তজ্ঞান জীবনের 
উচ্চ লক্ষ্য তার সাম্নে ধরে তাকে সেখান হতেই তুলে 
দেবে ।৮৮ টু 

স্বামিজী বল্তেন, আমাদের দেশে এখন আর শাস্ত্র, 
কেউ বোঝে না, কেবল ব্রন্ষম, মায়া, প্রকৃতি প্রভৃতি 
কতকগুলো কথা শিখে মাথা গুলিয়ে মরে। শাস্ত্রের মূল 
উদ্দেশ্টটা ছেড়ে দিয়ে কেবল কথাগুলো নিয়ে মারামারি 
করে। শাস্ত্র যদি মানুষকে সকল সময়ে সকল অবস্থায় 
সাহায্য করতে না পারেন, তা হলে সে শাস্ত্রের বড় একটা 
আবশ্যক নেই। শাস্ত্র যদি সন্ন্যাসীকে পথ দেখান আর 
গৃহীকে পথ দেখাতে ন| পারেন, তা হলে সে একদেশী 
শান্ত্রে গৃহস্থের কি দরকার 1 অথবা শান্তর যদি মানুষ 
অন্ত কাজ-কন্দ্ম সব ছেড়ে বনে গেলে তবে তাকে সাহায্য 
কর্‌তে পারেন, কিন্তু সংসারের কোলাহলের ভেতর, দিন- 
রাত খাটুনির ভেতর, রোগ শোক দৈস্তের ভেতর, অন্ু- 
তণ্তের নিরাশার ভেতর, অত্যাচারিতের ধিককারের ভেতর, 
রক্ষেত্রের করালতার ভেতর, কামের ভেতর, ক্রোধের 

৯৩ 





শীভাতষ 


ভেতর, আনন্দের ভেতর, জয়ের উল্লাসের ভেতর, গরা- 
জয়ের অন্ধকারের ভেতর এবং পরিশেষে মৃত্যুর কাল- 
রাত্রির ভেতর মানুষের হৃদয়ে আশার আলো জালিয়ে 
দিয়ে পথ দেখাতে না পারেন, তবে ছূর্বধল মানুষের দে 
শাস্ত্রে কিছুমাত্র প্রয়োজন নেই। 

মনে,কর, ছাত্রজীবনে জ্ঞান লাভের জন্ত বা অন্ত 
কোন সং উদ্দেশ্যে আমায় বিলেত যেতে হবে। শান্ত 
*্যদি না আমায় সে সময় সে বিষয়ে সাহায্য করতে 
গারেন, তবে আমার দশ! কি হবে? কিন্তু তলিয়ে 
দেখলে বুঝতে পারা যায় যে, আমাদের শাস্ত্রের কোন 
দোষ নেই, দোষ আমাদের। আমরা শান্ত্রোপদেশ 
কিরূপে জীবনের প্রত্যেক ঘটনায় লাগাতে হয় ও লাগাতে 
পারা যায়, তা একেবারে ভুলে গেছি। ভুলে গিয়ে মনে 
করছি, খাঁটি ধর্ম কর্ম করতে হলে বনে যেতে হবে। 
গীতাকারের অন্য মত। তিনি একদিকে অর্জুনকে 
বল্ছেন, ন্যায় বিচারের জন্য লড়াই না করূলে তোমার 
ধর্ম লাভ কিছুতেই হবে না, আবার উদ্ধবাদি অন্ত 
প্রকৃতির লোককে বলছেন, তোমাকে সব ছেড়ে ছুড়ে 
গাহাড়ে ব্দরিকাশ্রমে গিয়ে অনগ্যমনে ধ্যান জপাদি 
করতে হবে। তা না হলে তোমার ধর্মলাভ হবে না। 
অতএব শাস্ত্র কথাই হচ্ছে এই, তুমি যেখানেই থাক, 

৯৪ 


কর্মযোগ 


কর্মফল ছেড়ে ঠিক ঠিক নিরস্বার্থ হয়ে কন্ম কর্লে 
সেখান থেকেই তোমার মুক্তি হবে । 

পূর্ণভাবে নিম্বার্থ হয়ে মানুষ যে কাজ করতে 
পারে, আমাদের চোখের সাম্নে পরমহংসদেব ও বিবেকানন্দ 
স্বামী তাহা নিজ নিজ জীবনে দেখিয়ে গেছেন। 
তারা আমাদের মত শাস্ত্রের ছোবড়া নিয়ে, টানাটানি 
করেননি। আমাদের জীবনের সহিত শান্ত্রোপদেশের এক্য 
চাই তা হলেই শাস্ত্রের উদ্দেশ্য ঠিক বুঝতে পার 
যায়, তা দেখিয়ে গেছেন। কেমন করে শীস্তরজ্ঞান 
জীবনে প্রতিফলিত করতে হয়, তাই শিখিয়ে গেছেন।- 
আমাদের সেটি যত্ব করে শেখা চাই! তোমাদের " 
সমিতিরও তাই উদ্দেশ্য, সেটা যেন কখন তুলো না। 
দেশ কাল ও পাত্র ভেদে ধর্ম নানা ভাবে প্রকাশিত 
হবে, এইটি নিজে নিজে ভাল করে বুঝে জগতের সাম্‌নে 
জীবনে সেইটি দেখাতে হবে, এ কথাটা ভূলোনা। শাস্ত্রে 
উপদেশগুলি একালেও যে জীবনে পরিণত করা যায়, 
আর করতে পারলে মানুষ যে কোন অবস্থায় থাকুক 
না কেন, বিশেষ সাহায্য পায়, জীবন-সংগ্রামে বিশৈষ 
জোর পায়, তা দেখাতে হবে, ভুলো না। শাস্ত্রের যদি 
দোষ থাকৃত বা উহা যদি একালের অনুপযোগী, 
, সেকেলে একঘেয়ে উপদেশে পূর্ণ থাকত, ছা হলে 
৯৫ 


গীতাতন্ব 

তগবান্‌স্্ীরামকৃঞ্টদেব ও ধম্ম'বীর বিবেকানন্দের জীবন 
গঠনে কখন সহায় হতে পার্ত না, এটা বেশ করে 
বুঝো, শাস্ত্রের দোষ দিও না। দোষো আপনার চোককে, 
যেহেতু, শাস্ত্রের যথার্থ অর্থ ও ঠিক ঠিক উদ্দেত্য তার 
দেখবার শক্তি নেই। দৌষো আপনার শিক্ষাকে, যাতে 
চোক, কাণ, নাক, মুখের ব্যবহার কেমন করে করতে 
হয়। তাও লোককে শিখতে দেয় না। 

* আমাদের ভেতর'কটা লোক ইন্জিয়ের ব্যবহার কর্‌তে 
জানে? ইন্দরিয়কে সুঙ্ম জিনিষ ক্রমে ক্রেমে ধরতে 


'" শেখালে তবে ত. তারা ধরতে পার্বে। আজকাল 


আমাদের শিক্ষার উদ্দেস্টাই হচ্ছে, কেমন করে আমর! 
ভাল কেরাদীটি হতে পারব। নূতন নৃতন ভাবে চিন্তা 
করত, সুঙ্ম লৃক্ বিষয় ধারণ! করতে, মন্তিফ ও 
ইন্দ্রিয় চালনা করতে শেখান দূরে থাক্‌, চিন্তা করবার 
শক্তিটুকু পর্য্যন্ত কেড়ে নিয়ে হাত পাগুলো পেটের, 
ভেতর ঢুকিয়ে ছেলেগুলোকে একেবারে জড় করে 
তুল্ছে। ইন্দ্িয়গুলো সবল, কর্মঠ হলে তবে ত সকল 
বিষয় উপলব্ধি করতে পারবে এবং তবেই ত জ্ঞান 
হবে। আমরা চাই,_মঅশিক্ষিত ভাঙ্গাচোরা শরীরেক্িয 
দিয়ে যোগীর বহুকালের শিক্ষিত সতেজ অথচ বশীভূত 
ইন্জিয় মনের মত সুক্ষ তৃষ্ক বিষয় 'সব একদিনে 
৯৬ 


অন্ভুভব করব। আরে পাগল, তাও কি কখন হয়? 
আগে ইন্দিয়গ্ুলোকে সতেজ কর, শিক্ষা সহায়ে বশীভূত 
কর্‌, বহুকাল ধরে অভ্যান কর্‌, শ্রদ্ধার সহিত চেষ্টা 
কর, তবে ত পারবি। তা করবো না, আর বলব- 
আমাদের শান্ত্রটা সব আজগুবি ও মিথ্যাতে ভরা। 
হিন্দু ধর্ম্টটা কিছু নয়। এর চেয়ে মূর্খতা আর কি হতে 
পারে? ছেলে বেলায় একটা গল্প পড়েছিলুম। 
গল্পটির নাম_-চোক থাকা ও না থাকার কত প্রভেদ 1 
গল্পটি এই--ছ্ুজন লোক এক মাঠের ওপর দিয়ে 
একদিন বেড়াতে গিয়েছিল । একজন সমস্ত দিন 
ঘুরে ঘুরে বিশেষ কিছু না দেখতে পেয়ে মহা বিরক্ত 
হয়ে ফিরে এল। আর তার সঙ্গী কত কি নৃতন 
নৃতন গাছ গাছড়া সংগ্রহ করে জমিটার উর্বরতা 
পরীক্ষা করে নানা রকমের নৃতন পাথরে জামার পকেট 
পুরে মহা আনন্দে ফিরে এল। ছুজনে এক মাঠেই 
বেড়াতে গিছলো। কিন্তু শেষের লোকটি চোখের 
ব্যবহার জান্ত, এই প্রভেদ। স্বামিজীর সহিত যারা 
বেডিয়েছে, তারা জানে, তার কিরপ দৃষ্টি ও ধারণা 
ছিল। কতবার দেখেছি, একই দেশের ভেতর দিয়ে, একই 
স্থানে বাস করে, এক সঙ্গে বেড়িয়ে এল্সাম। তিনি এসে 
তাদের বিচিত্র আচার ব্যবহার ইতিহাসাদির কণ্ত কথা 
৯৭ 


গীতাতত্ব 
বলতে লাগলেন। আমরা গুনে অবাক্‌ হয়ে ভাবতে 





ভেতর এ যে অদৃষ্টের দোহাই দিয়ে -টুপ করে গড়ে 
থাক! দেখতে পাও মবটা কি মনে কর ঈ্বর 
বিশ্ব, ধর্ম বিশ্বাস থেকে আসে? তা নয়। দুর্বলতা 
ও তমোগুণই হচ্ছে ভার প্রধান কারণ। আনৃষ্ট বা 
দৈব' মানুষকে সহায়তা না করলে কারধ্যসিদ্ধি হয় না 
বটে, কিন্তু গীতাকার বলেন, কার্য সিদ্ধি হবার পাঁচটা 
কারণের ভেতর দৈবটা একটা কারণ মাত্র। টব সহায় না 
হলে যেমন কোন কাজ সফল হয় না, সেইরূপ তার সঙ্গে 
সঙ্গে সমান ভাবে চাই, “অধিষঠানং তথা কর্তা করণং চ 
ৃথসথধং। বিবিধশ্ পৃথক্চ্ট: |» উপযুক্ত দেশ কাল, 
উদ্মশীল কর্তা, সতেজ শিক্ষিত ই্্িযগ্রাম ও তৎসহায়ে 
বার বার" নূতন নৃতন উপায়ে কর্তার উদ্ঘম করা। শান 
বলেছে, দৈবসহায় ভিন্ন কোন কাজ হয় না। সেটি 
আমরা বেশ করে ধরে বসে আছি, কিন্ত শান্তর যে তা 
ছাড়া আরও বলছেন, সবল হও, অনলস হও, ক্রমাগত 
চেষ্টা বর, কার্ধ্য কর, সেগুলো আমরা শুনেও শুন্ব 
৯৮ 


না, দেখেও দেখব না। কেননা, তা যে.আমাদের 
বিলকুল নেই, আমরা যে মা ভাগে পড় 
রয়েছি। 

কাজের আগ্রহ চাই, নি রা 
দূরকার। তবে ফলসিদ্ধি হয়। তোমার হাতে আছে 
উদ্ভমী হওয়া, অনলস হওয়া, ফলসিদ্ধি তমার হাতে 
নেই, তোমার দেখবার দরকারও নেই। তোমায় 
দেখতে হবে, উন্বেখ্যটা ঠিক রাখতে পেরেছ কি না 
কর্মযোগে  গীতাকার এইটি হতে তোমায় জি 
দিচ্ছেন। 2৫ 

কর্দযোগের আর একটি উদ্দেশ টিটি ৬ 
নিবারণ করা। যোগ হচ্ছে_কর্দণ কর্‌বার কৌগল। 
কর্মবিশেষে যতটুকু শক্তি প্রয়োগ করা দরকার, ততটুকু 
তাতে লাগান, অল্প নয়, অধিকও নয়। ফলকামনা 
না করুলে সেইটি হয়। মনে কর, ফলের দিকে মন 
দিয়ে যদি অকৃতকার্ধয হল, তা! হলে মনস্তাপে তোমার 
কত শক্তি ক্ষয় হল। কম্মযোগ বলছে, শক্তিক্ষয় 
করো না। শক্তি সঞ্চয় কর এবং শারীরিক শক্তির 
সার ভাগকে মানসিক ও মধ্যাত্মিক শক্তিতে পরিণত 
কর। সংযম ও কম্মযোগের এই শিক্ষা। যতটুকু শক্তি 
প্রয়োগ দরকার, ততটুকু কাজে লাগাও ॥ তোমার 

৯৯ 


গীতাতন্ব 
যজ্টুকু ক্ষমতা রয়েছে। ততটুকু করেছ কি নাঃ সর্বদা 
দেখো। কিন্তু যেটা তোমার ছাঁতে নেই, মেটার জন্য 
মাথা খুঁড়ে হা হুতাশ বরে শক্তিক্ষয় করো না। 
 ভোগী, ফলকামী পুরুষের শক্তি সর্বদাই এপে ক্ষয় 
হয়। কাজেই কমর করবার শক্তিও ভার দিন দিন কমে 
যায়। [ম্ইে জন্য কেবল উদ্দেশ্রের দিকে তাকিয়ে কাজ 
করে চলে যাও। 
* এরূপে কাজ করবার উপযুক্ত কে? যে আপনার 
মনটাকে বশ করতে পেরেছে। এরূপ কাজ করে গেলে 
কি ইয়? কম্মবন্ধন কেটে গিয়ে ধীরে ধীরে পূরণ জ্ঞান" 
লাত হয়। ভগবান্‌ শ্রীকৃষ্ণের জীবনে এই কম্ম্যোগের 
অনুষ্ঠান বিশেষ রূপে দেখা যায়। দেখা হায়, ভার 
ইন্ছিয় মন সর্বদা অশেষ কাঙ্জ করলেও তিনি অলপমাত্রও 
ফলাকাজ্ী নন। তার ন্ায় অবতারেরাই জগতের 
যথার্থ গুরু। তাদের জীবনই জ্ঞানের বিস্তারের জগ্ঠ, 
লোকের শিক্ষার জন্য। তদের জীবন দেখে এ ভাবে 
কাজ করতে শেখ! নতুবা সংযম করতে না শিখলে, 
চলাকাজ্ষায় কাজে প্রবৃত্ত হলে, মন ক্রমে ক্রমে ঈন্জরিয়ের 
গস হয়ে পড়বে এবং এ ইন্্রি়ই আমাদের মাটি 
কর্‌বে। ইন্জরিয়ের দাস হলে চলবে না, কাজ হবে না, 
উদ্দেন্ত হারাতে হবে। ইন্্িয় ও মন 'বশে রাখতে 
১৪৩ 


কর্মযোগ 
হবে। মহান্‌ উদ্দেশ্ট সাম্নে রেখে নিষ্কাম হয়ে কাজ 
করে যাও। দেখবে, জ্ঞানযোগী তীত্র বৈরাগ্য সহায়ে 
যে অবস্থা লাভ করেন, কর্মফোগী কর্মের দ্বারা ঠিক 
সেই অবস্থায় পৌঁছুবেন। ছুজনেরই উদ্দেশ্য এক কিন্ত 
পথ আলাদা । পথে যতক্ষণ, ততক্ষণ উভয়ের মিল না 
থাকলেও উদ্দেশ্তে পৌঁছুলে আর বিরোধ থাকে ন]। 


পঞ্চম অধ্যায় 


কর্মযোগ 


(১৪০৩ খৃষ্টাের ৩১ শে জানুয়ারী, কলিকাড 
বিবেকানন্দসমিতিতে বক্তৃতার 
সারাংশ) 


*- কর্মযোগ বলে, মানুষকে কর করতেই হবে। কর্ম 
ছেড়ে কখনই থাকৃতে পারবে না। যতদিন শরীর 
থাক্‌বে, মৃত্যু না হবে, ততদিন কোন না কোন, কিছু 
না কিছু কাজ করতেই হবে। মানুষের পক্ষে কাজ 
. ছাড়া অসম্ভব। 
আবার অন্যদিকে শাস্ত্র বল ছেন, “সমস্ত কাজ যতদিন 
না ত্যাগ করতে পারবে, ততদিন মানুষের জ্ঞানলাত ও 
মুক্তি অনেক দূরে ।” 
সাধারণ ভাবে দেখলে ছুটি কথা বড়ই বিপরীত। 
সামগ্স্ত করা বড়ই কঠিন। তাই, গীতায় ভগবান্‌ 
শ্রীকৃষ্ণ কর্মীযোগ উপদেশ করে & ঢুই বিরুদ্ধ বিষয়ের 
মীমাা করে দিচ্ছেন) বলছেন_সম্পূর্ণ কর্দরহিত 
১০২ 





অবস্থায় না পৌছুলে জ্ঞানও হবে. না. শাস্তিও পাবে 
না, সেটা ঠিক; কিন্তু সে অবস্থাটা হাত প গুটিয়ে 
বসে থাক্লে্ঈ যে হল, তা নয়। তাতে বরং তোমায় 
কপটাচারী করে তুলবে। মে অবস্থাটা লাভ -হলে 
শরীরেন্দ্িয়ের দ্বারা কাজ করলেও তোমার ভেতরে 
“আমি কর্ম্ররহিত-শরীরেক্দ্িয় থেকে সম্পূর্ণ পুথক্‌”-- 
এই ভাবটি সর্বদা বর্তমান থাকৃবে। এমন কৌশলে 
কাজ করা যায়, যাতে কাজ করতে করতে ধীরে ধীরে, 
মানুষ এ অবস্থায় পৌছায়। অতএব কর্দ্মযোগের মূল- 
মন্ত্র হচ্ছে-_কর্মের ভেতরে থেকেও আপনাকে বাহন টু 
করে রাখতে শেখা। ] 

শরীর মনের দ্বারা নিয়ত কাজ চলবে পারি 
কর্মরহিত হয়ে থাকতে হবে_-এইটাই হচ্ছে ঠিক অকর্ম 
বা কর্মারহিতাবস্থা। হাত পা গুটিয়ে বসে আছি অথচ 
মনে মনে নানারকমে পলগ্কাভাগ” কচ্ছি--সেটা কর্ম 
রহিত হয়ে থাকা নয়। ঠিক্‌ ঠিক্‌ কম্মরহিত হয়ে যিনি 
থাকতে পারেন, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেন, “তিনি মানুষের 
ভেতর বুদ্ধিমান, তিনিই যোগী, তাঁর দ্বারাই সব কাজ 
ঠিক ঠিক্‌ সম্পন্ন হয়।” যথা-_ 

কম্মণ্যকম্্যঃ পশ্যেদকন্মণি চ কম্ম্যঃ। 

স বুদ্ধিমান্‌ মনুয্যেযু স যুক্তঃ কতসকণ্ম কৃত ॥ 5 

১৩৩ 


গীতাতত্ব ও 
কর্মের ভেতর থেকে যিনি আপনাকে কম্মরহিত 
দেখতে পান আর অলপ হয়ে কতক কম ছেড়ে থাকলে 
কন্মরহিত হওয়া অনেক দুর, একথাও ঘিনি বোঝেন, 
মান্নঘৈর ভেতর তিনিই” বুদ্ধিমান, তিনিই যোগী, তিনিই 
মকল কাজ যথাযথ কর্তে পারেন। 
অতএব শরীর মন প্রভৃতি কম্মে নিযুক্ত রাখতে 
হবে; আবার সেই সঙ্গে নিজেকে সম্পূর্ণ কন্মরহিত 
“জেনে ভেতরে যেগীর অবিরাম শাস্তি নিয়ত প্রবাহিত 
রাখতে হবে। এইরূপে কম্মও জ্ঞানের সামঞ্জস্য আমাদের 
প্রতোকের ভেতরে স্থাপিত হবে। মুক্ত পুরুষের 
এই ভাবটা নিশ্বাস গ্রশ্বাসের ন্যায় সহজ হলেও সাধককে 
অনেক যত্বে অনেক উদ্ভমে সুখছুঃখজড়িত অনেক 
কর্ধের ভেতর দিয়ে ধীরে ধীরে এই অবস্থা লাভ কর্‌তে 
হয়। 
কম্ম ও জ্ঞান উভয়ের সম্বন্ধ ও সামগ্স্ত স্থানই 
গীতার প্রথম পাঁচ অধ্যায়ের বিশেষ লক্ষা। ূর্ব্বে 
েছি, গীতাকারের সময়ে জ্ঞান ও কন্মে'র সম্বন্ধ সাধা- 
গ ঠিক বুঝতে না পেরে শাস্ত্রের উদ্দেশ্ত গুলিয়ে 
ফেলেছিল। কন্ম ও জ্ঞান পরস্পর বিরুদ্ব_-একটা 
করতে গেলে অন্যটা কখনই করতে পারা যাবে না-_ 
এইরূপ,লোকে বুঝত। এখনও যে আমাদের দেশে 
১০৪ 


2257 কর্রবোগ 
অনেক বিষয়ে এ প্রকার ভুল ধারণাঁ নেই, এ কথা কে 
বলবে ? মনে কর, ধন্ম্র করতে গেলে বনে ঘেতে হবে, 
জগতের কোন জীবের জন্ত কোন কাজ করলে আর ধর 
হবে না-_আমাদের ভেতর পুরানো লোকদের এই যে 
অন্ধ বিশ্বাস; অথবা--সংসারে স্ত্রী পুত্র নিয়ে সুখে 
স্চ্ছন্দে থাকাটাই জীবনের উদ্দেশ্ট--সংসার ছেড়ে, কর্ম 
ছেড়ে জ্ঞানী হওয়া, সে আবার কি রকম জ্ঞান রে বাপ, 
সে একটা কোন রকম অস্বাভাবিক উপায়ে, মাথা বিগড়ে, * 
জড়বৎ হয়ে যাওয়া-_ আমাদের সুশিক্ষিত (1) নবীন 
ছোকরাদের ইংরেজ গুরুর পদতলে বসে এই-যে আর্তি 
চক্ুম্মান্ঃ বিশ্বাস হয়েছে, সে গুলিকে পরের ' মুখে ঝাল 
না খেয়ে” নিজে নিজে শাস্ত্র পড়ে দেখলে কি মনে হয়? 
শান্তের এই কথাটি একদল একেবারে ভুলে গেছেন যে, 
কর্মের ছারা প্রথমে মন বুদ্ধি পরিষ্কার না হলে জ্ঞান হওয়া 
অসম্ভব। অন্যদল একেবারে না পড়েই পাঁওত'__ 
পরমহংসদেব যেমন বলতেন, “ও কথা খবরের কাগজে তো 
লেখেনি' বা ইংরাজেরা মানে না--তবে শাম্কথিত 
জ্ঞানটাকে মানুষের উন্নতির চরম সীম! বলে তারা কেমন 
করে মানেন। ও 

শাস্ত্র বলেন, মানুষ প্রথমে বেদাভ্যাস কর্‌বে'। তবে 
তার ধর্মে নিষ্ঠা হবে। ধন্মহচ্ছে ক্রিয়ামূল। *মতএব 
১০৫ 


রীতা: রি 
ধন্মলাভ করবে বলে সে নানা কাজ করবে । নানা রাজ 
করতে করতে তার নানা প্রকারে সুখ ছুঃখ অনুভব 
হয়ে ধীরে ধীরে 'জগণ্ড অনিত্য' এই জ্ঞান হ 
সে আর নিজে সুধী হব, বড় হব বলে প্র 
করে, নিফফাম হয়ে, কর্তব্য বলে কাজ কর 
করবে। উহাতে ক্রমশঃ মন বুদ্ধি পরিচ্ছ!র হয়ে সে 
নিজের লাভ লোকসান খতানটা একেবারে ছোটে দেবে। 
* ইহারই নাম যথার্থ ত্যাগ। বিবেকবুদ্ধিপ্রেরিত এই ত্যাগ 
একবার জীবনে এলে সঙ্গে সঙ্গে নিত্য বস্তলাভের বিশেষ 
আই্ররহ প্রাণে উদয় হয় এবং সেই বিষয়ের জ্ঞানও ভ ক্ষণাৎ 
উপস্থিত ইয়। তখন সকল বিষয়ে সর্বব একারে 
একত্বের অনুভব হয়। ভেতরে বাহিরে সে দেখে কবল 
এক_এক-_এক। একবার এই একজ্ঞান হলে 
আর তার লোপ হয় না। মরীচিকাকে একবা'॥ বালির 
ওপর আলোর খেলা বলে জান্লে আর জল বলে বোধ 
হয় না। . 
তবে" এই একজ্ান জীবনে অনুভব করেও কতকটা 
দ্ৈতবুদ্ধি, লোকশিক্ষার জন্ত বা উচ্চ উদ্দেশ্টাবিশেষের 
জন্ত ফের এনে কাজ করা যেতে পারে। পরমহুংস- 
দেব বলতেন, “যেমন স্ুরজ্ঞ গায়ক__অনুলোম ধরে 
ওপৰ শ্যামে উঠলো, আবার বিলোম ধরে নীচের গ্রামে 
১০৬ 









[বলো । যখন যে সুর ইচ্ছে গলা দিয়ে বার কর্‌লে।” 
[জ্ঞানীর কাজ করা না কর! ঠিক এ রকম মুটোর 
ভঙর থাকে। তবে হাজার চেষ্টা করেও তিনি আর 
চখনও সাধারণ লোকের মত, কাম কাঞ্চন যশ মানাদিকে 
“চিজ, ব্ত, মাল” বা জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য বলে দেখতে 
পারেন না। যেমন মরীচিকাটা একবার জল নুয় বলে 
বোধ হলে আবার তুমি যেখানে এ রকম ভুল বুদ্ধি হয়, 
সেখানে যেতে ও সেই ভুলটা বার বার দেখতে দেখাতে 
পার, কিন্তু আর কখন এ জলপান করে তৃষ্ণা মেটাতে 
যাৰে না-_সেইরূপ। পাপা 
কর্ম যে জ্ঞানলাভের একমাত্র উপায়, এ কথাটা মনে 
না রাখতে পারলে বিষম গোল লাগবে। “জুতো সেলাই 
থেকে চণ্ডীপাঠ” পর্যন্ত সকল কন্মই এই জ্ঞান- 
লাভ রূপ উদ্দেশ্যের দিকে মানুষকে এগিয়ে দে, 
যদি নিজের লাভ লোকসানটা খতিয়ে সে উহা 
না করে। ভারতে গৃহী ও সন্ন্যাসী লক্ষ লক্ষ লোক 
জ্ঞানলাভের চেষ্টা করছেন-_-সেটা খুবই ভাল কথা। 
কিন্তু তাদের ভেতর পনর আনা লোকই নিজের লাভ 
লোকসান খতানটা আগে না ছেড়ে আগেই কর্টাকে 
মায়া বলে যতট। পারেন, ছাড়বার চেষ্টায় থাকেন। 
তাতে হয় এই যে, খাওয়া, পরা ইত্যাদি *স্বার্থের 
১০৭ 


গীতাতত্ব 


জন্য অনুষিত কম্ম্ুলি ঠিক বজায় থাকে ; কেবল 
নান, দীন সেবা, দেশানুরাগ প্রভৃতি পরহিতের জন্য 
অনুষ্ঠিত কাজগুলিই আগে ত্যাগ হয়ে যায়_কেননা 
সেগুলি করায় ঢের 'বখেড়া, হাঙ্গাম' । কে “ঘরের 
খেয়ে বনের মোষ তাড়ায়?” ফলে যা দেখছি; স্বার্থ 
পরতায়, দেশ পূর্ণ হয়ে সকলেই অধঃপাতে যেতে বসেছি। 
বিবেকানন্দ স্বামিজী যেমন বল্তেন, “দেশের লোক- 
, গুলোর যোগ ত ,হলই না, ভোগও হল না, কেবল 
পরের জুতো লাথি খেয়ে কায়ক্লেশে কোনরূপে ছুটো 
'-উদ্রান্নের সংস্থান_-তা কারুর হল কারুর হল না।” 
এ সকল লোক যদি, গীতাকার যেমন বলেছেন এবং 
প্রতি ঘটনায় নিজের জীবনে দেখিয়েছেন, পরহিতের 
জন্য, দেশের কল্যাণের জন্য, গরিব ছুঃখীর সেবা ও 
শিক্ষার জন্য, যার যতটুকু সাধা নিফকাম হয়ে কাজ করে 
যান, তাহলে জপ ধ্যানের ন্যায় এ সকল কাজই তাদের 
প্রত্যেককে জ্ঞানলাভের দ্িকে এগিয়ে দেয়, দেশের 
এমন ছুরবস্থা থাকে না। দেখা যায়, একজনের স্বার্থ 
ত্যাগে যখন' কত লোকের কল্যাণ হয় তখন যে দেশে 
লক্ষ লক্ষ লোক ন্বার্থবলি দিতে কোমর বেঁধেছে, 
সে দেশের কখন দুরবস্থা থাকে? অপর দিকে 
ইংরেজী শিক্ষিতদের ভেতর, ইংরেজ গুরুর দৃষ্টান্তে 
নর ১০৮ 


কর্মমযোগ 


সকাম কর্মে একটু আস্থা হলেও, নিষ্কাম হয়ে কাজ 
করা তারা একেবারে বোঝেন না; এবং সেই দঙ্গে 
কর্মের উদ্দেহ্তই বা কি, তাও তাদের প্রাণে ঢোকে না । 
অতএব শান্ত্রোক্ত জ্ঞানলাতের দিকে তাদের আদৌ 
ঝোঁক নেই--উহা লাভ করতে উদ্ম করা যে দরকার 
এটাও তারা বোঝেন না। বোঝেন না যে, এই জ্ঞান 
আমাদের ঝধিকুল হতে প্রাপ্ত বহুমূল্য জাতীয় সম্পত্তি । 
যুগ যুগান্তরের পরাধীনতার পেষণে ভারতের বিদ্যা, ধন, - 
মান সব গিয়েছে-_আছে বাকি যেতে কেবল এ জ্ঞান, 
একজ্ঞান, অদৈতজ্ঞান, যা লাভ হলে মানুষ সকল 
অভাবের হাত থেকে যুক্ত হয়ে মৃত্যু্জয় হয়। প্রত্যেক 
হিন্দুর এই জাতীয় সম্পত্তি অতি সাবধানে রক্ষা কর্তে 
হবে। এ জ্ঞানের যে দিন লোপ হবে, সে দিন হিন্দুর 
হিন্দুত্ব যাবে, ভারতের নিজের অস্তিত্ব লোপ হবে এবং 
কুলধর্ম, জাতিধর্্ম সব খুইয়ে জাতট! উৎসন্ন হয়ে যাবে 1৮ 
শ্নীতোক্ত এই জ্ঞান উপলব্ধির জিনিষ। আমাদের 
ওঠা, বসা, নাওয়া, খাওয়া, শোয়! প্রভৃতি সকল 
অবস্থার ভেতর, সকল রকম কাজের ভেতর এর 
অনুভব চাই। তর্ক যুক্তি বা কল্পনা সহায়ে এ জ্ঞানের 
একটু আভাস পেয়ে বসে থাকৃলে চল্বে না। অবিষ্তা- 
প্রন্থত কাম কাঞ্চনকে জীবনের উদ্দেশ্য করুলে চঁল্বে 


১০৯ 
৮ 


গীতাতত্ব 


না। জ্ঞানের জন্য জ্ঞানের চর্চা করতে হবে। 
তন্ময় হতে হবে, উন্মাদ হতে হবে, মত্ত হয়ে যে 
হবে। 
কর্মযোগের দ্বারা সুক্ষ হলে, মার্জিত হলে ত 
সে বুদ্ধিতে জ্ঞানের উপলব্ধি হবে। পরমহংস 
বল্তেন। “ভগবান্‌ বিষয়বুদ্ধির বাইরে, কিন্তু ং 
বুদ্ধির গোচর।” অতএব ফলকামন৷ ছেড়ে কর্ম কর 
* হচ্ছে জ্ঞানল্লাভের একমাত্র উপায়; আর 'নিহে 
লাভালাভটা যদি আমাদের কর্মের উদ্দেশ্য না হ 
_ তাইলে যে কাজই করিনা কেন, তাহা দারা ক্রমে জ্ঞানে 
বিকাশ হবৈই হবে। কর্মে দোষ নেই-_কখনই নেই 
কিন্তু দোষ রয়েছে আমাদের ভেতরে । নিজের লাভটাকে 
, কর্পের উদ্দেশ্য করেই আমরা দোষী হয়েছি, আপনার 
জালে আপনি বাঁধা পড়েছি, এবং যুক্ত হবার “খেই 
জনমের মত” হারিয়েছি। নতুবা নিজের লাভের 
আশাটাকে যদি চিরকালের জন্য বিসর্জন দিয় স্বার্থ- 
গন্ধহীন কোন মহান্‌ উদ্দেশ্ত সামনে রেখে কাজ করে 
যাই, তাহলে গীতাকার বলেন,_ 
“হত্বাপি স ইমীাল্লোকান্ন হস্তি ন নিবধ্যতে ।” 
নরহত্যার শআ্োত বহালেও আমরা খুনে হব না 
বা এপরে আমাদের খুন করলেও আমরা মরব না 
১১০ 


রঃ 


-_এই প্রকার অনুভব হবে।. পতিত্রতা উপাখ্যান, 
ধর্মব্যাধের কথা আমরা মকলেই মহাভারতে পড়েছি 
বা শুনেছি। কিন্তু সেই সকল “আদর্শ চরিত্রের গ্যায় 
কাজ করতে একেবারে ভূলে গেছি। তাই এ ছূরদশা ! 
গীতাকার সেজন্যই বল্ছেন, “নিষকাম হয়ে কাজ কর, 
অবিরাম কাজ কর-_কিন্তু কর্ম করতে কর্তে ভেতরে 
কর্মরহিত হয়ে থাক ও যোগীর অচল শাস্তি অনুভব 
কর।” রি 

কথায় বলে, মানুষ হচ্ছে ক্ষুদ্র ব্রন্মাণ্ড। বৃহৎ 
বরদ্মাণ্ডে যা আছে, তার সমস্তই এই ক্ষুদ্র ব্রন্থীণ্ডে 
ক্ষুদ্র কু ভাবে আছে--কিন্তু সমস্তই আছে। অন্ত 
দিকে ক্ষুত্র ব্রন্মাণ্ডে যা কিছু আছে, তার বৃহৎ প্রতিকৃতি 
আবার এই বহির্জগতে বর্তমান। মানুষের ভেতর যেমন 
এই কর্মের ভেতরে কর্মরহিতাবস্থা রয়েছে-_ কেবল 
অনুভবের অপেক্ষা মাত্র, সেইরূপ বহির্জগতের অনবরত 
পরিবর্তন এবং গতির মধ্যেও অচল ক্রিয়ারহিত শাস্তভাব 
সর্বদা বর্তমান। স্ুলভাবে দেখে মনে হয়, এ আবার 
কি কথা। নানা ভাবে অনুক্ষণ স্পন্দনশীল জগতে 
আবার কোথায় কখন গতিরহিত ক্রিয়ারহিত অবস্থা 
দেখতে পাওয়া যায়? প্রজ্ঞাচক্ষু দার্শনিক বলেন, নখ 
দুঃখ, আলো আধার প্রভৃতি বিপরীত ছন্দের, হ্যায় 

১১১ 


গ্রীতাতত্ব 


ক্রিয়। ও ক্রিয়ারাহিত্য, গতি এবং বিশ্রামও জগতে সদা 
যুগপৎ বর্তমান। ক্রিয়া, গতি প্রভৃতি, তদ্দিপরীত 
ক্রিয়ারাহিত্য, গতিরাহিত্য প্রভৃতি অবস্থার সঙ্গে তুলনা 
করেই আমরা বুঝে থাকি। যেখানে এরূপ তুলনা 
করবার উপায় নেই, সেখানে ক্রিয়া এবং গতিও আমাদের 
অনুভবের, সাধ্য নেই। শুধু আমাদের অনুভব হয় 
না তা নয়, কিন্তু আমরা যাহাকে ক্রিয়া, গতি ইত্যাদি 
“বলি, তা সেখানে বাস্তবিক নেই। জগতের ভেতরে 
। নানা জিনিষের নানাভাবে অবস্থান দেখে, তুলনা করে 
-. আমাদের অনবরত গতি ও ক্রিয়ার প্রত্যক্ষ হচ্ছে; কিন্ত 
সমূদায় জগৎটাকে একটা পদার্থ বলে একবার ভেবে 
নিয়ে তার পর তাতে গতি রয়েছে ভাব দেখি. তার যো 
নেই। এখানেই শান্ত নিষ্পন্দ ক্রিয়ারহিত : অবস্থা 
শুনে বলবে হয়তো "ও ও তো কল্পনা? ার্শনিক 
হেসে বলেন, না হে, কল্পনা টল্পনা নয়_১.ই ঠিক 
ঠিক সত্য। তোমার বিজ্ঞান ধর্ম প্রভৃতি সব শাস্ত্রই 
তো বলে, জগতটা একটা জিনিষ; এক বৈ ছুই 
পদার্থ নেই-_এক বৈ ছুই শক্তি নেই। আবার এ 
পদার্থ ও শক্তিটাও একেরি বিকাশ। তবে তুমি আমি 
সবর্বদা নানা জিনিষে মন রেখে রেখে আর জগৎটাকে 
নানা লঙ্গ প্রত্যঙ্গ নখ কেশাদি সমদ্বিত মন্ুয়াশরীরের 
১১২ 


কন্মযোগ 


ম্যায় একত্র সম্বদ্ধ একটা জীবন্ত জিনিষ বলে ভাবতে 
পারি না। ওখানে আমাদের “একঘেয়ে” প্রত্যক্ষটাই 
গোল করে, গণ্ডির বাহিরে যেতে পারে না, আর 
ভাবে ক্রিয়ারহিত জগৎ আবার কোথায়? মানুষের 
আত্মাতে দন্দপ্রন্থত ক্রিয়ারাহিত্য অনুক্ষণ বর্তমান । 
প্রতোক পদার্থের শেষ স্তরেও এ ব্রহ্মভাব বর্তমান। 
আবার জীবজড়াদির সমষ্টিভূত জগত্টাতেও এ। 
অতএব এঁ একভাবটা কবিকল্পনা বা আকাশকুম্ুমের 
্যায় অলীক নয়। মূলে এটাকে ধরেই জগৎটা ছড়িয়ে 
আছে। আমাদের ভেতরের সদ! বর্তমান এ অবস্থটী 
একবার ঠিক ঠিক প্রত্যক্ষ কর্তে পার্লে আর অনিত্য 
জন্ম, জরাদি পরিবর্তন এবং তার চরম ফল মৃত্যুও 
আর আমাদের ভয় দেখাতে পারবে না। সেইজন্থ 
ভগবান্‌ গীতাকার বার বার অজ্জুনকে সামনে দেখ 
সমস্ত জগৎকে শিক্ষা দিচ্ছেন-ইন্ট্রিয় মন ব্ন্ঠাদি 
সর্বদা কাজ করুক; কিন্তু তুমি এ অকম্ম্ম ভাবটা 
প্রত্যক্ষ করে সব কাজ থেকে তফাত থাকৃতে শেখ। 
হে মানুষ! তুমি মান হুশ হও, আপনার মহিমায় 
হশ রাখ, জাগ-_-অজর অমর আত্মার উপলব্ধি করে 
অচল অটল শান্তিতে অবস্থান 'কর। কোনরূপ 
দুর্বলতায় গা ঢেলে দিয়ে অনিত্য জিনিষগুলিকে শনিতা 
১১৩ 


শীতাতত্ব 


ধরে রাখবার চেষ্টা করে ছুঃখ পেও না। কর্মমফলট। 
ত্যাগ করে কাজ করে যাও। উহ্ারই নাম যথার্থ সন্ন্যাস 
এবং কর্মমযোগও তাই । 
যং অন্ন্যাসমিতি প্রানুর্যোগং তং বিদ্ধি পাগুব। 
ছুই পথই এক জায়গায় পৌছে দেয়। 
স্লযাগঃ কর্দযোগশ্চ নিঃশ্রেয়সকরাবুভৌ । 
অঙ্জ্বনৈর মন থেকে কিন্তু কর্মের চেয়ে জ্ঞান বড়, 
+ একথা কিছুতেই যাচ্ছে না। তিনি ভাবছেন জ্ঞান হলে 
_যখন কর্ম থাকে না, তখন জ্ঞানটা আসল জিনিষ 
বালক্ষা। অতএব কর্সের চাইতে নিশ্চয় বড়। তিনি 
ভূলে গেছেন যে, গীতাকার যে জ্ঞানটা মনুস্তজীবনের 
লক্ষ্য বলে তার সামনে খাড়া কর্ছেন, সেটা দেশকালা- 
তীত অসীম অপরিচ্ছিনন জ্ঞান। অঞ্জন যেটাকে জ্ঞান 
মনে করেন, সেটা নয়। সেটা দেশকার্লের গণ্ডির 
ভেতর, কাধ্যকারণের শৃঙ্খলের ভেতর চির আবদ্ধ। 
গীতার চতুর্থ অধ্যায়ে দেখতে পাই, ফের অর্জুনের 
এ প্রশ্ন এবং ভগবান্‌ শ্রীকৃষ্ণের ফের & বিষয় বোঝাবার 
চেষ্টা, এবার কিন্তু ভগবান আর একপথ দিয়ে অক্জুনকে 
বোঝাতে চেষ্টা করছেন্‌। 
ভগবান্‌ বলছেন, হে অর্জন! ভেবোনা যে, কর্ণ- 
যোগটা একটা নৃতন পথ। জ্ঞান ভক্তি ইত্যাদি পথ 
১১৪ 


কর্মযোগ 


সমূহের ন্যায় ইহাও বনু পূর্ববকাল থেকে মানবকে 
চরম লক্ষ্যে পৌছে দিচ্ছে এবং জনকাদি বহু খ্যাতনামা 
রাজধিগণ এ পথ আশ্রয় করে সিদ্ধিলাভ করেছেন। 
বিশেষত, ক্ষত্রিয় রাজারা । এই কর্মযোগের কথা 
আমি প্রথমতঃ ূর্ধ্যকে উপদেশ দিয়েছিলাম । তূর্য তার 
পত্র মনকে বলেন। মন্্ আবার ইক্ষাকুকে উপদেশ 
দেন। এইরূপে উহা বহুকাল পর্য্যন্ত “বহুজনহিতায় 
বহুজননুখায়” নিত্যকরমানুষ্ঠায়ী পুরুষকার প্রধান, তেঞস্থী- 
ক্ষত্রিয় রাজ-কুলের ভেতরই জীবন্ত ছিল। সে কর্ম 
যোগের আজ লোপ হয়েছে। নিজের স্ুখটুকু ছেড়ে 
কেউ আঁর বহুজনকল্যাণের দিকে তাকিয়ে 'কর্ণা কর্তে 
চায় না। ধর্মের তেতরেও ব্যবসাদারী পাটোয়ারী 
বুদ্ধি ঢুকেছে; অন্ত কর্মাদির তো কথাই নেই। তাই 
তোমাকে আজ আবার সেই পুরাতন কর্ম্মষোগের কথ! 
বল্ছি। হীনবুদ্ধি, কাপুরুষ, ইন্্িযদাস, রুগ্রশরীর, 
ভগ্নোঘসাহ লোকের পক্ষে এ পথ অবলম্বনে সিদ্ধি . 
লাভ করা স্কিন । কিন্তু তোমার ম্যায় বহুজনকল্যাণে 

চিরনিবন্ধদৃষ্টি, ্রদ্ধাবান, বুদ্ধিমান, তেজস্বী, বীরহদয়ই 
প্র-উদ্ার ভাব বুঝতে পেরে দৃঢ়ভাবে ধর্তে ও অনুষ্ঠান 
করতে পার্বে। তাই তোমাকে. বলা। আপনার, 
শরীরটিতে পাছে কোন আঁচড় লাগে, আপন্তার ধন, 

১১৫ 


গীতাত * 
মান, যশ, প্রভৃত্ব প্রভৃতি পাছে না লাক্তহয়। এমন 
কি, আপনার মুক্তিলাভ পাছে না হয়, এইরূপ ভাব 
যার হৃদয়ে সদা বর্তমান, সে কখন কর্মাযোগী হতে 
পার্বে না। কর্ম্মযোগী হবে তেজ্বী, উদ্ারমনা বীর, 
যে সত্যের জন্য বা অপরের কিছু মা্র কষ্টদুর 
কর্বার জন্মু, স্বদেশ প্রেমের জন্য, মহাপুর 
জন্য আপনাকে এককালে ভুলতে পার্বে 
কথ এধরধ্যাদির নাশ হলেও জক্ষেপ করবে না। 

পুরাতন জিনিষের আদর কর! মন্ুয্বমনের স্বভাব । 
পরিবর্তনের আোত অতিক্রম করে বন্কাল য! একভাবে 
. থাকে, - তারি: মানুষের কাছে কদর। অনিত্যের ভেতর 
নিত্য পদার্থের অন্ধুসন্ধান মানবের প্রাণে প্রাণে সর্বদা 
আছে বলেই বোধ হয় এরূপ হয়। সাধারণ মানবেন 
চেয়ে, গুণী মহাপুরুষদের হৃদয়ে আবার এ ভাব: : 
বিশেষ প্রবল দেখা যায়। অর্জনের ন্যায় বীরাও ১। 
. ম্বদয়ে এভাব প্রবল দেখেই ভগবান্‌ কর্মযোগের ইতিহাস 
কীর্তন করে তাকে এ দিকে নেওয়াচ্ছেন। 

. আর এক' কথা,-ক্ষত্রিয়েরাই, বিশেষতঃ, ক্ষত্রিয় 
রাজারাই এই কর্যোগ অনুষ্ঠান করে ত্রন্ধজ্ঞান লাভ 
কর্তেন, এবং তাদের নিকট থেকেই ব্রান্মণাদি অন্য 
বর্ণের ভর এ কর্ণাযোগের প্রচার হয়েছিল। একথাটায় 

১১৬ 






আপনার 


কর্মযোগ 


বনেকের আশ্চর্য্য বোধ হতে পারে, বিশেষতঃ আজ- 
গলকার ব্রাহ্মণদের তো পারেই। কারণ, তাদের 
বশ্বাস,। ভারতের যত কিছু শান্ত্জ্ঞান ব্রাঙ্ষণবর্ণেরই 
একচেটে অধিকারে ছিল, আর তারাই দয়া করে অন্য 
ধ্কেও দিয়েছিলেন। এ কথা কোন কোন বিষয়ে 
দত্য হলেও সকল বিষয়ে যে নয়, তার ঢের প্রমাণ 
মাছে। আমর! এই মাত্র দেখলাম, গীতাকার বলছেন; 
কন্মযোগ প্রথম ক্ষত্রিয় রাজাদের ভেতরেই ছিল। »» 
এইরূপ: ছান্দোগ্য উপনিষদ্‌ পাঠে দেখা যায়, আরুণি 
ও শ্বেতকেতু, ব্রাহ্মণ পিতা পুত্রে প্রবাহণ-জৈবলি রাজার ' 
এবং প্রাচীনশালাদি পঞ্চব্রাহ্ষণ কৈকেয়' অশ্বপতি « 
রাজার শিষ্ত্ব স্বীকার করে ত্রক্ষজ্ঞানের উপদেশ 
নিচ্ছেন। এইরূপে কন্মযোগ এবং ত্রহ্ষজ্ঞানের প্রথম 
উদয় যে ক্ষত্রিয়রাজকুলের ভেতর হয়েছিল, একথা শাস্ত্র- 
পাঠে খুব সম্ভবপর বলে বোধ হয়। 

কম্মযোগের ইতিহাস কীর্তন হতে অজ্জুনের মনে 
আর এক প্রশ্নের উদয় হল। ভগবান্‌ শ্রীকৃষ্ণ বল্লেন, 
সৃধ্যকে তিনি প্রথমে কর্মনযোগ উপদেশ করেছিলেন । 
অঙ্জুন ভাবলেন, এ কেমন কথা? শ্রীকৃষ্ণের জম্ম ত 
সেদিন হল, আর সূর্যের উৎপত্তি কতকাল পুর্ব 
হয়েছে। তাকে ইনি উপদেশ দিলেন কি «করে? 

১১৭ 


চু 


গীতাতন্ব 


এই সন্দেহের প্রসঙ্গেই ঈশ্বর, ঈশ্বরাবতার ও তাদের 
স্বরূপ মন্স্ধীয় কথার অবতারণা। 

ভগবান্‌ দ্রীরচ বল্ছেন। হৃর্টকে আমি বহু 
পূর্বকালে অন্য মৃত্তিতে এ উপদেশ করেছিলাম। 
কিন্তু আমিই যে সেই মুক্তিতে এ উপদেশ দিয়েছিলাম, 
এ বিষয় আমার বেশ মনে আছে। কেননা আমি 
ঈশ্বরাবতার, আমার জ্ঞানের কখন লোপ হয় না। 
তুমি এবং আমি উভয়ে বহুবার বনুস্থানে জন্মগ্রহণ 
করে “বহুজনহিতায়' বহকষ্টের অনুষ্ঠান করেছি ও করব। 
তোমার সে সব কথা মনে নেই। আমার কিন্ত পূর্ব 
পরর্ববারের “সকল কথাই মনে আছে। অবতার সম্বন্ধ 
ভগবান্‌ গীতাকার কি শিক্ষা দেন) তা আমরা পরবারে 
আলোচনা কর্ব। 


১১৮ 


ষষ্ঠ অধ্যায় 
জ্ঞান ও ভক্তির সমন্বয় 


(২৯শে পৌষ ১৩১০,বালি হরি্ভায় * 
প্রদত্ত ব্তৃতার সারাংশ ) 


তগবান শ্রীকৃষ্ণ গীতায় বলেছেন, 
“যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত |” 


প্ধর্্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে ॥” 

“যখনই ধর্মের গ্লানি ও অধর্মের প্রাছুর্ভাব হয়," *** 
[নই আমি প্রকৃত ধর্ম সংস্থাপনের জন্য অবতীর্ণ হই।” 
নই ভক্তি ও জ্ঞান শিক্ষার জন্য আচার্যের প্রয়োজন 
, তখনই তিনি আচার্য রূপে অবতীর্ণ হন। তিনিই 
রথ গুরু এবং জগৎও.তাকেই অনুসরণ করে অগ্রসর 
[| তিনিই মায়ান্ধ ও বিষয়াসক্ত জীবের 
[খ ফুটিয়ে দেন। একভাবে তিনিই সমস্ত জগং 
পে বিরাজিত, স্থাবর, জঙ্গম, যা কিছু দেখতে 
ই, সকলই তার প্রতিকৃতি; অন্যভাবে *তিনিই 

১১৯ 


গীতাতত্ব 


সমস্ত জীবজন্তুতে চৈতন্য স্বরূপে বর্তমান আছে 
আবার প্রকৃত ধর্ম ও শাস্তি স্থাপন কর্বার । 
তিনি জগদগুর রূপে অবতীর্ণ হন। তিনি ম' 
শরীরে মায়ার অধীম্বর রূপে অবতীর্ণ হয়ে মায়া 
জীবকে মুক্তির প্রকৃত গন্থা প্রদর্শন করেন। যু 
যুগে শরীর বিভিন্ন হলেও অবতার ভিন্ন ভিন্ন ন 
একই । তিনিই প্রয়োজনান্ুসারে নানারূপে অব 
_ হন। যখন যেরূপ ভাবের দরকার, তখন সেরূপ ভা; 
অবতীর্ণ হয়ে তিনি লোকশিক্ষা দিয়ে থাকেন 
- আমাদের এই ভারতবর্ষে তিনি বহুবার অবতীর্ণ হু 
বছ ভাব শিক্ষা দিয়ে গেছেন। এই জন্যই ভারত 
বর্ধ সকল জ্ঞানের আকর স্বরূপ ছিল। যখনই আবশ্াব 
হয়েছে, তখনই তিনি হাত ধরে এই ভারতবর্ষকে 
তুলেছেন। সেই জন্যই এখনও পদদলিত, অত্যাচারিত 
" ও ছুতিক্ষগীড়িত ভারতে কত কত ধর্মবীর ও কন্মবীর 
আবিডুতি হয়ে আমাদিগকে পথ দেখিয়ে দিচ্ছেন । 
সেই জন্য আমাদের দেশে এখনও পর্যাস্ত ধন্মক্ষেত্র 
অন্তান্ত দেশাপেক্ষা প্রকৃত জ্ঞান ও ভক্তির আদর্শ 
দেখতে পাওয়া যায়। ধন্মতেই আমাদের উন্নতি। 
আমাদের দেশ ধম্মগতপ্রাণ,। ধন্মেতেই যেন বেঁচে 
আছে। এখানে নিত্য ক্রিয়া শৌচাদি হতে বিবাহপদ্ধতি 
১২৪ 


জ্ঞান ও ভক্তির সমন্বয় 


প্রভৃতি গুরুতর সামাজিক নিয়ম সকলও ধর্মের অঙ্ক 
স্বরূপে গণা হয়ে থাকে । 

সমস্ত আমরা ঠিক ঠিক করতে পারি আর নাই 
পারি, আমাদের সমস্ত আচার ব্যবহার, চালচলন 
সমস্তই যে ধর্মলাভের জন্য, ভাতে অণুমাত্রও সনোহ 
নেই। অবশ্য অন্যান্ত দেশ অন্যান্য বিষয়ে খুব বড় 
হয়েছে। অন্যান্য দেশ রাজনীতি, সমাজনীতি ও যুদ্ধ 
বিগ্রহ প্রভৃতি এহিক উন্নতিতে জগতের শীর্ষস্থানীয় 
হয়েছে। ভারতের প্রাণ ধর্মের উপর স্থাপিত, ধর্থম- 
বলেই ভারত একদিন জগতের শীর্ষস্থানীয় ছিল, আবার 
ধর্মকে অবলম্বন করেই যে ভবিষ্যতে ইন্থার উন্নতি 
হবে, সে বিষয়ে অথুমাত্র সন্দেহ নেই। তারই 
সচনা স্বরূপ আজকাল চতুর্দিকে নামে রুচি, সাধন ভঞ্জনে 
শ্রদ্ধা ও ভগবান লাভের আকাঙ্ষা দেখতে পাচ্ছি 
এবং চতুর্দিকেই জ্ঞান ও ভক্তির সমন্বয়ের আলোচনা 
শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। পূর্বে জ্ঞান বল্লেই 
লোকে কিন্ুতকিমাকার ভাবত, জ্ঞানী বল্লেই নাস্তিক 
) ভেবে দ্বণার চক্ষে চাইত। “অহং ব্রক্ষান্মি” বল্লে 
ভক্ত কাণে হাত দিত। আবার জ্ঞানীও ভক্তকে 
কুসংস্কারাপনন বলে উড়িয়ে দিত। এইরূপে বহুকাল 
ধরে তক্তি ও জ্ঞান পথের সাধকদিগের ভেতর এইরূপ 

১২১ 


গীতাতন্ব 


বিরোধ চলে আস্ছে। কিন্তু ধারা জ্ঞান ও 
ভক্তির আচার্য ও প্রচারক, তাদের মধ্যে এ ভাবের 
বিরোধ কোনও কালে ছিল না। 

একটা গল্প আছে, শিব ও রামের বিরোধ হয়ে 
ছিল, তাতে শিবের চেলা ভূত ও রামের চেলা 
বানরের ক্রমাগত যুদ্ধ চলতে লাগল। তার পরে 
শিব ও রামের মিলন হল, উভয়ে একপ্রাণ, এক 
_ আত্মা হলেন, কিন্তু বানর ও ভূতের যুদ্ধ আর থামল 
না। আচাধ্যগণের কোন বিরোধ ছিল না বটে, 
কিন্তু তাদের অন্বপ্তিগণ চিরকালই বিবাদ করে 
মরছে। আজকাল বোধ হয়, সে বিরোধের ভাব 
যেন ক্রমেই কমছে। সে হাওয়া যেন ক্রমেই 
মন্দীভূত হচ্ছে। যোগ, কর্ম জ্ঞান, ভক্তি প্রভৃতি 
,সমস্ত ভাবই এক ভগবান হতে প্রপ্ৃত। এই চারটি 
পথ অবলম্বন করেই মানবের ধন্মলাভ হতে পারে, 
সর্বত্রই যেন লোকের এইভাব, এই ধারণা হতে আ্মারস্ত 
হয়েছে। ও 

পূর্বের বলেছি, প্রকৃত জ্ঞানী ও ভক্তে বাস্তবিক 
বিরোধ নেই। শান্ত্রপাঠে দেখতে পাই, পূর্বে ধারা 
প্রকৃত জ্ঞানী বলে প্রসিদ্ধ ছিলেন, তাদেরই মধ্য 
হতে 'নিম্মলি ভক্তিক্রোত প্রবাহিত হয়ে জগৎকে 

১২২. 


জ্ঞান ও ভক্তির সমস্বয় 
পবিত্র ও কৃতার্থ করেছে। আবার ধারা প্রকৃত 
ভক্ত বলে প্রসিদ্ধ ছিলেন, তাঁরাই জ্ঞানের আলোক 
বিস্তারে মানবকে সমনৃষ্টির পথে অগ্রসর করেছেন। 
এই জ্ঞান ও ভক্তির মধ্যে সামগ্রস্ত »ণছে কিনা এবং 
যদি থাকে, তবে কোথায় আছে, ইহাই আজকের 
আলোচ্য বিষয়। শ্িবাবতার জ্ঞানাচার্যা গুরু শঙ্কর 
প্রণীত গ্রন্থ পাঠে আমরা কি দেখতে পাই? তং 
প্রণীত গঙ্গা, শিব, অন্নপূর্ণা ও ঝিঞুর স্তব পাঠ করে _ 
কেমন করে বলব যে, তিনি ভক্তিশৃন্ত কঠোর 
জ্ঞানী নাস্তিক ছিলেন? শারীরক ভাহ্য ও তৎপ্রণীত 
অশেষ দেবদেবীর স্তবাদি পাঠ করুলে দেখতে পাওয়া 
যায় যে, তাঁর মধ্যে ভক্তি ও জ্ঞানের অপূর্ব 
সামগ্তস্ত রয়েছে সেইরূপ ভক্তাবতার আচাধ্য 
শ্রীগৌরাল্গের মধ্যেও আবার অদ্বৈত জ্ঞানের. বিশেষ 
প্রকাশ দেখতে পাওয়া যায়। যদি তিনি জ্ঞানের 
বিদ্বেষী হবেন, তবে কেন তিনি পৃজ্যপাদ কেশব 
ভারতীর নিকটে স্বয়ং সন্ন্যাস ধর্মে দীক্ষিত হলেন? 
| উভয় পথের আচার্ধ্যদের জীবনে ও শিক্ষায় তো কোন 
বিরোধ দেখতে পাই না। তবে বিরোধ কোথায়? 
বিরোধ কথায় ও বাক্যবিস্তাসে। বিরোধ অনুবর্তীদের 
স্বার্থ পরিচালনে। ভক্তি ও জ্ঞানের চরম লক্ষ্য একই । 

১২৩ 


গীতাতত্ব 


একই লক্ষো উপনীত হবার ভিন্ন দুইটি পন্থা মাত্র। 
উক্ত ও জ্ঞানী উভয়েরই উদ্দেশ কীচা “আমিত্বেরগ 
বিনাশ করা। যে 'আমি' সংসার ও বিষয় বাসনায় 
জীবকে বদ্ধ করে রেখেছে, সেই তুচ্ছ মিথ্যা 
আমিত্ের স্থানে শ্্রীভগবানের দিবা তার অংশ 
আমি, এই মহান্‌ আমিত্বের বিকাশ করা ভক্তি 
জ্ঞান এই কীচা আমি বিনাশ কর্বার ছুইটি উপায় মাত্র। 
ভক্ত চান, তার সমস্ত তগবংপাঁদপন্পে অর্পণ কর্তে। 
সমস্ত কার্য ও চিন্তা, অর্থ স্ত্রী বা পুত্র, আপনার 
বলতে তাঁর যা কিছু আছে, সমস্তই তার নয়, 
ভগবানের-*এই ভাবটি সর্বাবস্থায় মর্ববতোতাবে প্রাণে 
রাখা এবং তনুযায়ী কার্ধ্য করাই তার জীবনের 
একমাত্র উদ্দেশ্থ। শরীর-ধারণোপযোগী আহারাদি 
ব্যাপারও ভক্ত নিজের জন্য না করে ভগবানের সেবার 
জন্য করেন। জীবনধারণও তাঁর প্রিয়তমের বা 
ভিন্ন অন্ত কোন কারণে নয়। ভক্ত চান, ভঃমত্বকে 
তুমিত্বরূপ সমুদ্রে ডুবিয়ে দিতে; আমি অমুকের 
ছেলে, আমি বিদ্বান, আমি ধনী মানী জ্ঞানী প্রভৃতি 
অভিমানপ্রস্থত আমিত্বকে ঠাকুরের পাদপন্নে চিরকালের 
মত ফেলে দিয়ে বিশ্বতোমুখ ভগবানের সেবা কর্তে। 
ভক্তের চক্ষে তার প্রিয়তমই জড় চেতন নানারপে 
১২৪ 





. জ্ঞান ও ভক্তির সমন্বয় 
খেলা কর্ছেন। তিনিই পুরুষ, তিনি প্রকৃতি, 
তিনিই কুমার, কুমারী, তিনিই দাসদাসী, সর্বত্রই 
তার হস্ত পদ চক্ষু। এ সংসার তারই মৃত্তি এই 
জ্ঞানে যথার্থ তক্ত স্ত্রী পুত্র প্রভৃতি রূপে বিরাজিত 
তার আরাধ্য প্রভুর সেবায় নিযুক্ত থাকেন। ভক্তের 
বেঁচে থাকা সেবার জন্য। কিছুতেই আসক্তি নেই। 
স্বার্থপরতা চিরদিনের জন্য বিদায় নিয়েছে। মরণেও 
আপত্তি বা কষ্ট নেই। হচ্ছাময়ের ইচ্ছায় স্বীয় ইচ্ছা 
মিলিয়ে দিয়ে ভক্ত ইহজীবনেই সাক্ষাৎ জীবম্ুক্ত 
লাভ করেছেন। ভক্তির আচাধ্য নারদ খফি 
ভক্তিনুত্রে ভক্তির লক্ষণ করেছেন, “দা কম্মৈ 
পরমপ্রেমরূপা"_-“ভগবানে যে এঁকান্তিক প্রেমভাব, 
তারই নাম ভক্তি।' ভগবান শ্রীকৃষ্চও শীতায় এ 
রকম ভক্তের কথা বলেছেন, যথা, “আর্তো জিজ্ঞাস 
রর্থার্থী জ্ঞানী চ ভরতর্ষভ।' যে রোগে, বিপদে নিতান্ত 
অভিভূত হয়েছে, নিতান্ত নিরাশ্রয়। সে নিতান্ত 
ব্যাকুল ভাবে ভগবানের শরণাপন্ন হয়। এরই নাম 
আর্তভক্তি। 

মনে নানাপ্রকার সন্দেহ এসেছে। এই জগতের 
কেহ কর্তা আছেন কিনা, এই জগতের সর্বত্র সর্বদা 
পরিবর্তন হচ্ছে, কে করছে, এর কারণ* কি, 


১২৫ 
৯ 


ষ 








গীতাতত্ব 


এই : সকল. জানবার জন্য গ্রঁঠগা বিশেষ আগ্রহ) 
বিষয়, ইস্রিয়ন্থখ আর ভাল লাগে না) কোন 
সংপুরুষ বা জ্ঞানী পুরুষ দেখলেই জিজ্ঞাসার জন্য 
ছুটে তার কাছে যায়; এই সব তত্ব জানবার 
জন্য বাকুলভাবে নিজ্জর্নে চিন্তা করে) এই সব লক্ষণ 
হলে তাকে জি্ঞান্থ ভক্ত বলা যাঁয়। 

তৃতীয় অর্থার্থী। বিশেষ কোন কামনায় প্রাণ 
ব্যাকুল আবার তৎকামনা পৃরণের নিজের শক্তিও 
নেই, এজন্য যে ভগবানকে উপানন! করে, সে অর্থাথী 
ভক্ত। চতুর্থ জ্ঞানী। জ্ঞানীই শ্ররেষ্ঠ। ভগবান 
বলেছেন, প্তেষাং জ্ঞানী নিত্যযুক্ত একতক্তিবিশি- 
স্ুতে। প্রিয়ো হি জ্ঞানিনোহত্যর্থমহং স চ মম 
প্রিয়” সর্বদা তার মন ভগবানে যুক্ত হইয়া 
রয়েছে, মেই একভক্তি জ্ঞানীই শ্রেষ্ঠ ভক্ত। 
জ্ঞানীর মন সর্বদাই কামকাঞ্চন, বিষয়াম্ুরাগ, শরীরানু- 
রাগ প্রভৃতির পারে বর্তমান। জ্ঞানীর সম্ব্ষ একভক্তি 
বিশেষণ এই নিমিত্তই প্রযুক্ত হয়েছে। অবিশ্রান্ত 
নদীর আ্রোতের ন্তায় একভক্তির বিরাম নেই; সর্বদা 
ভগবৎপাদপন্মে প্রবাহিত। একভক্তির বিশেষ লক্ষণ 
দেবীগীতায় সুন্দররূপে প্রদত্ত হয়েছে। পাত্র হতে 


পাত্রাণ্তরে তৈল ঢাল্লে যেমন অথগ্ডিত ঘনধারে পড়ে 


১২৩ 


- 


জ্ঞান ও ভক্তির সমন্বয় 


থাকে, সেইরূপ এক প্রকার ভক্তিধারা বিষয়বায়ুতাড়িত 
হয়ে কখন খণ্ডিত বা তরলায়িত হয় না। জ্ঞানীর লক্ষণ 
ভগবান্‌ স্্রীকচ গীতায় বলেছেন, “বাসুদেব; সর্কমিতি 
স হাতা সুছকন ভ--সমন্তই তগবানময় এইয়াপ বীর 
জ্ঞান হইয়াছে, সেই মহাত্মা জ্ঞানী; এই প্রকার 
লোক অতি ছুল্পভ। এই প্রকার জ্ঞানীর দেহাত্ম- 
বুদ্ধিবপ ্ষুত্্র আমিত্ব চিরকালের মত বিদায় গ্রহণ 
করেছে। তখন তিনি বুঝতে পারেন, “আমি ' 
মকলের অন্তরে বাহিরে, আমি সকলের সাক্ষিত্বরূপ, 
আমারই শক্তিতে মনবুদ্ধি ক্রিয়াশীল, আমিই জাগা, 
বপন, সুষুপ্তি এই অবস্থাত্রয়ের সাক্ষিত্বরূপ, আমি সর্বব- 
ভূতে আছি ও সর্বভূত আমাতে আছে” এইরূপ 
জ্ঞান অনেক সাধনা ও চেষ্টার ফলে উপস্থিত হয়। 
এইরূপ জ্ঞান হওয়ার পূর্বে ভগবানে টান হওয়া 
দরকার; যেমন বিষয়ীর বিষয়ে, সতীর পতিতে, 
কৃপণের ধনেতে টান, সেই রকম টান ওয়া চাই। 
যেমন মাতাল মদে আকৃষ্ট হয়, সেইরূপ ভগবানের 
প্রতি আকৃষ্ট হওয়া চাই। গীতায় ভগবান্‌ বলেছেন, 
“্ধ্যায়তো বিষয়ান্‌ পুংসঃ সঙ্গস্তেষুপজায়তে” ; বিষয়ের 
ধ্যান করতে করতে যেমন তাতে অত্যাসক্তি 
এসে জীবকে ধীরে ধীরে বিনাশের পথে নিয়ে যায়, 
১২৭ 


শীতাতত্ব 


ধন্ম সম্বন্ধে এরপ আসক্তির দরকার ; ভগবানের ধ্যান 
করতে করতে এরূপ আসক্তি উপস্থিত হলে মানব 
বিনষ্ট না হয়ে মুক্তির দিকে সত্বর অগ্রসর হয়।. 
প্রথমতঃ, ধারা ভক্ত, ভগবতপ্রেম ধাদের জীবনকে 
পবিত্র করেছে, তাদের অপূর্ববভাব দেখে সাধারণ 
মানবের মন আকৃষ্ট হয়ে সেইরূপ হওয়ার জন্য ইচ্ছা 
হয়। বিষয়ে যেমন আসক্তি হয়, এও সেই প্রকার 
-আসক্তি। প্রভেদ এই, ইহা উচ্চ বিষয় অবলম্বনে 
হওয়াতে ভগঝানের দিকে নিয়ে যায়। সেই হেতু 
দেবর্ষধি নারদ প্রভৃতি আচার্যেরা বলেছেন যে, কামাদি 
রিপু তত দিন, যতদিন উহারা রূপ রসাদি বিষয়াবলম্বনে 
মনে উদ্দিত *হয়, কিন্তু একবার উহাদের মোড় ফিরিয়ে 
দিতে পারুলে উহারাই ভগবান লাভের সহায় হয়। 
কোন কামনা পূরণ করার জন্য লোকে প্রথমতঃ ভগ- 
বান্‌কে ডাকে । কেন না, তাতেই সর্ব কামনা পূর্ণ 
করবার শক্তি বর্তমান। সকাম মনে দ্বাকতে 
ডাকতে মানব যখন একবার তাকে ভালবেসে 
ফেলে, তখন আর তার পালাবার পথ থাকে না। 
সকাম ভালবাসা হতেই ক্রমে ক্রমে নি্ধাম প্রেম 
এসে উপস্থিত হয়। এই নিষ্ষাম প্রেম হলে 
আর পতনের আশঙ্কা থাকে না। শাগ্ডিল্য খষি এই 
১২৮ 


জ্ঞান ও ভক্তির সমন্বয় 


প্রেমের লক্ষণ করেছেন, “সা পরানুরকিরীশ্বরে)৮__ 
ঈশ্বরে যে পরম অন্তুরাগ, তাই প্রেম। তাই 
পরাভক্তি।' ভক্তরাজ প্রহ্লাদও একস্থলে বলেছেন, 
“যা গ্রীতিরবিবেকানাং বিষয়ে্বনপায়িনী। স্বামনুন্মরতঃ 
সা মে হ্থাদয়াম্মাপসর্পতু ॥৮_“হে ভগবান, বিষয়ীর 
বিষয়ে যেমন টান, তোমাতে আমার যেন তদ্রুপ টান ' 
হয়। মনে হয়, যেন প্রহনাদ অতি সামান্ত কথা 
বলেছেন। কিন্তু তলিয়ে দেখলে এর সার্থকতা 
উপলদ্ধি হয়। সাংসারিক ভাব হতে উচ্চ কল্পনা 
সাধারণ মানবের আসে না| সংসারে পিতা মাতাকে, 
বন্ধুকে ও স্বামী প্রভৃতিকে যেমন ভালবাসা যায়, 
তেমন ভালবাসা বা মনের টান ভগবানে হলে ভগবান্‌ 
লাভ অতি সন্নিকট হয়। 

বৈষবগণ এই জন্য ভক্তির পাঁচ ভাগ করেছেন। 
তারা দেখেছেন যে, প্রত্যেক লোকের প্রবৃত্তি 
অন্ুদারে এক একটি পার্থিব সম্বন্ধ অতি মধুর বলে 
উপলব্ধ হয়। মহাভারতে দেখতে পাই, ভীম্ম, উদ্ধব, 
বিছুর, অজ্জ্ন, যুধিষ্ঠির প্রভৃতি নানালোকে এক 
শ্ীকফণকেই স্ব স্ব প্রাণাপেক্ষাও অধিক ভালবাসছেন। 
কিন্তু সকলে তীর সহিত একই সম্বন্ধ স্থাপন 
কর্তে পার্ছেন না। বিদুরের দাস্ততাব, অন্ুনের 

১২৯ 


গ্ীতাতব্ব 


সধ্যভাব। ভাব ও প্রবৃত্তি অন্ুদারে এক একজন 
আবার এক এক কর্মে নিষুক্ত। উদ্ধব শ্রীকৃষ্ণের 
নিকট শীত। শ্রবণ করে ও তার পাছুক নিয়ে 
বদরিকাশ্রমে তপস্তা করতে চল্লেন। বিছ্বুর নান! 
রূপে সেবা! ও নানা তীর্থ পর্যটন করে পরে 
পরমহংস-পদবীলব্ধ অদ্বৈত জ্ঞানে শরীর ত্যাগ কর্‌ 
লেন, অক্জুন আবার সেই গীতোক্ত জ্ঞান লাভ করে 
, অলৌকিক  উদ্ভমের সহিত যুদ্ধে প্ররত্ব হলেন। 
গোগীদের আবার অন্ত ভাব। শ্ত্রীকুষ্ণকে চিন্ত। করতে 
করতে তারা গৃহকন্ম; স্বামী, পুজ্র, কন্যা, এমন 
কি, ঠাদের দেহ পর্যন্ত ভুলে শ্রীকৃষে তন্ময় 
হয়ে গিয়েছিলেন । একজন গোপিকা তার স্থামী 
কর্তৃক গৃহে অবরুদ্ধা হয়েছিলেন। ফল এই হল 
যে, তিনি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ধ্যান কর্তে কর্তে 
-ভন্ময় হয়ে সমাধিতে শরীর পরিত্যাগ কর্ুলেন। 
একথা ভাগবতে লিপিবদ্ধ। আবার রাসসীলার কথা 
মনে হলে এই তন্বয়ত্বের ভাব আরও স্পষ্ট বোঝা 
যায়। রাসলীলার সময় শ্রীক্ণ হঠাৎ অন্তহিত হন, 
তখন গোগীগণ শ্রীকষ্েের চিন্তা করতে করতে এমন 
তশ্ময় হন যে, আপনাদের পৃথক অস্তিত্ব সম্পূর্ণ 
ভুলে গিয়ে “আমিই শ্রীকৃষ্ণ” এই ভাবে ভগবানের 
১৩২ 


জ্ঞান ও ভক্তির সমস্থ 
লীলাম্ুকরণ করেছিলেন। ভক্তির চরমে এমন 
তণ্ময় হয় যে, উপাস্য উপাসক এক হয়ে যায়। 
শ্রীঘতী রাধাকে এক সময়ে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, 
“তুমি শ্ত্রীকষ্ণকে কি ভাবে দেখ ?” তাতে তিনি উত্তর 
করেন, “নাসৌ রমণো নাহং রমণী”_-আমি একেবারে 
ভূলেছি যে, আমি রমণী ও তিনি পুরুষ এবং 
আমার স্বামী এবং এই জন্য আমি তাকে ভাল- 
বাসি। শ্ত্রীকুষণের প্রতি আমার প্রেম সাধারণ স্ত্রীর 
প্রেমের ন্যায় শরীরান্ুরাগ বা গ্রান্থুরাগ অবলম্বনে 
প্রবাহিত নয়। কিন্তু হেতুশৃন্য হয়ে স্বতঃই সর্বদা 
প্রবাহিত থাকে। আমরা দেখলাম য়ে, ভক্তির 
চরমে দেহাত্ববুদ্ধি ও ক্ষুদ্র আমিত্ব একেবারে চলে 
যায়। এখন জ্ঞানীর সম্বন্ধে ইহা কতদুর সত্য, দেখ। 
যাক। জ্ঞানী বলেন, এই আমি ঠিক নয়, মায়া; 
তবে কোন্টি প্রকৃত আমি? প্রকৃত আমি শরীর, 
মন প্রভৃতি সকলের অতীত ও এদের সাক্ষি- 
স্বরূপ); সকল অবস্থায়ই একরূপে বর্তমান, হ্রাস বৃদ্ধি 
নেই। এই আমি সকলেতে। আমাদের এই ক্ষুত্্ 
আমি দেই মহান্‌ আমিত্বের অংশ মাত্র। সেই মহান্‌ 
আমিত্ব হতে এই ক্ষুদ্র আমিত্বের উতদ্তভব। জ্ঞানীর 
উদ্দেশ্য, এই মহান আমিত্বের সর্বদা উপলব্ধি, করা, 


১৩১ 


গ্বীতাতন্ব 


এই ক্ষুত্র আমিকে সেই মহান্‌ আমিত্বে ডুবিয়ে 
দেওয়া। 

অতএব দেখা গেল, ভক্তের তন্মযত্ব ও জ্ঞানীর 
মহান্‌ আমিত্ব একই। ভক্ত ও জ্ঞানী উভয়েই ক্ষুত্র 
আমিত্বকে ডুবাতে চাইছেন। হন্ুমান্কে একবার 
জিজ্ঞাসা করা হয়, “তুমি কি ভাবে রামচন্দ্রকে উপাসনা 
কর?” তাতে তিনি উত্তর করেন, “যখন আমার 
মন, শরীর ও ইন্দ্রিয়াদিতে নিবদ্ধ থাকে, তখন দেখি, 
তিনি প্রভু ও আমি তার দাস। যখন আপনাকে 
জীবাত্বা বলে অনুভব করি, তখন দেখি, তিনি পূর্ণ 
ও আমি ভাহার অংশ। তিনি স্র্যযম্বরপ এবং আমি 
সেই সুর্যের বহু কিরণের একটি মাত্র। আবার 
যখন আমার মন সমাধি অবলম্বনে সকল উপাধির 
বাইরে যায়, তখন দ্রেখি, তিনি ও আমি এক।” 
অতএব বোঝা যাচ্ছে যে, স্থূল শরীরে ও স্বার্পরতার 
মধ্যে মন থাকলে দোইহং বল নিরর্৫থক! জীবাত্মা 
বলে আপনাকে উপলব্ধি করলে মানব আপনাকে 
ভগবানের অংশ মাত্র বলে বোধ কর্বে। আর যখন, 
সমস্ত বন্ধন মুক্ত হয়ে মানব আপনার যথার্থ স্বরূপ 
উপলব্ধি কর্বে, তখনই তার উপাস্তের সহিত অভিন্ন 
ভাব আসবে। 

১৩২. 


জ্ঞান ও ভক্তির সমস্য 
মনের অবস্থাভেদে দৈতবাদ, বিশিষ্টাদ্বৈতবাদ ও - 
অদ্বৈতবাদ এসে উপস্থিত হয়। এই জন্য ভিন্ন ভিন্ন 
অধিকারীর উপযোগী এই তিন প্রক্‌র মতই শান্ত্ে 
লিপিবদ্ধ দেখতে পাই। আমরা দেখলাম, ভক্ত চায় 
সব ভগবানের পাদপন্পে সমর্পণ করে ক্ষুপ্র আমিত্বের 
বিনাশ কর্তে। আর জ্ঞানীও বলেন, “মুক্তি হবে কবে, 
আমি যাবে যবে।” আমিত্বই জঞ্জাল। অতএব উভয়েরই 
উদ্দেশ্য এক, কেবল কথার প্রভেদ, লোকে বুঝতে পারে , 
না। কিন্তু ঠিক ভক্ত ও ঠিক জ্ঞানী কথায় ভোলে 
না। তারা চায় যথার্থ সত্য অনুভব কর্তে। উত্তর- 
শ্ীতায় আছে, “মধিত্বা চতুর বেদান্‌ সর্ধবশান্ত্রানি চৈব 
হি। সারং তু যোগিনঃ গীতাস্তক্রং পিবস্তি পণ্ডিতাঃ”- 
সার বস্তু অর্থাং শাস্ত্রের প্রকৃত উদ্দেশ্য ভগবানকে 
ছেড়ে পণ্ডিতগণ কেবল মাত্র বাগাড়ম্বররূপ ঘোল 
খেয়ে থাকেন। জ্ঞানী পুরুষই ছুগ্ধের সার বন্ত 
মাখনের ন্যায় শাস্ত্রের সার গ্রহণ করে 
থাকেন। উত্তর গীতায় এ সম্বন্ধে আর এক গ্লোক 
আছে_ 
“যথা খরশ্চন্দনভারবাহী 
ভারম্ত বেত্বা ন তু চন্দনস্ত ।৮ 
চন্দন কাষ্ঠের ভারবাহী গর্দভ ভার বয়ে মরে, 
১৩৩ 


গীতাতন্ব 


চন্দনের গন্ধ অনুতব কর্তে পারে না। পণ্ডিতাভিমানীর 
এই দশা। 

কাধ্যে না পরিণত করুলে শাস্ত্র ব্যাখ্যা শোনা আর 
না শোন! উভয়ই সমান। সত্য অন্থুভব কর্‌তে হবে, 
জ্ঞান ও ভক্তি জীবনে পরিণত করতে হবে। উন্নত 
হতে হলে জ্ঞান, ভক্তি ও যোগ তিনটিরই প্রয়োজন। 
ছুটি পাখা ও একটি পুচ্ছ না হলে পাখী উড়তে পারে 
না। এই রূপ জ্ঞান, ভক্তি ও যোগ এ তিনটি না 
থাকৃলে যথার্থ উন্নতির পক্ষে বিদ্বু ঘটে । জ্ঞানবিচার- 
বিরহিত ভক্তের মন কীর্তনের সময় যেমন উচ্চে উঠে 
থাকে, কীর্তনান্তে তেমনি আবার বিষয়ের প্রলোভনে 
পড়ে যুয়। বিচারবিবেকবিরহিত মনকে তখন 
ধরে রাখা অসম্ভব। জ্ঞান-বিচার ও যোগ সে সময়ে 
সমতা রক্ষার সহায়ক । মনকে আয়ত্ত করতে হবে। 
সে শক্তিও আমাদের ভেতরেই আছে। 

মন মুখ এক করাই এই বিষয়ের প্রধান. সাধন । 
পরমহংসদেব বল্তেন, মন মুখ এক করার নামই 
প্রকৃত সাধন। যদি কেহ মন মুখ এক করে তার 
নিকট প্রার্থনা করে, তিনি কি তাহা পূর্ণ কর্বেন না? 
রবের গল্প স্মরণ কর। সে মন মুখ এক করে বনে 
ভগবানূকে ডাকৃছিল। কোন সহায় ছিল না, এমন 

১৩৪. 


জান ও ভজির সমস্থ 

কি, গুরুর সহায়তা পর্যন্ত ছিল না। মন মুখ এক 
করেছিল বলেই ভগবান গুরু দিলেন ও তাকে 
দর্শন দিলেন। মন মুখ এক হলে যা কিছু দরকার, 
তিনি জুটিয়ে এনে দেবেন। গীতাতেও আম 
বলুছেন, “মন মুখ এক কর 1” যুদ্ধক্ষেত্রে অর্জুনের 
মনে মোহ ও ভয় এসেছিল। মোহ-_আত্মীয় 
স্বজনের জন্য, ধারা যুদ্ধার্থী হয়ে কুরুক্ষেত্রে দণ্ডায়মান । 
তয়-_ইচ্ছামৃত্যু ভীন্ম, সমকক্ষ কর্ণ, শাস্তাচার্য ভ্রোণ, 
শিবপ্রদবরদর্পাঁ জয়দ্রথকে বিপক্ষে প্রতিদন্দী দেখে। | 
ইহাদের সঙ্গে যুদ্ধ সোজা নয়। মায়ার অপূর্ব প্রভাব । 
অর্জুনের ন্যায় মহাপুরুষেরও সাময়িক মোহ ও ভয় 
এসেছিল । এইরূপ মোহ ও ভয় মানবের স্বাভাবিক। 
তিনি ভার কর্তব্য ভুলে গিয়েছিলেন। ভেতরে 
শোক, ভয় ও মোহের নিমিত্ত যুদ্ধ ত্যাগের সংকর 
ও মুখে ধর্মের ভানে যুদ্ধোস্তম ত্যাগ করে ভিক্ষা বৃত্তি 
অবলম্বন কর্বার কথা বলেছিলেন। ভগবান অন্তর্্যামী, 
তিনি বলেছেন; 

“অশোচ্যানম্বশোচস্তং প্রজ্ঞাবাদাংশ্চ ভাষসে।” 

তুমি পণ্ডিতদের মত, ত্র্মজ্ঞানীর মত কথা 
বলছ, আবার আত্মীয় স্বজনের জন্ক শোক করছ।' 
যথার্থ জ্ঞানী নিজের বা অপরের শরীর নাশেও*শোক 

১৩৫ 


করেন না। তোমার কথায় ও কাজে মিল নেই। 
পরমহংসদেবও আমাদের এ বথা বল্তেন, “মন মুখ 
এক কর।” মন মুখ এক হলে উন্নতি কে রোধ করে! 
এক সাধন প্রভাবে যা কিছু দরকার, আপনি এসে 
উপস্থিত হয়। 

পূর্বোক্ত প্রথম শ্লোকটি এবং নিয্নোক্ত গ্লোকটি মনে 
রেখে জীবনে পরিণত করতে পার্ুলেই ধন্ম্লাভের 
বাকী থাকে না। 

“সর্ববধম্মণন্‌ পরিতাজ্য মামেকং শরণ, ব্রজ |” 

রি ক হরে ভারা সা তাজা 
আর একটি কথা আমরা সকলেই ভুলে গেছি__ 
সর্বভূতে নারায়ণ জ্ঞান। পরমহংসদেব বল্তেন,_ 
“সংসারে ধনী লোকের বাড়ীর চাক্রাণীর মত থাকবি” 
ই চাক্রাণী নিজের সন্তানের মত প্রভুর ছেলেদের মানুষ 
করে, কিন্তু জানে যে, যখন তাকে বিদায় দেবে, তখনই 
যেতে হবে। এই প্রকারে সংসারে থাক। স্ত্রী পুত্র 
তিনিই স্থস্ত স্বরূপ তোমার কাছে রেখেছেন। ন্াস্ত 
স্বরূপই বা কেন, তিনিই স্ত্রী পুত্র নানা মৃ্তিতে তোমার 
সেবা গ্রহণ করছেন। যা কিছু করছ, তারই 
সেবা কর্ছ। কাঙ্গালীকে খাওয়াচ্ছ” কি 
ভিক্ষুককে একটি পয়সা দিচ্ছ, তিনিই ভিক্ষুক ও 

১৩৬ 


জ্ঞান ও ভক্তির সমন্বয় 


কাঙ্গালী রূপে তোমার সেবা নিচ্ছেন। এই ভাব মনে 
রেখে কাজ করো । অহঙ্কার ত্যাগ কর। অহ্‌ম্কারেই 
সর্ধনাশ। এই ভাব পেলে আর ভয় নেই, কিছুতেই 
আর বাধতে পার্বে না। ভগবানের শ্রীপাদ্পন্মে এই 
প্রার্থনা, যেন এই ভাবটি স্র্বতোভাবে আমাদের সকলের 
মনে আজ হতে উদ্দিত থাকে। 

ও হরিঃও। শাস্তিঃ! শান্তিঃ!! শাস্তি; |! 


১৩৭ 


সপ্তম অধ্যায় 


বেদান্ত ও ভক্তি 
বাঙ্গালাদেশে জ্ঞান ও ভক্তির ধারণা কিরূপ 


এদেশে ভক্তির প্রাধান্ত। কোমলাঙ্গ, কোমলম্বভাৰ 
বাঙ্গালী__ ভক্তির ধর্মই বোঝে ;-_ভক্তিশান্ত্রের শব্দাবলী 
(যথা--দর্শন, ভাব, প্রেম, সাত্বিকবিকার, ইত্যাদি ) 
প্রয়োগে স্তুর। বাঙ্গালার কবি জয়দেব, বিষ্াপতি, 
চণ্ীদাস গ্প্রভৃতি ভক্তির ভালবাসার কথাই গেয়েছেন। 
আধুনিক কবিরাও “মহাজনো যেন গত” বলে 
প্রধানত; সেই পথেই নৌকো চালিয়েছেন। ৪০০ 
বতসর পূর্ব্বে যে মহাপুরুষ বঙ্গদেশ ধন্য করেছিলেন, 
অপূর্ব প্রেম ও অলৌকিক ত্যাগের মিলনন্কুমি ধার 
জীবন, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বৃন্দাবন লীলার পবিভ্রতা 
বুঝবার, প্রধান সহায়,-তিনিও ভেতরে যাই থাক, 
বাইরে ভক্তির কথাই জনসমাজে প্রচার করেছিলেন 
এবং ভক্তির গ্রভাবেই বাঙ্গালীর হৃদয়ে রাজত্ব বিস্তার 
করেছিলেন। বাঙ্গালীর দেশ, শরীর, স্বভাব, ভাষা 

১৩৮ 


বেদাস্ত ও ভক্তি 


কবিতা ও পুর্রেতিহাস, ভক্তির বিশেষ উপযোগী না 
হলে কখনই আমাদের ভেতর ভক্তাবতার-_ভগবান 
প্রীকফ্ণচৈতন্য ভারতীর আবির্ভাব হত না 

বাঙ্গলায় ভক্তি-ধন্ম যেমন প্রবল, জ্ঞান' ও জ্ঞানের 
চচ্চাও আবার তেমনি বিরল। “ইনি বড় জ্ঞানী ও 
বিচারবান্” একথা বল্লে, দেশের অধিকাংশ লোকে 
ভাবে-সে আবার কি 1--ইনি ত কীর্তনে নাচেন না ? 
কৈ ভগবত-প্রেমে ত এঁর অক্ষপ্রত্যঙ্গের বিকৃতি 
উপস্থিত হয় না। আবার যদি কেহ জ্ঞানশাস্ত্-পরিচিত 
সমাধি, অস্তি-ভাতি-প্রিয়। পঞ্চকোষ, সপ্তভূমিকা, 
তত্বমসি শ্বেতকেতো, ইত্যাদি শব্দ প্রয়োগ ' করেন তা 
হলেই চক্ষুস্থির !--অধিকাংশ শ্রোতা এদিক ওদিক 
দেখে পাশ কাটাতে ব্যস্ত হন। কেহ বা বলেন 
শুষ্ক মার্গ'। কেহ বা_গোড়ামির আোতে গা ঢেলে, 
আর একটু অগ্রসর হয়ে_বেদান্ত, “অছৈতবাদ', 
'নাস্তিকতা' ঈশ্বরাবমাননা” দিরকে যাবার পথ-_ 
সব একই কথা স্থির সিদ্ধান্ত করে, নাসিক! উত্তোলন 
ও ঘৃণার চক্ষে দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন। 

বাস্তবিক কি তবে, ভক্তি ও জ্ঞান-পথের সামগ্রস্য 
নেই? জ্ঞান ও ভক্তির মিলনভূমি কি কেহই স্পর্শ 
করতে পারেন না? | ৬ 

১৬৯ 


 গ্বীতাতত্ব 
ধরদশাস্ত্াদিতে জ্ঞান ও ভক্তির অন্তত সামঞ্জস্য 


শাস্ত্র পাঠে অবগত হই, ভক্তি শাস্ত্রের ভেতরেই কত 
জ্ঞানের কথা ! ভক্তি-প্রধান শান্ত্র বিষ্ু-ভাগবতে, পদে 
পদে জ্ঞান ও অছৈতবাদের অবতারণা । নারদাদি 
ভগবদ্ভক্তেরা ব্হ্মজ্ঞানের নিন্দা করা দুরে থাকুক, 
তার জন্য কত যত, কত তপস্তাই কর্ছেন। 
পূর্ণাতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, ব্রহ্গজ্ঞানে অবস্থানের জন্য, 
স্বয়ং প্রয়াসী ;-ভক্তাগ্রণী উদ্ধকে তিনি একান্ত, 
তুষারধবলিত, লৌন্দ্য ও গা্ভীর্য্যের উদ্বাহভূমি 
বদরিকাশ্রমে, জ্ঞান সাধনার্থ পাঠাচ্ছেন; ভক্তি ও 
প্রেমের মৃত্তিরূপিণী ব্রজাঙ্গনাদের ধ্যান ও জ্ঞান বৃদ্ধি 
কর্বার জন্য, 'কোকিলকৃজিত কুঞ্জা-মধ্য হতে অন্তর্ধান 
হচ্ছেন। আবার, অনন্তচিস্ত তন্মনস্ক গোপিকাগণ, 
কিশোর ভগবানের কমনীয় মৃ্তি ধ্যান করতে করতে, 
“আমি বাসুদেব ইত্যাকার একতা জ্ঞানের আভাস 
অনুভব কর্ছেন। এমন কি, প্রেমের উজ্জ্রলভূমি 
ভগবান্‌ শ্রীকচৈতন্যও স্বয়ং কেশব ভারতীর নিকট 
হতে, “তুমিই সে অখণ্ড সচ্চিদানন্দ ও পূর্ণ স্বরূপ” এই 
মহামন্ত্রের দীক্ষা গ্রহণ কর্ছেন। 

অন্যদিকে আবার কুমার-সন্ন্যাসী, ত্যাগ ও জ্ঞানের 
স্বলনতুমৃত্তি, ভগবান শশ্করাচার্য্য-+বৌদ্ধ বিপ্লবের পর 


১৪০ 


বেদাত্ত ও ভক্চি.. 
যিনি সমগ্র-সভারতে বেদ-ধর্দের সনাতন ধ্বজ! পুনরুত্তোলন 
করেন__শিবাবতার সেই মহাবীরের, ভক্তিন্থধাপ্পুত হরি 
হর গিরিজা ও গঙ্গা-স্তোত্রাদি পাঠে কে না বিমোহিত 
হয়ে থাকেন? মায়াগন্বহীন পরমহংসাগ্রণী, মহাতেজা 
ভগবান্‌ শুক স্বয়ং_-ভাগবতবক্তা । সনক সনাতনাদি 
আত্মারাম মুন্গণ ভগবানে অহৈতুকী ভক্তি করছেন। 
বেদমূত্তি মহাজ্ঞানী ভগবান কৃষ্ণত্ৈপায়ন, ভগবন্তক্তির 
উচ্ছ্বাস লিপিবদ্ধ করে শাস্তি-লাভ করছেন। 
এমন কি জ্ঞানসিন্ধ' জগৎ-গুরু' মহাদেব-_যিনি স্বয়ং 
ভক্তিতত্বের  প্রধানাচার্য্য-__হরিভক্তি প্রদান করে 
মহামুনি নারদের জীবন চিরকালের জন্য ধন্য' করছেন। 
অতএব আমাদের পূর্ব প্রশ্নের সামগ্রন্ত নিশ্চিত 
আছে।_স্থির মনে শ্রদ্ধার সহিত পূর্ব পূর্ব্ব আচার্ধ্যগণের 
পদ-প্রান্তে জিজ্ঞাস হয়ে বলেই বুঝতে পারব। 
জ্যোতির্ময় আত্মাপক্ষী অনন্ত চিদাকাশে উড়বার 
প্রয়াস পাচ্ছে। জ্ঞান ও ভক্তি তার বিস্তারিত 
পক্ষদ্ধয়; এবং যোগ-__গতি-নিয়ামক পুচ্ছ॥। তিনটি 
অঙ্গ সবল ও সমানভাবে পরিবদ্ধিত না হলে, 
উড্ভবার চেষ্টা বৃথা। পক্ষদ্বয় না থাকলে গতি-শক্তিই 
সম্ভবে না। আবার সংযমপুচ্ছ না থাকলে লক্ষ্য 
আর্ট হয়ে শক্তি অন্যদিকে ব্যয়িত হয়, অভীষ্ট ফল 
১৪১ 


১৩ 


গীতাতন্ব রী | 
প্রদান করে না; বেদমূত্তি তপোধন ব্যাস এই মহা 
সত্যের উপদেশ করেছেন। যে কোন যুগে, যে কোন 
দেশে, যে কোন ধর্মে যত ধর্মবীর, অবতার আচার্ধ্য 
মহাপুরুষ জন্মগ্রহণ করে ধরা ধন্য করেছেন? 
কামকাঞ্চন-স্বার্থপরতার উন্মত্ততা ও কোলাহলের মধ্য 
ধীদের অলৌকিক জীবন ন্মূর্ধ্যকোটিপ্রতীকাশং 
চন্দ্রকোটিস্থশীতলং ধর্মালোক বিস্তার করে, হতাশ 
মানবের নয়ন মন ভ্তস্তিত ও প্রবুদ্ধ করেছে; 
বসম্তাগমে বৃক্ষ লতিকার ন্যায়, যাঁদের আগমনে, 
মৃত মনে নুতন প্রাণ সঞ্চারিত হয়ে মরুভূমির ধূসরতা 
হরিং-পুর্জে পরিণত করেছে ;--তাদের  জীবনবেদ 
পাঠ কৈ জ্ঞান ও ভক্তির কি বিচিত্র সম্মিলন 
দেখতে পাওয়া! যায়! জ্ঞান ও ভক্তির অপূর্ব্ব 


পরিণয়, তাদের জীবনে যে কি মহান্‌ উদারতা 
প্রসব করেছিল, তা জগতের ধর্দ্মেতিহাস-পর্ধ্যা- 
লোচনায় সম্যক্‌ বুঝতে পারা যায়। এইট-উ্ারতার 
বলেই শ্রীচৈতন্য যবন-হরিদাসকে শিষ্য করতে এবং 
আচগুালে প্রেম দিতে কুষ্টিত হন নাই ; এই উদারতার 
বলেই ভগবান ঈশা সামারিটান্-কন্ঠার জলপান, বেশ্যা- 
মেরীর সেবা-গ্রহণ এবং যাহুদী ও অন্ত জাতিকে সমান 
ভার্বে ঈশ্বরতত্ব উপদেশ করেছিলেন; ইহার প্রভাবে 


১৪২. 


টি বেদান্ত ও ভক্তি 
ভগবান শাক্যসিংহ জ্ঞানের সুদৃঢন্তস্ম্বরপ হয়েও 
বিশ্বিসারযজ্ঞে একটি ক্ষুদ্র, নগণ্য ছাগশিশুর জন্ত নিজ 
জীবন উৎসর্গ করতে প্রসন্ন চিত্তে উদ্ত হয়েছিলেন। 
গারসথ্য ও দন্ন্যাসের অপূরর্ষ সম্মিলন, তেজ ও মাধূর্য্ে 
বিচিত্র সমাবেশ, ভারতের পূর্ণাবতার ভগবান্‌ শ্রীকণ 
পুণ্যতূমি কুরুক্ষেত্রে অর্জনকে বলেছিলেন, “মানুষ 
কেউই আমায় এককালে ছেড়ে অবস্থিত নয়; 
সকলেই ভিন্ন ভিন্ন পথে আমার দিকে আসছে; 
যে দিক দিয়েই যাক না কেন, আমি তাকে 
সেই দিক্‌ দিয়েই ধরি” 
হৃদয় ও মস্তিষ্ক সমান ভাবে বাদ্ধিত, এমন লোক 
জগতে অতীব বিরল। একটি অপরটির ব্যয়ে বদ্ধিত 
হচ্ছে, একটি বেড়ে অপরটিকে আওতায় ঘিরেছে, 
ইহাই ' সচরাচর দেখতে পাওয়া যায়। কিন্ত 
হৃদয় ও মস্তি সমভাবে পুষ্টিপ্রাপ্ত হয়ে সমভাবে 
কার্য. করছে-হ্বদয় একদিকে ভাবের সাগর 
হয়ে সমস্ত জগতকে আপনার করে নিয়ে 
অতন্পমাত্র ভাবম্পন্দে নেচে উঠছে এব? মস্তিষ্ক 
অপরদিকে_কৃট জটিল প্রশ্ন সমুদায় ছিন্ন ভিন্ 
করে ভেতরের সারবস্ত গ্রহণে সমান পারদর্শী 
হয়ে উঠেছে--ইহাই আদর্শ এবং দেব ও গুরুর বিশেষ 


১৪৩. 


চা 


গীতাতত্ব 


প্রসাদ ভির পাওয়া অসম্ভব । জ্ঞান ও ভক্তির 
আবহমানকাল ধরে যে বিবাদ তার প্রধান 
কারণ ঠিক এইখানে পাওয়া যায়। গোড়ামি, 
সন্কীর্ণতা, হীনবুদ্ধি। একদেশীভাবক এ সকলই 
হৃদয় মস্তিষ্কের অযথা সংস্থাপনের ফল; এবং ধৈর্য্য, 
বীর্ধা, শ্রদ্ধা, উদারতা, এমনকি জীবন্মুক্তিও ইহা- 
দেরই যথাযথ সংস্থানের ফল। মুক্ত হওয়া আর কিছুই 
নয়, নীতি, চরিত্র প্রভৃতি তখন আর প্রয়াস করে 
রক্ষা করতে হয় না-_নিশ্বাস-প্রশ্বান ও রক্ত সঞ্ধা- 
লনাদির ন্যায় স্বাভাবিক ও সহজ হয়ে আসে। 
ভখনই মানুষের আপন মন গুরু হয়ে ফীড়ায়, 
যাহা ভাল" বলে গ্রহণ করে তাহা নিঃসংশয় ভাল 
হয় এবং যাহা মন্দ বলে তাহা! তেমনি নিশ্চিত মন্দ 
হয়। তখন “মা আর তার পা বে-তালে পড়তে 


দেন না।” 


জান ও ভক্তির বিরোধ কোথা 


তকে জ্ঞান ভক্তির বিরোধ কোথায় ?--পথে ও 
কথায়। কথার বিবাদ মিটে গেলে বোধ হয় 
জগতের চার ভাগের তিন ভাগ ঝগড়া মিটে যায়। 
এক শবে ভিন্ন ভিন্ন বস্তা লক্ষ্য করে, বা এক শবে 

১৪৪ 


বেদান্ত ও তক্তি 


একই বস্তুর ভিন্ন ভিন্ন ভাব লক্ষ্য করে আমাদের 
মধ্যে যত বিবাদ উপস্থিত হয়। আমেরিকার স্থৃবিখ্যাত 
ক্রমবিকাশবাদী পণ্ডিত জন্ভিস্ক বলেন, বিরুদ্ধ পক্ষের 
ভাব ও দৃষ্টি নিয়ে দেখবার শক্তিহীনতাই যত 
. বিবাদ-বিসম্বাদের কারণ। হারবার্ট স্পেন্পর আর 
একটু অগ্রর হয়ে এই রোগের কারণ ও ওধধ 
নির্দেশ করেছেন-_প্জয়ের আদর কমে আমা" 
দিগের হৃদয়ে যত সত্যের আদর বাড়বে, আমাদের 
বিরুদ্ধ পক্ষ এত দৃঢ়তার সহিত কেন স্বমত পোষণ 
করে তার কারণ-অন্বেষণের চেষ্টাও আমাদিগের 
ভেতর তত বলবতী হবে; এবং লিক্ষ্য-বিষয়ে 
তারা এমন কিছু দেখেছে যা" আমরা এখনও 
দেখতে পাচ্ছি না" এই ধারণার সঙ্গে সঙ্গেই 
আমাদের, তারা যতটুকু সত্য পেয়েছে, তার 
সহিত আমরা যতটুকু পেয়েছি, তার, সংযোগের 
চেষ্টা হবে।” পরমহংসদেব এ বিষয়ে তাঁর সেই 
সুমিষ্ট গ্রাম্য ভাষায় বলতেন, “ওরে কোনও জিনি- 
ষের “ইতি' করিস্নি--ভগবান ত দূরের কথা। 
ছিতি' করা) এটা এই-এছাড়া আর কিছু 
হতেই পারে না” মনে করা-_হীন বুদ্ধির 
কাজ ।৮:. 
১৪৫ 


গীভাত্ব 


অনন্ত ঈশ্বরে 'ইতি-_অসস্তব. 

অনন্ত ঈশ্বরের অনস্ত ভাবের খেলা--.এই বর্ধা। 
ষু্রাৎ ক্ুত্রতম এর এক. একটি অংশও অনন্তের 
পরিচয় দেয়। এক গাছি তৃণ, একটি বানুকণ, 
বা বিশেষ মক্তিশালী অপুবীক্ষণ-গ্রাহহ একটি প্রাণি- 
বীজের শরীরগঠন ও গুণ ইত্যাদির ইয়ত্তা কে করতে 
পারে? সেইজন্যই বেদ বলেছেন, প্পু্মদঃ পূর্ণ 
মিদং পূর্ণাৎ পূর্ণমুদচাতে। পূ্ণন্ত পূর্ণমাদায় পূর্ণমেবা- 
বশিষ্ততে।” পূর্ণ ভিনি, পূর্ণ তার জগৎ; সেই 
ূর্ণান্ত-্বরূপ হতেই এই অদীম জগ প্রন্ত, কিন্ত 
তাতে তার হানি বা হাস হয় নি। কারণ 
অনন্ত-পদার্থ হতে অনন্ত পদার্থ নির্গত হোক না 
কেন-_যে অন্ত সেই অনস্তই থাকে। 

বাস্তবিক মানব নিজেও অনন্ত এবং অনঞ্ের সহিতই 
চিরকাল খেলছে। 'কিরতলামলকবত?, অনস্তকেই 
সে ধরছে ছুইছের। দেখছে, শুনছে। 
কেবল তার ভেতর কি একটু কোথায় গোলমাল 
হয়েছে যার জন্য সে তাতে সান্ত বুদ্ধি করছে। 
পিতা মাতা, স্ত্রী পুত্র, বন্ধু বান্ধব, জড় চেতন উচ্চ 
নীচ,, ক্ষুদ্র মহান, সকল স্থানে একবার সেই অনন্ত 

১৫৬ 


বেদাস্ত ও ভক্তি 
বুদ্ধি আন দেখি”_ধরা স্বর্গ হবে; শোক, মোহ, জরা, 


মৃত্যু কোথায় লুকাবে; ধর, ' ভক্তি, মুক্তি-আর 
কাল্পনিক খোয়া ধোঁয়া শব্দ মাত্র থাকবে” না. আর 


সর্বত্র, সকলের মধ্যে. (দেখবে__সেই জীবন্ বিশবরূগী 


বিরাট, জেই 'সর্বতঃ পাশিপাদস্তৎ সর্ব্বতোহক্ষিশিরোমুখং 
মেই ভীষণ হতেও ভীষণ এবং শোভন হতেও শোভন, 
নিবিড় আধার ও অনস্ত জ্যোতি-হিল্লোলের বিচিত্র 
সমাবেশ, করালবদনা শবশিবা! এই দেবছুল্পভ পূর্ণ- 
দর্শনের প্রথম সোপানই হচ্ছে_-“ইতি না করা?। 

'আমি, ও 'তুমি' 

'আমি” ও 'তুমি-এ ছুটি অতি সহজ কথা। জন্মা- 
বধি মানুষ বোধ হয় এ ছুটির যতবার উচ্চারণ করে 
ততবার আর কোনটির করে না। এছুটি পৃথক্‌ ভাব, 
জীবনে প্রথমেই শিক্ষা হয়; আবার এই ছুই বস্ত 
এতই বিরুদ্ধভাবাপন্ন যে, এ ছুটিতে গোল হবার 
আদৌ সম্ভাবনা নেই। কিন্তু জ্ঞান ও ও/ক্তির বিরোধ 
বোধ হয় এ ছুটি শব্দ হতে যত হয়েছে, এত আর 
কিছুতে হয় নি। 

তুমি ও ভক্তি 
ভক্ত বলেন--“ঠাকুর! আমি কিছু নই, তুমিই সব। 


১৪৭ 


যশ মানের কাঙ্গালী, বায়ুর ম্যায় অন্থিরমতি,_-এ 
'আমির' আবার শক্তি আছে? এ “আমির দ্বারা আবার 
সাধন হবে, ভজন হবে,-তোমায় পাব? জলে 
শিলা ভাসা, বানরের সঙ্গীত, আকাশ-কুমুমও কোন 
কালে সত্য হতে পারে; কিন্তু এই নগণ্য 'আমার' 
শক্তি আছে এবং সেই শক্তিতে তোমায় ধরব--ইহা 
কখনও সম্ভবে না। তুমি আমার প্রাণের প্রাণ, সর্ববস্ 
ধন; তোমার যা ইচ্ছা তাই পূর্ণ হোক | নাহং 
নাহংস্তু'ছু তু তু তু'ছি।” ভক্ত দেখেন এক মহান্‌ 
তুমি-যার নিয়মে লুধ্য তারকা ফিরছে, অগ্নি 
জ্যোতি দিচ্ছে, মৃত্যু-_সমুদায়- গ্রাস করছে। 
ভক্ত দেখেন, সেই '“তুমি' আবার প্রাণের প্রাণ, নয়নের 
জ্যোতি, বাহুর শক্তি; প্রেমই তার স্বরূপ, তিনি 
পরম সুন্দর || সে সৌন্দর্য্যের কাছে আর সকল সৌন্দর্ধ্য 
অন্ধকারে পরিণত, সে বীর্যের কাছে অস্ত. .পকলের 
বীর্ধ্য পরাহত। এই মহান্‌ তুি_নিকট হতেও 
নিকটে, , আপনার হতেও আপনার। মোহিত ও 
স্তম্ভিত হয়ে, ভক্ত এঁকেই ইঞ্ট-দেব বলে বরণ 
করেন এবং সিরা হন মহোতসাহে দীক্ষিত 


হন'। « 
১৪৮ 


বেদাস্ত ওকি 


. জ্ঞানী দেখেন, শরীর প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল ; 


মনও. তক্পশ-ফিরছে।. ঘুরছে। বাড়ছে, 


কমছে। চক্দ্রোদয়ে সমুদ্র-বারির গ্ায়। ভাবরাশি 
কখন উত্তাল তরঙ্গ তুলে গভীর গল্জনে ছুটছে, 
আবার কখনও বা অন্তমিত শক্তি, ফন্ুর ন্যায় ক্ষুদ্র 
ধারা,_বালুকা ভেদ করতে না করতে শুকিয়ে 
যাচ্ছে। কিন্তু এই বাল্য, যৌবন, বার্ধক্যের ভেতর 
_ জাগ্রৎ, স্বপ্ন, নুযুণ্তির ভেতর,_-শরীর। মন, বুদ্ধির 
ভেতর,_-ভূত, ভবিষ্যৎ বর্তমানের ভেতর;--"এক অনস্ত, 
অপরিবর্তনীয় নির্মল নিত্যক্োত বইছে, যার 
আঘাত অন্তরে লাগায় অবিরত “অহং" “অহং, ধ্বনি 
উঠছে;  বুদ্ধি_দোলায়মান চিততরত্িকে বিশেষ 
বিশেষ রূপসম্পন্ন করে নিশ্চয়াকতি করছে; 
প্রাণচক্র পরিবন্তিত হয়ে, ইন্দ্রিয় সকলকে স্ব স্ব 
কার্যে নিযুক্ত রেখেছে। জ্ঞানী, এই অনিত্যের 
ভেতরে মেই নিত্যের, অচেতনের ভেতর সেই সচেতনের 
অশক্তিকের ভেতর সেই পরিপুর্ণশক্তিকের দর্শন পেয়ে, 
স্তস্তিত ও বিশ্মিত হলেন। আধার দেখলেন, সেই 
নিতোর ছবি, স্ত্রী পুরুষ, জীব জন্ত, গ্রহ নক্ষত্র, 


১৪৯ 


জড়) চেতন, সমূদায় জগতে বর্তমান। দেখলেন, এট 
ক্ষুদ্র 'আমির' যথার্থ স্বূপ-_মহান্‌ ও নিত্য । মহোল্লাসে 
বলে উঠলেন, "আমাতেই এই জগত উঠছে, 
ভাসছে, লীন হচ্ছে। আমিই জ্ঞান ও শক্তির 
একমাত্র আকর। আঙ্গিই নারায়ণ। আমিই পুরাস্তক 
মহেশ। মৃত্যু ও শঙ্কা কি আমায় স্পর্শ করতে পারে? 
জন্ম জরা বন্ধনই বা আমার কোথায় 1” 

«ন মৃত্যু্ন শঙ্কা ন মে জাতিভেদঃ 

পিতা নৈব মে নৈব মাতা ন জম্ম । 

ন বন্ধুর্ন মিত্রং গুরুনৈ শিত্যঃ 

চিদানন্দরূপঃ শিবোইহং শিবোইহম্‌ ॥৮ 


্ ভক্ত ও জ্ঞানীর লক্ষ্য একই 

. তবে ভক্তের 'হান্‌ তুমি" ও জ্ঞানীর মহান্‌ 
আমির মধ্যে আর প্রভেদ কোথায় 1-কেবল, মাত্র 
বাক্যে। ছুজনেই এক বস্তুকে লক্ষ্য: রর ভিন্ন 
দি শব্ধ প্রয়োগ করেন মাত্র। উভয়েই বলেন, 
ইজিয় সকল দংঘত কর, নিজ্য পদার্থে বিশ্বাস 
ক্কর। এরং এই. ক্ষ আমি. 'কাচা আমি, ছেড়ে 
জাও--উহাই-.যভ. ছুছখ ও -. বন্ধনের. কারণ। কীচা 
আনিকে? ভক্তি বা. বিবেকণঠ্যরাগ্যের ছনন্ত আগুনে, 

২ 


জা্ও 
গোড় খাইয়ে, আন্‌ আমি বা ভূমির ষহিত সন্ন্ধ 
পাতিয়ে, 'পাঁকা' করে লও। আবার,জোর করে 
সম্বন্ধ পাতাতেও - হবে না7--পরস্পর আকর্ষণ ও সখ্য 
উভয়ের নিত্যকাল বর্তমান দেখতে পাবে। হর 

দ্বা স্ুপর্ণা সযুজা সখায়া সমানং বৃক্ষং পরিষস্বজাতে 

তয়োরম্যঃ পিগ্নলং স্বাঘত্ত্যনশক্নন্যো অভিচাকশীতি ॥ ১ 

সমানে বৃক্ষে পুরুষো নিমগ্লোইনীশয়া শোচতি 
মুহামানঃ। জুষ্টং যদা প্যত্যন্থমীশম্য হিম 
বীতশোকঃ ॥ ২ ৃ 

যদা পশ্ঠঃ পশ্যতে রুক্সবর্ণং কর্তারমীশং পুরুষং ব্রদ্- 
যোনিম্‌। তদা বিদ্বান্‌ পুণ্যপাপে বিধুয় নিরঞ্নঃ পরমং 
সামযমুপৈতি ॥ ৩ 


জীবাস্ম। ও পরমাস্া-ঢুটি পক্ষী 

উদ্ধগূল অবাকৃশাখ এই সংসার অশ্বথের ছুই শাখায় 
ছটি পক্ষী বসে রয়েছে। ছুটিই সন্দর এবং 
চিরপ্রেমে পরস্পর আবন্ধ। তাদের একটি 
সুখছুখময় ফলভোগে ব্যস্ত, “আমি জামার জ্ঞানে . 
নিরন্তর মোহিত ও. ব্যথিত; অপরটি: আপনার . 
মহিমায় দীপ্রিমান, ভোগে আদ দৃষ্টি নেই। সংসারের 
৫5. , 








গীতাততব 


বাষ্থা ছেড়ে দেয় অমনি অপরটির হিরগ্নয় রূপ এবং 
কোটিব্রক্গাগুব্যাগী মহিমা তার নিকট প্রকাশিত হয়। 
আর তাকে সুখছুঃখ, পুণ্যপাপ ম্পর্শ করতে পারে 
না। কামকাঞ্চনের আবরণে তাঁর অঞ্জনরহিত চক্ষু 
আর কখনও আবৃত হয় না। অনিত্যের মধ্যে সেই 
একমাত্র নিত্যপদার্থের, বর মধ্যে সেই একের 
উপলব্ধি করে সে আপনাকে ও সকলকে সেই এক 
বলেই ধারণা করে এবং পরম সমতা ও শক্তিলাভ 
করে। 


অজ্ঞানাবরণের মধ্যে ভগবানের প্রকাশ 


বাস্তবিক মনুস্য কখনও ভগবান হতে দুরে অবস্থিত 
নয়। নীচ সঙ্গে, নীচকর্ধে সে যতই নীচগামী হোক 
না কেন, তার দৃষ্টি সেই হিরপুয় পুরুষের 'নূর্্যকোটি- 
প্রতীকাশ' রূপ হতে কখনই একেবারে বঞ্চিত নয় । 
সারের ছুঃখ যন্ত্রণায় অস্থির হলেই শে. দেখতে 
পায়, রোগ শোকে অভিভূত হলেই তাকে 
কিছু না কিছু উপলব্ধি করে। নতুবা শিক্ষাবিহীন, 
হিংসাজীবন ঘোর স্বার্থপর বন্তের ভেতর কোথ৷ হতে 
ধর্মভাব অঙ্কুরিত হয়? অন্ধতমসাবৃত তার জীবনে 
কোথ হতে শ্রদ্ধার আলোক উপস্থিত হয়ে 

১৫২ 


বেদান্ত ও ভক্তি 
ধীরে ধীরে স্থার্থপরতার রজনী অপস্থত করে? 
ধূমকেতু হতেও অনিয়তগতি তার চরিত্রে কোথা 
হতে সমাজবন্ধন, বিবাহবন্ধন, স্বজনন্সেহ, দেশহিতৈষিতা 
ইত্যাদি উপস্থিত হয়ে পরিশেষে জগতের মঙ্গল 
. কামনায় তাকে নিযুক্ত করে? কেনই বা সে 
উদযোন্ুখ ন্র্ধ্ের, শূঙ্গবিদারী বজ্র, বিশেষ শক্তিম 
পদার্থের বা পরলোকগত আত্মার সম্মূথে অবনতজান্ু, 
অবনতমস্তক হয়? বলবে অজ্ঞতা, বলবে কুসংস্কার, 
বলবে কুহকিনী কল্পনার মায়ামন্ত্রে মুগ্ধ হয়ে মানুষ 
ভৌতিক জড়পদার্থ ও শক্তিতে চেতনের ইচ্ছাময়ী 
লীলার তরঙ্গভঙ্গ আরোপিত করে, বলবে ভয়ে বা 
ভালবাসায় অথব! অদ্ভুত স্বপ্নরাজ্যে--যেখানে দৃষ্ 
অনৃষ্ট কত লোকের সহিত মেশামেশি, আলোক 
ও আঁধারের বিচিত্র মিলনে, অস্পষ্ট, ঈষংব্যক্ত, 
অপরিক্ষুট ও অব্যক্ত ছায়াময়ী মৃষ্তি সকল, ছায়ার 
জগতে, ছায়ার নাম ধাম ও সম্বন্ধ পাতিয়ে, জীবন্ত- 
রূপে প্রকাশিত হয় অথচ প্রখর জ্ঞানস্ধ্যের কিরণ- 
বিস্তারে কোথায় সরে দীড়ায়- সেই স্বপ্নরাজ্যে প্রথম 
মানবের মনে শ্রদ্ধা ও ধর্মের বীজ অন্কুরিত হয়। সত্য, 
ঞবসত্য হলেও একথা ধর্মের মূল কোথায়' এ প্রশ্নের 
সম্যক তলম্পর্শ করতে পারে না। অজ্ঞতা ও কুদ্ুস্কার 

১৫৩ 


গীতাত্ .. 

কি কখন উন্নতির দ্বার খুলে দেয়? কল্পনা কি কখন 
যথার্থ সত্য প্রসব করে? তবে এর নিঃসংশয় উত্তর 
কোথায়? মানুষের ভেতর অদম্য অনন্ত শক্তি কুগুলী 
আকারে নিবদ্ধ। জন্ম জরা মৃত্যুও সে শক্তির নিকট 
পরাহত। অনন্ত বাঁধা বিদ্ব ভেদ করে দেশ কালের 
সীমা অতিক্রম করে 'অবাঙমনসোগোচর' রাজ্যে সে 
শক্তির প্রথর দৃষ্টি ছুটতে সক্ষম। তজ্জন্যই সে সেই 
নিত্য পদার্থের কিছু না কিছু রূপের ছায়া সকল বস্তুতে 
দেখতে পায়। তজ্জগ্তই সে অনিত্য বস্তুকে নিত্য 
বলে ধারণা করে, এবং যে মূহুর্তে মানব সেই মহা- 
শক্তির সঞ্চালনে, পূর্ণ সত্যের দর্শনে ঠিক ঠিক বা্থা 
করবে, «সেই মুহুর্তেই সে সংসারবৃক্ষের উচ্চ শাখায় 
অবস্থিত, হিরগ্নয়পু, আদি কবির সত্য ও পরিপূর্ণ, 
স্বরূপের অবাধ দর্শন লাভ করবে। 


মূল বিষয়ে সকল শান্তই অভেদ 


জগতের যাবতীয় ধর্ম্মশান্্র এ কথাই একবাক্যে 
ঘোষণা, করছে। হিন্দুর বেদ, মুসলমানের কোরাণ 
বৌদ্ধের ব্রিপিটক এবং খৃষ্টানের বাইবেলে এখানে 
মতভেদ নেই। কিস্তু কোন্‌ পথে অগ্রসর হলে 
এই চরমোম্নতি লাভ করা যায়, সে বিষয়ে মতভেদ 
১৫৪ | 


বেদান্ত ও ভক্তি 


আছে। ন্বর্গ ও স্থ্ষ্টির বর্ণনায় মুক্তি ও মানবাত্মার 
তত্কালীন অবস্থাবিষয়ে মতভেদ বিস্তর। কিন্তু মানব 
যে পূর্ণান্ত স্বরূপ হতে কিছুকালের জন্য এই 
আপাত অপূর্ণ স্বরূপে প্রতীয়মান হচ্ছে, এবং ধীরে 
ধীরে পুনরায় সেই পূর্ণানত্তের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, 
এ বিষয়ে সকলের একবাক্য। ভক্তি বল, যোগ বলঃ 
জ্ঞান বল, কর্ম বা নীতি বল, এ বিষয়ে সকলের এক- 
কথা। জগতের যাবতীয় পুরাণসকলও রূপকের পল্পবিত 
ভাষায় মানবকে এই কথাই উপদেশ করছে। দেশীয় 
পুরাণসমূহের কথা তো ছেড়েই দি, বিদেশী য়াহুদি 
পুরাণ বাইবেলেও আগেই বলছে- প্রথম মানব 
নিষ্পাপ, পরিপূর্ণ স্বরূপ হয়ে জন্মেছিল; ভগবানের 
আজ্ঞা অবহেলায় সেই স্বরূপ হতে চ্যুত হয়; আবার 
তার কৃপায় সেই স্বরূপ লাভ করবে। এখনও 
যাবতীয় যাহুদি নরনারী রামধনুর বিচিত্র আবরণে এই 
আশাগ্রদ কপাবাক্য ভক্তিগদগদ হয়ে পাঠ করে। 
দনিষ্পাপ হও, ভগবন্তক্তি বা জ্ঞানলাতে নিরঞজনতব লাভ 
কর” একথা ভক্তি বা জ্ঞানশান্ত্র উভয়েই একবাক্যে 
বলছে। “কাগ আমিকে পাকা করে লও? ইন্দ্রিয়" 
সংযম ও স্বার্থত্যাগ করে পরার্থ চেষ্টা কর; ভগবানে, 
অচল অটল বিশ্বাস ও নির্ভর রাখ” একথা ভক্তি ও 
১৫৫ 


নত, 


বলবে, কথার বিবা মিটলেও  মিটতে গারে। 
ভালবাদা ও সহা্থভৃতিতে -পরকে আপনার করে 
নিয়ে তার চক্ষে। তার ভাবে তার ধর্ম ও 
ভাষার অনুশীলনে, কথার বিবাদ একদিন মিটা সম্ভব । 
কিন্ত পথের বিবাদ যে অতি বিষম। উহা৷ মিটাবার 
উপায় কি! কেউ তো কারও পথ ছাড়বে না। 
আবার পথ ছাড়লেই বা তার ধর্মের উপায় কি? 
তার ধর্ম তো এককালে মিথ্যাই প্রতিপন্ন হয়। 
আবার একধর্মা মিথ্যা হলে অপর ধর্মসমূ যে সত্য, 
ভারই বা প্রমাণ কোথায়? পরিশেষে ধর্ম বৃদধানত্ীজনা 
মাত্র এবং নাস্তিকতাই শ্রেয় এই ধারগা .অনিবার্ধ্য 
হবে। রং 
না, পথের বিবাদ মিটবারও উপায় আছে। 
ভারতের পূর্বতন খষি ও আচীর্ধ্যপাদেরা এ বিষয়ের 
সুন্দর মীমাংসা করে গেছেন। ধর্দমজগতে তাদের 
দৃষ্টি যে, নামরপের বিদ্ব বাধা ভেদ করে যথার্থ 
সত্যে পরিপূর্ণ স্বরূপ দর্শনে সমর্থ হয়েছিল, এতেই 

১৫৬ 


ৃ বেদান্ত ও ভক্তি 
তা প্রতীয়মান হয়। ইহাই গাদের প্রাতন্মরবীয় 
উজ্জল গরিম!। ইহা ধর্মবীরপ্রসবিনী অবতারবহুল, 
পুখ্যভূমি ভারতের জাতীয় গৌরবের একমাত্র অত্ু্চ 
ধ্জ!। স্বদেশপ্রাপতা, সমাজবন্ধন, রাজনীতি, ব্যবহার- 
ব্যবস্থা, স্থাস্্যবিধান, গৃহরক্ষা, বাণিজ্য এবং যুদ্ধ- 
বিগ্রহাদি শিক্ষাসম্বদ্ধে আমাদিগকে অবনতমস্তকে ইয়ু- 
রোপ, আমেরিক৷ প্রভৃতি পাশ্চাত্য প্রদেশসমূহকে গুরু- 
স্থানীয় স্বীকার করতে হবে। কিন্তু আত্মা, পরলোক- 
বাদ, ধর্ম্মসমন্থয়, ধর্মপ্রাতা, গুরু ও ইষ্টনিষ্ঠা এ 
বিষয়ে আমাদের খধি ও আচার্্যগণ এখন এবং নিত্য- 
কাল জগতের পৃজ্য ও গুরুস্থানীয় থাকবেন; এখন 
এবং চিরকাল তাদের আশাপ্রদ, অমৃতময়ী ওপনিষদিক 
বাণী সর্ব্বদেশের নরনারীর চক্ষুপ্রান্ত হতে কামকাঞ্চনের 
যবনিক! উত্তোলন করে অভয় আনন্দন্বরূপকে দেখিয়ে 
দেবে। এখন এবং নিত্যকাল তাঁদের সেই পপ্ণ- 
মদঃ পূর্ণমিদং' গম্ভীর নিনাদ বিষয়ের কোলাম্ল স্তস্ভিত 
করে নরনারীর প্রাণমন মহাবেগে অনন্ত আনন্দের 
দ্বারে উত্তোলিত করবে এবং 'একং সদ্‌ বিপ্রা বনধা 
বদস্তি' রূপ তাদের ঘোষণা, বহুনাম ও বনুপথ 
যে, সর্বকাল সেই এক নিত্য বস্তর দিকেই প্রবাহিত 
হচ্ছে, চিরকাল এই শিক্ষা নরনারীকে প্রদান করতে এ 


১৫৭ 
১১ 


গীতাতত্ব 


বিবাদ মিটাবার উপায়, ধর্ম ও ইঠনিষ্ঠা 


একই গঙ্গা হিমাচলের নীহাররাশি ভেদ করে, শ্ঙ্গ 
হতে শূঙ্গাস্তরে, তথা হতে শস্তশ্টামল সমতল ক্ষেত্রে, 
বিছজনহিতায় বহুজনন্ুখায়' সাগর-সঙ্গমে প্রবাহিত । শত 
শত লোক শত শত তীর্ঘে সেই জলে স্নান পান সমাধা 
করছে। সকলে নিজ নিজ সন্নিকট তীর্ঘেই 
যাচ্ছে। এইবূপে বহুতীর্থ হলেও সকলে মে একই 
গাঙ্গং বারি' মনোহারি" স্পর্শে পবিত্র হচ্ছে। বনৃতীর্থ 
বলে তো বিবাদ হচ্ছে না। তবে ধর্দমরজগতে পথ 
নিয়েই বা এত বিবাদ কেন? পথ সকল “থা নদ্ভঃ 
স্তন্দমানাঃ সমুদ্রে সেই এক অখগুচিদানন্দসাগরে 
মিশছে। এজন্যই খাষিরা স্বধর্ম ও ইঠ্টনিষ্ঠার উপদেশ 
করেছেন । | 

মানুষের প্রকৃতি ও মন ভিন্ন ভিন্ন। গাছের একটি 
পাতা যেমন অপরটির সহিত মেলে না, হাসের একটি 
অঙ্গুলীর যেমন অপরটির সহিত বিশেযদৃষ্টিতে সাদৃস্ত 
পাওয়া, যায় না, সেইরূপ একটি মনের সহিত অপর 
একটি মনের সর্ধ্বিষয়ে সমতা নেই। প্রত্যেকটির জন্ম- 
জন্মান্তরীণ কম্দ্রজনিত সংস্কারোপযোগী বিভিন্ন গঠন ও 
আকার। কোন শরীর ও মনে পশুভাব, আবার 

১৫৮ 


বেদস্ত ও ভক্তি 


কোনটিতে বা দেবভাব প্রবল। কোনটি বা ত্রষ্ট তার- 
কার ম্যায় লক্ষ্যচ্যুত, কামকাঞ্চনের আকাশে ছুটোছুটি 
করছে; আবার কোনটি বা সমুদ্রগর্ভবিদারী পর্বব্ত- 
পুর্জের স্ায় বিষয়ের উত্তাল তরঙ্গকুলের ঘন. ঘন ঘাত, 
অচল অটল ভাবে অকাতরে সহনে সক্ষম । এই অদ্ভুত 
বিচিত্রতাভূষণ ভিন্ন ভিন্ন মানবের কখন কি এক ধর্ম 
উপযোগী হতে পারে? রুগ্ন ও সবলকায় সকল 
বালকবালিকার জন্য মাতা কি কখন একই খাগ্যের 
বাবস্থা করতে পারেন? শিশু ও যুবার জন্য কখন 
কি সমপরিমাণ বন্ত্রাবউরণ সম্ভবে ? অথচ ধর্্মজগতে কি 
এতদিন ঠিক তদ্রপ চেষ্টাই হয়ে আসছে না? 
খৃষ্টান পাদরি বলছেন, আমার ঈশাহি ধর্ম তোমার 
মনের উপযোগী হোক আর নাই হোক, গ্রহণ না 
করলেই তোমার অনন্ত নরক। মুসলমান বলছেন, 
আল্লা নামের উপাসনা ও নিরাকার ঈশ্বরে দাসভাবে 
ভক্তি তজনা না করলে তোমার এ পৃথিবীতেই বেঁচে 
থাকবার প্রয়োজন নেই, দেহাস্তে স্বর্গলংভ তো বন্থ 
দুরের কথা । জৈন, বৌদ্ধ, শৈব, শাক্ত দকলেরই এই 
এক কথা। সকলেই বলছেন, আমার ধন্মে সকলকে 
দীক্ষিত হতে হবে।. আমার ধর্ম আমার মনের 
উপযোগী, অতএব সকল মনের উপযোগী, হতেই 
১৫৯ 


গীতাতত্ব 


হবে। এই তুমুল কোলাহলের ভেতর দিয়ে আর্ধ্য খষির 
গম্ভীর অন্তঃসারপূর্ণ বাণী আকাশপথে উথিত হয়ে 
শঙ্গ হইতে শূঙ্গান্তরে প্রতিধ্বনিত হতে লাগল-_বধর্্ 
পরিত্যাগ করো না। আপন আপন প্রকৃতি উপযোগী 
ধর্ম দোষযুক্ত হলেও ছেড়ে না, জগতে সকল 
গুণ দোষমিশ্রিত। “মন মুখ এক করে চেষ্ট 
করলে সকল মতেই আনন্দশ্বরূপকে ধরা যায়। 
সকলেই সমভাবে মেই অমৃতের অধিকারী ।” সসাগরা 
ধরা স্তম্তিত হয়ে সে আনন্দধ্বনি শুনতে লাগল। 
কিন্তু সে মুহূর্তমাত্র। পরক্ষণেই আবার সেই অসার 
পথ নিয়ে সকলে বিবাদে নিবিষ্ট হল। 


' ধরমাধর্মর পরীক্ষা_নিস্বার্থত। 


বাস্তবিক স্বধন্মম ও ইট্টনিষ্ঠ। ঠিক ঠিক ধন্মলাভের 
ও ধন্ম'জগতে বিবাদ মেটাবার একমাত্র সেতু । অখণ্ড 
স্বরূপের অনন্ত ভাব, অনন্ত কোটি মানবমনের, উপযোগী 
হয়ে রয়েছে। মানব কট! ভাবই বা তার গ্রহণ 
করতে, পেরেছে? নাস্তিকতা, অবিশ্বাস প্রভৃতি 
কেন মানবমনে শ্রেয় বলে বোধ হয়? জগতে 
যত প্রকার ধন্ম অষ্ঠাবধি প্রচলিত হয়েছে, যত প্রকার 
ভাবে « মানুষ ভগবানের উপাসনা করেছে, তার 

১৬৪৫ 


বেদান্ত ও ভক্তি 


কোনটিও সম্পূর্ণভাবে প্রাণের পিপাসা মেটাতে না 
পারলেই লোকে নাস্তিক, সংশয়াত্মা হয়ে থাকে। 
আরও লক্ষ লক্ষ নূতন ধর্ম জগতে উপস্থিত হোক না 
কেন, মঙ্গল বৈ অমঙ্গল হবে না। আজ যারা 
'শয় সন্দেহ নিয়ে মৃত্যুমুখে অগ্রসর হচ্ছে, তাদের 
শত শত লোক সেই সকল নূতন পথে তাদের মনের 
উপযোগী ধন্ম ও শাস্তিলাভ করে কৃতার্থ হবে। 
তোমার প্রকৃতি উপযোগী ধর্ম তুমি গ্রহণ কর, আমাকেও 
আমার প্রকৃতি উপযোগী ধর্ম নিতে দাও। বলবে, 
তবে তো লম্পট চোরও বলতে পারে, 'আমাদের 
প্রকৃতি উপযোগী ধর্ম আমাদের করতে দাও। তা 
হলে সমাজের স্বাস্থ্য ও শাস্তি থাকে কোথায়? 
তারও উপায় আছে। ধর্ম ও অধর্্ম পরীক্ষা 
করবার একমাত্র কষ্টিপাথর আছে--তাহা নি'স্বার্থতা। 

যেখানে যত স্বার্থ যত আপন শরীর মন অপরের 
ব্যয়ে স্বখে রাখবার চেষ্টা, সেখানে তত আধার, তত 
অধর্ম। আর যেখানে যত পরার্থ চেষ্টা, আপন 
শরীর মনের ব্যয়ে অপর কাউকে সুখী করবার 
উদ্ম, সেখানে তত আলোক ও ধর্ম! অতঃপর 
্বার্থজীবন দু্ৃতকারীদের আর ওকথা বলবার পথ 
কোথায়? এই নিস্বার্থতাই যে সমস্ত নীভিগান্ত্রে 


১৬১ 


গীতাতত্ব 


ভিত্বি, একটু ভেবে দেখলেই দে কথা বুঝিতে 
পারা যায়। এই নিঃস্বার্থতার. ধীর বিকাশেই মানব 
উচ্ছৃঙ্খলতা হতে নিয়মবন্ধনে এবং তার পূর্ণতায় 
নিয়মাতীত পরমহংস অবস্থায় উপনীত হচ্ছে । আবার 
প্রত্যেক ব্যক্তির ন্যায় বাক্তিসমন্টি সমাজ ও সমাজসমহি 
্রন্ধা্ও এই নিয়মে উন্নতির পরাকাষ্ঠার দিকে 


ছুটেছে। 
সমাজের আদর্শ 


নিয়মের সম্পূর্ণ অভাব হতে নিয়ম এসে ব্যক্তি ও 
সমাজমন অধিকার করছে এবং নিয়মের পূর্ণ 
আবার নিয়মাতীত অবস্থায় তাদের উত্তোলন 
করে শৈশবের বিবেকরহিত মুঢ়তাকে বার্ধক্যের বু- 
দরশিতা এবং পরিশেষে যোগীর সংযমসহজাবস্থায় 
পরিণত করছে। সেরূপ অনীতি, নীতি ও নীতির 
অতীতাবস্থারূপ সোপানপরম্পরায় ব্যক্তি ও প্রমাজমন 
ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে। বলতে পার, যুগারস্ত 
হতে পুথিবীতে কিয়ংসংখ্যক ব্যক্তি ভিন্ন এখনও 
এমন কোনও একটি সমাজ দেখা যায়নি, যাতে 
সমাজাঙ্গ সমস্ত ব্যক্তিই এই আদর্শ অবস্থায় উপনীত 
হয়েছে উত্তরে বলা যেতে পারে, মস্তক, হস্ত, 

১৬২ 


বেদান্ত ও ভক্তি 


পদাদির সমষ্টিতে যেমন এক সম্পুর্ণ ব্যক্তি, সেইরূপ 
ব্যক্তিমমূহের সমষ্টি সমাজকেও এক সুমহান্‌ শরীর ও 
মনবিশিষ্ট ব্যক্তিবিশেষ বিবেচনা করা. যেতে পারে। 
একটি যে নিয়মে চালিত ও পুষ্ট হয়ে উন্নত হতে 
থাকে, অপরটিও ঠিক সেই নিয়মে পুষ্ট ও বদ্ধিত 
হয়। একটিকে যদি এই পরিপূর্ণ আদর্শ অবস্থায় উপনীত 
হতে দেখে থাক, অপরটিও কালে সেই অবস্থায় 
এসে দড়াবে। একথা কি এতই অসম্ভব বলে 
বোধ হয়? সমাজের এই আদর্শ অবস্থা সকল কালেই 
চিন্তাশীল মনীষিগণ কল্পনায় চিত্রিত করেছেন। 
একেই সত্যকাল, স্বর্ণযুগ প্রভৃতি শব্দে অভিহিত 
করেছেন। পাশ্চাত্য ক্রমবিকাশবাদী পণ্ডিত হারবাট 
স্পেন্সর, লে কণ্ট, ফিক্ক প্রমুখেরাও এটা বিজ্ঞানবিরোধী 
বা অযুক্তিকর বলে স্বীকার করেন না। 


জ্ঞান ও ভক্তির লক্ষ) এবং ইইঁ-নিষ্ঠ। 


জ্ঞান ও ভক্তির ছুটি পথমাত্র। একটি “মাইহং 

সোহহং' এবং অপরটি “নাহং নাহং) করে মানবকে 

সত্ম্বরপে পৌঁছিয়ে দিচ্ছে। লক্ষ্য বস্ত যতদিন 

না লাভ হয়, ততদিন সাধকের নিকট উভয় পথ 

এবং পথের লক্ষ্যও ভিন্ন ভিন্ন বলে গ্রাতীত্ব হয়ে 
১৬৩ পু 


গীতাতত্ 


থাকে। কিন্তু উদ্দেশ্য সিদ্ধ হলেই আর সাধকের 
নিকট সে ভিন্নতা প্রতীত হয়,না। তার বিশদ সাক্ষ্য 
বেদের “তত্বমসি? ন্ুফীর “আনলহক্‌' ও খৃষ্টের 'আমি 
ও আমার পিতা এক। তার উজ্জ্র্প প্রমাণ 
ভক্তিপ্রাণ ব্রজগোপিকাদের ভক্তির উন্মত্ততায় শারদোং- 
ফুলপমল্লিকারজনীতে গহনকুঞ্জে শ্রীকৃষ্ণের লীলাভিনয়। 
তবে পথিক সাধকের আপন পথে নিষ্ঠা রাখ! 
আবশ্যক. বাতাত্মজ, বীরাগ্রণী শ্ত্রীরামদুতের ন্যায় 
তার প্রাণ যেন নিরস্তর বলে, 
শ্রীনাথে জানকীনাথে অভেদ: পরমাত্মনি। 
তথাপি মম সর্ববস্থো রামঃ কমললোচনঃ ॥ 
জানি আমি, সেই এক পরমাত্মাই শ্রীনাথ ও 
জানকীনাথ উভয় রূপে প্রকাশিত, তথাপি কমললোচন 
রামই আমার সর্ববন্ব ধন। পরমহংসদেব তার সেই 
মধুর ভাষায় বলতেন, ইষ্টনিষ্ঠা যেন গাছের গোড়ায় 
বেড়া দেওয়ার মত। ছোট গাছের গোড়া বেড়া না 
দিলে, লোকে মাড়িয়ে ফেলে; ছাগল গরুতে মুড়িয়ে 
খায়। .সেই জন্য বেড়ার বিশেষ প্রয়োজন। কিন্তু গাছ 
বড় হয়ে গুঁড়ি বাধলে আর বেড়ার দরকার নেই। 
তখন দে গাছের গুড়িতে হাতি বেঁধে রাখলেও আর 
তার কিছুই অপকার হয় না|” 
রর ১৬৪ 


বেদান্ত ও ভক্তি 


বেদান্ত কি ভগবানলাভের একটি পথ মাত্র 


তবে কি “বেদাস্ত' ভগবান লাভের ভিন্ন ভিন্ন পথের 
একটি পথমাত্র 1 “হা' এবং “না উভয়ই বটে। জন- 
সমাজে, এমন কি, পণ্ডিতসমাজেও একটা ধারণা 
হয়েছে, বেদান্ত ও অছৈভবাদ একই কথা । 'সোইহং 
সোইহং করে সেই ছ্বৈতাছৈতের অতীত সত্যলাভ 
করবার পথমাত্র বেদাস্ত। একথা কিয়ং পরিমাণে সত্য 
হলেও সম্পূর্ণ সত্য নয়। বেদান্ত" অর্থে যদি বেদের 
শেষ উপনিষদ্ভাগই বোঝা যায়, তা হলেও তো 
সেই ভাগে, দ্বৈত, বিশিষ্টাদ্বৈত এবং অদৈত এ তিন 
মতের উপযোগী বচনপরম্পরা দেখতে পাওয়া যায়। 
অধিকারিভেদে উপদেশ করে বিশেষ বিশেষ স্থানে 
বেদ তো এ তিন মতেরই প্রাধান্য স্থাপ' করেছেন 
দেখা যায়। আবার বেদান্ত, অর্থে যদি বেদের সার 
কথা বুঝতে হয়, তা হলে অদ্বৈতজ্ঞানেনও পারে 
অবস্থিত বস্ত্রকে লক্ষ্য করে বেদ অছৈত মতই কেবল 
প্রচার করেছেন একথা বলায় বেদে অমম্পূর্ণতা দোষ 
উপস্থিত হয়। তবে এর মীমাংসা কোথায়? মীমাংসা 
ঠিক এইখানে । বেদ বাকামনের অতীত বস্তই উপদেশ 
করেছেন। কিন্তু আধ্যাত্মিক উন্নতির তারতম্যে 

১৬৫ 


গীতাতন্ব 


মন্ষ্টের দ্বৈত, বিশিষ্টাদৈত ও অদ্বৈত মত ক্রমশ: 
এসে উপস্থিত হয় এবং এই সোপানপরম্পরা অবলম্বন 
করে মানব কালে সেই পরিপূর্ণ আনন্দস্বরূপের 
উপলব্ধি করে। সোপানের প্রত্যেক অঙ্গটিই আবশ্তাকীয়। 
একটি না থাকলে অপরটিতে উঠা যায় না। সেইরূপ 
এ তিনটি মতই পরস্পরের সহায়-_অবস্থাভেদে মানবের 
স্বয়ং এসে উপস্থিত হয়। দেশকালের সীমার মধ্যে 
নাম রূপের রাজতে প্রাপ্ত যত কিছু সত্োর ন্যায় এই 
মতত্রয়ও অবস্থাভেদে সমান সত্য বলে প্রতীত হয়। 
এ তিন মতই বেদান্তের অন্তভূতি। জগতের যাবতীয় 
ধর্ম কি প্রণালীতে মানুষকে ধীরে ধীরে নামরূপের 
পারে নিষ্ে উন্নতির চরম সোপানে পরম সত্য দর্শন ও 
উপলদ্ধি করাচ্ছে_সেই প্রণালীনির্টেশই বেদের 
সার কথা এবং তা-ই বেদাস্ত। এজন্তই বেদ ও 
বেদাস্তজ্ঞান, কোন বিশেষ পথ বা বিশেষ মত নয়; 
কিন্তু সমস্ত মতের-_সমস্ত ধর্মের সারভৃত রপ্ত। এই 
জন্যই বেদান্ত সার্ব্ভৌমিক দর্শন বলে সকলের শীর্ষ- 
স্থানীয় হয়েছে, এবং ধর্মের প্রথম অঙ্কুর হতে শেষ 
পর্য্যন্ত উন্নতি-প্রণালী নির্দিষ্ট থাকায় বেদ 'পুরুষ- 
নিশ্বসিতম্-_-ভগবানের সহিত নিত্যকাল বর্তমান ইত্যাদি 


হয়ে ছিন্দুর চক্ষে নিত্যকাল মাননীয় হয়ে রয়েছে । 
১৬৬ 


বেদান্ত ও ভক্তি 
জ্ঞান ছাড়লে ধর্মলাভ হয় না 


বেদাস্তের আর একটি কথা-জ্ঞান ছাড়লে ধর্দ- 
লাভ হবে না। ভক্তিশান্ত্রে অহেতুকী ভক্তিই প্রধান 
ও উদ্দেশ্য বলে বর্ণিত থাকলেও জ্ঞান-মিশ্রা ভক্তিই 
যে তা লাভের উপায়, একথা পুনঃ পুনঃ বল! হয়েছে। 
ভক্তির প্রধানাচাধ্য-প্রযুখেরাও একথা বুঝিয়ে গিয়েছেন । 
চৈতন্তাদেবও গোদাবরী তীরে রায় রামানন্দের সহিত 
কথোপকথনের সময় একথা স্বীকার করেছেন। কিন্তু 
আজকাল অনেকেই জ্ঞানকে উপেক্ষা করে একেবারে 
অহেতুকী ভক্তিলাভ করতে প্রয়াসী হন। বলা বাহুলা 
যে, ইহা তাদের বাতুলের চেষ্টার ন্যায় কখনই অতীষ্ট 
ফল প্রদান করবে না। 


উপসংহার--আচার্ধ্যদেবের উপদেশ 


পরিশেষে সেই গঙ্গাবারিবিধৌত বিশাল উদ্যানে 
“সৌম্যাৎ সৌম্যতরা” “শবশিবারা' মৃত্তির তশয় সেবক, 
সেই মাধবীহারগ্রথিত চিরপরিণীত অশ্ব-বটের নিবিড় 
আলিঙ্গননিবদ্ধ পঞ্চবটীতলস্থ তপস্তাজাগ্রত সাধনকুটারে 


ধানশীল বাল-স্বভাব, সরলতা মাধুর্য ও তেজের অপূর্বব 
সম্মিলন আচার্ধ্যদেব, ধার উপদেশের প্রতিপংক্তিতে 


বেদ বেদান্ত, দর্শনের নিগৃঢ় ও জটিল সত্য সকল 
১৬৭ 


গীতাতত 

জীবস্ত ও জবলম্ত হয়ে হৃদয়ের সংশয় ছিন্ন করে 
স্থকুমারমতি বালকেরও মন্মস্থল স্পর্শ করত-__তারই 
ছু চারটি কথা ম্মরণ করে আমরা আজ উপসংহার 


করি। 
“ভক্ত হবি, কিন্তু তা বলে বোকা হবি কেন? 


বোকা হলেই কি ভগবানে বেশী ভক্তি হবে ?” 
“ভক্ত হোস্‌, কিন্তু গোড়া বা একঘেয়ে হোস্নি। 


একঘেয়ে হওয়া অতি হীনবুদ্ধির কাজ ।” 
“ঘত মত তত পথ। আপনার মতে নিষ্ঠা রাখিস্‌, 


কিন্তু অপরের মতের দ্বেষ বা নিন্দা করিস্‌ না।” 


১৬৮ 


অষ্টম অধ্যায় 
সাধন! ও সিদ্ধি 


( কোন্নগর হরিসভায় প্রদত্ত বক্তৃতার সারাংশ ) 


আমরা একটু স্থির চিত্তে আলোচনা! করলে দেখতে 
পাই যে, সমস্ত শান্ত্রই এক কথা ও একই লক্ষ্য বলেছে। 
সব শাস্ত্রে একই কথা বটে, তবু একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে 
বল্লে লোকের রুচিকর হয়। সাধন! ও সিদ্ধি সম্বন্ধে সেই 
শান্ত্রেরই ছু চারটি কথা আজ আমরা একটু অন্যভাবে 
আলোচনা করব। সাধারণতঃ লোকে বলে, “যেমন 
সাধন, তেমন সিদ্ধি” শান্ত্রেও আছে, 'যাদুশী ভাবনা 
যস্ত সিদ্ধির্ভবতি তাদৃশী ।' যার যেমন ভাবনা, তার তেমনি 
সিদ্ধি হয়। সাধন! ও সিদ্ধির মধ্যে কার্যকারণগত নিত্য 
সম্বন্ধ সর্ববদ! বর্তমান। যিনি যে বিষয়ে চেষ্টা করবেন, 
তিনি তাতেই সিদ্ধ 'হবেন। আমাদের ধর্ম, বক্তৃতা, 
অধ্যয়ন ও অধ্যাপনার জিনিষ নয়; অনুভূতির জিনিষ। 
অধিকারিভেদে ও মনের অবস্থান্থুসারে সাধন প্রণালী 
অনেক হতে পারে এবং এইটিই ধর্মরাজ্যে নানা সম্প্রদায় 


হওয়ার কারণ। ৪ 
১৬৯ 


গীভাতন্ব 

আমাদের দেশে যত ধর্মসম্প্রদায় আছে, তাদিগকে 
বিশ্লেষণ করে দেখলে চার ভাগে বিভক্ত করা যেতে 
পারে। যথা- জ্ঞানী, কন্মী, ভক্ত ও যোগী। ধারা 
সমস্ত বিষয় ও বিষয়-বাসনা পরিত্যাগ করে কেবল 
আত্মাতেই সন্তুষ্ট থাকেন, তারা জ্ঞানপথ অবলম্বন করেন। 
আর ধারা সংসারে বিষয় ও বৈষয়িক কর্মের মধ্যে থেকে 
নিজেদের অল্প শক্তি প্রত্যক্ষ করে সর্বশক্তিমান 
ভগবানের শরণাপন্ন হন, তার! ভক্তু। ীরা কণ্ম করেন, 
তার! কম্মী। আর এক দল লোক আছেন, ধারা একাগ্রতা 
সহায়ে মনের অন্তস্তল পধ্যন্ত তন্ন তন্ন অনুসন্ধান করে 
সমস্ত বাসনাবীজ দুর করে দিতে চেষ্টা করেন, 
তার? যোগী। 

আমাদের বাংলা দেশে ভক্তির চ্চাই অধিক। 
অন্যগুলি আমরা বুঝি না । আমরা নিজেদের অত্যন্ত দুর্বল 
মনে করে থাকি, এটি আমাদের মহাদোষ । নিজেকে 
যতই দুর্ববল ও পাগী মনে করব ততই মরা হুর্ববল 
হতে থাকৃব। অহঙ্কার যেমন লোকের পত্তনের কারণ 
হয়, সেরূপ “আমি ছূর্বল, আমি পাপী” এ বিশ্বাসও 
মানবকে ধীরে ধীরে উত্থানশক্তিরহিত করে উন্নতি পথের 
অস্তুরায় হয় ; অতএব ছুটিই পরিত্যজ্য, একথা পরমহংস- 
দেব, বল্তেন। কোন সময়ে তাকে একখানা বাইবেল 

১৭০ 


সাধনা ও সিদ্ধি 
পড়ে শুনান হয়েছিল। তাতে প্রথম হতেই কেবল পাপ- 
বাদের কথা । কতকটা শুনে ওতে কেবল পাপের কথা 
দেখে আর শুন্তে অস্বীকার করলেন; তিনি বল্তেন, 
“যেমন সাপে কামড়ালে বার বার, বিষ নেই, বিষ নেই 
বলে রোগীর বিশ্বাস জন্মাতে পারলে সত্যই বিষ থাকে 
না, সেই রকম আমি ভগবানের নাম নিইছি, আমার 
পাপ নেই, বার বার একথা আপনাকে বলতে বলতে 
সত্যই পাপ থাকে না।” “আমি পাপী, আমি দুর্বল” 
এরূপ ভাব আমাদের ভেতর থেকে যত যাবে, ততই 
ভাল। সকল মানুষের মধ্যেই সর্বশক্তিমান ভগবান 
বি্কমান। আমরা ভগবানের অংশ, ভগবানের ছেলে, 
আমরা আবার ছূর্ববল? সেই অনন্ত শক্তিমান ভগবান 
থেকে আমাদের শক্তি আসছে, আমরা আবার পাগী!? 
অত এব সর্বাপেক্ষা অধিক পাপ হচ্ছে, নিজেকে পাপী-ও 
ছুর্বল মনে করা। এ অবিশ্বাসী নাস্তিকের কাজ। 
তোমর! তার ছেলে, তার অংশ, তার অনস্ত শক্তি ও 
অপার আনন্দের অধিকারী । বিশ্বাস কর যে, তোমার 
শরীর ও মন হচ্ছে পবিত্র দেবমন্দির, যেখানে শুদ্ধ-বদ্ধ-মুক্ত- 
স্বভাব ভগবান চিরপ্রতিষিত! বিশ্বাস কর যে, প্রত্যেক 
নর নারীর মধ্যে তিনি, বৃক্ষলতায় তিনি-_জড়চেতনে 

১৭১ 


গীতাতত্ব 
তিনি, সমগ্র ব্রন্মাণ্ডে তিনি ভিন্ন আর কেউ নেই 
আকাশের নীলিমায়, সমুদ্রের তরঙ্গভঙ্গে, নারীর মুখ 
চ্ছায়ায়, বালকের সরলতায়, শ্বাশানের করালতায় এব 
যোগীর নিষ্পন্দতায় তারই প্রকাশ দেখতে চেষ্টা কর 
এই চেষ্টাই যে এক প্রকার সাধন । 

গীতার ১০ম অধ্যায়ে আমরা এই ভাবটি স্পষ্ট দেখে 
পাই। অঞ্জন ভগবানকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে 
ইন্জ্িয়াদি কামকাঞ্চমোহিত, তাদের আকর্ষণে মান্থ্‌ 
রূপরসাদির পশ্চাৎ গমন করছে, অথচ আমরণ মানবহে 
জগতের ব্যাপার নিয়েই থাকতে হবে; অতএব তা; 
বাঁচবার উপায় কি? ভগবান উত্তর করেন__ 

* যদ্‌ যদ্িভূতিমত সত্বং শ্রীমদূজ্জিতমেব বা। 

তত্তদেবাবগচ্ছ ত্বং মম তেজোইংশসম্ভবম্‌ ॥ 

যা কিছু শ্রেষ্ঠ ও সুন্দর, তা আমারই তেজের 
অংশ। চন্দ্র, কূর্যয, পশু, পক্ষী ও জগদ্বিমোহ্িনী স্ত্রী 
মৃত্তিতে যা কিছু সৌন্দর্য্য দেখতে পাও. পমস্তই তার 
তেজের অংশ । তাঁর জ্যোতি এই সকল যুত্তির মধ্য দিয়ে 
প্রকাশ হচ্ছে। মানুষ বাস্তবিক এদের প্রকৃত স্বরূপ 
অবধারণ করতে পারে না বলেই বিষয়ে আকৃষ্ট হচ্ছে । 
ভগবান গীতায় আবার বলছেন, | 


৬ 


১৭২ 


সাধনা ও সিদ্ধি 


অথব! বছুনৈতেন কিং জ্ঞাতেম তরার্জুন। 
বি্টভ্যাহমিদং কৃস্সমেকাংশেন স্থিতো! জগৎ ॥ 
' বলব, আমিই একাংশে এই ত্রন্ধাণ্ড হয়ে রয়েছি। 
ভগবান শ্রীকষ্ণের এই অমৃতময়ী বাধীই কি আমাদের 
বলছে না যে, আপনাকে এবং অপরকে পাগী বলে 
ধারণা করতে নেই? এতেই কি আমাদের শেখাচ্ছে না 
যে, মানুষকে দেবতা। বলে, ভগবানের সাক্ষাৎ মৃ্ধি 
বলে ধারণা কর? নিজেরা এইটি শেখ এবং সন্তান- 
সন্ততি ও প্রতিবেশী সকলকে শেখাও। আমরা মুখে 
বলছি এক, কাজে করছি আর এক। 'মন মুখ এক 
না করতে পারলে সমস্ত রাত্রি হরি হরিই কর অথবা 
সমিতিই কর, কিছুতেই কিছু হবে না। এই ত দেখছি, 
ঘরে ঘরে হরিসভার ধুম অথচ কিছু দিন পরে আর কেউ 
আসতে চায় না। 
এর কারণ কি? কারণ এই, আমাদের মন মুখ এক 
নেই। ধর্থের প্রথম সাধন হচ্ছে, মন মুখ এক করা। 
পরমহংসদেব বলতেন, “মন মুখ এক করাই প্রধান 
_সাধন।” মন মুখ এক করেছে, এরূপ লোক কোথায়? 
হাজারটা খুঁজলে কটা পাওয়া যায়? প্রত্যেক কাজেই 
দেখছি মনে এক, মুখে আর । অতি সামান্ত একটি, কাজ 


১৭৩ 
১২ 


খ্বীাতদ্ব 


করতে পারিনি, বড় কাজ করতে দৌড়ুই। সম্মুখে 
পিপাসার্তকে একটু জল দিতে প্রারিনি, অথচ সমিতি 
করতে স্বকলকে হুরিপ্রেমে মাতোয়ারা অগ্রবা সমস্ত 
অভাব দূর করে দ্বেশোদ্ধার করতে যাই। মন ও 
মুখের বিপরীত গতির দৃষ্টান্ত দেখুন। চণ্ীতে আছে,_ 
বিষ্তাঃ সমস্তাত্তব দেবি ভেদা; স্িয়ঃ সমস্তাঃ সকলা 
জগতন্। 
হে দেবি! যত কিছু বিষ্ভা আছে, তা তোমারই 
শক্তির প্রকাশ মাত্র, আর জগতের যত স্্ীমৃদ্ধি আছে, 
তোমারই মৃত্তি। আমরা সকলে চণ্ডী পাঠ করছি 
কিন্তু আমাদের মধো কজন আছেন, যিনি স্ত্রী- 
লোককে* দেবীর প্রতিমা বলে দেখছেন? কত লোক 
এক দিকে চণ্বী পাঠ করেন, আবার পাঠাস্তে সামাস্ 
কারণে স্ত্রীকে প্রহার পর্যাস্ত করতে সঙ্কুচিত হন না। 
স্ত্রীলোককে দেবীর মৃত্তি বলে সন্মান ও পৃভ্রা করার 
পরিবর্তে তাদের সন্তান প্রসব ও রন্ধনাদি করকার যন্র- 
বিশেষ মাত্র ধারণা করে রেখেছেন। ও 
বৈদিক্ষ যুগে কত স্ত্রীলোক খধি ছিলেন। বৃহদা- 
রণ্ক উপনিষদ্ধে দেখতে পাই, জনক রাজার সভায় 
গার্গী নায়ী জনৈকা সন্মযািনী মহষি যাজ্জবহ্যরে ধর্ম 
সম্বদ্ধীষষ কত গভীর প্রশ্ন করছেন। লীলা, খনা 


১৭৪ 


সাধনা ও ষিদ্ধি 


প্রভৃতি আরও কত বিদুষী স্ত্রীর কথ! আমাদের সকলেরই 
জানা আছে। | 
অগ্ দিনের কথা, অহল্যাবাঈ-এর অন্ভুত জীবন 
অনেকেই জানেন । তিনি নিজেই রাজ্য শামন করতেন। 
প্রত্যেক বড় বড় তীর্থে তার কান্তি অগ্াগি বর্তমান। 
এমন কি, পাহাড়ের বিজন প্রদেশে পর্ধ্যস্ত ভীর্ঘযাত্রীদের 
স্থরিধার জন্য তার নির্মিত রাস্তা অগ্ঠাপি তার পরিচয় 
দিচ্ছে। যাদের মধ্যে জগজ্জননীর অপূর্বর শক্তি নিহিত 
তাদের আমরা দাসী মার করে রেখেছি! কেবল 
পুজাদির সময় ছুই এক বার বলে থাকি মাত্র যে, সমস্ত 
স্্রীলাকই মা ভগবতীর মৃত্তি !/ 
আরও দেখুন, আমাদের শাস্ত্রে আছে এবং আমরা 
বলেও থাকি যে, সরল মানুষই নারায়ণের মৃত্তি। 
কিন্তু কার্ধ্যতঃ কি করি? একজন মেথর বা নীচজাতীয় 
বাক্তিকে দেখলে মমনি তাকে ছাগল্গ গরু অপেক্ষাও 
দ্বণা করতে সন্কুচিত হই না। মানুতঘর ছেয়ে গরুর 
সম্মান যারা অধিক করে থাকে, তাদের বুদ্ধি ধারণা 
আর কত দুর অগ্রসর হবে? শাস্ত্রে বিশ্বাস করলে, 
আমাদের কর্তবা, নিষ্জেকে কখনও ছূর্ধবল মনে ন৷ করা 
এবং অপরকে নারায়ণ জ্ঞানে পূজা করা । আমাদের ভাব! 
উচিত য়ে, আমর! ঠার অংশ তার ছেলে ; আমাদের এই 
১৭৫ 


শরীর এবং সমস্ত শরীরই তার মন্দির। যেমন হিমালয় 
থেকে গঙ্গার সমস্ত জলরাি আসছে তেমনি সর্ব্ষশক্তিমান 
ভগবান থেকে আমাদের বমস্ত শক্তি আদছে। এইটি দৃঢ় 
বিশ্বাস থাকলে ক্রমে উঠতে পারব। ছা 
জ্ঞানের চর্চা হয়েছে, সেখানেই লো; বুষেছে যে, 
মানুষের মধ্যে অনন্ত শক্তি র অনেক সময় 





মানুষ হলে টাকা যে তার পায়ের কাছে পনি এদে 
পড়বে। টাকায় কখনও মানুষ করে না, কিঃ মানুষই 
টাকা উপার্জন করে। আজ থেকে সমস্ত বু্বলতা 
ফেলে দিয়ে মানুষ হতে চেষ্টা কর। নিজে; ছুর্ব্বল 
ভাব্‌লে অন্তর্নিহিত ভগবংশক্তি বিকাশ না হত সঙ্কুচিত 
হয়ে যাবে। বিশ্বাস কর যে, তোমাদের মধ্যে অনন্ত 
শক্তি রয়েছে, স্ুকর্ণা ও সুচিন্তা দ্বারা সেই শক্তির 
বিকাশ.কর। 

অতএব আমাদের প্রথম সাধন, নিজেকে ছুরর্বল না 
ভাব! এবং সর্বপ্রকার দুর্বলতার হাত থেকে আপনাকে 
সর্বতোভাবে রক্ষা করা। দ্বিতীয় সাধন, মন মুখ এক 

১৭৬ 


সাধনা ও সিদ্ধি 
করা। গ্বীতায়ও বিশেষ বিশেষ অধিকারীর জগ্ বিশেষ 
বিশেষ সাধনার উপদেশ কর্বার . পূর্বে সর্ধবাবন্থায় 
সকলেরই প্রয়োজনীয় এই ছুই সাধনার উপদেশ দেখতে 
পাই। 
ুদ্ক্ষেত্রে বিপক্ষ সৈন্যদলে ধীর স্বজন ও রর 
স্বোণ প্রভৃতি প্রতিদন্্ী দেখে অঞ্জুনের মনে যুগপৎ 
শোঁক, ছঃখ, মোহ ও ভয় উপস্থিত হয়েছিল। কিন্ত 
ভয় মোহ প্রভৃতি ভাব লুকিয়ে ্রীক্ককে বলছেন" 
যে, সামান্য রাজোর জন্য আত্মীয় স্বজনদিগকে হিংসা 
করা অপেক্ষা ভিক্ষান্নে জীবন ধারণও শ্রেয়। পূর্বে 
কষত্রিয়ধন্মানুসারে অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে কর্তব্য- 
বোধে যুদ্ধ করতে এসেছিলেন) কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে 
আত্মীয় স্বজন ও মহাবীরগণকে প্রতিদন্বী দেখে মোহ 
ও ভয় বশত; সেই কর্বব্য ভুলে গিয়ে মুখে ধর্ণ 
ভানে নান! প্রকার অসস্বদ্ধ. বাক্য বলছেন। কিন্ত 
কার কাছে মনের ভাব লুকুবেন? ভগবান জর্্যামী। 
তিনি বল্লেন, 
ক্ৈবাং মান্ম গমঃ পার্থ নৈততবয্যুপপদ্ভতে । 
রং হাদ়দৌর্বল্যং ত্যক্যোতিষ্ঠ পরস্তপ। 
হে অর্জন! তোমার মত লোকের ত এন্সপ 
দুর্বলতা সাজে না। তুমি স্থাদয়ের ছূর্বধলত] ত্যাগ 
১৭৭ 


শীঙাতন্ 
করে ওঠ।? দুর্বলতা হতে যত নীচতা আমে; 
ইহাই পাপের খনি। কেবল অর্থকরী বিষ্তা দ্বার! কি 
ইবে? যাতে আবালবৃদ্ধবনিতার শরীর ও মন সবল 
হয় তার যত্ব করাই প্রকৃত শিক্ষা । 

ূর্ব্বেট বলেছি যে, ধর্শালাভ কর্বার চারটি পন্থা। 
বিচার করে দেখলে দেখা যায় যে, এই চারটি 
মানবকে এক স্থানেই নিয়ে যায়। বেদ, পুরাণ, তত্ব 
প্রভৃতি পড়লে ইহাই দেখা যায় যে, উদ্দেশ্য এক, কিন্ত 
উহা লাভ করবার নান! পথ এবং যত পথ, তত মত। 
আমাদের প্রতিদিন পাঠ্য মহিয়স্তবে এই ভাব গ্লোকে 
নিবদ্ধ আছে। 

ত্রয়ী সাঞ্খ্যং যোগ? পশুপতিমতং বৈষণবমিডি 

প্রভিনে প্রস্থানে পরমিদমদঃ পথ্যমিতি চ। 

রুচীনাং বৈচিত্রাধুভুকুটিলনানাপৎজুষাং 

বুামেকো গম্যস্বমসি পয়সামর্ণব ইব॥ ৃ 

“হে ভগবান ! বেদ, সাংখা, যোগ, শৈব * বৈধব 
প্রভৃতি মতগুলি বিভিন্ন হলেও তোমাতে যাবার এক 
.একটি পঞ্চ মাত্র। লোকের রুচি অনুসারে সরল ও 
জটিল যে পথই অবলম্বন করুক না কেন, তুমিই 
সকলের গম্যস্থান। পরমহুংসদেব বল্তেন, “যেমন 
কালীঘাট যাওয়ার বু পথ, সেইরূপ নানা মত ভগবানে 

১৭৮ 


সাধনা ও সিদ্ধি 


হাওয়ার এক একটি পথ মাত্র ।” ভিন ভিন্ন সংস্কারাপর্জ 
লোকের . জন্য ভিন্ন ভিন্ন মত ও সাধপ্রণালী শাস্ত্রে 
নিবদ্ধ আছে। সেই জঙ্টা ভিন্ন ভিন্ন মত, আপাত- 
বিরোধী হলেও বাস্তবিক তাদের মধ্যে কোন বিরোধ 
নেই। কারণ, গম্যস্থান বা লক্ষ্য একই। 

সাধন! শব্দের অর্থ ভগবতপাদপদ্প দর্শনে পূর্ণমনস্কাম 
মহাপুরুষগণের যে প্রকার অবস্থা বা অনুভূতি হয়, 
তাই আপনাতে আন্বার বা তাঁদের মত হবার 
জন্ত চেষ্টাকরা। সিদ্ধ পুরুষের লক্ষণ ভগবান গীতায় 
বলেছেন, 

প্রজহাতি যদা কামান সর্ব্ধান্‌ পার্থ মনোগতান্‌। 

আত্মন্েবাত্মনা তুষ্ট: স্থিতপ্রজ্জন্তদোচ্যতে ॥ 

'মনোগত সমস্ত কামনা ত্যাগ করে যিনি আত্মা বা 
ভগবান মাত্র নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে পারেন, সুখ ছুঃখ বা 
শরীর মনের নানাপ্রকার দিতা পরিবর্তন ধারে বিচলিত 
কর্‌তে পারে না, তিনিই স্টিরিবুদ্ধি ও মুক্ত! যেমন 
নিশ্বাস গ্রন্থাম ফেলতে আমাদের কোন কষ্ট ইয় না, 
সেইরীপ ডাদের কাম কাঞ্চন ত্যাগ শ্বভাই হয়ে থাকে । 
তাঁদের শরীর ও ইন্তরিয়াদি এমন ভাবে গঠিত হয়ে 
গেছে যে, ভাদিকে আর বিপথে চলতে দেয় না। সিদ্ধ 
পু্ষের লক্ষণ বা সিদ্ধি সন্ধে আমাদের, অধিক 

548 


গীতাতত্ব 
বলবার দরকার নেই, কারণ, এখনও আমরা সিদ্ধি 
লাভের অনেক দুরে রয়েছি। আমাদের প্রয়োজন 
এখন, যত প্রকার সাধনা বা উপায়ে ভগবান লাভ করা 
যায়, তা জানা এবং তাঁর মধ্যে বিশেষ একটি নিয়ে 
নিজ জীবন গঠন করা। 

পূর্বের শাস্ত্রীয় সত্য যাতে সাধারণে না৷ -পড়তে পায়, 
এই ভাবে লুকিয়ে রাখা হতে! । এতে পুরোহিতের আধি- 
পত্য অটুট রইল, কিন্তু জাতীয় জীবন বিষ্ভাহীন হয়ে 
অনেক নিচে পড়ে গেল। পুরোহিত তার ঈদৃশ কার্যের 
কারণ দেখালেন যে, অধিকারী হবার পুর্বে মানুষকে 
সকল সত্য বল্‌্লে অনেক সময় না বুঝে উল্টো উৎপত্তি 
হয়ে থাকে” যেমন বেদান্ত ঠিক না বুঝলে অনেক সময় 
নাস্তিক্য এসে মান্ুষকে' অধিক বিষয়-পরায়ণ করে 
থাকে। এ কথার উত্তরে বলা যেতে পারে, তোমার 
যখন অধিকারী চেনবার শক্তি নেই, তখন সকলকেই 
পড়বার ও আলোচনা করবার ক্ষমতা দাও। সে নিজেই 
তার উপযোগী পথ বেছে নেবে। আজ কাল সমস্ত 
শান্ত্র মুদ্রিত হচ্ছে, এ সময় লুকোবার চেষ্টাই 
ট 

আমরা এখন দেখবো, জ্ঞানী, ভক্ত, যোগী ও কম্মী এই 
চার প্রকার সাধকের! কোন্‌ কোন্‌ প্রধান সাধন সহায়ে 

১৮০ 


সাধনা ও সিদ্ধি 
চরমে একই স্থানে উপস্থিত হন। জ্ঞানী দস বিচার 
করে অনিত্য বিষয়বাসন! পরিত্যাগ পূর্বক আপনার 
ভেতর নিত্য বস্ত কোন্টি, তার অদ্বেষণে নিযুক্ত থাকেন 
এবং সেই বস্তকেই প্রকৃত আমি বলে নির্দেশ করেন। 
শরীর মনে আবদ্ধ, বিষয়বাসনাযুক্ত কষুত্র আমিত্বের 
বিনাশ করে এই মহান্‌ আমি হয়ে যাওয়াই তার 
লক্ষ্য। জ্ঞানীর সাধন “নেতি নেতি” বিচার এবং 
স্ব্ঘরূপের ধ্যান। জ্ঞানী বলেন, বিচারে অনিত্য বলে 
যাকিছু সিদ্ধান্ত হবে, তা তৎক্ষণাৎ পরিত্যাগ কর। 
এইরূপে দেখবে, শরীর মন প্রভৃতি কোনটিই নিত্য 
নয়, এই সকলের চিত্ত! বাসনা দূর করে দিতে 
পারলে নিত্যবস্ত আত্মার সাক্ষাৎকার এবং তাতে 
অবস্থান। আবার একবার তাতে অবস্থান করতে 
পারলেই দেখবে, ৃর্য্যের সহিত হূর্ধ্যরশ্বির স্তায়, লীলা 
নিত্যের সহিত চির সম্বন্ধে গ্রথিত। সেই জন্যই জ্ঞানী 
বলেন, জগতে যা কিছু দেখতে পাই, সমস্তই আত্মার 
বিকাশ, আত্মা মাত্র এবং আমি সেই আত্মা। এইটি 
সর্বদা মনে জাগরূক রাখাই জ্ঞানীর প্রধান সাধন। 
যোগী বলেন যে, মনুত্য জন্ম জন্ম বিষয়ের সহিত 
আপনাকে একীড়ৃত করে কতকগুলি সংস্কারের বশীভূত 
হয়ে পড়ে এবং সেজস্তক কতই না কষ্ট পেয়ে থাকে। 
১৮১ 


শ্বীতাতত্ব 
কিছুতেই আর আপনাকে তার্দের হাত থেকে ছাড়ীতে 
পারে না। যোগী ছাড়াবার উপায় সঙ্বন্বে বলেন, স্থির 
হয়ে বস, আপনাকে ভুলে কোমি চিন্তার পম্ঠাৎ যেও 
না, মনকে চিন্তা করতে দাও এবং তুমি সার্ষিত্বরূপ 
হয়ে স্থিরভাবে মনের তরঙ্গভঙ্গ দেখতে থাক। পরে 
মনকে কোন এক বন্তবিশেষে নিবন্ধ করে তাতেই 
একাগ্র কর। এই একাগ্রতাই সংস্কারবীর্জ দগ্ধ করে 
সত্য প্রকাশ করে দেবে। যথার্থ একাগ্রতা আসলেই 
ততক্ষণাত আত্মদর্শন। অতএব দেখা গেল, যোগীর 
প্রধান সাধন, জর্ধ্ধাবস্থায় আপনাকে সাক্ষিত্বরূপ ধারণা 
করা এবং মনকে কোন এক বিষয়ে সম্পূর্ণ একাগ্র 
করা। £ 

ভক্ত বলেন, ভগবানে আপনাকে সম্পূর্ণ ফেলে দাও, 
তার সঙ্গে কোনও এক বিশেষ সম্বন্ধ স্থাপন কর। পিতা, 
মাতা, সখা, প্র, স্বামী প্রভৃতি যে কোম সম্বন্ধ তোমার 
ভাল লাগে, সেই নম্বন্ধ স্থাপন কর। শরীর, মন, স্ত্রী, 
পুত্র যা কিছু তোমার আছে, সমস্ত তাকে অর্পণ কর। 
এধন প্রশ্ন হতে পারে যে, ধাঁকে দেঁখতে পাই নী, 
তার সঙ্গে কিরূপে সম্বন্ধ স্থাপন করব? উত্তরে বলা 
যেতে পারে ধে, ধার কাঙ্ছে গেলে তুঁমি প্রাণে শাস্তি 
পা, তাকেই মানুষ বোঁধ না করে ভগবান বোধে 

১৮২ 


সাধনা ও সিদ্ধি 

পুজা কর। তাইলেই ভগবানের সঙ্গে সেই স্বন্ধ ক্রমে 
ক্রমে স্থাপিত হবে । 

পরমস্ংসদেবকে একদিম জটনক স্ত্রীলোক জিজ্ঞাসা 
করেন যে, মন কিছুতেই স্থির হয় না, কেবল দ্রাতুষ্পুত্ের 
চিন্তা মনে আসে । তিনি উত্তরে বলেন, “তাকেই ভগবান 
বোধে চিন্তা ও সেবা কর।” কিছুদিন এইরূপ করাতে 
স্্রীলাকটির মন সমাধিস্থ হয়। ভার সঙ্গে যতদিন 
না কোন বিশেষ সম্বন্ধ হবে, ততদিন তাকে আপনার 
বলে বোধ হবে না এবং চারুর জমবে না। রামপ্রসাদ 
বলেছেন,_- 

সে যে ভাবের বিষয় ভাব ব্যতীত অভাবে 
কি ধরতে পারে। 
হলে ভাবের উদয়, লয় সে যেমনে, 
লোহাকে চুম্বকে ধরে ॥ 

তার উপর সম্পূর্ণ নির্ভর করলে, একেবারে তার হয়ে 
গেলে স্বার্থপূর্ণ আমিত্ব বিনষ্ট হয়ে তৎক্ষণাৎ হি 
আসবে। 

কম্ধ্খ বলেন, ভগবানের জদ্য বর্ম কর, ফল ভাতেই 
অর্গণ কর। খ্বার্থের জন্ত কর্ণ কর না; স্বার্থই মৃত্যু 
সববর্দা কর্ম কর, কিন্তু কর্্মফলে আসক্ত হয়ো না। 
পূজা ও সাধনা-খ্বরূপ কর্ম কর। ধন, মান। বুশের 

১৮৩ ও 


গীতাতন্ব 
জন্য করো না। সেই বিরাট পুরুষের সেবার জন্য 
কর্ম কর। তিনিই নানারূপে জগতে খেলা করছেন। 
তোমাদারা তার একটু সেবা হলে আপনাকে ধন্য মনে 
কর। এই প্রকারে কর্ম করলে যে ক্রমে স্বার্থ নাশ 
ও আত্মপ্রকাশ উপস্থিত হবে, একথা আর বলতে 
হবে না। 

চার শ্রেণীর লোকের জন্য চার রকম সাধনা নির্দেশ 
করা হয়েছে; কিন্তু উদ্দেশ্য একই, স্বার্থপর আমিত্বকে 
বিনাশ করাঁ। ভেবে দেখলে এদের মধ্যে বিবাদ কেবল 
কথার মাত্র। বাস্তবিক কোন বিবাদ নেই, স্বার্থপর 
আমিত্ব গেলেই যুক্তি। পরমহংসদেব বলতেন, “মুক্তি 
হবে কবে, আমি যাবে যবে,” “পাশবদ্ধ জীব, পাঁশমুক্ত 
শিব।” যখন অবিষ্ভতার আমি যাবে, তখনই শিবত্ব 
প্রাপ্তি ও মুক্তি। পরমহংসদেব বলতেন, “যেমন 
জলকে নানা লোকে নানা নামে বলে, সেই রকম এক 
ভগবানকেই নানা নামে লোকে ডাকে ।” 

এইগুলিই প্রধান প্রধান সাধনার কথা। জীবন 
গঠনে, এবং লক্ষে পৌছবার জন্য এদের বিশেষ 
প্রয়োজন। মন মুখ এক করে যার যেটি ইচ্ছা, গ্রহণ 
কর এবং আঙ্গ থেকে নিজ জীবন গঠনে কৃতসংকর্প 
হও) আর ঘা কিছু দরকার তিনিই সব এনে দেবেন । 

১৮৪ 


সাধনা ও সিদ্ধি 


সর্বরধর্ান্‌ পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ। 
অহ স্বাং সর্বপাপেত্যো মোক্ষয়িস্তামি মা শুচ;। 
মন মুখ এক করে তার শরণাপন্ন হলে দূর্বলতা 
পাপ কিছুই থাকতে পারে না। তিনিই সব থেকে 
রক্ষা করেন। ভগবানের নিকট এই প্রার্থনা যে, তার 
নামের জোরে আমাদের সকল দুর্ব্বলতা ও পাপ চির 
কালের মত দুর হয়েছে, এই বিশ্বাসটি যেন আজ থেকে 
আমাদের সকলের হয়। 
ও শাস্তিঃ! শাস্তি; !! শান্তিঃ !! 


১৮৫ 


নবম অধ্যায় 
বো-কথা 
(রামকৃষ্ণ মিশন সভা-_রবিবার ৭ই আগষ্ট, 
১৮৯৮ খুষ্টাব্ ) 


এই সভাতে বেদাদি সম্বন্ধে সে সকল কথা বলা 
হবে, তা কথাবার্তাচ্ছলে বলব, বক্তৃতার ভাষায় 
বললে বক্তা ও শ্রোতার মধ্যে দূরত্ব অনুভব হবে। 
আমরা ভাব, আমরা সকলে একসঙ্গে বর্মশিক্ষা 
করতে এখানে একত্রিত হয়েছি এবং পরস্পরের 
সন্দেহ সকল প্রশ্নারা বিচারপৃর্র্বক সীমাংসা করে 
সত্যলাভ করব। মহাপুরুষের ধর্মজীবন আলোচনা 
করে দেখলে, বেদোক্ত ধর্মাদি সহজে উপলব্ধি হয়, 
সেই জন্য উহাও আমাদের আলোচ্য হবে। আবার 
অন্ানু মহাপুরুষদিগের অস্তিত্ব অথবা পুরাণনিবদ্ধ চরিত্র 
সম্বন্ধে সন্দেহ থাকলেও শ্তরীরামকৃষ্ণ-জীবন এরূপ 
হতে পারে না; কারণ আমরা তাকে প্রত্যক্ষ 
দেখেছি। অতএব তার চরিত্রে বেদান্তোক্ত ধর্ম 

১৮৬ 


রেদ-কথা 


কিরূণে কিভাবে প্রকাশিত ছিল, তাও যলে সঙ্ধে 
জালোচনা করব। প্রথমে বৃহদারগ্যক উপনিষদ হতে 
কিছু পাঠ করি_- ৃ্‌ 

এক সময়ে মিথিলার রাজা জ্নকবিদেহ এক যজ্ধ 
করেছিলেন, এই মিথিলা-রাজবংক্পের কোন রাজা 
্রহ্মজ্ঞান লাভ করাতে, তাদের বংশের উপাধি 
বিদেছ হয়েছিল। এই যজ্জে অনেক বেদজ্ঞ ত্রান্ষণ 
উপস্থিত ছিলেন। রাজা জনক এক সহজ্্ গাতী দক্ষিণা 
দেবেন মনস্থ করে তাদের শৃঙ্গ ্বরণঘারা মুড়িয়ে 
দিয়ে বললেন, আপনাদিগের মধ্যে যিনি শ্রেষ্ঠ, তিনিই 
এই গাভী গ্রহণ করুন। কেহুই অগ্রসর হলেন না। 
কাকেও অগ্রসর হতে না দেখে অবশেষে, যাজ্ঞবন্ধ্য 
খৰি স্বীয় শিল্ঠুদি্নকে বললেন, তোমরা এই গাভী 
সকল্প আমার নিমিত্ত গ্রহ কর। . একথা শুনে অন্যান্ত 
ব্রাহ্মণের! রললেন, ইনি আমাদের অপেক্ষা কিসে রেষ্ট 
তা বিচার করা যাক; আমাদের পেক্ষা যদি ইনি 
কিছু অধিক জানেন, তা হলে এঁকে গাতী দেওয়া 
যাবে। এইরপ স্থির হলে গার্থী নায়ী একটি স্ত্রীলোক 
সভায় দগায়মানা হয়ে যাজ্ঞবস্ক্যকে প্রশ্ন করতে 
লাগলেন। নানাবিষয়ের যথাযথ উত্তর করে যাজ্ঞবন্ধ্য 
তাকে নিরস্ত হতে বললেন ৭ অন্তান্ত আন্ণগণের 

১৮৭ 


- শ্গীতাতন্ব 
সহিত বিচার আরম্ভ করলেন । অবশেষে গার্গী আবার 
বললেন, আমি আর ছুটি প্রশ্ন করতে চাই, যদি 
যাজ্বন্ক্য তার উত্তর দিতে পারেন, তাহলে, বুঝব, 
এঁকে কেউ পরাস্ত করতে পারবেন না। প্রথম, কার 
দ্বারা এই সমস্ত বন্ত ব্যাপ্ত হয়ে আছে এব দ্বিতীয়, তিনি 
কে? যাল্ঞবন্ধ্য এ ছুই প্রশ্নের উত্তর করলে গার্গী 
বললেন, হে ব্রান্ষণগণ! আপনারা এঁকে পরাস্ত 
করতে পারবেন না; কারণ ইনি ব্রহ্ষকে জেনেছেন, 
এবং এঁর জানবার আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। 

দেখা গেল, বেদোক্ত ব্রন্মকে জানলে লোকে সর্বজ্ঞ 
হয়। এখন দেখা যাক বেদ কাকে বলে? বেদ অর্থে 
জ্ঞান; ষ্বে জ্ঞান লাভ হলে, জগতের সমস্ত বিষয় 
জানতে পারা যায়; যেমন, মৃত্তিকা! কি জানলে মৃত্তিকার 
বিকারপ্রম্থত সরা, খুরি ইত্যাদি স্মস্ত পদার্থকেই 
জানতে পারা যায়, সেইরূপ যে বস্তকে জানতে 
পারলে স্থির অন্তর্গত সমস্ত পদার্থকে জানতে পারা 
যায়, আর কিছুই জানবার বাকি থাকে না, সেই জ্ঞানই 
বেদ। .এইজ্ঞানলাভের অধিকারী কে 1 বেদের অধিকারী 
কে? শাস্ত্রে কেবল ছিজমাব্রকেই অধিকারী বলে 
নির্দেশ করেছেন; গীতা ও মহাভারতাদি শাস্ত্রে 
এই দ্বিজত্ব গুণ-গত এবং জাতিগত উভয় প্রকারেই 


১৮৮ 


বেদ-কথা 


প্রকাশিত হয় বলে বর্ণনা করা হয়েছে। শক্করাচার্ধয 
প্রভৃতি এইরূপই নির্দেশ করেছেন; কারণ, পিতার 
গুণ সহজে পুত্রে সংক্রমিত হয়, এইজন্য গুণ ভ্রেমে 
জাতিগত হয়ে পড়ে কিন্তু বু প্রাচীন কালে দ্বিজন্ব 
কেবল গুণগত ছিল বলে বোধ হয়। সত্যকাম 
জাবালির উপাখ্যান উহার প্রমাণ। মত্যকাম বেদপাঠের 
নিমিত্ত উপস্থিত হলে, তার গুরু তীর পিতার 
নাম জিজ্ঞাসা করেন, সত্যকাম পিতার নাম বলতে 
পারলেন না। তিনি মাতার নিকট এসে জিজ্ঞাস! 
করাতে, মাতা বললেন, তিনি যৌবনে একে একে. 
অনেককে পতিরূপে বরণ করেছিলেন; অতএব সত্য- 
কাম কার গুরসজাত, তা তিনি জানেন না। -সত্য- 
কাম গুরুকে এসে তাই বললেন! গুরু বললেন, 
দ্বণিত ও নিন্দিত হবার সম্ভাবনা! দেখেও আপনার 
এরূপ জন্ববত্বান্ত যে জিজ্ঞাসিত হয়ে সর্বসমক্ষে 
এরূপ অকপটে বলতে পারে সে মহা সত্যনিষ্ঠ; এবং 
সত্যনিষ্ঠাই ব্রাহ্মণের প্রধান গুণ, অতএব তোমাতে 
্রাহ্মণের লক্ষণ দেখছি, তোমাকে আমি বেদপাঠ 
করাব। এই কথা বলে তার উপবীত প্রদান করে 
বেদাভ্যাস করালেন। এই সত্যকামই পরে একজন 
প্রবীণ আচার্য্য হয়েছিলেন । 


১৮৯ 
১৩ 


. স্রাক্ষণত্ধ কেবল জাতিগত ' ছয়ে: পড়েছে। গুণ 
শাক, আর নাই থাক্‌, ব্রাহ্মণের ছেলে ভান্মণ হবে, 
কিন্ত বৈদিক সময়ে .গুণের ছ্বারাই ব্রাঙ্গণদ্থের নির্দেশ 
হত। এই শান্তর দৃষ্টি দ্বারা আমর! বেদের অধিকারী 
. বলে ত্রান্মণত-খণসম্পন্ন ব্যক্তিকে স্টিয় করব। 
বাঁতে ত্রান্মণের গুণ আছে, তিনিই বেদ 
কারী। আবার বেদমধ্যে দেখা যায়: 
মতে এই বেদ 'অনাদি, ইহা জ্ঞানরূৈ ব্রদ্মের সহিত 
অনাদি-কাল স্থিত। যখন এই বেদোক্জ, বিশেষতঃ উপ- 
নিষছুক্ত জ্ঞান, কারও অন্তরে প্রকাশিত হয়, তখন 
তিনি ইহার আবিষ্কারক খধিমাত্র বলে বর্ণিত হন। 
সকল বেদ-মন্ত্রের খষি ও দেবতা আছেন। যে বিষয়ের 
জ্ঞান আবিভূতি হয়, তাকে দেবতা 'বলা হয় এবং 
বাকে আশ্রয় করে এ জ্ঞান আবিভূর্তি হয়, তাকে 
খধি বলে। 

বেদ ছুই ভাগে বিভক্ত, কর্মকাণ্ড ও জ্ঞানকাণ্ড। 
দর্শনকার .জৈমিনি কর্মাকাণ্-মীমাংসায় বলেছেন, 
“অথাতো ধর্ম-জিজ্ঞাসা” অর্থাৎ এর পর ধর্ম-জিজ্ঞাসা 
করতে হবে। কার পর! নিয়মপুরর্ক বেদাধ্যয়নাদি 
করে তার পর ধর্ম-জিজ্ঞাসা করবে। ইহাতেও 


১৭৯% 





জে 
পরোপকার; -সত্যবাদিত। প্রস্ৃতি নিতান্ত আবশ্ঠক, 
কিন্ত, ইহাতে সত্যের 'জন্ত সত্যকখম না! হয়ে ববর্গাদি 
বা অন্ত কোন: বাসনায় এ সকল কৃত: ছয়ে খাকে। 
বৈদিক কর্ণাকাণ্ডের সকল : কার্ধ্যই জকাম। অভএর 
বৈদিক কর্তাকাণ্ড ও -জৈমিনি-প্রণীত পূর্বব মীমাংদা পাঠ" 
কালে বর্তমান শিক্ষানযায়ী, হয়ে কর্ম কথাটি, যাহ! 

কিছু করা যায় তাই কর্ণ (৪্য 8:10 6026) 
, _এইরূপ বুঝলে ভুল হবে। বেদের দ্বিতীয় বিভাগ, 
জ্ঞানকাণ্ড। পাশ্চাত্য দার্শনিকেরা স্থির করেছেন যে, 
আমাদের আপেক্ষিক জ্ঞানের বাইরে এক অপরোক্ষ 
জ্ঞান আছে, জ্ঞাতের বাইরে এক অজ্ঞাত দেশকালা- 
পরিচ্ছিন্ন পদার্থ আছে, কিন্তু ইহা আমাদের বুঝবার বা 
জানবার যো নেই। বেদাস্তও বলেন, এই জ্ঞান আমাদের 
বাক্য-মনের অগোচর, কিন্তু ইহা অপরিজ্রেয় হলেও 
আমর! ইহা লাভ করতে পারি, ইহার সহিত একীভূত 
হতে পারি। ব্যাসন্ত্র বা উত্তরমীমাংসায় জ্ঞান- 
কাণ্ডের বা উপনিষদের গ্লোক সকলের তাৎপর্য নুত্রা 
কারে গ্রথিত হয়েছে এবং উপনিষদের* মধ্যে যে, 
বিরুদ্ধ ভাব নেই ও সমগ্র উপনিষদ যে একই ভাব 
প্রকাশ করছে, ইহাই মীমাংদা করেছেন। 
জৈমিনি-দর্শনের ন্যায় উহ্হাও “অথাতো” বলে * জারস্ত 

১৯১ 


গীভাতন্ব 
কয়েছেন। উহাতে প্রযুক্ত এই “অ্ শব্দ ছই অর্থে 
ব্যব্গত হতে পারে । এক মঙ্গল-বাচক শব্ধ বলে 
কিংবা অনন্তর অর্থে। কার অনন্তর? কর্মকাণ্ডের 
অনন্তর, হতে পারে না, কারণ কর্ম হতে কধন 
জ্ঞান উৎপন্ন হতে পারে না, কর্ম কর্মেরই উৎপাদক। 
অতএব আচার্য্য শঙ্কর ইহার অর্থ-+দাধন-চতুষ্টয়ের অনস্তর 
বলে ব্যাখ্যা করেছেন। - 

এই সাধন-চতুষ্ট় কি? প্রথম, নিত্যানিত্য-বস্ত- 
বিবেক, জ্ঞান-বিচারছবারা কি নিত্য, কি অনিতা, স্থির 
করতে হবে। অনেকে জ্ঞানকে অতি হেয় বলে গণ্য 
করে থাকেন। সত্য বটে, জ্ঞান-বিচার সেই নিত্য 
বস্তুকে সাক্ষাড প্রত্যক্ষ করাতে পারে না, তা বলে 
ইহার যে কোন কার্যকারিতা নেই, তা বলা 
মহাদ্রম। এই জ্ঞান-বিচারদ্বারাই ত পাশ্চাত্য পণ্ডিতের 
জেনেছেন, এক অজ্দেয় দেশকালাপরিচ্ছিন্ন বন্ধ 
(02000দা। ) আছেন। তিনি নিশ্চিত োঁছেন 
একথাও ত তারা ইহার সাহায্যে জানতে পেরেছেন। 
তিনি আছেম বলে যে নিশ্চয় বিশ্বীম করেছে তার 
কাকে প্রাপ্ত হতে আর অধিক বিলম্ব নেই। দ্বিতীয়, 
- ইহামুত্রফলভোগবিরাগ, অর্থ-_ইহলোকের সুখ, কি 
পরলোকে প্রাপ্য স্বর্গাদি-স্খ উভয়েতেই বৈরাগ্য-বাঁন 

১৯২ 


বে্দ-কথা 


হওয়া আবশ্টক। তৃতীয়--শমদমাদিষট্সম্পত্তি_-শম, 
দম, তিতিক্ষা, উপরতি। শ্রদ্ধা ও সমাধান, এই ছয় পদার্থ। 
(১) শম--অন্তরিক্দরিয়ের দমন, মনে কতরূপ কামনার 
উদয় হচ্ছে, কতরূপ চাঞ্চল্য আসছে, এই সমস্ত 
দমন করা।. সর্বাগ্রে ক্রশ্বর্য্যই প্রধান সাধন, যার 
উহা নেই, তার সমস্তশক্তি বায় হয়ে যায়। মন 
অনন্ত শক্তির আধার, সংযমের দ্বারা এই শক্তি ক্রমে 
বিকাশিত হতে থাকে । আমাদের ভিতর অনস্ত শক্তি 
রয়েছে, এই শক্তি বিকাশিত করলে আমরা প্রায় 
সর্বশক্তিমান হতে পারি। অবতারাদি পূর্ব পূর্র্ব 
মহাপুরুষেরা ইহাই দেখিয়ে গিয়েছেন যে, আমরাও 
ইচ্ছা ও চেষ্টা করলে ঠাদিগের প্রদশিত পথ অনুসরণ 
করে তাদের ন্যায় শক্তি ও জ্ঞান সম্পন্ন হতে 
পারি। যদি তাই না হয়, তবে অবতারের আসবার 
প্রয়োজন কি? অবতারাদি মহাপুরুষের আমাদের কি 
করতে হবে এবং কিরপে করতে হবে ইহাই নিজ 
নিজ জীবনে দেখিয়ে যান। তারা আমাদিকে এক 
নূতন আদর্শ দেখিয়ে যান, যাতে আমরা সকলে সেই 
আদর্শের অনুরূপ হতে পারি। অনেকে মনে করেন, 
বিবাহাদি হলে, গৃহস্থ হলে ইন্দ্রিয় সংযম করা 
অসম্ভব। ইহা অত্যন্ত ভুল। ইচ্ছা থাকলে, গৃহস্থও 


১৯৩ 


গীতাতন্ব 


ইন্দ্রিয় সংযম করতে পারেন । শ্রীরামকৃষ্চ বলতেন, 
মনমুখ এক করলে সব হয়। মনমুখ এক কর দেখি, 
ইন্দ্রিয় সংযমাদি সকল বিষয় তোমার নিশ্চয়ই করায়ত্ত 
হবে। আমার একজন পাশ্চাত্য বন্ধু আছেন, তিনি 
ইঞ্জিনিয়ার । তিনি পূর্ব্বে কোনরূপ নৃতন কল কারখানার 
উদ্তাবনা করতে পারতেন না। যা পড়েছেন, 
তাই কাধ্যে পরিণত করতেন মাত্র। তিনি বিগত 
চার বৎসর স্ত্রীর সহিত শারীরিক সম্বন্ধ পরিত্যাগ 
করেছেন এবং তার ফলে সম্প্রতি একজন বিখ্যাত 
যন্ত্রাবিষ্কারক হয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন যে 
এখন কোন . বিষয়ের চিন্তা করতে গেলে, সেই বিষয়ের 
একখানি ছবি “যেন তার মনের সম্মুখে বিস্তারিত হয়, 
তিনি তাতে সমস্তই দেখতে পান। ত্রক্গচর্য্যান্ুষ্ঠানের 
এমনই ফল! ক্রন্ষচর্য্য না থাকার জন্তই আমাদের এত 
দুর্দশা হয়েছে । (২) দ্ম-_বহিরিক্্িয়ের দমন, হস্তাদি 
ও চক্ষু প্রভৃতিকে মনের বশে আনয়ন করতে হবে৷ 
(৩).তিতিঙ্ষা, অর্থ--সহা করা। সখ ছুঃখ শীত উষ্ণ, 
ইত্যাদি যার. যে পরিমাণে সহ হয় সেই পরিমাণে সহ 
করা। (৪) উপরতি অর্থাৎ রূপরসাদি-বিশিষ্ট বাইরের 
বস্ত সকল হতে ইচ্ছাশক্তির দ্বারা মনকে ভেতরে 
আনয়ন, করা। (৫) শ্রদ্ধা অর্থ-_বেদশাস্ত্র ও গুরু- 
১৯৪ 


বেদ-কথ। 


বাক্যে দৃঢ় বিশ্বাস। (৬) সমাধান__ঈশ্বর-বিষয়ে মনের 
একাগ্রতা । চতুর্থ_সুমুক্ষুত! ।-_-এই সাধন-চতুষ্টয়-সম্পন্ন 
হলে জ্ঞান-কাণ্ডে অধিকার জন্মে । 

আমরা ইতিপূর্বে বলেছি, কর্ম-কাণ্ডেও পরোপকার 
সত্য-কথন প্রভৃতির অত্যন্ত আবশ্যকতা আছে, বেদের 
কর্ম-কাণ্ড ছুই ভাগে বিভক্ত। প্রথম, মন্ত্রভাগ__ইহাতে 
ইন্দ্রাদি নানা দেবতা-সম্বন্ধে স্তবাদি আছে এবং দ্বিতীয়, 
ব্রাহ্মণভাগে যাগযজ্ঞাদি করবার নিয়মাদি লিপিবদ্ধ 
আছে। 


১৯৫ 


দশম অধ্যায় 
রস 


(রামক্চ মিশন সভা, রবিবার ২৮শে আগষ্ট, ১৮৯৮) 


স্থির অনাদিতত 


আজ ছান্দোগা উপনিষদ হতে একটি গল্প পাঠ 
করব, শ্বেতকেতু নামে একটি ত্রাহ্মণপুত্র ছিলেন; 
তার পিতার নাম আরুণি বলে তাকে আরুণি 
শ্বেতকেতু বলত। একদিন তার পিতা তাকে 
*বললেন, “স্বেতকেতো, তুমি ব্রহ্মচর্ধ্য আচরণপূর্বক 
গুরুগৃহে বেদাধ্যয়ন কর।” শ্বেতকেতু ব্রহ্মচ্ধ্য গ্রহণ 
ুর্র্কক ছাদশবর্ষ গুরুগৃহে বেদাধ্যয়ন করে গৃহে পদধ্যা- 
গমন করলেন। শীল্াদি পাঠ করে নিজের পাণ্ডিতয 
চিন্তা করতা, কিছু অহঙ্কারী হয়েছেন দেখে, তার 
পিতা তাকে বললেন, “স্বেতকেতো, তুমি বহ শান্ত 
জআধ্যয়ন করেছ সত্য, কিন্তু এরূপ কিছু জেনেছ, 
যা জানলে জগতের সমস্ত পদার্ঘই জানা যায়? 

১৯৬ 


: স্থষ্টি-রহস্য 


মাটিকে জানলে যেরূপ মাটির বিকার সরা খুরি প্রভৃতি 
সমস্তই জানতে পারা যায়, সেইরূপ এমন এক ব্ত 
আছে, যাকে জানলে জগতে জানিবার আর কিছু 
বাকি থাকে না। এরূপ কোন বস্তু কি জানতে 
পেরেছ ?” শ্বেতকেতু ব্টালেন, “না, আমি এরূপ বস্ত 
জানি না, আমার গুরুও ইহা জানেন না, জানলে 
অবশ্যই সে বস্তুর কথ! আমাকে বলতেন। অতএব 
আপনি যদি তা জানেন, অনুগ্রহ করে আমাকে 
বলুন।” আরুণি বললেন, “শ্বেতকেতো ! অগ্রে কেবল 
এক সৎ বস্তুই বিষ্মান ছিলেন, আর কিছুই ছিল না। 
তিনিই এই সমস্ত স্থষ্টি করেছেন; তিনি ঈক্ষণ 
করলেন-_ইচ্ছা করলেন_-আমি বহু হব এবং তিনি 
ব্ছ হলেন।” এইরূপে সৃষ্টি প্রক্রিয়া বর্ণনা করে 
শিক্ষা দিলেন। এক্ষণে আমাদের বুঝা আবশ্যক, এই 
যে স্থাষ্টি তত্ব বর্ণনায় বলা হয়েছে, অগ্রে কিছুই 
ছিল না, কেবল এক সং ছিলেন, এর ঘর্থ কি? 
সথ্টি আদৌ ছিল না, বা হয় নাই এরই কি অর্থ? 
না, আমাদের শাস্ত্রের কোথাও এরূপ উল্লেখ নেই। 
এর ' অর্থ-স্থঘ্টি বীজরপে সেই সত্বস্ততে বর্তমান 
ছিল, সৃষ্টি সেই লত্বস্ত হতে পৃথক নয়, তিনিই : 
বনু হয়েছেন। বখন এই স্থ্টি ভার অংশ ,হল, 
- ১৯৭ 


শীতাতত্ব ৃ 

তখন ইহা ছিল না, এরূপ কির়পে হবে? 
প্রকাশভাবে স্থত্ি না থাকুক, - বীজভাবে ছিল। 
বৃক্ষ যেমন বাজ হতে উৎপন্ন হয়ে ক্রমে শাখা- 
পত্রা্দির আকারে প্রকাশিত হয় ও পরে আবার বীজে 
পরিণত হয়ে নষ্ট হয়, সেইদ্বীপে স্থ্টি বারংবার 
প্রকাশিত ও লয় হয়ে থাকে, ব্যক্তাবস্থা হতে 
আবার অব্যক্ত অবস্থায় লুক্কায়িত হয়। এইরূপে 
প্রকাশ ও' প্রলয় এই ছুই অবস্থায় প্রবাহরূপে সৃষ্টি 
অনাদিকাল বর্তমান আছে। সত্বস্ত যেরূপ অনাদি, 
এই স্থ্টিও সেইরূপ অনাদি। স্থপ্টির আদি আছে 
,' বললে" ছুটি দোষ উপস্থিত হয়, ইহা আমরা 
গত বারে " দেখেছি--প্রথম বৈষম্যদোষ-+আমরা জগতে 
বৈষম্য দেখতে পাই-কেহ রুগ্র, কেহ মুস্থকায় ; 
কেহ ধনী, কেহ দরিদ্র; কেহ পণ্ডিত, কেহ মূর্খ 
ইত্যাদি; এইরূপ বৈষম্য কেন ও কোথা হতেই বা 
হয়? স্ৃষ্টিকর্তা-কৃত বললে তাতে গক্গপাতিত্ 
দোষ পড়ে এবং দ্বিতীয়, তাতে নৈঘৃ্যি দোষ হয়, 
- ভার নিষ্ঠুরের ম্যায় আচরণ হয়, কারণ অকারণে 
তিনি কাকেও সুখী এবং কাকেও : মহাহুঃখী 
করছেন। বেদাদি শাস্ত্রে স্থতি অনাদি বলে 
বর্ণিতু। উহা! প্রবাহ রূপে অনার্দি, উহা তারই 


১৯৮ 


সৃ্টি-রহস্ত 


প, তারই অংশ, ভিনিই। স্থির আদি আছে 
ললে আর এক দোষ উপস্থিত হয়, উহা এই-- 
খন স্ৃ্টি ছিল না তখন ভগবানের স্ৃতিকর্তৃত্ব না 
কার জন্য তার পূর্ণত্ব ছিল না--তিনি অপূর্ণ 
ছলেন। সৃষ্টিকর্তা হয়ে তার অধিক গ্ণপ্রান্তি 
য়েছে অথবা গুণের ভাস হয়েছে, বলতে হয়। 
জন্য কি বেদ, কি পুরাণ, কি মহাভারত, কি 
ঘৃতি-সকল শান্তেই স্থ্টি অনাদি বলে কথিত 
য়েছে। 


সৃষ্ট প্রক্রিয়া প্রাণ ও আকাশ 


মহাভারতাদিতে এই স্থষ্টিতত্ব পাঠ করে সাধা- 
রণত; আমরা অনেক তুল বুঝে থাকি। স্ষ্টি- 
প্রক্রিয়ার প্রথমেই আছে যে, প্রথমতঃ প্রাণ ও আকাশ 
প্রকাশিত হল, এখন প্রাণ মানে আমর! নানারপ 
বুঝে থাকি। কেহ নিঃশ্বাস অর্থ বুঝে লন, কেহ 
জীবাত্ব! বুঝেন ইত্যাদি, কিন্তু এরূপ অর্থে ইহা! 
ব্যবাত হয় নি। সেইরূপ মাকাশ অর্থে আমর! 
অবকাশ বুঝি, এই আকাশের তিন রূপ অর্থ আছে। 
প্রথম মহাকাশ--বাহা জগতের সকল বন্ত এই মহাকাশে 
ধর্তমান। সম্মুধের' এই আলো, টেবিল প্রভৃতি, চুদ, 


১৯৯ 


বীতাতদ্ব 
স্থয্য, গ্রহ, নক্ষত্রত মনুষ্য, বক্ষাদি সমস্কই এই 
অৰকাশে রয়েছে; দ্বিতীয়, চিত্বাকাশ আমরা যে 
সমস্ত চিন্তা করি, বিচার করি বা যে সমস্ত সিদ্ধান্তে 
উপস্থিত হই, সেই সমস্তই পৃথক পৃথক ভাবে আমা- 
দের মনে বর্তমান রয়েছে। এই জন্য মনকে 
আকাশরূপে বর্ণনা করা হয়েছে, তৃতীয়__চিদাকাশ 
অর্থাৎ জ্বানময় আকাশ ; আমাদের যে জ্ঞান, তাহা 
সামান্ত জ্ঞান, কিন্তু চিদাকাশ পূর্ণজ্ঞানের আকাশ। 
আমাদের জ্ঞান অজ্ঞানে জড়িত) কিন্তু এই জ্ঞানে 
অজ্ঞান নেই- পূর্ণজ্ঞান স্বরূপ; এই আকাশে বাহ্যিক 
মহাকাশ ও আন্তরিক চিত্তাকাশ উভয়ই রয়েছে। 
কিন্তু স্ষ্িতত্ব বর্ণনায় আকাশ আর এক নর্থে প্রয়োগ 
হয়েছে। ইহা! পদার্থের সুক্ষম অংশ, ইংরাজীতে 
যাকে 708066: বলে; ইহা জড়ের সুক্ষ অংশ, এবং 
প্রাণ অর্থে সমস্ত শক্তির মূল শক্তি। " “জুড়ি দুগতের 
যত কিছু শক্তি, যেমন গতিশক্তি, শারীরি 
পরিপাক শক্তি, চিন্তাশক্তি, আধ্যাত্মিক শ 
এক প্রাণেরই বিকার, সেইরূপ আমাক, 
শক্তিও সেই প্রাণের বিকার এব 
বর্তমান থাকাতেই মানুষ জীবিত থাকে 'বর্ছে / 
একে বিশেষরূপে প্রাণ বলা হয়ে খাকে। কি: 
২০০ 










ৃষ্টি-রহস্ 


স্ত্রে স্থপ্টি বর্ণনস্থলে 'প্রাণ বলতে এক মূল 
ক্তিকে বুঝতে হবে, অন্য সকল শক্তিই যার 
কারপ্রন্থত ; এবং আকাশ বলতে বুঝতে 
বে, মূল জড় বস্ত--আর সমস্ত জড় বন্তই যার 
ৰকার মাত্র । 


ষ্ঠ প্রক্রিয়া শীস্ত ও বিজ্ঞান 


শাস্ত্রের স্থষ্টিবিষয়ক মত আমরা না বুঝেই অনেক 

ময় ভ্রান্ত বলে অগ্রাহ্য করি, কিন্তু বর্তমান বিজ্ঞান, 
স্্রীয় স্ষ্টিতত্ব অনেক স্থলে সত্য বলে প্রমাণ 
চরে দেয়। শাস্ত্র বলেন, স্থষটির প্রারস্তে পূর্ব্বোক্ত 
মাকাশের উপর শক্তির অর্থাত প্রাণের কার্যে হতে 
মারস্ত হয়। ইহার প্রথম ফল বায়ু বা কম্পন। 
মর্থাৎ আকাশের পরমাণু সকলের কম্পন আর্ত হয়। 
বা ধাতু__কম্পন অর্থ। আকাশ হতে এই 
[ায়ুর বা কম্পনের উৎপত্তি হয়। কম্পন হতে 
ভজং জন্মায় বিজ্ঞানও আজ কাল ইহা প্রমাণ 
। কোন - স্তর গতিরোধ করলে তা উত্তপ্ত 
রে উঠে। ৰাঁতাস অত্যন্ত জোরে বইলে উত্তাপ 
উৎপাদন করে বিজ্ঞান বলেন, গর, নন্দী, ও 
থৈ ২৯১ 


র্‌ 





 শীভাত 

' ক্রমে শীতল হয়ে বাসোপযোগী হয়েছে । এখনো 
হূর্য্লোক অত্যন্ত উত্তপ্ত, তথায় পৃথিবীর যাবতীয় কঠিন 
বস্ত্র বাম্পরপে বর্তমান রয়েছে। এই তেজ; শীতল 
হয়ে অপ্‌ বা জল হয় ও ক্রমে কঠিন হয়ে পৃথিবী বা 
কঠিন মৃত্তিকাদিরূপে পরিণত হয়। স্থষ্টির প্রারস্তে এই 
পঞ্চমহাভূত পূর্বেবাক্তাদিরূপে উৎপন্ন হয়ে প্রথমে সুক্স 
অবস্থায় থাকে, ক্রমে ইহাদের পরস্পরের মিশ্রণে এই 
স্থল জগৎ নির্নিত হয়। 


সগ্টিতত্বে--সাংখ্য ও বেদান্ত 


বেদান্ত মতে এই স্থূল জগৎ এক সত্যেই রূপাস্তর 
মাত্র। এক সতবস্তকেই অবলম্বন করে এই জগৎ 
রয়েছে; তিনিই এই জগত হয়েছেন। সাধারণতঃ 
বেদান্তের অর্থ লোকে এইরূপ করে যে, জগৎ মিথ্যা, 
জগত নেই; কিন্তু বেদান্তের এরূপ অর্থ নয়! যখন 
সংবস্ত হতে এই জগত স্থত্টি হয়েছে, ত্্থন ইহা 
একেবারে মিথ্যা কি করে বলব 1. যখন তিনিই সকল 
জীব জন্তর প্রাণরূপে বর্তমান রয়েছেন, তখন ইহা 
কিরূপে মিথ্যা হতে পারে? আমাদের এইস্থলে “মিথ্যা” 
এই কথা “কম সত্য, সেই পূর্ণ সত্য অপেক্ষা কম সত্য” 
' এরূপ বুঝলে আর কোন গোল হবার সম্ভাবনা নেই। 
২০২ 


ষ্টি-রহস্ত 
খ্যের স্থষ্টিতব এরূপ-_পুরুষ ও প্রকৃতি ছুই অনাদি 
স্ব। পুরুষের সান্নিধ্য বশতঃ প্রকৃতি ক্রিয়াশীল হন, 
রূপ চুম্বক লৌহের সান়িধ্য বশতঃ লৌহ আকৃষ্ট হয়। এই 
[কৃতি হতে মহান্‌ অর্থাৎ বুদ্ধি, বুদ্ধি হতে অহংজ্ঞান, 
হস্কার হতে পঞ্চমৃক্মভৃত ইত্যাদি ক্রমে সৃষ্টি হয়। 


সাংখ্য ও বেদান্তের প্রভেদ-__ঈশ্বর তত্বে 


এখন সাংখ্য ও বেদান্তের মধ্যে প্রভেদ এই, 
1খ্য ঈশ্বর স্বীকার. করেন না, বেদান্ত করেন। 
ব্দাস্ত বলেন, যেমন মান্ধুষের এই দেহ) সেইরূপ সমগ্র 
ষ্ট জগৎ একটি মহান্‌ বিরাট দ্েহ। আমাদের দেহ 
কল সেই সমষ্টি দেহের অংশ মাত্র। প্রত্যেকের 
ঘরূপ মন আছে, সেইরূপ এই স্থূল জগতের ভেতর 
ক অনন্ত মন আছে, আমাদের প্রত্যেকের মন সেই 
হান্‌ মনের অংশমাত্র। সমস্ত দেহ পরস্পর সম্বদ্ধ; 
রণ তারা এক বিরাট দেহের অংশ। সমস্ত মন: 
[রম্পর সম্বদ্ধ ; কারণ তারা এক বিরাট মনের অংশ। 


নিঃস্বার্থপরতা৷ 


: যখন একটি দেহ ক্রেশ পায় বা একটি মনে ছ্ঠখ 
২০৩ 


গ্বীতাতত্ব 


উপস্থিত হয়, তখন আর আর দেহ ও মনেও সেই 
তরঙ্গের প্রতিঘাত হবে । কারণ, তাহারা পরস্পর 
সংলুগ্ন ও সেই একেরই অংশ হয়ে রয়েছে। অতএব 
তোমার মঙ্গলে আমারও মঙ্গল ও তোমার অমঙ্গলে 
আমার অমঙ্গল । তোমার উন্নতি ও অবনতি তোমাতেই 
অবসিত হচ্ছে না, তার প্রতিঘাত আমাতে ও সর্ব 
জগতে গিয়ে লাগছে। সেইরূপ এক জাতির উন্নতি 
অবনতি অপর জাতি সমূহকে স্পর্শ করে। আমরা 
বেদাস্তের এই মহান্‌ সত্য যে দিন হতে ভুলেছি, 
সেই দিন হতেই আমাদের অবনতির দ্বার উদ্‌ঘাটিত 
হয়েছে। স্বার্থের বশীভূত হয়ে আমরা যে স্ত্রী ও 
শৃদ্রজাঁতির প্রতি অত্যাচার করেছি, এখন তারই 
ফলভোগ করছি। সমাজশরীরের এক অংশ রোগ- 
গ্রস্ত হলে অপর অংশও রুগ্ন হয়-_পাশ্চাত্যগণ বেদান্ত 
না পড়েও বহুদণিতায় ইহা বুঝেছে ও এখন সেই 
সত্যটি কার্যে পরিণত করতে চেষ্টা 'গ্লাচ্ছে ; এক- 
দেশে মহামারী হলে অপর দেশে হবার সম্ভাবনা, অতএব 
পন্ুরর দেশের মহামারী নিবারণের চেষ্টা করছে; 
স্ত্রীজাতির অবনতিতে সমাজের অপর অঙ্গ পুরুষজাতিরও 
অবনতি হয়ে থাকে এবং অপর দেশের অমঙ্গলে 
নিজেদেরও অমঙ্গল, ইহা বুঝেছে । জগতস্থ সকল 
২০৪ 


থষ্টি-রহস্ত 
ব্যক্তি ও বন্তুই সেই বিরাট মৃত্তির অঙ্গ, এই মহান্‌ 
ভাব বেদাস্ত প্রচার করছেন। গ্লীতায় ভগবান 
বলেছেন, “হে অর্জন! যা কিছু শক্তিমান, যা কিছু 
শ্রেষ্ঠ দেখবে, তা আমি; নদীর মধ্যে আমি গঙ্গা, 
বৃক্ষের মধ্যে আমি অশ্ব” ইত্যাদি বলে তবশেষে 
বলছেন, “এরূপে এক একটি আমার বিভৃতির কথা 
আর আমি কত বলব, আমিই একাংশে সমস্ত জগৎ 
হয়ে রয়েছি।” এই বিরাটের পৃজাই শ্রেষ্ঠ পৃজা। 
দাধন-ভজন শব্দের অর্থ এক কথায় বলতে হলে, 
বলতে হয় যে উহা, সম্পুর্ণ স্বার্থ-ত্যাগ। কি জ্ঞানপথ, 
কি ভক্তিপথ স্থার্থ-ত্যাগ ভিন্ন কোন পথে অগ্রসর 
হবার সম্ভাবনা নেই। আপনাকে ভূলে যাওয়া-_-যষে 
আপনাকে তৃলতে পেরেছে, ন্বার্থত্যাগ করতে 
পেরেছ, তার সাধন ভজন সব হয়েছে। ঈশ্বর 
কি খোসামোদের বশ যে, যে তাঁকে স্ব স্তুতি 
করল, তার প্রতি প্রসন্ন হবেন, আর যে করল 
না, তার প্রতি বিমুখ হবেন? না, তিনি এরূপ 
নন। একজন ভগবান মানে না কিন্তু সে স্থার্থশৃন্ত, 
পরের সেবা তার ব্রত, জেনো» তার ঈশ্বরলাভের 
বিলম্ব নাই। আর যে দিবারাত্র ঈশ্বরপূজায় র্যস্ত 
কিন্তু মহান্বার্থপর, তার সাধন ভঙ্জগন পশুশ্রম মাত্র। 


০৫ 
১৪ 


গীভাতন্ব 
সর্ব্ূতে ভগবানকে দেখতে হবে, সকলকেই তার 
মৃত্তি জেনে সেবা করতে হবে। বেদাস্ত ইহাই 
বলেন, আমরা মকলেই বিরাটের অংশ । সেই বিরাট 
মনের এক ক্ষুদ্র অংশ অধিকার করে আমি বলছি, 
আমার মন!্তুমি একটু নিয়ে বলছে, তোমার 
মন। যেমন গঙ্গার স্থানে স্থানে বেড়া দিয়ে আমরা 
এক একটা নাম দিচ্ছি--ঘোষ গঙ্গা, বোস গঙ্গা 
ইত্যাদি। সকলেই জ্রানেন কিন্তু গঙ্গা বাস্তবিক 
এক [-"এক 'জল, এক তরঙ্গ কেবল নামরূপে আমরা 
প্রভেদ করছি মাত্র। সমুদ্রের একাংশকে এক নাম 
দিলাম, অন্য অংখকে আর এক নাম দিলাম, কিন্ত 
উহা একই“ সমুদ্র । সেইরূপ মন এক, কেবল উপাধি- 
ভেদে ভিন্ন ভিন্ন বলছি? যখন ছুজনের মন 
পরস্পরের প্রতি স্থার্থশন্য ভালবাসায় সংযুক্ত হয়, তখন 
এঁছু জন একভাবে ভাবিত হয়, তখন তাদের শরীর 
পৃথিবীর ছুই প্রান্তে থাকলেও মনের কথা জানস্কে পারে ; 
আমরা ইহার অনেক দৃষ্টান্ত দেখতে পাই। এইরূপে 
আমাদের মন ও শরীর যে পরস্পর সংলগ্ন রয়েছে ইহা 
এক মহাসত্য। অতএব একথাও সত্য যে যখন আমাদের 
মনে পাপ চিন্তা উদয় হয়, তখন অন্যান্য মনের পাপ- 
চিন্তা সকলও প্রবাহিত হুয়ে উহাকে আরও পাপে 


২৬ 


সৃঠি-রহম্য 
নিমগ্ন করে। আবার কোন সৎ বা ধর্ম চিন্তা উদয় 
_ হলে, যত সাধু মহাপুরুষদিগের চিত্তা আমাদের মনের 
উপর কার্য করে উহাকে আরও উন্নত করতে থাকে। 
এইরূপে আমাদের সমস্ত সাধন ভঙ্গন আমাদের 
বার্তা করে বিরাটের উপলব্ধির দিকে ক্রমশঃ 


অগ্রসর করে। 


ঈশ্বরের প্রকাশ ব্যক্তিভেদে 


যার যেরূপ মন, সে বিরাটকে সেইরূপে ভেবে 
থাকে) যে নিষ্ঠরস্বভাব ভগবানকে সে নিষ্টরস্বভাব- 
বিশিষ্ট দেখে, যে পুণ্যবান, সে ভগবানকে অনন্ত পুণ্যময় 
দেখতে পায়। এইরূপে আমাদের নিজের স্বভাব 
অনুযায়ী আমরা ভগবান কল্পনা করি। ইহা৷ স্বাভাবিক 
এবং ইহা সত্য, কারণ মনের উন্নতি অনুযায়ী আমরা 
প্রত্যেকে ভগবানকে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে ধারণা করি,এ 
ধারণাই সেই সময়ে ভগবানের স্বরূপ বলে আমাদের 
নিকট প্রতীয়মান হয়। ইশ্বর ননবন্ধে আমাদের এসকল 
ধারণা আবার, একভাবে সত্য এবং অন্ত ভাবে মিথ্যা 
বলে বুঝতে পারা যায়। যেমন সূর্যকে আমরা 
পৃথিবী হতে যেরূপ দেখি তা হূর্য্যের প্রকৃতরূপ নহে, 
কিন্তু আমরা যা দেখি তাও মিথ্যা নয়। ন্থ্্যের 


২৯৭ 


গীভাতব 
দিকে বতই অগ্রসর হব, সুর্ধ্যকে আমরা ততই ভিন্নরূপে 
অবলোকন করতে থাকব এবং এরূপে দুর্ধ্যলোকে যদি 
কখন উপস্থিত হতে পারি, তখন হৃর্্যের প্রকৃত স্বরূপ 
আমাদের নয়নগোচর হবে। আর একটি দৃষ্টান্ত দেখ ;__ 
দুর হতে পর্বত দেখলে বোধ হয়, একখানি কাল 
মেঘ উঠেছে; যতই অগ্রসর হওয়া যায়, ততই এ 
পর্বতস্থ বৃক্ষমন্দিরাদি দেখতে পাওয়া যায়। ক্রমে 
আরও অগ্রসর হলে জীব জন্ত প্রভৃতি দেখা যায়। 
এরূপ যতই সেই বিরাট পুরুষের নিকটে যাওয়া যায়, 
ততই আমরা তাঁর নৃতন নৃতন ভাব সকল দেখতে 
ও বুঝতে থাকি এবং ক্রমে পূর্ণজ্ঞানে তার সহিত 
সম্মিলিত হয়ে যাই। পরমহংসদেব এ বিষয়ে দৃষ্টান্ত 
দিতেন__“যেমন ঘরের ভেতর একটু আলো ছাদের ফাঁক . 
দিয়ে আস্ছে। যে ভেতরে আছে তার আলো জ্ঞান 
সেই টুকু; যার ঘরে অনেক ছিদ্র, সে অধিক আলো! 
দেখতে পায় ; দরজা জানল! কর ত আরও আলে! সয়; 
আবার ঘর ছেড়ে মাঠে গিয়ে যে বসেছে তার কাছে 
আলোয় আলো। ভগবান্‌ এইরূপে লোকের মানসিক 
অবস্থা অনুযায়ী আপনার স্বরূপ প্রকাশ করেন।* 
বেদাস্ত কি নাস্তিক 
লোকে ভুল বুঝে বেদান্ত শাস্ত্রকে নাস্তিক শান্তর 
২০৮. 


স্ি-রহম্য 
বলে। যে বেদাস্ত সকলেরই ভেতর অনস্তকে দেখিয়ে 
দেয়, সকলকেই ব্রন্মের অংশ বলে পৃজা করতে বলে, - 
তা কখন কি নাস্তিক শাস্ত্র হতে পারে? আমরা 
অতি হীন হয়েছি, নিজেরা শাস্ত্র পড়ি না, বুঝি না, 
তাই আমাদের এই ছৃর্দশা। আবার শাস্ত্রের মর্ম বুঝতে 
হবে। সকলের ভিতর আনন্দময় ব্রন্ধকে দেখতে 
হবে, সমস্ত জগতে তাকে উপলব্ধি করতে হবে। 
তবেই উন্নতির সময় আসবে। 


২০৯ 


একাদশ অধ্যায় 
সাধন-নিষ্ঠা 
(রামকৃষ্ণ মিশন সভা, €ঠা সেপ্টেম্বর, ১৮৯৮) 


গীতায় ভগবান্‌ বলছেন, “ঈশ্বরোপাসনা করতে 
অগ্রসর হয়ে ইহলোকে মানবের নিষ্ঠা দবিবিধ হতে 
দেখা যায়। প্রথম জ্ঞাননিষ্ঠা, দ্বিতীয় কর্ধনিষ্ঠা। পুরুষ 
কর্মানুষ্ঠান না করলে জ্ঞানপ্রাপ্ত হয় না এবং জ্ঞান- 
প্রাপ্ত না হটৈও কেবল সন্ন্যাস ছারা সিদ্ধিলাভ হয় 
না। কর্মত্যাগ করে ক্ষণমাত্র বাচবার উপায় নেই। 
ইচ্ছা না থাকলেও প্রাকৃতিক গুণ মানুষকে কর্শে প্রবৃত্ 
করে। তুমি নিয়ত কর্ণ অনুষ্ঠান কর-কর্মন্যাগ 
অপেক্ষা কর্ণা করাই শ্রেষ্ঠ। সর্বকর্ম শৃক্ট হলে 
তোমার শরীর যাত্রা নির্বাহ হবে না” ইত্যাদি। 
আমরা পূর্ব্বে দেখেছি বেদের প্রতিজ্ঞা কি। বেদ 
্হ্ধঙ্ঞান লাভের উপায় কি তাই শিক্ষা দেন। 
আত্মজ্ঞান কাকে বলে, এবং কি উপায়েই বা উহা 
লাত হতে পারে, বেদ সেই বিষয়েই সকলকে বলে 

২১* 


(সাধন-নিষঠা 


থাকেন। বেদ বলেন, সকলের ভেতরেই পরমাত্মা 
রয়েছেন। জীবজ্ন্ত কীটপতঙ্গের ভেতর তিনি, সূর্য 
চন্দ্র গ্রহ নক্ষত্রের ভেতরও তিনি। তিনি এই সমস্ত 
স্টিকার্য্যের ভেতরে ও বাইরে ওতপ্রোতভাবে বিদ্যমান 
রয়েছেন । 

তাকে কে লাভ করতে পারে? যার দৃঢ়তা 
আছে, যে সাহসী, সেই তাকে লাভ করতে সক্ষম। 
যে ছূর্বল-দেহ, যার মন নিস্তেজ, আত্মজ্ঞান তার 
পক্ষে লাভ হওয়া কঠিন। তেজীয়ান হতে হবে) 
তা হলেই ভগবানকে লাভ করতে পারা যাবে। বেদ 
বিশেষ করে সনাতন ধর্মের বিষয়ই বলেন।' সনাতন 
ধর্মের অর্থ এই £-যে ধর্ম) কি দেবতা, কি মনুষ্য, 
সকলেরই নিত্য সম-ভাবে অনুষ্ঠেয়; যা সকল সময়ে 
এক এবং অপরিবর্তনীয় রূপে বিদ্কমান। আর স্বৃতি, 
পুরাণ, বাইবেল, কোরাণাদি দেশকাল ও পাত্রভেদে 
যুগধর্ম্বের বিষয় বর্ণনা করেন। দেঁশকাল পত্র বিবে- 
চনায় নানাপ্রকার যুগধর্মা কালে কালে জগতে প্রচ- 
দিত হয়েছে এবং হচ্ছে। আমাদের বিশ্বাস বর্তমান 
যুগধর্ম কি হওয়া উচিত তা শ্্রীরামকৃষ্ণদেব নিজ 
জীবনে দেখিয়ে গিয়েছেন। উহা সংক্ষেপে এইরূপে 
নির্দেশ করা যেতে পারে-_নিজ ধর্দ্মমতে নিষ্ঠা রাখবে 

২১১ 


গীতাতন্ব 
কিন্ত অপরের ধর্মকেও ভালবাসবে, দ্বপা করবে না। 
উহা তিনি যে, শুধু বলে গিয়েছেন) তা নয়, 
কিন্তু নিজ জীবনে উহার অনুষ্ঠান করে আমাদের 
দেখিয়েও গিয়েছেন। তিনি সাধন দ্বারা উপলব্ধি ও 
প্রত্যক্ষ করেছিলেন_-“যত মত, তত পথ।” সকল ধর্ম 
সত্য; যে যেরূপ অধিকারী, সে আপনার অনুরূপ পথ 
বেছে নেয়। 

শাস্ত্রে বলে, স্থ্টি অনাদি। স্থ্টির আদি স্বীকার 
করলে ভগবানে অপূর্তা দোষ হয়। যদি বলা যায়, 
তিনি স্থির পূর্ব্রে পূর্ণ ছিলেন, তবে স্থষ্টির পর তিনি 
পূর্তির হলেন, বলতে হয়। আর যদি বলা যায়, 
স্ষ্টির পর* তিনি পুর্ণ হলেন, তবে স্বষ্টির পূর্বে তিনি 
অপূর্ণ ছিলেন, বলতে হয়। এ উভয় পক্ষেই দোষ 
রয়েছে। পপুর্তির কথাটি স্ববিরোধী; কারণ যা 
পর্ণ হতে পুর্ণতর হল, তা বাস্তবিক অপূর্ণই ছিল, 
বলতে হয়। পূর্ণের আবার নবীন বিকাশ কি! স্থির 
আদি স্বীকার করলে আবার, তাকে নিষ্ঠুরতা দোষে 
দোষী করা হয়। দেখা যায়, জগতে কেহ ব! দরিদ্র, 
রুগ্ন ও যূর্থ ; কেহ বা ধনী, সুস্থকায় ও বিদ্বান। ভগবান্‌ 
যদি বিভিন্ন ব্যক্তিকে এইরূপ বিভিন্ন অবস্থাপন্ন করে 
কুটি করে থাকেন, তবে তাতে পক্ষপাতিতা ও 

২১৯২ 


ৃ ও | সাধন-নিষ্ঠা 
নিষ্ঠুরতা দ্লোষ অনিবার্ধ্য ক্ূপে এসে পড়ে। এই হেতু 
শাস্ত্র বলেন, স্টি অনাদি । 

যখন ইহা সৃক্মভাবে বীজরূপে থাকে, তখন ইহার 
গ্রলয়াবস্থ, যখন স্থুলভাবে প্রকাশ, তখন স্থ্টি। এক 
সৃষ্টি ও এক প্রলয় নিয়ে এক কল্প হয়। এইরপে স্থষ্টি ও 
প্রলয় প্রবাহরূপে অনাদিকাল বর্তমান। ইহা ভগবান 
ছাড়া অন্য কিছু নয়; তিনিই ইহা হয়েছন। শাস্ত্র 
বলেন, তিনি ঈক্ষণ করলেন, ( আলোচনা করলেন ) 
যে, আমি প্রজারূপে বহু হব এবং তথক্ষণাৎ এই স্থটি- 
রূপে প্রকাশিত ও বন হলেন। স্থষ্টিকার্য্যে ভগবানের 
কোন উদ্দেশ্য থাকতে পারে না; কারণ তিনি পূর্ণ। 
কাধ্যের উদ্দেখ্ট কার থাকে? যার কোনরূপ অভাব 
আছে। সেই অভাবমোচনের জন্য সে নানাভাবে কার্য্য 
করে এবং নানাবিষয়ের সাহায্য নেয়। ভগবানের কোন 
অভাব নেই। তার কিছু পাবার আবশ্যক নেই, 
কারণ, তিনি পূর্ণ। অতএব তার এই স্থৃষ্টি করবার 
কোন উদ্দেশ্টও নেই। পাশ্চাত্যের একথা বুঝতে পারে 
না। স্থষ্টির কোন উদ্দেম্ত নেই বললে তারা ভেবে 
বসে, তবে বুঝি স্থষ্টিতে কোন নিয়ম বন্ধন নেই, এটা 
একটা- পাগলামি মাত্র । উদ্দেশ্টহীন 'কোন কাধ্য যে 
হতে "পারে, ইহা তারা মনে করতে পারে এনা। 
ঠা ২১৩ 


গীতাতত্ব 


কারণ, তারা নিজেদের এবং অপর সাধারণের অপূর্ণ 
দেখে স্থির নিশ্চয় করে, উদ্দেস্টহীন কার্ধ্য সাধারণ 
মানুষের দ্বারা কোন কালে হয় না; দেখে, তাদের 
অতাৰ আছে বলেই তারা কার্য করে; সুতরাং 
অনুমান করে, সৃষ্টিকার্য্যও .এইরূপ হয়েছে। ভগবান 
কোন এক মহৎ উদ্দেশ্য দ্বারা চালিত হয়েই স্থৃটি 
করেছেন। কিন্তু অনুধাবন করে দেখলে এই যুক্তি 
ভ্রমপূর্ণ বলে বোধ হয়। কারণ, এতে ভগবান মনুস্য- 
তুল্য, এই সিদ্ধান্ত অনিবার্ধ্য হয়ে পড়ে। স্ৃষটিকাধ্যে 
ভগবানের কোন উদ্দেশ্য নেই, ইহা তার খেলা, ইহা 
তার লীলামাত্র। এখন প্রশ্ন হতে পারে, সম্পূর্ণ 
উদ্দেশ্থাহীর্ন হলে কখন কি কার্য হতে পারে? শান্তর- 
কারেরা বলেন, অবশ্ত হতে পারে। তৃষটাস্ত দেন 
যেমন বালকের কার্য্য ; বালক পথে যেতে যেতে পতঙ্গ 
দেখে তাই ধরতে যায়, উদ্দেশ্ঠহীন নানাকার্ধ্য. করে, 
ভগবানের সৃষ্িকার্ধ্যও তদ্রপ। স্থ্টিতে তিনিষ্ট মানারূপে 
এই প্রকারে সেজেছেন--ইহা তাহার খেলা বা লীলা 
মাত্র। * 

দেখতে পাই, সংসারে কেহ ধনী, কেহ দরিদ্র ; কেহ 
সুখী, কেহ ছুঃখী ; কেহ মূখ কেহ পণ্ডিত। এই বৈষমোর 
কারু কি? শাস্ত্র বলেন) ইহার কারণ কর্মা। “কর্ম 

. ২১৪ 


সাধন-নিষ্ঠা 


্ূ শাস্ত্রে অতি বিস্তৃত অর্থে বাবহত হয়েছে। শান্তর 
লেন, পৃথিবী নক্ষত্রাদিও কর্মসম্ভূত। একথার অর্থ কি? 
থানে কর্মের অর্থের কারণ বা বীজভাব হতে কার্য বা 
কাশিত অবস্থায় পরিণত হওয়া, এরূপ পরিণতিকেই 
র্মবলে। স্থৃষ্টি খন অনাদি হল, তখন স্থট্টিবৈষমোর 
রণ “কর্ম ও যে অনাদি, ইহ! আর বলা বাহুল্য । 

কর্মের ফল অবশ্যস্তাবী। যে কর্ম কর নাকেন, 
হার ফল ভোগ করতে হবেই হবে। কেউই এর 
ন্যথা করতে পারে না। চিন্তার উদয়রূপ মানসিক 
শ্েরও ফল আছে। কোন পাপচিন্তা উদ্নয় হলে তং- 
শা তার ফলম্বরূপ মন কলুষিত হয় এবং যখন এ 
পচিন্তা প্রবল হয়, তখন উহা শারীরিক কার্্যবূপে 
ইরে প্রকাশিত হয়। আমরা অনেক সময় কর্মের 
ল দেখতে না পেলেও কোন না কোনরূপে তা 
ত্মান থাকে ইহা নিশ্চিত। শরীরসম্বন্ধীয় অনিয়ম 
বাগরূপে আমাদের কষ্ট দেয়। রোগ ওষধ দ্রিয়ে উপশম 
য়। ইহাতে শারীরিক অনিয়মের ফল, উষধসেবনবূপ 
ম্ধ এক কর্মফল দ্বারা রূপান্তর ধারণ করল মাত্র। 
টি ভিন্ন কর্মের ফলই আমাদের উপভোগ করতে 
ল। কোনটির বিনাশ হল না, উত্তয় কর্মফল মিলে 
কটি কর্্মফলরূপে প্রতীয়মান হল, এইমাত্র প্রভেদ্‌। 
২১৫, 






যেরূপ নৌকার মাল্তলে দড়ি বেঁধে উভয় তীর হে 
গুণ টান্লে নৌকা! কোন তীরে দা গিয়ে নদীর মধা দিয়ে 
যেতে থাকে, সেইরূপ ছই ভিন্ন ভিন্ন কর্দের সংযোগে 
এক বিভিন্ন ফল উৎপন্ন হয়, এই মাত্র । কিন্তু কর্মফলের 
নাশ কখনও নেই । 

অনেকের বিশ্বাস, কোন এক অবতারে বিশ্বাস স্থাপন 
করলেই আমাদের সমুদয় পাপ মোচন হয়ে যায়। 
বেদাস্ত বলেন, তাহা নয়। স্বয়ং হরি, হর বা ব্রন্ষা 
তোমার উপদেষ্টা হলেও তোমার মোক্ষ তোমার নিজের 
চেষ্টার উপর নির্ভর করছে। * তবে অবতারাদি কি 
করেন? তাহারা নিজ নিজ ধর্মাপরিণত জীবন আমাদের 
সম্মুখে ' ধরে আমাদের কি করতে হবে, তাই 
দেখান। আমাদের সম্মুখে একটি আদর্শ জীবন রেখে 
দেন, যা দেখে আমরা তদক্ুরূপ হতে পারি। 
তারা আদর্শ দেখে যান এবং উহা! ষ্ুয্যাজীবনে 
পরিণত করবার সহজ উপায়ও বলে যান, যার 
প্রভাবে লক্ষ জন্মের কার্য শত জন্মে, এমন কি, এক 
জন্মে" শেষ করতে সমর্থ হয়ে মানুষ ধর্টের 
চরম সীমায় উপনীত হয়। অতএব শাস্ত্র বলেন, কর্ম ও 

্ হরিস্তে উপদেষ্টার হরঃ কমলজোহপি বাঁ। 
তথাপি তব ন স্বাস্থাং সব্ববিশ্মরণাদতে ॥ 
২১৬ 


ৃ সাধন-নিষ্ঠা 
র ফল নিত্যসম্বদ্ধ-_কার্ষ্যকারণ ম্ৃত্রে আবদ্ধ। 
[লয়কালে ইহা বীজভাবে ও স্থষ্টিকালে বিকাশভাবে 
কে; এই মাত্র প্রভেদ। 
. সচরাচর চার প্রকৃতির মানুষ দেখতে পাওয়া যায়। 
চউ জ্ঞানপ্রধান প্রকৃতির লোক। এঁরা বিচার ভিন্ন 
চান তত্বই গ্রহণ করতে চান না। লোকের কথার 
প্র বিশ্বাস করে কোন কাধ্য করতে চান না। দ্বিতীয়, 
ক্তিপ্রধান প্রকৃতির লোক। এরা কারও উপর অটল 
শ্বাস স্থাপন করে তদবলম্বনে অল্পম্বল্প বিচার করে 
কেন। তৃতীয়, কর্মপ্রধান প্রকৃতির লোক-_এ'রা পরো- 
কারাদি ধর্মই একমাত্র কর্তব্যবোধে সর্বদা কর্ম্বেরই 
ুষ্ঠান করে থাকেন। চতুর্থ, যোগপ্রধান প্রকৃতির 
[াক। এঁরা মানসিক শক্তিসমূহের তন্ন তন্ন বিচার 
'র উন্নতির চরম সীমায় উপস্থিত হন। মানুষ এই 
বটি ভাবের কোন একটি মাত্র লয়ে অবস্থান করে, 
দপি বলা ভ্রম। তবে উহার মধ্যে একটি ভাব প্রত্যে- 
র মনে অধিক প্রবল থাকে, এই মাত্র। যার যে 
ব প্রবল থাকুক না কেন, এবং যে, যে পথ অবলম্বন 
র চলুক না কেন, উন্নতির চরম সীমায় সকলেই 
[বানের সহিত একতা উপলব্ধি করে থাকে এবং শাস্ত্র 
একত! উপলব্ধির চারটি বিশেষ পথ উপদেশ কক্রে 
রঃ ২১৭ 


থাকেন। উহাদের নাম জ্ঞানযোগ, ভক্তিযোগ, কর্যো 
ও রাজযোগ | ভগবানের সহিত আমাদের যুক্ত করে 
বলেই এই চার মার্গ “যোগ' শব্ষে অভিহিত হয় 
তন্মধ্যে সংক্ষেপে কর্ধযোগের বিষয় বল্ছি। অহংভাব 
পরিত্যাগ করে বাসনাশুন্ক হয়ে ভগবানের জন্য কর্ম 
করার নাম নিষ্ষাম কর্্ম। আহার বিহার প্রভৃতি যে কোন 
কর্ম করবে, ভগবানের জন্য করছি, এই ভাব মনে 
করবে।, আমি কিম্বা আমার জন্য ইহা করছি, ইহা 
না ভেবে ভগবানের জন্য করছি, এই ভাববে । 


২১৮ 


দ্বাদশ অধ্যায় 
কর্মের দ্বিবিধ রূপ 
(রামকুঞ্ণ মিশন সভা, ১০ই সেপ্টেম্বর, ১৮৯৮) 


শাস্ত্রে কর্ধশব ছুই অর্থে ব্যবহত হয়েছে। সাধা- 
রণত?। মানুষ যা কিছু করে, তাকেই কর্ম বলা 
হয়েছে, কিন্তু শাস্ত্র যেখানে বলছেন, কর্ম হতে 
পৃথিবী উৎপন্ন হয়েছে--কর্পা হতে সূর্য্য চন্দ্র 
হয়েছে, সেখানে কর্মশশব, যে অচিস্তনীয় কার্যয- 
কারণ প্রবাহ সমগ্র জগতকে বীজাবস্থা হতে বিশিষ্ট 
নামরূপদ্বারা প্রকাশিত করছে, সেই কাধ্যকারণ 
প্রবাহকে লক্ষ্য করে ব্যবহৃত হয়েছে। অৃ্ট অবস্থা 
হতে বস্তর দুষ্ট অবস্থান্তরে পরিণমনকেই কর্ম বলা 
হয়েছে, অতএব পরিবর্তন ও পরিণমন শক্তিই কর্মের 
প্রধান লক্ষণ। গীতা সেইজন্তই বলেন। “তৃত- 
ভাবোস্ভবকরো বিসর্গ; কর্মসংজ্রিত_অর্থাৎ যে ত্যাগ বা 
বর্জনের দ্বারা ভূতাস্তরের উৎপত্তি হয়_তাহাই কর্ণ। 

কর্ম দ্বিবিধ-সকাম ও নিষ্ধাম। শাস্ত্র ক্লোন 

২১৯ 


গীতাতত্ব 

কর্মাকেই মিথ্যা বলেন নি। অনেকে বলেন, “সংসারে 
থেকে ভগবান্‌ পাওয়৷ যায় না। সংসারে মানুষ যা 
কিছু কর্ম করছে, সব মিথ্যা। তাদিয়ে কখনও 
ভগবদ্ধর্শন হতে পারে না। সর্ববকর্ম সঙ্নাসই ভগবৎ- 
প্রাপ্তির একমাত্র উপায়” কিন্তু ইহা সম্পূর্ণ ভুল.। শাস্ত্র 
অবস্থাবিশেষে কর্তব্য নির্দেশ করেছেন মাত্র। 
সংসারকে ছোট, সন্ন্যাসকে বড় করেন নি। অবস্থা- 
বিশেষে সংসার কারও পক্ষে ঠিক আবার সন্ন্যাস 
কারও পক্ষে ঠিক, এই কথা বলেছেন। সকল 
কর্মই - আমাদিগকে ভগবানের দিকে লয়ে যাচ্ছে। 
কোন কর্মই মিথ্যা নয়। যাহা অত্ন্ত স্বার্থপর কর্ম, 
তাহা করতে করতেও লোকে নানারূপে ভুগে বন্ু- 
দগিতা লাভ করে ও ক্রমে নিষ্কাম কর্মের দিকে অগ্রসর 
হয়। এ নিষ্ধাম ভাব আবার কালে পূর্ণতা প্রাপ্ত হলে 
স্বভাবতঃ সন্ন্যাস এসে উপস্থিত হয়। ইহাই. যথার্থ 
সন্ন্যাস। ইহা! ভোগ ও ত্যাগ, এই ছুই লক্ষণের 'অধিকার- 
ভুক্ত নয়। ইহ! এ ছুয়ের বাইরে। প্রথম হুতে একে- 
বারে কর্মত্যাগ করে সন্্যাস গ্রহণ করলে মানুষ 
অগ্রদর হতেই পারবে না। পরমহংসদেব এজন্যই 
বলতেন, “চর্মরোগ আরোগ্য হলে শুক চর্ম শরীর 
হতে আপনিই খসে পড়ে। কিন্তু আরোগ্য লাভ 

২২, 


কর্মের দ্বিবিধ রূপ 


হবার পূর্বেই এ চর্ম উঠাতে প্রয়াস পেলে যন্ত্রণা, 
রক্তপাত ও ক্ষতবুদ্ধিই হয়ে থাকে ।” 

তিনি এ কথা আরও বিশদভাবে বুঝিয়ে বলতেন, 
“সংসার, সন্গ্যাস, কর্ম, জ্ঞান প্রভৃতি সকলই মনুস্তের 
উন্নতির মাত্রায় আপনা আপনি এসে উপস্থিত হয়, 
সেইজন্য যার যেরূপ শরীর ও মনের অবস্থা, তার 
পক্ষে সেইরূপ কর্মের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যে ছেলের 
যেরূপ স্বাস্থ্য» তা বুঝে মা তার জন্য উপযোগী 
পথ্য ব্যবস্থা করেন। আধ্যাত্মিক জগতেও সেইরূপ। 
কোন কর্ম্মই ধর্ম ছাড়া নয়, তবে যার যেরূপ অধিকার, 
তার পক্ষে সেইরূপ ধর্মের ব্যবস্থা আছে। একরপ 
 ধর্মাচরণ সকলের পক্ষে উপযোগী হতে পারে না” 

শাস্ত্রে ছটি মার্গের বর্ণনা আছে-_প্রবৃত্তি ও নিবৃত্তি। 
যার স্ুখভোগের ইচ্ছা প্রবল, সে ধন্মানুষ্ঠান করতে 
গেলে স্বভাবতঃ যাগযজ্ঞাদিলক্ষণ সকাম কর্মে প্রবৃত্ত 
হবে। সুখাদি ভোগের পর, কালে যখন সে দেখবে 
তার প্রাণ অন্ত কিছু উচ্চ বস্তু চাইছে, তখন সে 
আপনিই উহা ছেড়ে নিবৃত্তিমার্গ আশ্রয় করবে। 
রাজা যযাতি পুরুর নিকট হতে তার যৌবন গ্রহণ 
করে সহন্র বংসর ভোগ করতঃ যখন আবার তাকে 
এ যৌবন ফিরিয়ে দ্রিলেন, তখন বললেন, “কাম্যবন্ত 


২২১ 
১৫ 


গীতাতব: 3 
সকলের উপভোগে কামনা কখনও পরিতৃপ্ত হয় না, বরং 
অগ্নিতে ঘ্বৃতাছুতি দানের স্ায় উহা বৃদ্ধিই পেতে 
ধাকে।” বযাতির এই জ্ঞান. ও বৈরাগ্য সুজ বসর 
বিষয়োপভোগ ও সকাম কর্মের দ্বারাই উত্পঠ হয়েছিল। 
প্রবৃত্তিমার্গ যেন ছাতের সিড়ি স্বকুি 
করে নিবৃত্তিমার্গে ছাতের উপরে উঠে 
প্রশ্ন হতে পারে, কার কিরূপ কর্ম করা উচিত) 
তাকে নির্ধাণ করবে? ইহা: নির্ধীরপ করতে 
একমাত্র সদ্‌গুরুই সক্ষম । যার ধেরপ মানসিক অবস্থা 
গুরু তার জন্য সেইরূপ ধর্ম ব্যবস্থা করেন! 
গুরকরণ করতে হলে গুরুকে বিশেষ পরীক্ষা 
করে নিতে হয়। ইহাই শাস্ত্রের মত। গুরুর পুত্রকেই 
গুরু করতে হবে, ইহা সংশাস্ত্ান্থমোদিত নয়। শান্ত 
বলেন, গুরুকে বিশেষরপে দেখে তবে তাতে 
বিশ্বাস স্থাপন -করবে। কিস্তু একবার বিশ্বাস করলে 
আর কোনরূপ সন্দেই করবে না। পরমহংসদেব তার 
নিজের সম্বন্ধে বলতেন, «খুব বাজিয়ে নে।* বিশেষ 
পর্যালোচনা করে দেখলে আমরা দেখতে পাই যে, 
তিনি শাস্ত্র ছাড়া কোন কাজ করতেন না। তার 
জীবন বেদবেদান্তের টাকান্বরূপ। তার ম্যায় ধর্ম্মবীর 
অহাপুরুষগণ ধর্মরক্ষা করতেই আঙেন। হিন্দু গ্রীষ্টা 
২২২ 





ৃ র্নের দিবিধ কী . 
গেছেন: যে; তারা পুর্ব্ব পূর্ব শান্তর ও ধর্ম রক্ষণের 
জন্যই এসেছেন, কোনও শীপ্ বা টা জম 
তাদের শরীর পরিগ্রহ হয় নি। ৷ 

নিষ্কাম কর্টের অর্থ স্বারথশন্য: হয়ে ক ক, 
আপনাকে ভুলে নিজের সুখের দিকে দৃষ্টি না 
করে ভগবানের জন্য কাজ করা। সকল অবস্থাতেই 
স্বা্থশূহ্য হয়ে কাজ করতে গারা যায়। স্ছার্শন্ঠ হয়ে 
কাজ করার নামই কর্পযোগ।. এখানে . প্রশ্ন হতে 
পারে, স্বার্থপরতা কখনও কারও কি মিঃশেষে ত্যাগ 
হতে পারে? আমরা দেখতে পাই, কারও স্বার্থ 
নিজের শরীর মনের উপরেই আবদ্ধ, কারও নিজের 
পরিবারের উপরে, কারও দেশের উপর, আবার কারও 
বা! সমুদয় জগতে বিস্তৃত। বুদ্ধদেব একটা ছাগলের 
জন্য প্রাণ দিতে গিয়েছিলেন। কেউ কেউ বলেন, 
তাতেও কি স্বার্থপরতা নেই? অপরের জন্য এরূপে 
প্রাণ বিসর্জনে যে আনন্দ লাভ হয়, উহাই তার 
্ার্থ। উত্তরে বলা যেতে পারে, স্বার্থে এরূপ বিস্তৃতি 
ও নিঃস্বার্থ, একই বস্ত। যার মন বুদ্ধি নিজের : 
শরীর মনের উপর আবদ্ধ, সেই থার্থ স্বার্থপর ও 
কপাপাত্র। নিজের শয়ীর হেড নগরে হত 

২২৩ 


গনীতাতত্ব 


সখী ও ছুঃখে ছাখী হওয়া রূপ স্ার্থই নিথার্থতা নামে 
নির্দিষ্ট হয়ে থাকে। কারণ, ে স্বার্থ বন্ধনের কারণ 





হয়, যার ঘাত প্রতিবাত সমগ্র জগৎ : ্ষুড়ে হতে 


থাকে । একেই ব্রহ্ষজ্ঞানাবস্থা বা মুক্তি বে: 
আমরা তিন প্রকারে অপরের উপ 
পারি। -কেউ ক্ষুধার্ত হলে অন্ন দিয়ে : 
নিবৃত্তি করতে পারি। এ উপকার স্থল ::. রসন্দ্ীয় 
ও ক্ষণস্থায়ী, ছয় ঘণ্টা পরে আবার তার ক্ষুধার উদ্রেক 
ও অভাব বোধ হবে। দ্বিতীয়ত» তাকে এরূপ 
শিক্ষা দিতে পারি, যাতে সে সর্বদা উপার্জন করে 
নিজের জীবনোপায় নিজে করে নিতে পারে। এই 
উপকার অনেক দিন স্থায়ী ও মানসিক । তৃতীয় £-- 
আধ্যাত্মিক উপকার; ইহার ফল আরও বিস্তৃত । 
এর প্রভাবে তার মনের সর্বপ্রকার অভাব-বোধ 
২২৪. 








কর্মের বিবিধ রূপ 


চির জীবনের জন্য নিবৃত্ত হয়ে যায়। এইরূপ 
উপকার ধর্োক্সত মহাপুরুষেরাই কেবলমাত্র করতে 
পারেন। 

একদিন ভগবান ঈশ! রৌদ্রে ধর্মাক্ত হয়ে একটি 
কূপের নিকট বসে ছিলেন। একজন নীচজাতীয়া 
স্ত্রীলোক জল নিতে এল। ঈশা তার নিকট জল 
পান করতে চাইলে সে আশ্চর্য্য হয়ে বললে, আমার 
হাতে আপনি জলপান করবেন ? 

_ প্রত্যুত্তরে তিনি সম্মতি জ্ঞাপন ও জলপান করে 
বললেন, “এর বিনিময়ে আমি তোমাকে যে জল দিব, 
তাতে তোমার 'চিরজীবনের মত তৃষ্ণা মিটে যাবে ।” 
এরপ দৃষ্টান্ত আমাদের শাস্ত্রেও শ্রীকষ্ণ, বুদ্ধ প্রভৃতি 
অবতারদের চরিত্রে এবং পওহারীবাবা, ত্রেলঙ্গ স্বামী 
প্রভৃতি সিদ্ধপুরুষগণের জীবনেও দেখতে পাওয়া 
যায়। 

আমরা যে কাজই করি না কেন, ভগবানের জন্ত 
করছি, নিজের জন্য নয়, এইরূপ ভেবে করতে 
হবে। সামান্ত রাস্তা ঝাঁট যে দেয়, সে যদি সর্বব- 
সাধারণকে ভগবানের অংশ ভেবে তার সেবার জন্য 
রাস্তা ঝাঁট দিচ্ছি এইরূপ চিন্তা করে, তা হলে তার 
আর এ কর্শে কোন কষ্ট বোধ হয় না। এরূপ *কোন 
২২৫. 


নেই, যা পূরণ ভালু জবা যাতে কির 
দোষ নেই। আমরা এই যে: ভগবচচার্টী করছি 
তাতেও সকলে উপকৃত হচ্ছে না; মুখনিঃস্ৃত উ্ 
বায়ূতে বায়ুমাগরে ভাসমান কত কাঁটাদুরুত্যু হচ্ছে! 
মকল কর্ণহই এরূপে ভালমন্দমিশ্রিত হলেও যদি 
নিস্বার্থভাবে করা যায়, ভা হলেটউহার দোষ 
আমাদিগকে স্পর্শ করে না। শরীর সু 
আহার শয়নাদি সম্বন্ধেও যদি ভাবা যা 
শয়নাদির উদ্দেশ্য শরীর রক্ষা, শরীর থাকণ্চে তবে ভগবং 
সাধনা হবে; অতএব আহার শয়নাদিও ভগবংপ্রান্তি 
জন্যই করছি, তবে এগুলিও নিষ্কামভাবে অনুষ্ঠিত 
হল। সকল কার্য্যে এরূপ করলে কর্ম্মফ্ের দিকে 
আর দৃষ্টি থাকে না ও তজ্জনিত সুখছুঃখে -'মাদিগকে 
আর আক্রান্ত হতে হয় না। কর্ণ এইরূ:; ১ বন্ধনের 
কারণ না হয়ে অনুষ্ঠাতার মুক্তির কারণ হয়ে 
াড়ায়। 

আমরা পূর্বেই বলেছি কর্ম অনাদি এবং কর্ণের 
দ্বারাই শান্তর জগতে বৈষম্যের ব্যাখ্যা করেছেন। কর্মের 
জন্তই এই বৈষম্য হয়েছে। যার যেরূপ কর্ম, সে 
সেরূপ অবস্থ। পেয়েছ। কেউ কেউ এই বৈষম্যের 
অন্য কারণ নির্দেশ করে বলেন, জন্মসময়ে গ্রহাদির 
২২৬ 












কর্মের ছিবিধ বগ 


শুভ বা. অশুভ যেরূপ সস্থান থাকে, মানুষ সেরূপ 
অবস্থাপন্ন হয় । - শুভ গ্রহ থাকলে উন্বম জন্ম হয়, অণ্ডভ 
গ্রহ থাকলে কুৎমিত জন্ম হয়। . এর উত্তরে তাকে 
প্রশ্ন করা যেতে পারে যে আমারই ব! অশুভগ্রহে জন্ম 
হল কেন এবং অপরেরই বা শুভগ্রহে কেন জন্ম হল? 
এই শুভাশুত গ্রহ আমার জন্মের গতি নির্দেশক হতে 
পারে, কিন্তু কারণ হতে পারে না। এর কারগ 
অবশ্য আর কিছু আছে, যার জন্ত আমার অগুভ 
জন্ম হচ্ছে। শান্্ জীবের পূর্ববজগ্মের কর্ণকেই 
এ কারণ বলেন। কেউ কেউ আবার বলেন, 
পিতামাতার মানসিক ও শারীরিক অবস্থা সম্তানে 
সংক্রমিত হয়। পিতামাতার রোগাদি পর্যান্ত সন্তান 
প্রাপ্ত হয়। অতএব পিতামাতাই পূর্বোক্ত বৈষম্যের 
( ম5:9016275115080018810) কারণ।  উত্তনে 
বলা যেতে পারে যে, তা হলে সন্তানের জান 
পিতামাতার মানসিক শক্তির ক্ষয় হওয়া উচিত, কিন্ত 
তা হতে ত দেখা যায় না। আবার সামান্যশক্তিশালী 
পিতামাতা হতে কখন কখন অদ্ভুতগুণসম্পন্ন সন্তান : 
জন্মাতে দেখা যায়। উহাই বা কিরূপে হয়? শুদ্ধো- . 
দনের ন্যায় অনেক ক্ষত্রিয় রাজ। ছিলেন; কিন্তু তাদের 
কারও না হয়ে 'রাজা শুদ্ধোদনেরই কেন দধদেবের 
২২৭ 


গীতাত 


গ্ভায় উদারহৃদয়। বাল্যকাল হতেই সমাধিমগ্ন সন্তান 
উৎপন্ন হল? ভগবান বুদ্ধ, ঈশা প্রভৃতি অবতার 
পুরুষ সকলের কথা ছেড়ে দিলেও মানব সাধারণের 
ভেতর এরূপ ঘটন৷ নিত্য হতে দেখা যায়। কোথা 
হতে এরূপ হয়? কাধ্য কারণ হতে অধিক 
শক্তিসম্পন্ন কখনই ত হতে পারে না, তবে কেন 
এরূপ হয়? দেখা যায় কর্মবাদেই কেবলমাত্র এরূপ 
প্রশ্ন সকলের মীমাংসা পাওয়া যায়। মানবের প্রকৃতিই 
এরূপ যে, অন্যের উপর দোষারোপ করতে পারলে 
নিজের স্কন্ধে কখন দোষ নেয় না। সেজন্যই সংসারে 
তার ছখ কষ্ট পাবার কারণ স্বরূপে সে-হয় ভগবান, 
নয় গ্রহনক্ষত্র, নয় পিতামাতা! ইত্যাদিকে নির্দেশ করে 
, নিশ্চিন্ত হয়ে বসে! স্বয়ং যে সে তার এরূপ কষ্টের 
কারণ, তা বলা দূরে থাকুক একবার মনেও আনে না! 
শান্ত্রই তখন তার চক্ষে অঙ্গুলি প্রদান করে বলে, 
তোমার কষ্টের কারণ তুমি নিজেই, অপর কেউ নয়। 
কিন্তু তাতে ভয়ের কারণ নেই। যে শক্তিদ্বারা তুমি 
-এই কষ্ট পাচ্ছ তা দ্বারাই আবার তুমি উন্নত হতে 
পারবে! ছুষ্ষর্দ করেছ, তাতে ভয় কি? আবার 
চেষ্টা কর, অনন্ত শক্তি তোমার রয়েছে, তোমার এ 
অবস্থার নিশ্চিত পরিবর্তন হবে।. বেদ বলেন, “রিষ্টো 


৯২৮ 


কর্মের বিবিধ রূপ 


বলিষ্টো মেধাবী” পুরুষেরই ধর্ম্লাভ হয়। সাহস চাই, 
তেজ চাই; নিজীব মন ও শরীরের দ্বারা ধর্ম লাভ হয় 

না। নিভীকি হৃদয়ে আবার চেষ্টা কর, কর্ণ কর, 
ধর্মপথে নিশ্চয় অগ্রসর হবে। 


২২৯ 


ব্রয়োদশ অধ্যায় 
কর্মমা-রহম্ত 
(রামকৃষ্ণ মিশন সভা, ১৮ই মেপ্টেম্বর, ১৮৯৮) 


নিক্বার্থ হয়ে ফলাকাক্ষা না করে যে কর্ম 
করা যায়। তাকে কন্মযোগ বলে। কর্মমফলের 
আকাঙ্গায় কর্ম করলে সুখ ছুঃখাদি কর্মফল ভোগ 
করতেই হবে। একটি কর্ম আবার অন্য কর্ম উং- 
পান করবে। এরূপে কর্মফলভোগ নিয়ত চলতে 
থাকবে। এখন প্রশ্ন হতে পারে, যদ্দি কর্ম করলেই 
তার ফলভোগ অবশ্যন্তাবী হয়, তবে কি মুক্তির 
সম্ভাবনা নেই? শাস্ত্র বলেন, আছে। নিষ্কাম হয়ে 
নিঃস্বার্থ হয়ে কর্ম কর। কর্মফলের প্রতি লক্ষা না 
রেখে কন কর। তা হলে আর কর্মফল লিপ্ত 
হতে হবে না। বলতে পার, বাঁসনাশৃন্ত হয়ে কর্ম 
কি করা*যায়? কোন না কোন রাসনা হতেই ত 
কন্মের জম্ম। ভগবদধর্শম করব, এটাও ত একটা 
বাসনা। উত্তরে যা পরমহংসদেব বলতেন তাই বলি, 
“্ভগবদর্শনবাসনা বাসনার মধ্যে নয়। যেমন মিছরি 

২৩৭ 





কম্ম-রহস্কঃ 
মিষ্টির মধ্যে নয়।” অর্থাৎ মিষ্টান্ন ভক্ষণের যে 
অপকারিতা, তা মিছরিতে নেই বললেই হয়। তবে 
কি কর্ম করাই দোষ? কণ্্স কি তবে বন্ধনের 
উপর বন্ধন এনে মানুষের শ্রেষ্ঠতম জীবনোনদেশ্ের 
পথে নিয়ত বিদ্বু বাধাই নিয়ে আসে? শান্তর বলেন,_ 
না, কন্মে কোন দোষ নেই। তবে আমরা যে 
ভাবে কর্ম করি, সেই ভাবান্ুযায়ী উহা গুণ ও 
দোষবিশিষ্ট হয়। কম্মে স্বভাবতঃই যদি দোষ থাকত, 
তবে অত্যাচারীর হস্ত হতে ছূর্বলকে রক্ষা করবার 
জন্য নরহত্যা করেও মানুষ বীরাগ্রণী বলে পরিচিত 
হত না। অবলার প্রাণ ও সতীত্ব রক্ষার জন্য 
লম্পটকে হত্যা করেও মানুষ আমাদের পুজনীয় 
হত না, অথবা দারিদ্র্যতুংখ-কাতর সহাদয় পুরুষেরা 
নিজ আত্মীয়বর্গের স্থুখে উপেক্ষা, করেও সমাজে 
যশোভাগী হতেন না। *ভগবংপ্রসাদ লাভ করে 
জীবনের চরম সার্থকতা শেখবার ও শেখাখার জন্য 
আত্মীয় সমাজ প্রভৃতি সমস্ত উপেক্ষ। করে সন্গ্যাসি- 
বর্গ আমাদের শী্ষস্থানীর হয়ে থাকতেন না। 
অতএব দেখা যাচ্ছে, হিংসা হত্যারূপ কর্ণ ও যখন 
নিজ স্বার্থের জন্ত কৃত না হয়ে কোন এক মহছুদেশ্যের 
জন্য সাধিত হয়, তখন কর্তা দোষভাগী হয় ন!। 
ই ২৩১ 


ঈীতাতত্ব 


অতএব কর্মে কোন দোষ নেই। আমাদের 
উদ্দেশ্য অনুযায়ী কর্ম ভাল বা মন্দ হয়ে থাকে__ 
কর্শের স্বব্ূীপে কোন দোষ নেই। অগ্নিতে রন্ধন ও গৃহ- 
দাহাদি উভয় কার্যই হচ্ছে, তাতে অগ্নির কোন 
দোষ নেই। ন্র্য্যের প্রতিবিম্ব, সকল জলে পড়ছে, 
কিন্তু জলের নির্্মলতা অনুসারে প্রতিচ্ছায়ার তারতম্য 
হয়ে থাকে, এতে স্ৃর্য্যের কোন দোষ নেই। তবে 
কিরূপে কশ্ম করলে দৌষভাগী হতে হবে না? 
শান্ত্র বলেন, ঘদি স্বার্থ না থাকে এবং কর্মমফলে 
আসক্তি না থাকে; কর্মফলে আসক্তি না থাকলে 
স্থখ বা. ছুংখরূপ ফল উৎপন্ন হলেও কর্তার মন 
বিচলিত হবে না। সুতরাং তা আর বন্ধনের 
কারণ হবে না। 

দেখা গিয়েছে, বাসনা হতেই কর্খের জন্ম । 
নিজ নিজ মনের দিকে' দৃষ্টি করলে মনে নানা 
বাসনা রয়েছে দেখা যায়। এমন কি, মনটিকে 
বাসনাময় বা নানা বাসনার সমষ্টি বলে বোধ হয়। 
. সমুদয় রাসনা দূর হলে মনের অস্তিত্ব থাকবে কি 
না সে বিষয়েও সন্দেহ উপস্থিত হয়। আবার দেখা 
যায় বাসনার সকলগুলিই সমান তীব্র নয়। কোনটি 
“এখনই সম্পন্ন হউক মনে এইরূপ হয়; কোনটি 

২৩২ 


-. কর্ম-রহস্ত 
হলে ভাল, না হলেও ভাল--অপর একটি ন৷ 
হয় তো ভাল হয়, এইরূপ মনে হয়। এই প্রকারে 
মন ভিন্ন ভিন্ন বাসনা সম্বন্ধে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে অবস্থিত 
দেখা যায়। বাসনাটি মনে উঠলেই আবার কার্য্য হয় 
না। এক দিন, ছু দিন, দশ দিন উঠতে উঠতে 
একদিন মন বলে, এটি না হলেই নয় এবং শরীর ও 
ইন্দ্রিয় সমূহকে উহা যাতে সফল হয়, তিষয়ে 
নিয়োগ করে। এরূপ নিয়োগকেই আমরা সচরাচর কর্ম 
বলে থাকি। অতএব ঘনীভূত বাসনাই কর্্মরূপে 
পরিণত হয়ে পুরুষকে ন্ুখছুঃখরূপ ফল এনে 
দেয় এবং সেই সুখ ছুঃখময় কর্ম আবার অপর 
একটি সংস্কারের জনক হয়। মনে সঞ্চিত লুঙ্ষ্ম 
বাসনা সকলের নামই সংস্কার। এ সংস্কার সকলের 
সমান নয়। কারও কোনটি বাল্যকাল হতে 
প্রবল। কারও কোন কোন সংস্কার আদৌ নেই। 
কেউ বা স্ুুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে আজীবন নৎকার্ধাই 
করে গেল। আবার অন্ত কেউ কুসংস্কার-চালিত 
হয়ে কুকার্য্যকরত; লোকের নিন্দাভাজন হয়ে গেল। 
কেউ বা বুদ্ধিমান, ধাশ্মিক, যশন্বী, কেউ বা তার 
ঠিক বিপরীত হল। 
কোথা হুতে সংস্কার এত ভিন্ন ভিন্ন হল? 

২৩৩ / 


বাল্যকাল হতেই যখন কাকেও সত, কাকেও 
অসশ দেখছি, তখন বাসনা ঘনীদ্ভৃভ হয়ে মং 
বা অসশ সংস্কারূপে পরিণত হবারই বা সময় 
কোথায়? অথবা কর্ম ও সংস্কার যদি বৃক্ষবীজসম্বন্ধেই 
গ্রথিত ও প্রবাহিত হয়ে থাকে, তবে সে কর্মমই বা 
কোথায়, যা শৈশবেও সংস্কারূপে দেখা দিতে 
পারে? শাস্ত্র বলেন, পূর্ববজন্মকৃত কর্ম্মই বাল্য- 
সংস্কাররূণ্ে দেখা দেয়। পূর্ব জঙ্গের সৎ বা অসং 
অভ্যাস ইহজন্সের ভালমন্দ সংস্কাররূপে প্রকাশিত 
হয়। এই বাল্যসংস্কারসমৃহকে আমরা “ন্বভাব' কথায় 
বিপরীত অর্থ কল্পনা করে কখন ভগবানে, কখন 
ৃষ্টিকার্ধ্যে দোষারোপ করে থাকি। কখনও স্বভাব- 
শব্দ কারণহীন অর্থে প্রয়োগ করি এবং কখনও বা 
কোন এক অদৃষ্ট অনুভূত কারণ, যার হস্তে 
মান্ুব বন্তরত্বরূপ হয়ে রয়েছে এরূপ অর্থে প্রয়োগ 
করি। এরপে মানব কুসংস্কারভারবাহী ঘোরতর 
আদৃষ্টবা্দী .হয়ে বা কার্ধ্যকারণপ্রবাহের মূলোচ্ছেদ 
করে নাস্তিকতার পথ অবলম্বন করে যথার্থ সত্য 
হতে বনুদুরে অপনীত হয়। 

কর্মবাদ সত্য হলে পুনর্জন্ববাদও তার সঙ্গে 
অবস্ত সত্যরণে উপস্থিত . হয়। মৃত্যুকালে আতা! 

২৩৪ 


কর্ধ-রহস্তয 
[ক' দেহ হতে গেগ্লাস্তরে আশ্রয় গ্রহণ করেন। 
[ল দেহ পড়ে থাকে কিন্তু লৃল্গা শরীর সেই জন্মের 
মুদয় সংস্কার নিয়ে তহুপযোগী দেহ গঠন: করে। 
সই নবীন দেছে তার পূর্ববজন্মের কর্মফল আবার 
রিস্ষুট হয়। আমরা দেখেছি, পিতামাতার 
দাষগুণ সম্ভানের দেহ ও মন আশ্রয় করে। তার 
গরণ, সন্তানের কার্যাফল, যে পিতামাতা তাকে 
দরূপ দোষ বা গুণযুক্ত সংস্কারসমূহ পরিস্ফুট হবার 
টপযোগী দেহ দিতে পারেন, সেইরূপ পিতামাতার 
নকটেই তাকে আকর্ষণ করে। শাস্ত্র বলছেন, 
জাক যেমন এক পাতা হতে অন্য পাতা আশ্রয় 
করেঃ আমরা সেইরূপ এক কর্ম্ম হতে কম্মাস্তর আশ্রয় 
চরে থাকি। অতএব কন্মশ এরূপে করতে হবে, 
যাতে ক্রমে নিম্নতর হতে উচ্চতর কর্ম অবলম্বন 
করতে পারা যায়। আবার জর্জোক যেমন অপর 
একটি অবলম্বন গ্রহণ না করে পূর্ব অবলম্বন ত্যাগ 
করে না, সেরূপ এক কর্মআশ্রয় না করে অন্ত কর্ম 
ত্যাগ করা যায় না। ৪8 
নীচ হতে উচ্চ কর্ম কিরূপে অবলম্বন করা যেতে 
পারে? মহত হতে মহত্বর উদ্দেশ্য অবলম্বন কর) 
দেখবে, তোমার 'কম্মগ উচ্চ হতে উচ্চতর স্তরে 
২৩৫ 


গবীতাতত্ব 


প্রবাহিত হচ্ছে। একেবারে সর্বের্বাচ্চ উদ্দেশ্ত আশ্রয় 
করে কম্ম করতে পারছ না বলে হতাশ হয়ো না। 
ধীর দুঢ়পদে, অসীম সাহসে বুক বেঁধে শনৈঃ শনৈঃ 
ভগবানের প্রসাদ ও সাক্ষাৎকার লাভরূপ জীবনের মহান্‌ 
উদ্দেশ্থের পথে অগ্রনর হতে হবে । 

আমাদের অনেকেরই একটা ভুল ধারণা আছে যে, 
সংসারে থাকলে ধর্ম হয় না, ভগবান লাভ হয় না। 
সংসার কাকে বলে? যে বস্তু আমাদিগকে ঈশ্বরের 
দিকে অগ্রসর হতে দেয় না, তাই সংসার নামে 
অভিহিত হয়। পূর্ববজন্মকৃত যে সকল সংস্কার আমাকে 
ঈশ্বরপথে অগ্রসর হতে দিচ্ছে না, সর্বদা সত্যো- 
দ্বেন্ হতে বিচলিত করছে, তাই আমার সংসার। 
এইরূপ ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির ভিন্ন ভিন্ন সংসার বর্তমান 
রয়েছে। কারও কাম, কারও ক্রোধ, কারও 
ধনচিস্তা ইশ্বরপথের কণ্টক। এইরূপ বিশেন্ব বিশেষ 
সংসার হতে মনের গতি ফেরাতে কোন উচ্চ উদ্দেশ্য 
অবলম্বন করতে হবে। এরূপ করলেই, যে কর্্ম- 
আত ' এতকাল নীচের দিকে যাচ্ছিল, তার বেগ 
ফিরে অন্য দিকে চালিত হবে এবং যা পূর্বে 
ঈশ্বরপথের প্রতিবন্ধক ছিল, তাই আবার ঈশ্বরপথের 
সহায় হয়ে ধাড়াবে। . সংসারে থেকেই এর্নপ 

২৩৬ 


কম্মরহস্ত 
[তে হবে। আমাদের সকলেরই ভেতর মৃহাশক্তি 
মান রয়েছে। অজ্ঞানে আবৃত আছি বলেই 
মরা তা বুঝতে পারছি না। শারীরিক ও 
নসিক শক্তির অপব্যয় না করে উচ্চতর পথে চালিত 
(তে হবে; তা হলেই আমরা ঈশ্বরের দিকে 
গ্রসর হতে পারব। দেখ! গিয়েছে, কন্মে কোন 
শষ নেই ; দোষ আছে কেবল যে উদ্দেশ্য নিয়ে আমর 
মম করি ভাতে; কর্তব্য জ্ঞানে কর্ম কর, কন্মমকে 
লবেসে কর্ম কর, ফলের দিকে লক্ষ্য রেখো না। 
। হলে কন্মণ আমাদিগকে ঈশ্বরের দিকে নিয়ে 
বেই যাবে। ঈশ্বরের স্ৃষ্টিবূপ খেলার ভেতর বন্ধন 
স্ত হবার, তাকে পাবার এই প্রণালী বিদ্যমান 
যেছে। এরূপে তার দিকে অগ্রসর হতে 
বে। 
এরূপে কন্ম করলে কালে যথার্থ নি'স্বার্থত৷ 
সে উপস্থিত হবে। প্রশ্ন হতে পারে, সম্পূর্ণ 
ঃম্বার্থ হলে আর কি সে কোন কনম্মণ করতে পারে 
করে থাকে? শান্ত বলেন, সমুদ্রবৎ গম্ভীর, 
মেরুবৎ স্থির নিংস্বার্থ পুরুষ কেবল জগতের কল্যাণের 
মিত্ত কন্ম করেন। আব্রন্স্তন্ব পর্যাস্ত সমস্তই সাক্ষাৎ 
গবান জেনে তিনি সেই বিরাট পুরুষের সেবা করেন। 
২৩৭ ” 


রি 


১৬ 


: প্রশ্ন হতে পারে, যদি কন্মই আমাদিগকে বিশেষ 
বিশেষ পিতামাতার দ্বারা দেহ ধারণ করায়, তা 
হলে অবতারাদি সম্বন্ধে যে শান্ত্প্রমাণগ আছে, যে 
তারা পূর্ব পূর্বব সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে পৃথিবীতে জন্ম 
গ্রহণ করেন, পূর্ব পুর্র্ব বারের সহ্ধস্মিণীই পুনরায় 
তাদের সহিত জন্মগ্রহণ করে থাকেন, তাদের মধ্যে 
এই মিত্যসন্থন্ধ কিরূপে স্থাপিত হয়? ইহা কি সৃষ্টি- 
প্রণালীর একটি বিশেষ নিয়ম? কার্য্যকারণময় কর্ম- 
প্রবাহের বেগ জগতের সর্ধত্র ধাবিত রয়েছে, এর 
মধ্যে বিশেষ নিয়ম কিরূপেই বা সম্ভবে? আবার 
মনুষ্যদূহ ধারণ করে ভগবান যখন মনুষ্যুকে শিক্ষা 
দিতেই অবতীর্ণ হন, তখন নিজের সম্বন্ধে একটি বিশেষ 
নিয়ম প্রবর্তন না করলে তার শিক্ষাপ্রদাীনেরই বা 
সার্থকতা থাকে কোথায়? ন্বল্পশক্তি ভিন্ননিয়মাধীন 
মানবই বা সে শিক্ষা নিতে পারবে কিরূপে " পিতা- 
মাতা স্্রীপুত্রাদির সহিত ত আমাদিগের নিম্ন বর্ত- 
মান নেই। তবে অবতারাদি সম্বন্ধে এপ হবার 
কারণ-কি? এর উত্তর, অবতার পুরুষের সাঙ্গোপাঙ্গ- 
গণ তাকে নিংস্বার্থভাবে ভালবেসেছিল, সেই জদ্য 
তারা তার সহিত নিত্যসন্বদ্ধ। আমরা ন্বাথের জন্য 
ভালবাসি। পিতামাতা, স্তরীপুত্র প্রতৃতি সকলকেই 
২৩৮ 


দামরা স্বার্থসিদ্ধির জন্য ভালবেসে থাকি। স্ত্রীর সুখের 
ন্য যদি তাকে ভালবাসতাম, তা হলে আমাদের 
স্বন্ধ নিত্য হত। কিন্তু আমরা কি তা করি? 
চালবাসার স্বরূপ স্বাধীনতা-্দাসত্ব নয়। নিঃস্বার্থতা, 
মুখলালসা নয়। যখনি কাকেও যথার্থ ভালবাসবে, 
চখনি তাকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে। তার 
হখ দেখতে হবে, নিজের সখ দেখলে চলবে না। 
কন্ত আমরা কি করে থাকি? যাদিগকে ভালবাসি, 
চাদিগকে আপনার অধীন করতে যাই। আমার 
হথা শুনবে, আমি যা ভাল বুঝি, তাকে তাই 
ভাল বুঝতে হবে। এরূপে তাদিগকে ঘোরতর 
বন্ধনে বন্ধ করতে যাই। এ জন্যই আমাদের সম্বন্ধ- 
বন্ধন নিয়ত ছিন্ন হচ্ছে এবং আমরা পরস্পর 
বিপরীত কেন্দ্রে উপস্থিত হচ্ছি। বিছ্বাতাদি . জড়- 
শক্তিকে আয়ত্ত করতে গেলেও যখন তার স্বভাব 
কাধ্্যপ্রণালী প্রভৃতি বিশেষরূপে জেনে সেই উপায়ে 
অগ্রসর হতে হয়, তখন অনন্ত স্বাধীনতাম্বভাব মনুস্য- 
মনকে কি তার স্বভাববিরুদ্ধ প্রণালীতে বশীভূত করে 
রাখতে পারা যায়? কোনও না কোন দিন তার সেই 
বন্ধন অসহা হয়ে উঠবে এবং স্বভাবনিহিত নিজ্রিত 
শক্তি জাগরিত হয়ে সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে ফেলবে। , 

ক ২৩৯ 


গীতাতত্ব ও 

আমাদের দেশে এইরূপ ভালবাসা এখন অত্যন্ত 
প্রবল। দাসত্ববন্ধনই এর অপর নাম। সেই জন্য 
দেশেরও এত দুরবস্থা । শান্তর বলেন, সমগ্র জগৎ এক 
স্ত্রে গ্রথিত রয়েছে । সেই জন্যই একের অপকারে 
অপরের অপকার হচ্ছে। একের দোষে অপরে কষ্ট 
পাচ্ছে। অন্টের অমঙ্গল হলে আমাকেও তার 
জন্য কষ্ট পেতে হয়। এরূপ নিয়ম বর্তমান থাকতে 
অপরকে অধীন করে নিজে উচ্চ হবার চেষ্টা কখনই 
সিদ্ধ হতে পারে না। এই স্বাধীনতা-সংগ্রাম জড় 
হতে চেতন পধ্যস্ত সমগ্র জগতে মহাবেগে প্রবস্তিত 
রয়েছে। এক পরমাণু অপর হতে বিযুক্ত হতে 
চেষ্টা করছে। পৃথিবী সূর্য্য হতে এবং সূর্য স্ধ্যা- 
স্তর হতে পলায়ন করতে চেষ্টা করছে। চোর 
এই স্বাধীনতার প্রেরণায় যথার্থ পথ না জানায় চুরি 
করছে আবার সাধু মহাপুরুষেরা ঈশ্বরকৃপায় স্থার্থহীন 
বিশুদ্ধ ভালবাসাই এই স্বাধীনতালাভের একমাত্র পথ 
জেনে দিন দিন জীবনের মহান্‌ লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর 
হচ্ছে।* এই স্বাধীনতা লাভের জন্য সংগ্রামই 
মনুষ্যকে উচ্চ হতে উচ্চতর সোপানে আরোহণ করাচ্ছে 
এবং অবশেষে পূর্ণ জ্ঞানভক্তিতে ঈশ্বরের সহিত 
সম্মিলিত করে অনন্ত শক্তির অধিকারী করে 

২৪৯ 


কম্ম-রহস্ত 
চ্ছে। এ স্বাধীনতালোপ জগতে কে কারই ব৷ 
চরতে পারে? স্ত্রী, পুক্, পিতা, মাতা): বন্ধু, গুরু 
ধরভৃতির সহিত যদি নিত্যসম্বন্ধে সম্বদ্ধ হতে চাও, 
তা নিজের স্বার্থকে বলি দিয়ে তাদের স্খে সখী 
£ও। ভগবানের মৃদ্তি জেনে তাদের সেবায় রত 
ধাক। জগতের যাবতীয় স্ত্রীকে দেবীজ্ঞানে ও পুরুষকে 
দ্বেবতাজ্ঞানে দর্শন করতে চেষ্টা পাও ও তাদের প্রতি 
তদ্ধেপ সম্মান ও ভক্তি প্রদর্শন কর। | 
এখন বেদাস্তের বিবর্তবাঁদের বিষয় কিছু বলে 
আজকার বক্তব্য শেষ করব। আমরা এই স্ৃষ্টিকার্ধয 
ছুই দিক দ্রিয়ে অবলোকন করতে পারি। মন্ুষ্যের 
দিক দিয়ে দেখলে আমরা স্থষ্টি, তার ক্রম, নিয়ম, 
শক্তি প্রভৃতি এবং পাপ পুণ্য, সখ ছুঃখ, জ্ঞান অজ্ঞান, 
হিতাহিত প্রভূতিকে সত্য বলে দেখতে পাই। কিন্তু 
যদি কল্পনা সহায়ে ভগবানের দিক্‌ হতে এই স্যষটি 
দেখবার চেষ্টা করি, তা হলে কি দেখি? স্থৃষ্টি ও 
সৃষ্টির ভেতরের কিছুরই বিদ্মানতা দেখতে পাই না। 
কারণ, স্থাষ্টি ত সেই ভগবানেই রয়েছে । তিনি ছাড়া 
ত স্ষ্টিতে কিছুই অপর নেই । অতএব যদি কেউ কোন 
উপায়ে জগৎ সম্বন্ধে ঈশ্বরের স্যায় দৃষ্টি লাভ করতে 
পারে, তবে সে আর কখনই জগৎকে আমাদের, মত 
২৪১ 


গীতাতত্ব 

দেখতে পারে না। জগত দেখতে হলে আপনাকে 
জগৎ হতে অন্ততঃ কিছু ভিন্ন না করে উহা কখন 
দেখা সম্ভবে না। অতএব যিনি স্থষ্টি ও শ্্ষ্টার সহিত 
সর্ধতোভাবে একত্ব অন্থভব করেছেন তার নিকট 
জগতের অস্তিত্ব নেই। এই শেষোক্ত অবস্থাই বেদাস্তের 
বিবর্তবাদ নামে কথিত হয় এবং এই অবস্থা প্রাপ্ত 
হতে হলে জগতের অস্তিত্ব, পাঁপপুণ্য প্রভৃতি সমুদয় 
সত্য বলে মেনে নিয়ে বহুকাল কর্্মভক্তিজ্ঞান- 
যোগাদি দৃঢ় অধ্যবসায়ের সহিত অভ্যাস করতে হবে। 
তবেই আমাদিগের পরমাত্মার সহিত সম্পূর্ণ একত্ব 
বোধ এসে উপস্থিত হবে। সেই বাক্যাতীত অবস্থার 
এক্ষণে আলোচনা নিশ্রায়োজন। 


২৪২ 


চতুর্দাশ অধ্যায় 
উপসংহার * 


রামকৃষ্ণ মিশনসভা, ২৫শে সেপ্টেম্বর, রবিবার, ১৮৯৮) 


পূর্ব্বে যে সকল 'বিষয়ে আলোচনা কর! হয়েছে, 
গাজ তার সংক্ষেপে পুনরাবৃত্তি করব। কারণ, তা 
চলে সে সকল বিষয় মনে দৃঢ়রূপে আঙ্কিত হবে॥ 
প্রথমে আমরা দেখেছি, বেদ কাকে বলে। বেদ 
অর্থে জ্ঞান; ভগবানের অনন্ত জান, যা তার 
মহিত অনন্তকাল অবস্থিত রয়েছে। এই জম 
আমাদের শাস্ত্রে বলে, বেদ অনার্দি। যদিও আমরা 
উহা পুস্তকাকারে লিখিত দেখতে পাই, কিন্তু এই 
পুস্তকের যা বিষয় ত| তিনকালেই বর্তমান, তার 
আদি নেই! এই অনাদি জ্ঞান কখন কোনও ভাগ্যবানের 
নিকট আবিভূর্ত হয়। ধারা এই জান প্রত্যক্ষ করেন, 
তাদিগকে খধি বলে। খধি অর্থে মন্রর্টা। এই 

ক এই ব্ুতায় বা, রব মিপনসভায তর বা সমহেষ 
(বেদকথা, শ্মৃতি-রহদ্য, সাধন-দিষঠা, কর্ণের দ্িবিধরগ ও কর্ম-রহদ্য ) হংক্ষেপে 
আলৌচন।! পূর্বক উপসংহার করেছেন। 
* ২৪৩ 


গীতাতন্ব 


জ্ঞান কেবল যে বিশেষ কোন এক জাতির অথবা 
পুরুষের নিকটেই আবিভূর্ত হয় তা নয়। গ্রেচ্ছাদি 
নীচ জাতিসম্তৃুত কোন কোন পুরুষেও কখন কখন এঁ 
জ্ঞানের আবির্ভাব দেখা গিয়েছে। আবার বেদে অনেক 
স্ত্রীলোকও খধি বলে কথিত হয়েছেন। সত্যকামাদি 
জারজ ব্যক্তিও এ জ্ঞানপ্রভাবে খষি বলে অভিহিত 
হয়েছেন। এই জ্ঞান জাতি ও বর্ণ নিরববশেষে সকলেরই 
নিকট উপস্থিত হতে পারে। পুরে বৈদিক কালে 
্রাহ্মণত্ব জাতিগত ছিল বলে বোধ হয় না। ইহা 
গুণগত ছিল। আবার বেদের স্থলে স্থলে এইরূপ উক্তিও 
দেখা যায় যে, পুর্বে সকল মনুয্বই একবর্ণভুক্ত 
ছিল। উহার কোন কোন স্থানে এরূপ কথাও আছে 
. যে, পূর্বে কেবল মাত্র ক্ষত্রিয় বর্ণ ছিল, পরে ব্রাহ্মণের 
স্থ্ি হল। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে একথা 
সম্ভব বলেও বোধ হয়। বেদের প্রাচীন অংশ খখেদে 
দেখতে পাওয়া যায় যে আর্ধ্যগণ পঞ্চনদের গুণ গান 
করছেন এবং আপনাদের পূর্ব বাসস্থান অত্যন্ত 
শীতল 'বলে বর্ণনা করছেন। এই সময়ে তারা 
ঘৃতন দেশে এসে আদিম নিবাসীদিগের সহিত কখন 
কখন যুদ্ধ বিগ্রহে ব্যাপূত হতেন এবং স্বভাবতঃ ধর্ম: 
বা গুণ অনুসারে সকলেই এক -জাতিনিবদ্ধ ছিলেন। 
২৪৪ 


উপসংহার 


পরে ধর্মকার্য্যে ব্যাপূত ও অধিক জ্ঞানসম্পন্ন হওয়াতে 
তাদের মধ্যে কতক লোক ব্রাহ্মণ হয়েছিলেন। 
্রাহ্মণত্ব, ক্ষত্রিয়ত্বাদি প্রথম প্রথম ব্যক্তিগত . স্বভাব- 
প্রেরিত গুণ, যুদ্ধ-বিগ্রহ, যজ্ঞোপাসনাদি কর্মানুসারেই 
হওয়া সম্তব। কারণ, গুণ কর্মানুসারে জাতিবিভাগ চির- 
কালই জগতে বর্তমান রয়েছে ও থাকবে। কিন্তু : 
জাতিগত ত্রাক্ষণত্ব মনুষ্ের জ্ঞানোন্নতির সহিত ক্রমশঃ 
তিরোধান হবে। এই ত্রাহ্গণত্ব ক্ষত্রিয়ত্বাদি গুণ 
আবার ভিন্ন জাতিতে ভিন্ন পরিমাণে দেখতে পাওয়া 
যায়। কোন জাতি ্রাহ্ষণত্বগ্ণসম্পন্ন, যেমন প্রাচীন 
আর্ধযগণ ছিলেন। আধুনিক ইউরোপীয় জাতির! ক্ষত্রিয় 
গুণসম্পন্ন। ইংরাজ জাতিতে .বৈশ্বগ্তণের অধিক 
সমাবেশ দেখতে পাওয়! যায়। আবার কোন কোন 
সময়ে পৃথিবীর সর্বত্র কোন এক গুণকে অধিক প্রবল 
হতে দেখা যায়। বর্তমান কাল বৈশ্ত-গুণপ্রধান। 
বৈশ্যাগুণহীন লোকের একালে অধোগতি প্রাপ্তি হচ্ছে। 
যাদের এ গুণ প্রবল, তারাই উন্নত হচ্ছে। 
মহাভারতেও আমরা পূর্বোক্ত কথা দেখতে পাই যে, 
পুর্ধ্বে এক জাতি ছিল, পরে গুণ কর্ম ভেদে জাতি- 
ভেদ হয়েছে। ভগবান গীতায় বলেছেন, গুণ ও 
কর্মের বিভাগ দ্বারা আমি চারবর্ণ স্থষ্টি করেছি। 
২৪৫ 


গীতাতত্ব 

অতএব সদ্গুণসম্পন্ন হলেই বেদে অধিকার হত ও 
এখনও হওয়া উচিত। আমরা দেখেছি, বেদ ছুই 
ভাগে বিভক্ত__কর্্মকাণ্ড ও জ্ঞানকাণ্ড। কর্মকাণ্ডে 
যাগযজ্ঞাদি ক্রিয়ার দ্বারা স্বর্গাদি লাভ হওয়ার কথা 
আছে। স্বর্গ অর্থে পৃথিবী অপেক্ষা কোন উচ্চতর 
' লোক, যেখানে অধিককালস্থায়ী স্বখ ভোগ করতে 
পারা যায়। কিন্ত এই সুখ ভোগের পর আবার 
মর্ত্যলোকে আসতে হয়। আমাদের শাস্ত্রোক্ত দেবতা 
সকল, ইন্দ্র, বরুণ, অগ্নি প্রভৃতি একএকটি পদ- 
মাত্র। শাস্ত্রে দেখা যায়, কর্মঘ্বারা উচ্চগতি প্রাপ্ত 
হয়ে কেউ, কেউ ইন্্রাদি হয়েছেন ও সেই পদে 
কিছু দিন অবস্থান করে আবার তার পৃথিবীতে 
পতন হয়েছে । অতএব মনুষ্য মাত্রেই কর্মদ্ধারা দেবত্ব 
পদ লাভ করতে পারেন। বেদের কর্মকাণ্ড ব্বর্গাদি 
লোক লাভের উপায় বলে দেয়। কিন্তু এ সকল 
স্খও নিত্য নয়। সেই জন্য মনুত্য তাতে তৃপ্তি 
লাভ করতে পারে না। তার প্রাণ নিত্যবস্তলাভের 
- জন্য লালায়িত। বেদের জ্ঞানকাণ্ডে সেই নিত্য পদাথে'র 
বিষয়ই বর্ণিত আছে। আমরা দেখেছি, শাস্ত্রে স্থ্টি 
অনাদি বলেছেন। অন্যান্য ধর্ে স্থ্টির আদি আছে, 
এরপু কথা বলে। বলে, এমন এক সময় ছিল, যখন 

২৪৬ 


উপসংহার 


;) আদৌ ছিল না। ঈশ্বর স্ৃঠটি করলেন। কিন্ত 
7? তা বলেন না। স্থষ্টির আদি আছে বললে 
বানে বৈষম্য ও নৈর্শ্য দোষ এসে পড়ে। 
গতের এই যে বিষমতা দেখছি, কেউ পণ্ডিত, 
চউ মুর্খ, কেউ স্থুখী, কেউ ছুঃখী ইত্যাদি, স্থষটির 
দি থাকলে ঈশ্বর তার কারণ হন এবং 
কে পক্ষপাতিত্ব দোষের ভাগী হতে হয়। 
বতীয়তঃ তাকে নিষ্ঠুরও বলতে হয়। সৃষ্টি অনাদি 
লেও স্থষ্টির বিকাশাবস্থা চিরকাল থাকবে না। 
স্তর বলেন, কখন প্রকাশিত এবং কখন লুপ্তাবস্থায় 
থকে বীজ হতে বৃক্ষ ও পুনরায় বৃক্ষ হতে 
|ীজের ন্যায় সম্বন্ধে সন্বদ্ধ স্থা্টির এ ছুই ভাব অনাদি- 
চাল হতে প্রবাহিত রয়েছে। যেমন ক্ষুদ্রতম বীজ 
£তে বৃহৎ অশ্ব বৃক্ষ উৎপন্ন হয়, আবার সেই বৃক্ষ 
চালে বীজে পরিণত হয়, সেইরূপ স্থষ্ট জগৎ কখন 
বীজরূপে ও কখন প্রকাশরূপে বর্তমান রয়েছে। 
ইহা ভগবান হতে নির্গত, ভগবানেরই অংশ, তা 
হতে ভিন্ন নয়। গীতার্দি শান্ত্রেও দেখা যায় ভগবান 
বলছেন, জগৎ আমার এক অংশ মাত্র। যদি 
সৃষ্টি অনাদি হল, তবে এই বৈষম্যের কারণ কি? 
পাস্্র বলেন, এই বৈষম্যের কারণ কর্ম ্তরাং 
২৪৭ 


গীতাতত্ব 

কর্মও অনাদি। আমাদের সকলকেই কর্ন করতে 
হচ্ছে। কর্ম না করে কেউ থাকতে পারে না। 
কর্মের সহিত তার ফুল নিত্যসংযুক্ত হয়ে রয়েছে। 
কর্ম করলে তার ফলভোগ করতেই হবে; তবে 
মুক্তি কিরূপে সম্ভবে? নিফ্ষাম ভাবে নিঃস্বার্থ হয়ে 
কাজ করলে কর্মফলে লিপ্ত হতে হয় না এবং সম্পুর্ণ 
নিঃস্বার্থতা সমগ্র বন্ধন নাশ করে দেয়! একেই 
কর্্মযোগ বলে। এক কথায় বলতে গেলে স্থার্থশুন্ত 
হওয়াই ধর্ম। কি কর্মযোগী, কি ভক্তিযোগী, কি 
জ্ঞানযোগী, সকলেই নিঃন্বার্থ হতে চেষ্টা করছে। 
কেউ “আমি আমি করে, কেউ বা “তুমি তুমি, 
করে পূর্ণ নিঃস্বার্থতার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। 
সকলেই ছোট স্বার্থপর “আমি জ্ঞান, ভূমা মহান্‌ 
“আমি'তে ডুবাতে চেষ্টা করছে। কেউবা সর্ববভূতে 
সেই এক আত্মাকে প্রত্যক্ষ করে সেই মহান্‌ 
আমিকে সকলের ভেতর দেখতে চেষ্টা করছে। 
অপর কেউ ক্ষুদ্র অহংজ্ঞানকে পরিত্যাগ করে কেবল 
ভগবানকৈই সর্বত্র দেখতে চেষ্টা করছে। বুঝে 
দেখলে দুই পথের উদ্দেশ্য একই বলে প্রতীয়মান হয়। 
আমরা দেখেছি, কম্মে কোন দৌষ নেই। কর্মের 
ভাল মন্দ গুণ আমাদের নিজের মনোগত ভাব বা 

২৪৮ 


উপসংহার 


দশ্য নিয়ে হয়ে থাকে । আমরা যখন যে ভাবে 
ধ্য করি, আমাদের এ কাধ্য তখন সেই ভাবানুসারে 
'মাদিগকে উন্নত বা অবনত করে ভাল. ব 
দ্ধ বলে প্রতীয়মান হয়। একটি কার্ধা আশ্রয় 
করে আমরা অন্য একটি কার্ধ্য পরিত্যাগ করতে 
[রি না। নীচ কর্ম পরিত্যাগ করে উচ্চতর কর্ণ 
হণ করতে আমাদিগকে সর্বদা উদ্যুক্ত থাকতে 
বে। তা হলেই ক্রমে নিস্বার্থ হতে পারব। 
ঘ ঘোর ইন্দ্িয়পরতন্ব, সে বিবাহ করে এক স্ত্রীতে 
ন নিবদ্ধ রাখলে তার পক্ষে স্বার্থত্যাগ করাই 
বে, কিন্তু জন্ন্যাসীর পক্ষে বিবাহ তদ্বিপরীত 
বার্থপরতা৷ বৃদ্ধিরই পরিচায়ক হবে। অতএব একের 
পক্ষে যা নিঃস্বার্থ কম্ময অপরের পক্ষে আবার 
ধার্থপর কর্্ম। যে, যে অবস্থায় অবস্থিত তার 
নম্বন্ধে যা ঈশ্বরপথে অগ্রসর হবার প্রতিবন্ধকতা 
করে, তাই তার সম্বন্ধে সংসার। সেই সংসার 
তাকে ত্যাগ করতে হবে। কারও কাম, কারও 
ক্রোধ, কারও বা ধন, ঈশ্বর পথের কণ্টক; তাকে 
তাই পরিত্যাগ করতে হবে। কিন্ত পরিত্যাগ 
করতে হলে পুর্ব আর এক উচ্চতর বিষয় অবলম্বন 
করতে হবে। এরূপে ক্রমশঃ উচ্চ হতে উচ্চতর 
রঙ 
্ ২৪৯ ৃ 


, সম 


গীতাতত্ব 


অবস্থায় উঠতে হবে, নিঃস্বার্থ হবার জন্ত চেষ্টা 
করতে হবে, এরূপে কালে সকলেই আমরা এরূপ 
অবস্থায় উপস্থিত হব, যখন জম্পূর্ণ নিঃস্বার্থ হয়ে 
কার্য করতে পারব! আমরা দেখেছি, পূর্র্ব পূর্ব 
জন্মের কার্যযানুসারে মানব পর পর জন্মে উন্নতাবনত 
দেহাদি প্রাপ্ত হয়। পূর্ব্কৃত কম্মসমূহ ছারা মনুষ্য 
এরূপ পিতামাতা প্রাপ্ত হয়, ধার৷ তাকে এরূপ 
দোষ বা গুণযুক্ত দেহাদি প্রদান করতে পারেন। 
সেজন্য আপাততঃ দেখলে, সন্তানের দোষ গুণ অনুক্রামিত 
হওয়ার কারণ পিতামাতাই বলে বোধ হয়, কিন্ত 
তা নয়; বাস্তবিক সন্তানের কর্মই এরূপ পিতা- 
মাতাকে "অন্বেষণ করে নেয়। প্রশ্ন হতে পারে 
কর্ম করবার শক্তি কোথা হতে উৎপন্ন হয়? 
আমরা দেখেছি, এই দৃষ্ট স্থল ব্রহ্মাণ্ড এক বিরাট 
দেহ। আমাদের এই সকল ক্ষুত্র দেহ সেই বিরাটের 
অংশ মাত্র। সেইরূপ আমাদের মনসমৃহও:সেই বিরাট 
মনের অংশ মাত্র । অতএব আমাদের শরীর ও মনের 
পুষ্টি সৈই বিরাট শরীর ও মন হতেই নিত্য 
হচ্ছে। আহার ও নিঃশ্বাসের দ্বারা শরীরে যা 
গ্রহণ করি, তা সেই অনস্ত বিরাটেরই অংশ। 
আমরা না জানলেও আমাদের মনের পুষ্টিও সেইরূপ 
২৫৪ | 


"উপসংহার . 
রাট মন হতেই হয়ে থাকে। নূতন জল যেমন 
[বর্তে আসছে ও যাচ্ছে কিন্তু আর্ত একই বূপ 
খছি, সেইরূপ দেহ ও মন একই বূপ দেখতে 
কলে বিরাট দেহ ও মন হতে তাদের 
পাদান আমরা অবিরত গ্রহণ করছি। এজন্য 
ম্ত্র বলেন, ভগবানের অনন্ত শক্তি সকলেরই 
ম্তরে নিহিত রয়েছে। তা হতেই আমরা নিজ 
নজ শক্তি গ্রহণ ও বিকাশ করছি। এই শক্তির 
মপব্যয় না করে উহাকে উচ্চ হতে উচ্চতর কার্ধ্যে 
নিযুক্ত করতে পারলেই জীবনের মহান্‌ লক্ষ্যে 
আমরা উপনীত হতে পারব। 


২৫১ 


পঞ্চদশ অধ্যায় 
আগ্তপুরুধ ও অবতারকুলের জীবনানৃতব 


বেদই হিন্দুর জাতীয় ধন, হিন্দুর আচার ব্যবহার 
বিশ্বাস আস্তিক্য প্রভৃতি সকল বিষয়ের ভিত্তি। ইহ. 
কালে সে বৈদিক আচার অনুষ্ঠানে অন্য সকল দেশের 
অন্ত সকল জাতির, অন্য সকল ধন্মের আচারাদি অগ্রাহা 
করে থাকে এবং দ্েহাবসানে মৃত্যুর মোহাম্ধ- 
কার এসে যখন ইহ-জগতের চিরপরিচিত সুখ ছুঃখ, 
লাভ লে+কসান, যশ অপযশ প্রভৃতি দন্বসমূহের 
একপ্রকার সাময়িক সমতা এনে দেয়, তখন অজ্ঞাত 
অপরিচিত কল্পনায় করালায়িত পরকালের ছবি দেখতে 
সে, বেদোক্ত বিশ্বাস ও শিক্ষা সহায়েই আশায় নির্ভর 
করে প্তপ্তা বৈতরপীগ্তে বম্প প্রদান করে। 
বলা যেতে পারে, একথা কিরূপে সত্য হতে 
পারে? ,কোথায় সে আহ্ুতিসমুখিত পর্জন্তপ্রসবকারী 
যক্তীয় ধুম? কোথায় সে গোমেধ, অশ্বমেধাদি যজ্ঞ 
সমূহ? কোথায় সে সোমরসপানে অর্ধানিমীলিতনেত্রে 
যজমান-কল্যাণকারী মিত্র মরুত পৃষণ ভগ প্রভৃতি 

£ ২৫২ 


আগ্তপুরুষ ও অবতারকুলের জীবনান্ুভব * 
দিক দেবগণ? কোথায় সে সত্যনিষ্ঠ অপ্রতিগ্রাহী 
য়াপ্রাণ বেদজ্ঞ ক্রান্মণ? কালরাত্রির গভীরান্ধকারে 
রূপ লুক্কায়িত যে, কোন কালে তাদের অস্তিত্ব ছিল 
£ না, সে বিষয়ে সন্দিহান হতে হয় । * 

উত্তরেও বলা যেতে পারে, যুগবিপরধ্যয়ে পরি- 
নের খরআ্রোত এ সমস্ত পুনঃ পুনঃ ভেঙ্গে অভিনব 
প এবং ভাবে গড়লেও মধ্যে মধ্যে এমন নিদর্শনও 
খে গিয়েছে, যা দ্বারা বেশ বোধ হয়, হিন্দুর 
খনকার আচার ব্যবহারাদি পূর্ব পূর্ব যুগানুষিত 
বাচারাদির উপর ভিত্তি স্থাপন করেই দণ্ডায়মান । 
[কটির অপরটির সহিত সাদৃশ্-_বর্তমান বংশধরের 
মতিবৃদ্ধ পিতামহাদির সহিত জাতি, বংশ এবং গুণগত 
নাদৃষ্টের ন্যায়। বর্তমান ভাষার সহিত পূর্ববকার ভাষারও 
ইক সেই সন্বন্ধ। প্রাচীন তন্ব সকল দিন দিন যতই 
মাবিৃত হচ্ছে, ততই একথা চিরস্ুদুর মরীচিকার 
রাজত্ব হতে ইন্ড্রিয়োপলব্ধ প্রত্যক্ষ রাজ্যের নিক হতে 
নিকটতর হচ্ছে । | 
. অতএব হিন্দুর সর্ব্ব প্রকার আশা-ভরসার স্থল যে বেদ 
একথা স্বতঃই প্রমাণিত। আমরা উৎকৃষ্ট হই বা 
পৃথিবীর অপরাপর জাতি অপেক্ষা নিকৃষ্ট হই, 
আমাদের জাতীয়ত্বের মূল এ বেদেই রয়েছে। এ বেদ 

ও ২৫৩ 


চা] 


গীতাতন্ব. 

নিয়ে আমরা পূর্বে উঠেছিলাম এবং দি আধার 
উঠতে হয়, তা হলে এ জি উঠতে 
হবে। 

_বৃক্ষশরীর হতে নতাবিগনিত শুদ্ধ পত্র রাশির 
্যায় ধর্দশরীর হতে নিয়ত পরিত্যক্ত আচার রাশির 
কথা এখন দুরে থাক। ধর্দশরীরের যে অংশগুলি যুগে' 
যুগে একরূপ থাকে, তাই চিরকাল আমাদের জাতীয়ন্থের 
মূলে রয়েছে ও থাকবে এবং এ মূল কোনরূপে 
বিনষ্ট হলে আমাদের জাতীয় জীবনও চিরকালের নিমিত্ত 
অস্তহিত হবে। মনে কর, হিন্দুর সমাধি অবলম্বনে 
জ্ঞানের'উচ্চ ভূমিতে আরোহণে বিশ্বাস, ব্রহ্মচ্্য অবলম্বনে 
ভোগ সুখ এবং বংশবিস্তারে ব্যয়িত শক্তির মানসিক 
এবং আধ্যাত্মিক শক্তিসমূহে এবং এ উপায়ে ইহ 
জীবনেই মনুস্তের দেবত্ব প্রাপ্তি বিষয়ক ধারণা, আত্ম- 
সংযমেই জাতিগত এবং ব্যক্তিগত পুরুষার্থ, ঠ্যাগেই 
অমৃতত্ব লাভ, আত্মার পূর্ণতব, অব্যয়ত্ব ও আবনাশিশ্ব, 
কর্মফলের অবশ্যন্তাবিত্ব প্রভৃতি বিশ্বাসনিচয়, যা 
বৈদিক *যুগ হতে এখনও পর্য্যন্ত সমভাবে বংশ হতে 
বংশানুগত হয়ে প্রবাহিত রয়েছে, সে সকলের লোপ 
হলে আমাদের জাতীয়ত্ব বা অপর জাতি হতে 
পার্থক্য আর কোথা থাকবে? এবং এরূপ হলে সমগ্র 

্ ২৫৪ 


গতর ও অবতারকুলের বীবনাই 

ধর্দশেরীরের নাশের জঙ্গে সঙ্গে কি আমাদের অস্তিত্বেও 
লোপ হঘে লা? - 
: প্রশ্ন হচ্ছে, এখন: বেদের বেদত্ব কি নিয়ে? 
কোন্‌ শক্তি প্রভাবে উহা সমগ্র হিন্দু মনে আবহমান- 
কাল ধরে এই অন্তত প্রতৃত্ব স্থাপন করে বর্তমান? 
যোগিজননিষেবিত, মুক্তি অলক্তক-রঞ্জিত কমনীয় শ্রুতি- 
পদে কেনই বা মৌর গাণপত্য শৈব শাক্ত প্রভৃতি 
অশেষ সম্প্রদায়ের তক্তিনআ্রশিরসমূহ সর্বদা নত রয়েছে? 
কেনই ব নিরীশ্বরবাদী কপিলাদি মহামুনিগণ স্বকীয় 
প্রতিভা প্রভাবে সকল বিষয় অতিক্রম করে বেদের 
প্রভাব অতিক্রম করতে সমর্থ হন নাই? এর নিশ্চিত 
কোন গু কারণ আছে; কোন অপূর্ব সর্ববজনমিলন- 
ভূমি সাধারণ সত্য আছে, যা! প্রত্যক্ষ করেই সেশ্বর 
নিরীশ্বরাদি অভি বিভিন্ন সম্প্রদায়ীরাও এককালে 
একবাক্যে এর প্রভুত্ব স্বীকার করেছেন। সেটি 
কি? 

হিন্তুর বিশ্বাস,_বেদ অপৌরুষেয় অর্থাৎ মনুযয- 
রচিত নয়-_পুরুষনিঃশ্বসিত অর্থাং জগৎকর্তা ঈশ্বরের 
নিঃশ্বাসম্বরূ্প ; অতএব নিত্য অর্থাৎ ভূতভবি্ুৎ 
বর্তমানাদি কালব্রয়েরও পূর্ব হতে ঈশ্বরের সহিত 
সদা বর্তমান, ঈশ্বরের স্বরূপ বিশেষ। বেদরাশিলিপিবদ্ধ 

২৫৫ 


জ্ঞান, এশ্বারিক জ্ঞানের মানববুদ্ধিগ্রহণযোগ্য আংশিক 
বিকাশ মাত্র। অতএব এরশ্বরিক জ্ঞানকে যেমন 
ঈশ্বরের ্বরূপ হতে কথন ভিন্ন করা যায় না, সেইরূপ 
বৈদিক জ্ঞানও তা হতে অভিন্ন--তার স্বরূপ ভিন্ন 
আর কিছুই নয়। 

বেদের অপর একটি নাম আগ্তবাক্য অর্থাৎ 
অতীন্দ্িয় অবাঙমনসোগোচর ঈশ্বর স্বরূপ, সমাধি 
অবলম্বনে সর্বোচ্চ ভূমিকায় আরোহণ করে ধারা 
সাক্ষাৎ উপলব্ধি করেছেন, তাদের বাক্য বা 
শিক্ষা । | 

ভারতের সকল দার্শনিকেরাই এক বাক্যে স্বীকার 
করেছেন যে, সমাধিই সত্য লাভের একমাত্র পথ। 
সমাধির সাধারণ অর্থ চিত্তের একাগ্রতা । এই চিত্তের 
একাগ্রতার আবার তারতম্য আছে। সেই তারতম্য 
অন্ুমারে মহামুনি পতঞ্জলি সমাধির সবিকল্প ও নিষ্িকলপ 
এই ছুই বিভাগ করেছেন। অপরাপর. বিষয়ক 
চিন্তাপ্রবাহসমূহকে তংকালের নিমিত্ত তিরোহিত বা! 
স্থগিত করে একবিষয়ক চিন্তা-প্রবাহে মন কেন্দ্রীভূত 
হলে তাকে সবিকল্প সমাধি বলা যায়। মনের এই 
অবস্থায় যে বিষষক চিন্তাতরঙ্গে মন কেন্দ্রীভূত হয়েছে, 
দেই বিষয়ক সত্য উপলব্ধ হয়। বিজ্ঞান, বাণিজ্য, 

এ ২৫৬ 


আগুপুরুষ ও অবতারকুলের জীবনানুতই 
কবি, শিল্প, ওধধ, রাজনীতি প্রভৃতি বিষয়ে অগ্ঠাবধি 
যে সকল সত্য আবিষ্কৃত হয়েছে বা হচ্ছে, তা 
তুয়োদর্শন ও পরীক্ষা সহায়ে মানবমনের তত্তৎ বিষয়ে 
এরূপ কেন্দ্রীভূত হবার ফলে। ধর্ম্মবিষয়ক সত্য 
উপলব্ধি করতে যেমন শ্রবণ মনন নিদিধ্যাসনের 
প্রয়োজন, এ এ বিষয়েও তদ্েপ। কেবল ধর্ম বিষয়ে 
ধর্ম সংক্রান্ত পদার্থ নিচয়ের উপর, এবং এ পকল বিভিন্ন: 
বিষয়ে তন্তৎ বিভিন্ন বিভিন্ন পদার্থ সমূহ নিয়ে শ্রবণ 
মনন নিদিধ্যাসন করতে হয়, এই মাত্র ভেদ। 
রাসায়নিক তত্বের অনুসন্ষিৎস্থ হয়ে নাম-জপাদি 
করলে হবে না বা! ধর্মাবিষয়ক তন্বের উপলব্ধির নিমিত্ত 
যন্ত্রসহায়ে পদার্থ নিচয়ের সংশ্লেষণ বিশ্লেষণাদিতে নিয়ত 
রত থাকলে চলবে না। ইত্যাদি। 
সবিকল্প সমাধি নানাভাব নানাবিষয় নিয়ে নানা- 
প্রকারের হলেও নির্ব্ধিকল্প সমাধি একই প্রকার। 
উহাতে একবিষয়ক চিন্তাতরঙ্গপরম্পরা ন! থেকে 
কেবল মাত্র একটি চিন্তা বর্তমান থাকে এবং গাঢ়াবস্থায় 
তারও জ্ঞান থাকে না। তখন জ্ঞাতা জয় ও জ্ঞান, 
যা মানব মনের প্রত্যেক উপলব্ধির দৃঢ় ভিত্বি-্বরূপ, 
তাও একত্রে মিলে যায় এবং . এক ব্যতীত অন্ত 
পদার্থের জ্ঞানাভাবে একের জ্ঞানও তিরোহিত হয়ে 
খ্৫ণ 


ভাত. 
যায়। একেই ঘোগীর নিবাত নিষ্কম্প প্রদীপবৎ 
হয়ে সমস্ত চিত্তবৃত্তি নিরুদ্ধ করে অবস্থান বলে। 
তখন শরীর জড়বৎ, ইন্দরিয়াদি ন্য খ্ব ব্যাপারশুচ্য, মন 
বুদ্ধি এককালে স্তব্ধ এবং জগতের কোলাহল স্বদূর 
পরাহত হয়ে থাকে । 
ইউরোপ প্রভৃতি পাশ্চাত্য দেশের দার্শনিকের৷ 
উক্ত সমাধি অবস্থায় শরীরেন্তরিয়াদির জড়বং অবস্থিতি 
এবং কোন (কান শীরীরিক রোগবিশেষের সহিত 
বাহিক সৌসাদৃশ্ব দেখে উহাকে মানবসাধারণের 
চৈতন্তাবস্থা হতে নিয় ভূমির অবস্থা বলে স্থির সিদ্ধান্ত 
করেছেন। [চিন্তাশীল দার্শনিক পণ্ডিত সমূহের যখন 
এরূপ ধারণা, তখন ভোগলোলুপ সকাম কর্কপ্রাথ 
, সাঁধারণ পাশ্চাত্য মানব যে উল্তাবস্থা লাভ ভীতির 
চক্ষে দেখবে বা কারও উক্তাবস্থার বিন্দুমাত্র লাভ 
হলে তাকে" দয়ার পাত্র বিবেচনা করবে, এতে 
আর আশ্চর্য্য কি? 
পাশ্চাত্য দেশ সমূহ ভ্রমণকালে বর্তমান লেখককে 
নিত্য এই প্রশ্বের বারবার উত্তর দিতে হত যে 
প্রীচ্যদর্শননিবদ্ধ সমাধি অবস্থা জড়াবস্থা নহে বা গাছ 
পাথরের মত হয়ে স্থখ ছুঃখের হাত অতিক্রম করা 
নহে; এবং জান জে জ্ঞাতার.তেতর দিয়ে যে জ্ঞান 
২৫৮ 


আগ্পুরুষ ও অবতারকুলের জীবনানুভব 


স্তর স্্ঠি হয়, ত| এ তিনের একত্র মিলিতাবস্থায 
মুভূত জান চৈতন্যের অপেক্ষা সকল বিষয়ে নিকৃষ্ট ) 
[বং এখনও পর্ধ্যস্ত এ অবস্থা কোন কোন ভাগ্যবান 
চারতে লাভ করে থাকেন; এবং জড়, হওয়া তো 
রর কথা, তাদের ভেতর দিয়ে পূর্বাপেক্ষা সর্ব্বতোমুখী 
মুত শক্তি প্রকাশিত হয়ে জগতের যাবতীয় ধর্মের 
ন্যতা সম্বন্ধে এবং জ্ঞানের চরম সীমায় অদ্বৈত বোধে 
টপনীত হওয়ার সম্বন্ধে সাক্ষ্য প্রদান করে। কিন্তু চির 
দংস্কারের প্রবল প্রভাবে সে কথা ধারণা হবে কেন? 
আবার পরদিন সেই ব্যক্তিই পুনরায় সেই প্রশ্থের 
সমুখখখান করত। একদিন একজন দার্শনিক বন্ধু সমাধি 
এবং অদ্বৈতবোধ সম্বন্ধে অনেক কথা শুনে এবং 
অনেক তর্ক বিতর্ক করে পরিশেষে বলেছিলেন, 
তুমি যা বলেছ, তাতে ভ্রম প্রমাদ কিছু মাত্র 
নেই, কিন্তু ছূর্ভাগ্যবশত্ত: আমাদের দেশে এরপ 
সমাধিস্থ পুরুষ একজনও জন্মে না। সেজস্যই আমাদের 
ওকথা হ্থাদ়ঙ্গম হওয়া এত কঠিন।” শুনে মনে 
হল, সত্যই বটে। চিরপদদলিত ভারত এ বিষয়ে 
সকল দেশাপেক্ষা এখনও ধনী। জড়বাদ, সংশয়বাদ 
বা অজ্ঞেয়বাদাদি চার্বাক মতসকল চূর্ণ করে 
যথার্থ ধর্মালোক দিবার শক্তি ভারতেই রয়েছে। 
২৫৯ 





ভারতই তা পূর্বে অপরাপর দেশবাসীকে দিয়েছে 
এবং এখনও যুক্তহত্তে এ ধন বিতরণ করে 
স্বীয় মর্ধ্যাদা রক্ষা করবে। নিরাশায় আশার সঞ্চার 
হল। মনে হল, দরিদ্র এবং বিজিত হলেও 
আমানের এ বিষয়ে কেউ পরাজিত করতে সমর্থ হয় 
নি। আমাদের ধর্দবীরগণেরই পদপ্রান্তে নত হয়ে 
এই অপূর্ব আলোক সকল দেশবাসীকে নিয়ে যেতে 

হবে। 
অকুতোভয় হিন্ত্ব দার্শনিক অপরিবর্ততনীয় দেশ- 
কালাতীত সর্ধকরণ-কারণ নিত্য সত্যের উপলব্ধি 
পঞ্চেন্ত্রয়ের দ্বারা অসম্ভব দেখে “মনোনিবৃত্তিঃ 
পরমোপশান্তিঃপ্রূপ তীর্ঘবরধ্যা মণিকর্ণিকার অনুসন্ধানে 
নির্গত হলেন এবং তদাবিষ্কারে স্বয়ং ধন্য হয়ে অপর 
সাধারণকে কৃতার্থ করলেন। সমাধি অবলম্বনে উপলব্ধি 
করলেন যে, মানব সাধারণের সসীম জ্ঞান ও চৈতন্য, 
দেশকালাতীত এক অসীম জ্ঞান চৈতন্যের আপেক্ষিক 
বিকাশ মাত্র এবং আরও উপলব্ধি করলেন যে, সেই 
- জ্ঞান চৈতন্যের আরও নিয় ভূমির বিকাশ রয়েছে, গো. 
মহিষাদি পশ্ড সমূহে, তরু গুল্ম লতাদিতে এবং সব 
চাইতে জড় বলে যাদের সম্বন্ধে মানবের ধারণা, 
ধাতু-লোষ্াদি পদার্থনিচয়ে।. অনস্তভাবে বিভক্ত 

২৬, 


গং তখন তীর চক্ষে শ্রক নৃতন আলোকে আঁলোকিত 
৪ প্রতিভাসিত হল এবং নিত্যো নিত্যানাং. চেতন- 
শ্চতনানাং একো বছুনাং যো বিদধাতি কামান্‌! পদার্থের 
টপলন্বি করে তিনি শাশ্বতী শান্তি প্রাপ্ত হলেন। 
কামকাঞ্চনপ্রশ্থত গাঢ় অমানিশার অন্ধকারে সংযতেত্্িয় 
মুসারথি তিনিই একমাত্র জাগ্রত রইলেন এবং মোহমুগ্ধ 
অপর জনসাধারণকে জাগ্রত করবার জন্য অভয় আশ্বাস- 
বাণী প্রদান করলেন! ইন্দ্রিয়াদির অতীত পদার্থ দর্শন 
করেই তিনি খষি হলেন এবং দেঁশকালাতীত পূর্ণানস্ত 
পরমধামের সাক্ষাৎ সত্য সংবাদ দেওয়াতেই তার বাক্য 
বেদ অথবা এরশ্বরিক জ্ঞান বলে প্রসিদ্ধ হল। 

প্রশ্ন হতে পারে, সমাধি সহায়ে উপলব্ধ বিষয় যে 
মস্তিষ্কের ভ্রমমাত্র অথবা রোগ বিশেষ নহে, তার 
প্রমাণ কি? উত্তরে বল! যায়, সমাধি-লাভের পূর্বের 
তোমার যেরূপ জ্ঞান, সংযম, ইচ্ছাশক্তি, সুখতুঃখা দিছন্দ- 
সহিষ্ণুতা প্রভৃতি ছিল, সমাধিলাভের পর যাঁদ সেই 
সকলের বিন্দুমাত্র হাস' না হয়ে শতগুণে বৃদ্ধি দেখতে 
পাও, তা হলে এ অবস্থাকে কি বলতে চাও? 
তারপর শাস্তি--যে শাস্তির জন্য নানা প্রকার অভাব 
পূরণের চেষ্টায় জনসাধারণ দিবা রাত্রি ছুটাছুটি করেও 
পূ্মাত্রায় কখন পাচ্ছে না, সেই শাস্তি যদি তোমার 
£ ২৬১ 


বতাতঘ. 8০৮০ -% মাঠাজ 
সঙ্গা' সর্বক্ষণ বি্ভমান থাকে, তা হে সে রোগ- 
বিশেষ থে প্রা্থনীয়! ১: 

পরমহংস ভ্রীরামকষ্ধদেব বলতেন, বেদ গতি, 
জগতের যাবতীয় ধর্মগ্রন্থ যেন কোন জিনিষের-__যথা 
সন্দেশ প্রভৃতি মিষ্টান্নাদির--তালিকা। বিশেষ । যদি 
তুমি সেই পদার্থের সহিত কথঞ্চিং পরিচিত থাক, 
তা হলে মিলিয়ে নিতে পার, সেই পদার্থের 
কোন্‌ কোন্‌ রূপের সহিত তোমার পরিচয় হয়েছে 
এবং কোন্‌ কোন্‌ রূপের সহিত বা হয় নি। তখন 
যে যে রূপের উপলব্ধি হয় নি, তাদের যাতে 
উপলব্ধি হয়, সে বিষয়ে চেষ্টা করতে পার। অতএব 
বেদ যে শুদ্ধ সমাধি অবস্থার উপলব্ধি সমূহ যথাসম্ভব 
রপিবদ্ধ করে জগৎপূজ্য হয়েছেন, তা নয়, কিন্ত 
্দরাজ্যের নিম্নাৎ নিয়স্তর হতে সর্বোচ্চ স্তরের চরম 
দীমা নিধিবকল্প সমাধি পর্য্যন্ত উঠবার কালে জাধক 
মানবের শরীর এবং মনে যেরূপ পরিবর্তন, অস্নৃভব এবং 
ততফল স্বরূপ ধর্মমত, আস্তিক্য ও বিশ্বাসাদি এসে 
উপস্থিত হয়, জগতের কল্যাণের জন্য ততসমূদায়ও 
ঘথাসস্ভব লিপিবন্ধ করেছেন। তাতে আমাদের 
লাভালাভ কি? মনুষ্য মাব্রকেই ধর্মরাজ্যে অগ্রসর 
হ্‌তে গেলে ক্রমে ক্রমে নানাপ্রকার শারীরিক ও মানসিক 

২৬২ 


আপ্তপুরুষ ও অবতারকুলের জীবনান্তুভর 
বর্তন, নানাপ্রকার মতে সত্য বলে বিশ্বাস, নানা- 
1রের ধারণা, বহির্জগতের নানাপ্রকার পদার্থ সাহায্যের 
অবলম্বন প্রভৃতির ভেতর দিয়ে গমন করে নিত্য 
[পদার্থ লাভ করতে হরে । ভেতরের ও বাইরের 
সকল পরিবর্তন বৃক্ষবিশেষের প্রতি পত্রে রূপের 
ঘন প্রতি মানবের কিঞ্চিং কিঞ্চিৎ ভিন্ন হলেও 
ারণতঃ সর্বব কালেই একরূপ থাকবে। কারণ, এই 
টর নিয়ম--বন্থুর মধ্যে একের বিকাশ, একের 
ম্্যুততা--ষা! -হডে মানবীয় সর্ব প্রকার জ্ঞান 
[বপর হয়েছে। অতএব তোমার অন্ধৃভূত বিষয় 
চলের সহিত পূর্ব পূর্বব খধিগণ অনুভূত এবং বেদাদি 
(গ্রস্থনিবন্ধ অনুভবের যদি সমতা পেতে থাক, তা৷ 
ল নিঃসন্দিহান চিত্তে তুমি স্বীয় পথে অগ্রসর হয়ে 
দেশটা লাভে কৃতকৃতার্থ হবে। 
ধর্মপথে অগ্রসর হতে সাধকশরীরমনে যে কি 
[মূল পরিবর্তন এসে মধ্যে মধো উপস্থিত হয়, তা 
র্ধ পুর্ব বৈদিক ও পৌরাণিক খধিগণ, এঁতিহাসিক 
গের সিদ্ধ ও সাধকগণ এবং বর্তমান কালের ধর্নবীর- 
1ণের জীবনী আলোচনায় বিশেষ উপলব্ধি হয়। নচি- 
কতার যমসদনে গিয়ে ব্রন্মজ্ঞানলাভ, সত্যকাম 
দাবালের অগ্নি উপাসনার ফলে আচাধ্যত্ প্রাপ্তি, 
” ২৬৩ 


/গীভাতত্ব 


মিথিলাধিপতি জনকরাজের রাজ্যশাসন করতে করতে 
বিদেহত্ব বোধ ইত্যাদি, সিদ্ধপুরুযোপলন্ধ অনুভবের ভেতর 
অথবা পৃজ্যপাদ আচার্য শঙ্করের হৃদয়ে কিশোর কালেই 
অদ্বৈতবোধ স্ফৃত্তি এবং তৎপরে ধীরে ধীরে সেই জ্ঞান 
অপরকে প্রদান করবার শক্তি বিকাশ, মহামতি ঈশার 
চল্লিশ দিন উপবাস, শ্ত্রীগৌরাঙ্গ দেবের গয়াধামে 
শ্রীপাদপন্স দর্শন হতে ধর্ম শক্তি প্রকাশ এবং বর্থমান- 
কালে শ্রীরামকৃষ্চদেবশরীরে দ্বাদশবৎসর কঠোর তপস্তা- 
দ্বির পর অদ্ভুত ধর্মমসমন্বয় শক্তি বিকাশাদির ভেতর 
তত্তৎ জগদ্গুরুর মহান্‌ হাদয়ে কত দেবাম্ত্রের সংগ্রাম 
ও জয় পরাজয়, কত উদ্যম আশা ও নিরাশা, কত আনন্দ 
ও বিরহ, কত যুগান্ত পরিবর্তনের পর চিত্তের সমতাবস্থ। 
লাভ এবং তৎসঙ্গে তত্ব দেবপ্রতিম শুদ্ধ সত্ব শরীরে 
কত অদ্ভুত পরিবর্তন হয়েছিল, তার ইতিহাসের 
কতটুকু আমরা পেয়েছি বা রাখতে - পেরেছি? 
যতটুকু রাখতে পেরেছি তার জন্য, জগত আজ 
কত ধনী, কত খন্ হয়েছে; আবার সেই ইতিহাসের 
অধিকাংশই কি ভারতের ধর্মগ্রন্থে নেই? জগত জুড়ে 
একটা রব উঠেছে, ভারতবর্ষের ইতিহাস পাওয়! যায় 
না, ইতিহাস লিখতে ভারতের লোক জানত না! 
আরে মুখ্খ! রাম শ্যামকে মেরে রাজা হল, তৎপরে 
২৬৪ 


আপ্তপুরুষ ও অবতারকুলের জীবনানুবসধ 
মর দশটি সন্তান হল, তিনি বিশ বৎসর রাজত্ব 
লেন অর্থাৎ কতকগুলি আইন চালালেন, কাকেও 
স্কার এবং কাকেও বা দণ্ড দিলেন, খেলেন, 
লন, বিবাদ করলেন, .আনন্দ করলেন, কষ্ট 
লেন এবং মরলেন-_-এই কি তোমার ইতিহাস? 
ইতিহাম রইল বা না রইল, তাতে জগতের বিশেষ 
তবৃদ্ধি কি? কিন্তু ইতিহাস অর্থে যদি_যে সকল 
পুরুষের চিন্তাক্রোত সমগ্র দেশবাীর মনের উপর 
[ধিপতা করে তাদের নূতন ভাবে গড়েছে, যে 
ব মহান্‌ হৃদয়ের ভালবাস আপামর সাধারণ মানবকে 
£ম্বার্থ হতে শিখিয়েছে, যে সকল মহত চরিত্রের 
াদর্শ দেশবাসীর চক্ষের ভেতর দিয়ে হৃদয়ের অন্তস্তলে 
বেশ করে প্রস্তরাষ্কিত মৃন্তিবৎ চিরজাজ্জল্যমান 
য়েছে_সেই সকল মহাপুরুষের প্রাণের উপলব্ধির 
ইতিহাস হয়, তা হলে ভারতই যে তা বিশেষ 
চাবে রেখেছে। তা হতেই কি বর্তমান যুগে 
্লাগতিক ধর্মজ্ঞান বুঝবার বিশেষ সহায়তা হচ্ছে না? 
উন্নতোদার চিন্তাতরঙ্গপরম্পর৷ হাদয়ে ধারণ করতে 
করতে মানবশরীরমনে যে বিশেষ পরিবর্তন সংঘটিত 
হয়। তাতে আশ্চর্য নেই। বর্তমান যুগের সকল 
পণ্ডিতেরাই উহা! একবাক্যে বিশ্বাস করেন। বিজ্ঞান 
ন্‌ ২৬৫ ্ 


লতা ্‌ 
চা্টা যতই অধিক হচ্ছে, ততই এ বিশ্বাস দৃঢ়মূল 
হচ্ছে, এবং ততফলম্বরূপ জার্মানি আমেরিকা. প্রভৃতি 
দেশসমূহে অপূর্ব অভিনব উপায়ে মনোবিজ্ঞানের 
চচ্চা আরম্ভ হয়েছে। , ইহার নাম পরীক্ষা্সিদ্ধ 
মনোবিজ্ঞান বা 81500679769] 708010100য, 
প্রত্যেক মানসিক পরিবর্তন বা ভাবের এক এক 
শারীরিক অনুরূপ এবং প্রত্যেক শারীরিক পরি- 
বর্তনের সহিত চিরসম্বদ্ধ এক এক মানসিক প্রতিকৃতি 
বের করাঈ এর উদ্দেশ্তট। একজন বন্ধু বলে- 
ছিলেন, ওষধ, রাজনীতি এবং ধর্ম, এদের মা বাপ 
নেই; ব্যস হলে সকলেরই আপনা আপনি হয়, 
যত্ব করে শিক্ষা করতে হয় না । কোনস্থানে এ তিন 
বিষয় সম্বন্ধীয় কোন প্রশ্ন যদি উপস্থিত হয়, ত সমাগত 
ব্যক্তিমাত্রেই এ প্রশ্ন সিদ্ধান্ত করে দিতে অধীর. 
হবে। নিন স্বদ্ধেও এতদিন ঠি 





বিজ্ঞানের চর্চা যতই দিন দিন সি হচ্ছে ততই 

কল্পনার আলোকান্ধকারমিশ্রিত জ্ান্তছায়৷ মনোবিজ্ঞানের 

অধিকার হুতে দুরাপস্থত হয়ে মানসিক গঠন এবং, 

কাধ্ধ্যপ্রণালীর যথাযথ তথসমূহ যথার্থ আলোকে 

আলোকিত হচ্ছে এবং মনোবিজ্ঞান যথার্থ বিজ্ঞান- 
২৬৬ 






আপ্তপুরুষ ও অবতারকুলের জীবনান্তব, 
'বাচ্যত্ব লাভ করে প্রত্যক্ষসিদ্ধ অন্যান্য শীঙ্রনিচয়ের 
কক্ষ হচ্ছে। 
প্রত্যেক মানসিক ভাবের এক একটি শারীরিক 
তিকৃতি আছে। আবার তদ্ধিপরীত অর্থাৎ প্রত্যেক 
রীরিক পরিবর্তন এক একটি মানসিক পরিবর্তন 
পস্থিত করে, ইহাও সত্য। বহিঃস্থ শক্তিবিশেষ 
ক্ুরাদি পঞ্চেক্দ্রিয় পথে পাঁচ প্রকারের শারীরিক 
রিবর্তন উপস্থিত করাতেই এ সকলের মানসিক 
প্রতিকৃতিম্বরূপ রূপরসাদি পাঁচ প্রকারের জ্ঞান আমাদের 
হয়ে থাকে। আবার বিষয়বিশেষে গাঢ় মনোনিবেশ 
করলে ঘর্ম নিঃশ্বাসমান্দ্যা্ি হওয়াও সকলের প্রত্যক্ষ 
নিষ্ঠুর চিন্তাপরম্পরা সর্বক্ষণ মনে জাগরূক থাকাতে 
চৌর ঘাতকাদির বিকট মুখন্তী এবং উদ্ারভাবপ্রবাহ 
হৃদয়ে নিয়ত ধারণের ফলে সাধুর সৌম্যদর্শনাদিও 
প্রপ্্যক্ষসিদ্ধ। আমরা স্থুল স্থূল কতকগুলি পরিবর্তনের 
কথা এখানে উল্লেখ করলাম। নতুবা বহিঃশক্তি 
ইন্দ্রিয়পথে আঘাত করে ন্নায়ুমণ্ুলকে ভিন্ন ভিন্ন 
ভাবে স্পন্দিত করলে সমুদ্রাভিমুখী নদীসকলের ন্যায় 
সাুতরঙ সকল মস্তিফাভিমুখে গমন করেও এবং 
চস্্রমাতাড়িতসমূদ্রস্ফীতির তরঙ্গাকারে নদীগর্ভ প্রবেশের 
ম্থায়, আত্মতাড়িত অন্তঃকরণতরঙ্গনিচয় প্রথমে মস্তি 
রি ২৬৭ ্ 


গীতাতনব 
.প্রবেশ করে স্থুলতর রূপ ধারণ. করে। ভৎপরে 
স্াযুমগুলে স্পন্দন উৎপপ্ন করে স্ায়বিক তরঙ্গাকারে 
শরীরেত্রিয়ে জঞ্চরণ করে বিভিনন-পদার্থ বিষয়িণী.বৃদধি 
জন্মায়, ইত্যাদি অনেক কথা বলা যেতে পারত। 
্াযুমণ্ডল এবং মন্তিষ্বের এ সকল তরঙ্গরাজি শারীর- 
বিজ্ঞানের আলোচনার বিষয়। পাঠকের কৌতৃহল 
হলে শারীরবিজ্ঞানসন্বন্ধীয় গ্রন্থে উহার অনুসন্ধান 
করতে পারেন। অন্তুঃকরণতরঙ্গনিচয় আবিষ্কার করা 
এবং যথাযথ পাঠ করাই মনোবিজ্ঞানের বিষয়। 

জ্ঞান অজ্ঞান, সুখ দুঃখ, স্বাস্থ্য অন্বাস্থ্য প্রভৃতি 
মানবের*সকল অবস্থাই এরূপে মানসিক এবং শারীরিক 
পরিবর্তনের ফলে অনুভূত হয়। মানব আপন বুদ্ধি 
ও কর্ম ছারা উন্নত বা অবনত যে অবস্থাতেই উপনীত 
হউক না কেন, উহা তার শরীর মনে পূর্বোক্ত 
পরিবর্তন তরঙ্গ পরম্পরার ফলেই এসে উপস্থিত 
হবে, এ কথা নিশ্চিত। এ সকল পর্রিধর্তনরাজির 
প্রধানত; তিন শ্রেণীতে বিভাগ হতে পারে। প্রথম,_ 
যেগুলি আদর্শস্থানীয় আপ্ত পুরুষদিগের শরীর মনে 
অনুভূত হওয়াতে মানবমনের বিশেষ উন্নতির পরিচায়ক 
বলে স্থিরীকৃত হয়েছে, দ্বিতীয়”_যে গুলি জন- 
সাধারণের নিয়ত প্্রত্যঙ্গ বা অল্লায়াসপ্রত্যক্ষ হওয়ায় 

২৬৮ 


আগ্তপুরুষ ও অবতারকুলের জীবনামভবং 
[ধারণ উন্নতির পরিচায়ক এবং তৃতীয়, যেগুলি রোগী, 
দ্য, লম্পটাদি নিয়স্থানীয মানবশরীরমনে নিয়তামুভূত 
ওয়াতে উহাদের নীচত্বপরিচায়ক । উহাদের মধ্যে 
তীয়শ্রেণীভুক্ত পরিবর্তনরাজি নির্ণয় করা শারীরবিজ্ঞানের 
ষয়। দ্বিতীয় শ্রেণীতুক্তগুলি আধুনিক ইউরোপীয় মনো- 
জ্ঞানের অধিকারের ভেতর এবং প্রথম শ্রেণীভূক্ত- 
লি বেদাদি জগতের যাবতীয় ধর্মগ্রস্থনিবদ্ধ দেখতে 
[ওয়া যায়। এর মধ্যে ভারতীয় মনোবিজ্ঞানের 
কটু বিশেষত্ব আছে। উহা! প্রথম শ্রেণীর পরিবর্তন- 
লিকে মনুষ্যোপলন্ধ নিত্য এশ্বরিক-জ্ঞান বলে এবং 
প্রকার অবস্থা লাভ করাই, সমগ্র স্থপ্টি ও মানব 
বনের একমাত্র চরম লক্ষ্য বলে ধারণা করে 
(তীয় ও প্রথম শ্রেণীর কিয়দংশ-ভুক্ত পরিবর্তনরাজি 
থা পাঠ করতে চেষ্টা করছে। ভারতের 
নিক সেইজন্য বেদনিবদ্ধ এ সমস্ত পরিবর্তনরাজি 
1 অনুভব সমূহের ইতিহাসকে “পুরুষনিঃস্বসিত, 
বাপ্তবাক্যাদি” নামে অভিহিত করেছেন। ভারতের 
শন সেইজন্য সাধারণ মানবের উপলব্ধির উপর ভিত্তি- 
যাপন না করে জ্বলস্তমহিম মহাপুরুষদিগের উপলব্ধির 
টপর ভিত্তিস্থাপন করে দণ্ডায়মান। ভারতের দর্শন 
ইজন্য কেবল কল্পনান্মান সহায়ে রচিত না হয়ে 
৮ ২৬৯ ণ 

১৮ 


/তাত 
অন্যান্য দেশের দর্শনসমূহের স্তায় প্রত্যক্ষীকৃত অন্নুভব- 
নিচয়ের উপরেই রচিত হয়েছে। ইউরোগীয় দার্শনিক 
ভারতের দর্শন সমূহ কল্পনানুমানপ্রস্থত ইত্যাদি বলে 
যতই দ্বণার চক্ষে দেখুন না কেন, উহা! তারই আপ্ত 
পুরুষের অবস্থাবিযয়ক অজ্ঞান এবং আপ্তবাকো 
শরন্ধাহীনতার পরিচায়ক মাত্র । 

এখানে প্রশ্ন ছতে পারে, ধর্মগ্রন্থসমূহনিবদ্ধ জগতের 
যাবতীয় ধর্দ্ববীরগণের অনুভব সমূহ অশেষ প্রকারে 
বিভিন্ন; এ সকলের ভেতর এমন কোন সর্বজন প্রতাক্ষ 
সাধারণ ভূমি আছে কি, যার উপর মনোবিজ্ঞান 
ভিত্তি স্থপেন করে দণ্ডায়মান হতে পারে? বিভিন্ন- 
তার ভেতর একতা যতক্ষণ আবিষ্কৃত না হবে, ততক্ষণ 
কোন বিষয় বিজ্ঞানরাজ্যের অন্তর্বর্তী কেমন করে হবে? 
উত্তরে বল! যেতে পারে, নিরিবিকল্প সমাধি অনুভূত 
প্রত্যক্ষ এবং তাৎকালিক শরীরাবস্থান সর্ববকালে সর্বব 
পুরুষের একরূপই হয়েছে, ইহা৷ ধর্মেত্িহাসপ্রসিদ্ধ। 
পরমহংস শ্রীরামকঞ্চদেব বলতেন, “যেমন সব শিয়ালের 
এক রা” (এক প্রকার আওয়াজ ) সেইরূপ নির্বিকল্প 
অবস্থায় অন্ভূত বিষয় সম্বন্ধে যাবতীয় খষি এবং 
অবতারকুল এক কথাই বলে গেছেন। এখানে 
“নানা মুনির নানা মত” নেই। সকলের এক মত। 

২৭০ 


আপ্তপুরুষ ও অবতারকুলের জীবনাস্ভব 
দক খধিগণ-সেবিত “মহ্থাবাক্য চতুষ্টয়”, অমিতাভ 
প্রচারিত “মহানির্ববাণাবস্থা” শিবাবতার শঙ্কর 
ধিত “সোইহংজ্ঞানাবস্থান,” মধুর বৃন্দারণ্যে মাধবপদে 
সর্গাকৃতসর্ববন্ব তন্ময়প্রাণা গোপীগণের আপনাতে 
₹ষ্চবোধ, পিতৃভাবের জ্বল্ত নিদর্শন মহাত্মা! ঈশার 
[পিতার সহিত একত্ববোধ ইত্যাদি সকলই উপাস্য ও 
[াসকের মিলনসম্ভূত দ্বৈতবিবঞ্জিত এক অবস্থাবিশেষ- 
ই যে লক্ষ্য করছে, ইহা স্পষ্ট। এ অবস্থাবিশেষ 
₹ হলেও উহাতে উপনীত হবার পথ নানা। একথার 
[ভাসও উদ্বারচরিত বৈদিক খধিগণ এবং যাবতীয় 
বতারগণও দিয়ে গেছেন। যাস্ককৃত নিরুক্তে আপ্ত 
রুষ সম্বন্ধীয় আলোচনায় বলা হয়েছে যে, দ্বৈতবজ্জিত 
বস্থান্ভব করে আপ্তত্ব লাভ, আধ্য এবং শ্লেচ্ছ উভয়- 
[তীয় পুরুষই নির্বিবশেষে করতে পারে । 
আপ্তবাক্যের যথার্থ অর্থ কি, তা আমরা এতক্ষণে 
ঝলাম এবং গ্লেচ্ছজাতীয় পুরুষের বাক্যও খে বেদ 
লে গণ্য হতে পারে, তাও খধিগণ বলেছেন, 
দখলাম। 'আর একটি কথার সত্যতাও এখানে অনুমিত 
য় যে, নির্বির্বকল্প অবস্থা ও উপলব্ধ বিষয় এক হলেও 
এতে উপনীত হবার পথের নানাত্ব ও ভিন্নত্ব সর্বদাই 
বর্তমান থাকবে । জগৎ কখনই একধর্মমমতাবলম্বী হবে 


৭১ ঃ 


*গ্লীতাতত্ব 


না, কিন্তু কালে ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণদেব প্রচারিত “যত 
মত তত পথ” বাণীর সত্যতা উপলন্ধ করে পরস্পরের 
প্রতি দ্বেষভাব পরিত্যাগ করবে । + 

ভারতের দর্শন যেমন মহাপুরুষকুলের প্রত্যক্ষের উপর 
দণ্ডায়মান, ধর্ম তদ্রুপ । সেই জন্যই ভারতে দর্শন 
এবং ধর্মের ভিন্ন ভিন্ন 'ভূমি নির্দিষ্ট হয় নি। ভারতের 
খষি ধন্মকে সংসার হতে বিভিন্ন করে মানব উহা 
করলেও পারে, না করলেও পারে, এ ভাবে 
দেখেন নি। তার দৃষ্টিতে ধর্ম সমগ্র জগৎকে অধিকার 
করে রয়েছে। সমগ্র স্থষ্টির চরমোনদেশ্যই ধর্ম বা 
মুক্তিলাভ করা। প্রতি মানব নিজ জীবনে প্রতি কার্য্যের 
অনুষ্ঠান করে যে যে অনুভূতি করছে, সে সকল 
তাকে খজু. কুটিল পথ দিয়ে এ উদ্দেশ্য লাভের দিকেই 
অগ্রসর করছে। ধন্ম এক অবস্থাবিশেষ, মানবের 
সখের বিষয় নয়। ভাল মন্দ উভয় প্রকার কাধ্যের 
ভেতর দিয়ে, সুখ ছুঃখ উভয় প্রকার কার্য্যের ভেতর দিয়ে, 
সুখ ছুঃখ উভয় প্রকার অনুভবের ভেতর দিয়ে, আস্তিক্য 
নাস্তিক প্রভৃতি নানাবিধ বিশ্বাস ও ধারণার ভেতর দিয়ে 
অবশেষে চরমোন্নতির ফলরূপ মানবজীবনে ধন্ম বা মুক্তি 
এসে উপস্থিত হয় এবং তখনই মানব নিজে ধন্য 
হয়ে জগৎ পবিত্র করে। 

হ ২৭২ 


আপ্তপুরুষ ও অবতারকুলের জীবনান্থৃভৰ 


আপ্ত পুরুষের জীবনান্ুভব আলোচনায় যে বিশেষ ফল 
ই, তা স্পষ্টই বুঝতে পারা যায়। জ্ঞান যে 
'য়রই হউক না কেন, মানবের পুর্ববকৃত কর্মের 
দংশ'দগ্ধ করে দেয়। কারণ, সংস্কার বা পূর্বানুষ্িত 
যাসই মানবকে কর্মে প্রবৃত্তি দেয় এবং সংস্কার বিশেষের 
পন্তি আবার বন্ত্বিশেষের বিপরীত ধারণা হতে 
ন্মথাকে। সর্পের দংশনম্বভাব না জেনেই অজ্ঞ 
লক সম্মুখস্থ সর্পধারণে সযত্ব হয়। ইন্দ্রিয়পঞ্চক এবং 
নর সসীম স্বভাব ন! জানাতেই মানব এদের সহায়ে 
ত্য সত্য উপলব্ধি করবার প্রয়াস করে। অবিমিশ্র 
থখ লাভ অসম্ভব না জেনেই আমরা এর অন্বেষণে 
তত ছুটাছুটি করি। ইত্যাদি। অতএব সেই বিপরীত 
রণার স্থানে সেই বস্তরবিষয়ক যথাযথ জ্ঞানের যদি 
চানরূপে উদয় হয়, তা হলে সে সংস্কার এবং 
তুপ্রন্থৃত পুর্ব চেষ্টাদিরও যে নাশ হবে, এতে আর 
ন্দেহ কি? এবং পূর্ণ জ্ঞানান্ুুভবে যে সব্ব প্রকার 
২স্কার এবং তপ্রন্থত নিখিল কর্ম্ম সমূহের একান্ত নাশ 
বের এ৪ স্পষ্ট। এজন্যই শ্রীভগবান্‌ গীতায় 
লেছেন,__এসব্বং কর্্মাখিলং পার্থ জ্ঞানে পরিসমা- 
যতে”। অতএব “ন হি জ্ঞানেন সদৃশং পবিত্রমিহ 
্ততে” মানবকে পবিভ্র করতে জ্ঞানের সদৃশ ছবি 
ু হর 


বস্তু আর নেই। বস্তুবিষয়ক যথাষথ জ্ঞানই আবার 
মানুষকে অদ্ভূত শক্রিসম্পন্ন করে তোলে, এও প্রত্যক্ষ- 
সিদ্ধ। মনে কর, চৌর-লম্পটাদ্ির নীচপ্রবৃত্বিনিচয় 
তত্ব শরীর মনে কেন উপস্থিত হয়, এ বিষয়ের কারণানু- 
সন্ধানে তুমি নিযুক্ত হলে। প্রথমত: দেখলে যে, যে 
বিষয় নিয়ে তাদের এ সকল জঘন্য প্রবৃত্তির উদয় হয়, 
সেই সেই বিষয় সম্মুখে উপস্থিত হবামাব্র তাদের 
শরীরস্থ ক্হিরস্তরবার্তাবাহি-স্নায়ুসমূহ চির-অভ্যাস বশত; 
হাদয়াদি শারীর যন্ত্রের ন্যায় মানসিক ইচ্ছাশক্তি প্রয়োগের 
অপেক্ষা না রেখে আপনা আপনি স্ব স্ব কার্ষ্যে প্রবৃত্ত হয় 
এবং তংফল স্বরূপ, তার! তত্ব জঘন্য কাধ্য করতে 
যাচ্ছে, ইহ! বিশেষরূপে জানবার পূর্বেই এ সকল 
করে বসে। আরও দেখলে যে, তারা এ সকল 
কার্ধ্যই বিশেষ পুরুষত্বপরিচায়ক বলে অহঙ্কার করে 
থাকে এবং তন্ত কার্ধ্যানুষ্ঠানে বিশেষ আনন্দ লাভ 
হবে ধারণা করে আছে এবং পরিশেষে দেখলে যে, 
এ প্রকার ধারণ হতে তাদের ভন্তৎ কার্ধ্য অকরণের 
'বিন্বমাত্র ইচ্ছা নেই। এ সকল বিষয় বুঝামাত্রই 
তোমার বোধ হল যে, তাদের এ সকল কার্য্য ত্যাগ 
করাতে হলে তাদের বিপরীত অভ্যাস সমূহ করতে 
শরীরকে শেখাতে হবে। উহা করতে হলে 
২৭৪ 


্ট 

আপ্তপুরুষ ও অবতারকুলের জীবনানুভব, 
প্রথমতঃ তাদিগকে এমন স্থানে রাখতে হবে, 
যেখানে প্রলোগনের বিষয় সকল সহজে তাদের 
সম্মুখে উপস্থিত না হয়। ততপরে তোমার বোধ হল 
যে, তাদের পূর্ব্বাভ্যাস, তত্ব কার্ধ্যসমূহ পুরুষত্ব- 
পরিচায়ক ও বিশেষ আনন্দজনক এই ধারণা হতেই 
উপস্থিত হয়েছে । তুমি দেখলে যে, তত্বৎ বস্ত- 
বিষয়ক তুল ধারণা হতেই এ প্রকার কাধ্য করতে 
তারা পুনঃ পুনঃ অভ্যাস করেছে এবং এখনও 
করছে। অতএব উহাদিগকে এ সকল ত্যাগ 
করতে হলে পূর্বোক্ত এ সকল তুল ধারণাস্থলে এ 
বিষয়ক যথাযথ জ্ঞান যাতে আসে, তোমাকে তাই 
করতে হবে। মনে কর, এ সকল কার্য্যকরণে 
অবশ্থন্তাবী ছু'খ সকল দেখিয়ে তুমি কালে তাদের 
ধারণাসমূহ পরিবর্তন করতে পারলে। তা হলে 
তৎফলম্ববপ তাদের এ সকল কার্্যও যে কালে 
ত্যাগ হবে, সে বিষয় কি আর বুঝাতে হবে? 
বৃক্ষের প্রধান মূল ছিন্ন হলে উহার জীবন যেমন অসম্ভব, 
সেইরূপ এ মূল ধারণা ত্যাগে এ নকল কার্য্যের অস্তিত্ব 
নষ্ট হল। অতএব এ সকল নীচ মানবমনের কার্ধ্য- 
কলাপ সন্বস্বীয় জ্ঞানই যে তোমায় এ সকল মন 
পরিবর্তনের শক্তিসম্পন্ন করল, ইহা স্পষ্ট। 

২৭৫ রঙ 


৫ 


শীতাতন্ব 


ঠা 


পচ 


আপ্তপুরুষের অনুভব, স্বভাব ও চেষ্টাদির 
আলোচনাও আমাদিগকে ঠিক এ প্রকার শক্তি-সম্পন্ন 
করে এবং জগৎ ও মানব জীবন সম্বদ্ধিণী কি প্রকার 
ধারণ হতে তাঁদের এ প্রকার নি'স্বার্থ চেষ্টাদি 
হয়ে থাকে, তা বুঝিয়ে দেয়। অশাস্তিপূর্ণ মানব 
জীবনে তাদের অপুর্ব শান্তি এবং শোক, ছুঃখ, 
আনন্দাদিতে অদ্ভুত অবিচলতা দেখে তদবস্থালাভে 
আমাদের 'অনুরাশী করে এবং তাদের জীবনের 
'অদৃষ্পূর্ব্ব শক্তিপ্রকাশ, তাদের অবস্থা! যে সাধারণ 
'মানবের অবস্থা হতে অনেক উচ্চ ভূমির অবস্থা এ 
কথা বুঝিয়ে দিয়ে মানবজীবনের প্রকৃত লক্ষ্য 
আমাদের “চক্ষের সম্মুথে ধারণ করে। তবে শ্রদ্ধার 
সহিত তাদের জীবন আলোচনা! করা আবশ্যক। 
কারণ, শ্রদ্ধাই কোন বিষয়ের জ্ঞান লাভের একমাত্র 
উপায়। শ্রদ্ধাবিরহিত মন এ সকল বিষয় আলোচনা 
করবার কোন আবশ্যকতাই অনুভব কর্ধবে না। 
- শ্বীতায় ভগবান্‌ শ্তরীকষ্ণ বলেছেন, “অঙ্ঞশ্চাশ্রদ্দধানশ্চ 
সংশয়াত্মা" বিনশ্ততি”-_অদ্ধাবিরহিত সংশয়পূর্ণমন অজ্ঞান- 
মানব নষ্ট হয় অর্থাৎ সত্য লাভে সমর্থ হয় না। কারণ, 
শ্রদ্ধার অভাবেই নানাপ্রকার সন্দেহ এসে উপস্থিত 
হয় এবং মানবকে জ্ঞান লাভ করতে দেয় না। 

? ২৭৬ 


আপ্তপুরুষ ও অবতারকুলের জীবনাম্ুভব * 
এস্থলে প্রশ্ন হতে পারে, তবে কি কোন বিষয়ে 
সন্দেছ করব না? যে যা বলে, তাই চোখ কান 
বুজে বিশ্বাস করব নাঃ তা করতে হবে না। 
সত্য লাভ করব, এই দৃঢ় সংকল্প করে শ্রদ্ধার 
সহিত সকল বিষয় অনুশীলন কর এবং যতক্ষণ না সম্পূর্ণ 
রূপে বুঝতে পার, সকল বিষয় পরীক্ষায় মিলিয়ে 
পাও, ততক্ষণ নানাপ্রকার প্রশ্ন ও চেষ্টাদি করো। 
উহাকে সংশয় বা সন্দেহ বলে না। পরীক্ষা না করেই 
কোন বিষয় মিথ্যা বলে ধারণ! করা এবং অগ্রাহ্য করাই 
এন্থলে সংশয় শব্দের অর্থ। উহা! না করলেই হল। 
আর এক কথা, শাস্ত্র বলেন, আপ্তাবস্থা অর্থাং যে 
অবস্থা লাভ করলে মানব জ্ঞানের চরম সীমায় উপস্থিত 
হয়ে অতীন্দ্িয় পদার্থের দর্শনে সমর্থ হয়--অপরের 
জানবার বিষয় নয়। উহা! সর্বতোভাবে ব্বসংবেদ্য । 
ধার হয়েছে, তিনিই জানতে ও বুঝতে পারেন। 
এ কথ! সত্য বটে, কিন্তু শান্তর একথাও বলেন যে, 
আপ্তপুরুষের বাহক প্রকাশ দেখলে তার উচ্চ 
প্রকৃতির বিষয় আমরা জানতে পারি এবং তাদের 
অনুভবাদির আলোচনাই যে অজ্ঞ মানবের তদবস্থা 
লাভের প্রধান সহায়, এ কথা পতঙ্জলি প্রভৃতি সমগ্র 
ঝষিকুল এক বাক্যে স্বীকার করে গেছেন। তবে 
৪ 
২৭৭ 


যতদিন না আমাদের তাবস্থা লাভ হবে, ততদিন যে 
আমরা তাদের মানসিক গঠন ও কার্ধ্যগ্রণালী 
সম্পূর্ণরূপে বুঝতে পারব না, এ কথায় আর সন্দেহ 
কি? ৰ 

শ্রীকৃষণ-ুদ্ধপ্রমুখ অবতার-কুলের জীবনান্ুভব আবার 
আপ্তপুরুষাপেক্ষাও সমধিক বিচিত্র এবং উচ্চ ভূমিকার 
তঙ্জন্য তাদের চেষ্টাদিকে খধিগণ “লীলাবিলাসাদি” 
নামে এবং তঙ্চেষ্টাদির অধিষ্ঠান ভূমি-_তীদের 
শরীরেন্ত্রিয়াদিও শুদ্ধ-সন্ব-গণনির্িতি বলে নির্দেশ 
করেছেন। ভগবান্‌ শ্রীরামকৃষ্ণদেব বলতেন, “যেমন 
খাদ না হলে গড়ন হয় না, অর্থাৎ স্বর্ণ-রৌপ্যাদি 
মূল্যবান ধাতু-নিচয়ে অলঙ্কারাদি গঠন করতে হলে 
তাতে তাআদি নিকৃষ্ট ধাতু সকল মিশ্রিত করতে 
হয়, নতুবা গঠন টেকে না_-সেইরূপ রজঃ ও তমাগণের 
কিয়দংশ না থাকলে মনুষ্য শরীর হওয়' অসম্ভব।” 
অতএব অবতার শরীর গঠনে রজঃ তমোগুণ সল্প 
মাত্রায় বর্তমান, ইহা! সত্য। কিন্তু উহা এত অল্প যে, 
এভাগ লক্ষ্য না করে তাদের শরীর মনের চেষ্টাদি 
শুদ্ধ-সত্বগণ প্রন্থৃত বলতে পারা যায়। 

আবহুমানকাল ধরে মানব বিশ্বাস করেছে, 
অবতারকুল, জগতকর্তা ঈশ্বরের অংশ হতে উৎপন্ন 

২৭৮ 


আণ্তপুরুষ ও অবতারকুলের জীবনামুভৰ * 
অতএব এলীশক্তিসম্পন্ন। তাঁরা মানব শরীর ধারণ 
করে ধর্-জগতের চরম তন্বে উপনীত হ্বার নূতন 
নৃতন পথ আবিষ্কার করে উহা৷ উন্নতাবনত অবস্থাপনন 
সর্ববপ্রকারে বিভিন্নপ্রকৃতি মানবের বুদ্িগ্রাহা করে 
দেন। এ সকল নূতন পথাবিষ্কারে সবিশেষ শক্তির 
প্রয়োজন । তজ্জন্য তাদের শরীরেন্্িয়াদির গঠনও 
তছ্পযোগী হয়ে থাকে । সুঙ্গমাং সুম্মম পরিবর্তন ও 
অনুভবাদিও উহাতে ধৃত এবং যথাযথ পঠিত হয়ে 
থাকে। তাদের সাধনোগ্যমাদিও অমানুষী চেষ্টাসম্পন্ন 
এবং জগতের কল্যাণের জন্যই অমুষ্ঠিত। কারণ সংযম, 
প্রেম, মুক্তি বা মনুষ্তোপলন্ধ এমন কোন সদৃগুণই 
নেই, যা তাদের “অনবাপ্তমবাপ্তব্যম”লাভ হয় 
নি, অতএব লাভ করতে হবে। তত্রাচ তারা এ 
প্রকার অদ্ভূত কর্মাদির অনুষ্ঠান করে থাকেন। 
সাধারণ মানবের ত কথাই নেই, তাঁরা মনুযশরীরে 
দেবপ্রতিম আপ্তপুরুষকুলেরও আদর্শস্থানীয়। আণ্ত- 
পুরুষেরা তাদের পদান্থুসরণ করেই আপ্ততবাদি 
অবস্থা লাভ করে থাকেন। অথচ তাদের সমস্ত 
জীবনানভব আগপ্তপুরুষদিগেরও হয় না? কেন না, 
ধর্মজগতের নূতন তথ, ও পথাদি আবিষ্করণ জন্য 
তাদের জন্ম গ্রহণ অঁয়। অতএব অবতভার-কুলের 

২৭৯ 


“গীতাতন্ব 


শরীর-মনের অনুভবাদি যে পারি বিচিত্র হবে, 
এতে আর আশ্চধ্য কি! ভগবান্‌ শ্রীরামকৃষ্ণদেব 
বলতেন, “সিদ্ধপুরুষ ও অবতারের প্রভেদ শক্তির 
বিকাশ লয়ে হয়ে থাকে; নতুবা নির্বির্বকল্প সমাধিগন্ধ 
জ্ঞান উভয়ের এক রূপই হয়ে থাকে।” একজন 
মায়াপ্রস্থত কামকাঞ্চনাদি হতে কোনরূপে আপনাকে 
বাচিয়ে মুক্তি লাভ করে প্রস্থান করেন; অপর 
জন অপরকে সাহাধ্য করবার নিমিত্ত বন্ধনের উপর 
বন্ধনাদি স্বেচ্ছাপৃর্্বক গ্রহণ করে তাদের নিকট 
উপস্থিত হয়ে তাদেরও বন্ধন মোচন করে দেন 
.এবং আপনার বন্ধনও ইচ্ছামাত্র মোচন করে ফেলেন! 
ভারতের পুরাণসমূহ আর কিছু করুকৃ না করুক্‌, 
তাদের অন্ুভবাদির ইতিহাস লিপিবদ্ধ করতে কথঞ্চিৎ 
চেষ্টা করে মনুস্থাকে অমূল্য ধনে ধনী করেছে। 

প্রত্যেক ঈশ্বরাবতার বা আপ্তপুরুষচরিত্র আমরা 
তিনভাবে আলোচনা করতে পারি। অবিশ্বাস এবং 
নাস্তিকতার চোখে তাদের কার্যকলাপাদি দেখে ব 
শুনে উহা ভণধূর্তাদির মিথ্যাকল্পনা-প্রস্থৃত বা মানবের 
: রোগবিশেষ বলে বিশেষ অনুধাবন না করেই, 
একেবারে অগ্রাহহা করতে, পারি। অথবা বিশেষ 
অধাপ্রণো দিত হয়ে এ সফল পুরুষের মানবকুল 

২৮০ 


অওপুন্রৎ ও অবতুক্রে উতুতৎ 


হতে সম্পূর্ণ জাতিগত পার্থক্য অনুমান করে 
স্তাদ্িগকে এক অপূর্ব জীববিশেষ বলে ধারণা 
করতে পারি। অথবা তাদের অস্তিত্বে পূর্ণভাবে 
বিশ্বাস করে অসক্তবুদ্ধি সত্যানুসন্ধিংস্থ দার্শনিকের 
চোখে তাদের কাধ্যকলাপাদির বিশেষ অনুধাবন ও 
পরীক্ষা করে তদ্দিষয়ক যথাযথ জ্ঞান লাভে কৃতার্থ 
হতে পারি। 

প্রথম দৃষ্টি অবলম্বন করলে মানবের যাবতীয় 
ধর্মেতিহাসই মিথা৷ বলে অগ্রাহ্ করতে হয় এবং 
মিথ্যা বিশ্বাসাদিও যেমন কখন কখন গৌণভাবে মানবের 
উপকারে এসেছে, যাবতীয় ধর্ম্মবিশ্বাসাদিও পূর্ব যুগে 
সেই ভাবে মানবের উন্নতির সহায় হলেও এখন আর 
তাদের আবশ্যকতা নেই, ইহাই স্বীকার করতে হয়। 

দ্বিতীয় দৃষ্টিতে এ সকল মহাপুরুষ উপলব্ধ অবস্থা ও 
অনুভবনিচয় তাদেরই একায়ত্ত অম্পত্তিবিশেষ বলে 
স্থির করতে হয় এবং উহা মানব সাধারণের জীবনে 
কখনই অনুভূত হবার নয়, এই দিদ্ধান্তে উপনীত 
হতে হয় এবং ভক্তিলাভের উপায়মাত্রভিন্ন অন্ত 
কোন কারণে তদ্দালোচনার নিক্ষলতা প্রমাণ করে 
অথবা তাদ্দিগকে নিগ্রহানুগ্রহসমর্থ জীববিশেষ বলে 
ধারণা করে সানবকে প্ঁকৈবলই তাঁদের কৃপাপ্রার্থা 

৮১ 


4 


গ্ীতাতন্ব 
হয়ে থাকতে শিক্ষা দেয়। কিংবা ক্রোধনম্থভাব 
দগুদাতা উৎকোচগ্রাহী দেবতাকিউর্ধ বলে ধারণা 
করিয়ে সকাম মানবকে দুর্বলতার পথে দিন দিন অগ্রসর 
করে। | 

তৃতীয় দৃষ্টিতে তাদিগকে, অসাধারণ হলেও, মানব 
বলে সিদ্ধান্ত করে তাদের অন্ুভবাদি প্রত্যেক 
মানবের মহমূল্য জীবনাধিকারসম্পত্তি বলে নির্ধারিত 
করে সাদিগকে বিশেষরূপে আপনার করে মানবকে 
আশু "রসা এবং বিশেষ-শক্তিসম্পন্ন.করে। তাদের 
উচাতি. দেখে মানব আপনার উচ্গতিতে বিশ্বাসবান্‌ 
হয় 'এরুং সেও, সেই বংঅপ্রন্ত অতএব সকল ধনের 
অধিকারী 'বলে' আত্মনিহিত শক্তিতে নির্ভর করে 
দাড়াতে শেখে । এই দৃষ্টি অবলঙ্থনে মহাপুরুষ চরিত্া 
লোচনার ইচ্ছা বারাস্তরে রইল। এখন ভাগীরথীনিষেবিত 
পঞ্চবটাতলে ধার অলৌকিক জীবন বেদাগম-পুরাণাদি 
জগতের যাবতীয় ধর্মগ্রস্থনিবদ্ধ সমগ্র অবতার-কুলেরও 
অন্ৃতবাদি অতিক্রম করে উচ্চতর ভূমিকায় আরোহণ 
করেছিল, ধার অপূর্ব শক্তি প্রকাশের আরম্তমাত্র 
দেখে জগৎ স্তস্তিত হয়েছে, ধার অপূর্ব জীবনালোক 
কালরাত্রির ঘনান্ব-ক্ষোড়ে লৃক্ধায়িতপ্রায় বেদাদির 
অর্থবোধে ; উবাসনাপ্রাণ ভোধুলোলুপ বর্তমান কালের 

২৮ 


আপ্তপুরুষ ও অবতারকুলের জীবনানভব 
মানবের একমাত্র সহায়, কামকাঞ্চনপৃতিগন্ধপূর্ণ শৌক- 
ছুখ্ময় স্বার্থপর সংসারে “বস্থজনহিতায় বছজননুখায়” 
ধীর বার বার আগমন, উদ্বোধন। এস, আমরা 
ধর্মতনুক্ঞগদৃগ্ডর সেই ভগবান্‌ শ্রীরামকষ্ণদেবের শ্রীপাছুকা 
মন্তকে ধারণ করে তারই জীবনানুভব সময়ে সময়ে 
যথাসম্ভব লিপিবদ্ধ করি এবং ধন্য হই।